শসার পুস্টিগুণ উপকারিতা ও অপকারিতা

আরো পড়ুনঃ সুস্থ জীবনযাত্রার গোপন রহস্য | সুস্বাস্থ্য ও সঠিক লাইফস্টাইল

শসা বাংলাদেশের অতি পরিচিত এবং জনপ্রিয় একটি সবজি। শসা শুধু বাংলাদেশে নয়, প্রায় সারা বিশ্বেই প্রচুর পরিমাণে খেয়ে থাকে। কারণ, এটি একটি অধিক জলীয় উপাদানযুক্ত খাবার, যা মানুষের শরীরকে হাইড্রেট রাখার পাশাপাশি সতেজ রাখতে সাহায্য করে।

তাই, শসা শুধু স্বাদের জন্য নয়, বরং এতে থাকা বিভিন্ন পুষ্টিগুণ স্বাস্থ্যের জন্য অনেক উপকারি। তবে, শসা শুধু যে উপকারি, তা কিন্তু নয়, এর কিছু অপকারিতাও রয়েছে। আজকের আর্টিকেলে আমরা আপনাদের সঙ্গে শেয়ার করবো, শসার পুস্টিগুণ, উপকারিতা, খাওয়ার নিয়ম ও অপকারিতা সম্পর্কে-

শসার পুস্টি উপাদান

শসা প্রধানত জলীয় উপাদান জাতীয় খাবার। তবে, এতে রয়েছে বিভিন্ন ধরণের গুরুত্বপূর্ণ পুস্টি উপাদান যা, মানুষের শরীরের জন্য অত্যন্ত উপকারি। নিম্নে প্রতি ১০০ গ্রাম শসায় থাকা গুরুত্বপূর্ণ প্রাকৃতিক উপাদান সম্পর্কে দেখুন-

  • জল- ৯৫ ভাগ।
  • ভিটামিন "সি"- ২.৮ মিলিগ্রাম।
  • ফসফরাস- ২৪ মিলিগ্রাম।
  • ভিটামিন "কে"- ১৬.৪ মাইক্রোগ্রাম।
  • প্রোটিন- ০.৬ গ্রাম।
  • ক্যালোরি- ১৫ কিলোক্যালোরি।
  • ফাইবার- ০.৫ গ্রাম।
  • কার্বোহাইড্রেট- ৩.৬ গ্রাম।
  • পটাশিয়াম- ১৪৭ মিলিগ্রাম।
  • ম্যাগ্নেসিয়াম- ১৩ মিলিগ্রাম।

শসার খাওয়ার উপকারিতা

শসা যদিও গ্রীস্মকালীন সবজী, কিন্তু বর্তমানে এটি আমাদের দেশে প্রায় সারাবছর পাওয়া যায় এবং এর রয়েছে প্রচুর উপকারিতা। এ কারণে, মানুষ শসা সারাবছর খেয়ে থাকেন। নিম্নে শসার উপকারিতা সম্পর্কে সংক্ষেপে আলোচনা করা হলো-

** শসা শরীরকে হাইড্রেট রাখে- শসাতে পাওয়া যায় প্রচুর পানি, তাই এটি শরীরকে হাইড্রেট রাখতে গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা পালন করে। অতিরিক্ত গরমের সময়, শারীরিক পরিশ্রমের কারণে শরীর থেকে ঘাম ঝরে গেলে, পানির ঘাটটি পূরণ করে শসা।

তাছাড়া, হজমে সাহায্য করে, দূর করে শরীর থেকে টক্সিন পাশাপাশি ত্বক সতেজ রাখে শসা। শসায় রয়েছে ইলেক্ট্রোলাইট, যা শরীরের পানির অভাব দূর করে এবং ভারসাম্য বজায় রাখে। ফলে শরীরের ক্লান্তি দূর করে শরীরকে করে সজীব।

** ওজন কমাতে সাহায্য করে- শসা এমন একটি খাদ্য যা ওজন কমাতে সাহায্য করে। কারণ, এতে ক্যালোরি থাকে কম এবং ফাইবার ও পানি থাকে বেশি, যা খুদা কমাতে সাহায্য করে। আবার এটি শরীরকে রাখে হাইড্রেট ও বিপাকক্রিয়া বাড়ায়, ফলে চর্বি কমতে সাহায্য করে।

তাছাড়া শসা ডিটক্সিফাই করতে সাহায্য করে এবং ওজন কমাতে গুরুত্বপূর্ণ ভুমিকা রাখে। এটি খাবারের সঙ্গে এবং স্ন্যাক হিসাবে শসা খেলে ক্যালোরি গ্রহনের অধিক ঝুকি কমে। যার কারণে খুব সহজেই ওজন নিয়ন্ত্রণে রাখা সম্ভাব হয়।

