তুলসির গাছ ও পাতার পুষ্টিগুণ, উপকারিতা ও অপকারিতা
আরো পড়ুনঃ কালোজিরার তেলের পুষ্টিগুণ, উপকারিতা ও অপকারিতা
"তুলসি গাছ" বহুল পরিচিত একটি ঔষধি এবং উপকারি গাছ। এই গাছটি হাজার বছরের অধিক সময় ধরে ব্যবহার হয়ে আসছে, আয়ুর্বেদিক চিকিৎসায়। তাছাড়া, এই গাছের গুরুত্ব ধর্মীয় দিক থেকে অনেক। আবার তুলসি গাছ ব্যবহৃত হয়, অসংখ্য স্বাস্থ্য উপকারিতায়।
তাই, অনেকে আছেন যারা তুলসি পাতার সম্পর্কে জানতে চান, সেই কারণে আমরা আজকের আর্টিকেলে আপনারাদের সঙ্গে শেয়ার করবো, "তুলসি গাছের প্রকারভেদ, উপকারিতা, অপকারিতা, খাওয়ার নিয়ম ইত্যদি বিষয় সম্পর্কে বস্তারিত তথ্য।
তুলসি গাছ বা পাতার প্রকারভেদ
তুলসি গাছ বা পাতা বেশ কয়েক প্রকারের হয়ে থাকে এবং এর উপকারিতাও ভিন্ন ধরণের। নিম্নে তুলসি গাছ বা পাতার প্রকারভেদ এবং উপকারিতা সম্পর্কে আলোচনা করা হলো-
- রাম তুলসি- এটি গাড় সবুজ রঙের এবং এর স্বাদে মৃদু তীব্রতা রয়েছে।
- বন তুলসি- এটি পাওয়া যায় সাধারণত বন জঙ্গলে এবং এটি বিভিন্ন রোগের নিরাময়কারি।
- কৃষ্ণ তুলসি- অধিক ঔষধিগুণ সম্পন্ন, এই তুলসি গাছের পাতা দেখতে বেগুনি রঙের হয়ে থাকে।
- কাপুর তুলসি- এই শ্রেণীর তুলসি গাছের বিশেষ একটি সুগন্ধ্য রয়েছে এবং ত্বকের জন্য প্রচুর উপকারি।
তুলসি পাতায় থাকা বিভিন্ন পুষ্টি উপাদান
- ভিটামিন- "এ, সি এবং কে"।
- এসেনশিয়াল অয়েল।
- এথেনলিক এক্সট্রাক্ট।
- ফাইটো নিউট্রিয়েন্ট।
- অ্যান্টি অক্সিডেন্ট।
- ম্যাগনেসিয়াম।
- ক্যালসিয়াম।
- পটাশিয়াম।
- আয়রন।
- জিঙ্ক।
তুলসি পাতার বিভিন্ন স্বাস্থ্য উপকারিতা
তাছাড়া, তুলসি পাতার উপকারিতার কথা সকলের জানা। কিন্তু কিভাবে তুলসি পাতা খেলা উপকার পাওয়া যায়, সে বিষয়টি অনেকে কাছে অজানা। আর ঔষধ হিসাবে এর ব্যবহার অনেক প্রাচীন। এর পাতায় পাওয়া যায়, বিশেষগুণ সম্পন্ন অ্যান্টি অক্সিডেন্ট ও অ্যান্টি ইনফ্লেমেটরি উপাদান।
আর এই উপাদানগুলো অনেক কঠিনরোগ যেমন, ক্যানসার, হ্রিদরোগ, ডায়াবেটিস ইত্যাদির বিরুদ্ধে শক্তিশালী প্রতিরোধ গড়ে তুলতে পারে। এর বিভিন্ন গুণের কারণে হাজার বছরের অধিক সময় ধরে ঔষধ হিসাবে ব্যবহার হয়ে আসছে।