** রক্তচাপ নিয়ন্ত্রণে সাহায্য করে- উচ্চ রক্তচাপ নিয়ন্ত্রণের জন্য শসা একটি অন্যতম একটি উপকারি খাদ্য। শসায় থাকে প্রচুর পানি এবং পটাশিয়াম। যা, শরীর থাকা অধিক সোডিয়াম বের করতে সাহায্য করে এবং স্বাভাবিক রাখে রক্তচাপ।

তাছাড়া, শসায় থাকা অ্যান্টি অক্সিডেন্ট এবং ফাইবার প্রসারিত করতে সাহায্য করে রক্তনালিকে, ফলে সহজ হয় রক্ত সঞ্চালন। নিয়মিত শসা খেলে হৃদরোগের ঝুমি কমে। তাই উচ্চরক্ত চাপ রোগীর জন্য শসা হতে পারে একটি স্বাস্থ্যকর খাবার।

** উন্নত করে হজম প্রক্রিয়া- হজমে উন্নতি সাধনের ক্ষেত্রে শসা একটি গুরুত্বপূর্ণ খাবার। শসায় রয়েছে প্রচুর পানি এবং ফাইবার, যা সহজ করে হজম প্রক্রিয়াকে এবং সহায়তা করে কোষ্ঠকাঠিন্য দূর করতে।

তাছাড়া শসায় থাকা অ্যান্টিঅক্সিডেন্ট এবং এনজাইম উপাদান হজমশক্তি বাড়ায় এবং অম্লতা, পেট ফাঁপা কমায়। এটি সাহায্য করে অন্ত্রের ভালো ব্যাকটেরিয়া বৃদ্ধিতে। তাই নিয়মিত শসা খেলে পরিপাক তন্ত্র সুস্থ থাকে এবং হজম হয় দ্রুত, ফলে শরীর থাকে সুস্থ্য ও সতেজ।

** নিয়ন্ত্রণে রাখে ডায়াবেটিস- শসা ডায়াবেটিস নিয়ন্ত্রণে সাহায্যকারি অন্যতম একটি খাদ্য। এতে কম ক্যালোরি এবং বেশি ফাইবার থাকায় সাহায্য করে রক্তের শর্করার মাত্রা স্থিতিশীল রাখতে। শসায় থকা পানি ও অ্যান্টি অক্সিডেন্ট শরীরকে রাখে হাইড্রেট এবং ইনস্যুলিনের সংবেদনশীলতা বাড়ায়।

তাছাড়া, যারা নিয়মিত শসা খান, তাদের হজম প্রক্রিয়া উন্নত হয়, নিয়ন্ত্রণে থাকে ওজন, যা ডায়াবেটিসের জন্য অত্যান্ত গুরুত্বপূর্ণ।  তাই, ডায়াবেটিস নিয়ন্ত্রণে রাখার ক্ষেত্রে শসা একটি স্বাস্থ্যকর বিকল্প খাবার।

আরো পড়ুনঃ মাসরুমের পুষ্টিগুণ, উপকারিতা ও পার্শ্বপ্রতিক্রিয়া

** সুস্থ্য রাখে কিডনি- কিডনি সুস্থ্য রাখার জন্য শসা একটি গুরুত্বপূর্ণ খাবার। এতে পাওয়া যায় উচ্চ মাত্রার অ্যান্টি অক্সিডেন্ট ও পানি, যা সাহায্য করে শরীর থেকে টক্সিন বের করতে এবং উন্নত করে কিডনির কার্যকারিতা।

তাছাড়া, শসা ডিউরেটিক হিসাবে কাজ করে, যা প্রসাবের মাধ্যমে অধিক লবন এবং বিষাক্ত পদার্থ দূর করতে সাহায্য করে। এটি কিডনির পাথর হওয়ার হাত থেকে রখায় ভূমিকা পালন করে। তাই, নিয়মিত শসা খেলে কিডনির সংক্রামণের ঝুকি কমে এবং কিডনি থাকে দীর্ঘদিন সুস্থ্য ও কার্যকর।

** শসা শরীরের টিক্সিন দূর করে- শসা শরীরের দূষিত টক্সিন দূর করতে অধিক কার্যকর একটি সবজি। এতে প্রচুর পানি ও অ্যান্টি অক্সিডেন্ট থাকায়, সুস্থ রাখে কিডনিকে এবং সাহায্য করে শরীরের ক্ষতিকর বর্জ্য বের করতে।

তাছাড়া, শসায় থাকা ডিটক্সিফাইং ক্ষমতা পেট এবং লিভারকে পরিস্কার রাখতে সাহায্য করে ও উন্নত হয় হজমশক্তি। আবার শসায় থাকা ইলেক্ট্রোলাইট ও ফাইবার হাইড্রেট রাখে শরীরকে এবং উজ্জল করে ত্বক। তাই নিয়মিত শসা খাওয়ার কারণে শরীর থাকে টক্সিনমুক্ত এবং সতেজ।

** ত্বক ভালো রাখে- ত্বকের জন্য অত্যান্ত উপকারি শসা। শসায় থাকা ভিটামিন "সি" ও অ্যান্টি অক্সিডেন্ট ত্বককে উজ্জল ও সতেজ রাখে। প্রাকৃতিক টোনার হিসাবে শসার রস কাজ করে, যা ত্বকের রঙ উজ্জল এবং ত্বক করে মসৃণ।

এটি সাহায্য করে ব্রণের সমস্যা দূর করতে এবং সাহায্য করে ত্বকের অতিরিক্ত তেল দূর করতে। ডার্ক সার্কেল ও চোখের ফোলাভাব কমতে অনেকে শসার টুকরো ব্যবহার করে। তাছাড়াও, রোদে পোড়া ত্বকে এর রস ঠান্ডা প্রভাব ফেলে এবং সুরক্ষা দেয়।

শসার অপকারিতা বা পার্শ্বপ্রতিক্রিয়া

শসা একটি অত্যন্ত উপকারি সবজি, একথা বলার অপেক্ষা রাখেনা, তবে এর কিছু অপকারিতা বা পার্শ্বপ্রতিক্রিয়াও রয়েছে। নিম্নে শসার অপকারিতা সম্পর্কে সংক্ষেপে আলোচনা করা হলো-

  • অতিরিক্ত জলীয় উপাদান- শসায় রয়েছে প্রচুর পরিমাণে জল, তাই এটি অধিক পরিমাণে খেলে কমে জেতে পারে শরীরের সোডিয়ামের মাত্রা। যা, নষ্ট করতে পারে ইলেক্ট্রোলাইটের ভারসাম্য।
  • অধিক পেস্টিসাইডের উপস্থিতি- শসা চাষের ক্ষেত্রে ব্যবহার করা হয় অধিক কীটনাশক, যা শরীরের জন্য ক্ষতি হতে পারে। তাই খাওয়ার জন্য জৈব শসা খাওয়া উচিত।
  • হজমের সমস্যা- অধিক পরিমাণে শসা খাওয়ার কারণে অনেক মানুষের গ্যাস, পেট ফাঁপা এবং ডায়রিয়ার মত সমস্যা হতে পারে।
  • অ্যালার্জির সমস্যা- অনেকের শসায় অ্যালার্জি রয়েছে, যার ফলে ত্বকে ফুসকুড়ি, চুলকানি এবং শ্বাসকষ্ট দেখা দিতে পারে।

শসা খাওয়ার সঠিক নিয়ম

শসা অনেকে অনেকভাবে খেয়ে থাকেন বা খান। এটি শবজি থেকে শুরু করে কাচা খেয়ে থাকেন। তবে, নিম্নে শসার খাওয়ার সঠিক নিয়ম সম্পর্কে দেখুন।

  • শসা কাচা অবস্থায় খেলে ভালো করে পরিস্কার করতে হবে।
  • অধিক পরিমাণে শসা না খাওয়া উচিত, বিশেষ করে রাতে।
  • শসা জুস, সালাদ এবং স্মুদি হিসাবে খাওয়ায়া যায়।
  • খাওয়ার সময় অর্গানিক বা জৈব শসা খাবেন।

শসার উপকারিতা ও অপকারিতা- শেষকথা

শসা একটি অধিক পুষ্টিকর উপকারী খাবার, যা শরীরকে সাহায্য করে সুস্থ সতেজ রাখতে তবে, অধিক পরিমাণে শসা খাওয়া থেকে বিরত থাকা এবং সঠিকভাবে পরিস্কার করে খাওয়া উচিত। সঠিক পরিমাণে শসা খেলে এটি হতে পারে স্বাস্থ্যের জন্য অত্যন্ত উপকারী

আরো পড়ুনঃ তুলসির গাছ ও পাতার পুষ্টিগুণ, উপকারিতা ও অপকারিতা

প্রিয় পাঠক পাঠিকাগণ, আমরা আশাকরি আপনাদের সঙ্গে শেয়ার করতে পেরেছি, "শসার পুস্টিগুণ উপকারিতা ও অপকারিতা" সম্পর্কে অনেক তথ্য। যা আপনাদের অনেক উপকারে আসবে বলে আমরা আশাবাদী। এটি ভালো লাগলে ও উপকারি বলে মনে হলে শেয়ার করে দিবেন, ধন্যবাদ।

এই পোস্টটি পরিচিতদের সাথে শেয়ার করুন

পূর্বের পোস্ট দেখুন পরবর্তী পোস্ট দেখুন
এই পোস্টে এখনো কেউ মন্তব্য করে নি
মন্তব্য করতে এখানে ক্লিক করুন

এই ওয়েবসাইটের নীতিমালা মেনে কমেন্ট করুন। প্রতিটি কমেন্ট রিভিউ করা হয়।

comment url