তুলসি গাছের পাতা, বাকল, বীজ এমনকি এর শিকড় পর্যন্ত ঔষধিগুণে ভরপুর। আর এই ঔষধিগুণাবলি বিভিন্ন রোগ নিরাময়ে সাহায্য করে। তবে, চলুন আমরা নিম্নের আলোচনা থেকে জেনে নেই, এর বিশেষ বিশেষ উপকারিতা সম্পর্কে-
** রোগ প্রতিরোধ ক্ষমতা বৃদ্ধি কর- তুলসি পাতায় রয়েছে প্রচুর পরিমাণে অ্যান্টি অক্সিডেন্ট এবং ফাইটোকেমিক্যাল উপাদান। যা, মানুষের রোগ প্রতিরোধ খমমতাকে বাড়ায় এবং এটি রক্ষা করে ব্যাকটেরিয়া এবং ভাইরাসের সংক্রমনের হাত থেকে।
** ক্যানসার প্রতিরোধ করে- তুলসি পাতায় থাকা অ্যান্টি অক্সিডেন্ট উপাদান বিশেষভাবে সাহায্য করে ক্যানসারের কোষ ব্রিদ্ধির হারকে কমাতে এবং শরীরকে বিষাক্ত বিভিন্ন পদার্থর হাত থেকে রক্ষা করতে।
আরো পড়ুনঃ বরই ফলের উপকারিতা ও অপকারিতা
** হৃদরোগের ঝুকি কমায়- তুলসি পাতা সাহায্য করে কোলেস্টেরলের মাত্রা নিয়ন্ত্রণে রাখতে এবং রক্তচাপকে রাখে স্বাভাবিক অবস্থায়। ফলে হৃদরোগের ঝুকি কমে অনেকাংশে।
** নিয়ন্ত্রণে রাখে ডায়াবেটিস- তুলসি পাতার নির্জাস রক্তের শর্করার মাত্রা নিয়ন্ত্রণে রাখতে গুরুত্বপূর্ণ ভুমিকা পালন করে। যা, ডায়াবেটিস রোগীদের জন্য অত্যান্ত উপকারি।
** শ্বাসতন্ত্রের সমস্যা সমাধানে সাহায্য করে- সর্দি- কাশি, অ্যাজমা এবং ব্রঙ্কাইটিস এর মতো রোগের বিরুদ্ধে তুলসি পাতা অনেক কার্যকর। তাছাড়া, এতে থাকা প্রদাহ নিরোধক উপাদান সাহায্য করে, ফুসফুস পরিস্কার রাখার ক্ষেত্রে।
** মানসিক চাপ কমায়- তুলসি পাতায় রয়েছে বিভিন্ন প্রাক্রিতিক উপাদান, যা নিয়ন্ত্রণ করে কর্টিসল হরমোনকে। ফলে অধিক পরিমাণে মানসিক চাপ এবং উদ্বেগ থেকে রক্ষা পাওয়া যায়।
** হজম শক্তি বৃদ্ধিতে সহায়ক- তুলসি পাতার নির্যাস বদহজম ও গ্যাস্ট্রিকের সমস্যা সমাধাণে সাহায্য করে। তাছাড়া, এটি অন্ত্রের ব্যাকটেরিয়াকে নিয়ন্ত্রণে রাখার পাশাপাশি উন্নত করে হজম প্রক্রিয়াকে।
** ত্বক ও চুলের জন্য উপকারি- তুলসি পাতার নির্যাস ত্বকের ব্রণ, মাথার খুসকি এবং চুলপড়া রোধ করাসহ বিভিন্ন সমস্যা সমাধানে সাহায্য করে। কারণ, তুলসি পাতা সমৃদ্ধ থাকে অ্যান্টি সেপটিক এবং অ্যান্টি ফাঙ্গাল উপাদানে।
তুলসি পাতা ব্যবহারের নিয়ম
প্রথমে ১/২টি তুলসি পাতা, আধা চিমটি হলুদেরগুড়ো, মধু ২ টেবিল চামচ, আধা চিমটি কালো গোলমরিচ, এবং আধা চিমটি লং পেপার একসঙ্গে মিশিয়ে ব্লেন্ড করুন। এবার এর মধ্যে থেকে রস বের করুন এবং ৫ মিলি করে প্রতিদিন ২/৩ বার খেতে পারেন।
তবে, যেহেতু প্রতিটি উপাদান প্রচুর গরম প্রকৃতির, তাই এটি নিয়মিত না খেয়ে ২ সপ্তাহ খাওয়ার পর বন্ধ করে দেওয়া উচিৎ। অনেকে আছেন, যারা সকালে ঘুম থেকে উঠেই এই পাতা কাঁচা চিবিয়ে খান, এটা ঠিক নয়। এর রস খাওয়ার ৫/১০ মিনিট পর হালকা গরম পানি খাওয়া প্রয়োজন।
সবচেয়ে ভালো হলো কৃষ্ণ তুলসি পাতা খাওয়া, তবে এটি না পাওয়া গেলে সাধারণ তুলসি পাতা খাওয়া যেতে পারে। যাইহোক, তুলসি পাতা নিম্নের উপায়ে খাওয়া যেতে পারে। চলুন দেখে নেওয়া যাক, তুলসি পাতা খাওয়ার সঠিক নিয়ম-
- তুলসি পাতার চা- তুলসি পাতার চা নিয়মিত পান করলে রোগ প্রতিরোধ ক্ষমাতা বাড়ায় এবং সাহায্য করে স্ট্রেস কমাতে।
- তুলসি পাতার তেল- তুলসি পাতার তেল ব্যবহারে মাথাব্যাথা, জয়েন্টের ব্যাথা এবং চর্মরোগ থেকে মুক্তি পাওয়া যায়।
- কাঁচা পাতা চিবিয়ে খাওয়া- প্রতিদিন সকালে কাঁচা তুলসির পাতা চিবিয়ে খেলে ডিটক্সিফাই হয় শরীর।
- আয়ুর্বেদিক ঔষধ- তুলসি পাতার নির্যাস আয়ুর্বেদিক ঔষধি তৈরিতে ব্যবহার করা হয়।
তুলসি পাতা ব্যবহারের ক্ষেত্রে সতর্কতা
তুলসির পাতার রয়েছে অনেক উপকারিতা, একথা বলার অপেক্ষা রাখে না। তবে, অনেক উপকারিতার পাশাপাশি এই পাতা ব্যবহারের ক্ষেত্রে বেশ কিছু সতর্কতা অবলম্বন করা জরুরি। চলুন দেখে নেই তুলসি পাতা ব্যবহারে সতর্কতা সমূহ-
** রক্ত পাতলা করে- প্রাকৃতিকভাবেই তুলসি পাতা রক্ত পাতলা করে। তাই, অনেকে আছেন যারা রক্ত পাতলা করার ঔষধ যেমন, অ্যাসপিরিন বা ওয়ারফারিন সেবন করছেন, তাদের তুলসি পাতা ব্যবহারের ক্ষেত্রে সতর্ক থাকতে হবে।
** গর্ভবতি ও স্তনদানকারি মা- বোনেরা- তুলসি পাতা গর্ভ ধারণে সমস্যা করতে পারে এবং এতে ঝুকি বাড়ে গর্ভপাতের। তাছাড়া স্তনদানকারি মা বোনদেরকেও এটি অধিক পরিমাণে গ্রহন করা থেকে বিরত থাকা জরুরি।
** রক্ত চাপ এবং শর্করার মাত্রা হ্রাস- তুলসি পাতা রক্তচাপ এবং রক্তের শর্করার পরিমাণ কমাতে সাহায্য করে। সেই কারণে উচ্চ রক্তচাপ এবং ডায়াবেটিস রোগীদের জন্য এটি গ্রহনে সতর্কতা অবলম্বন করা উচিৎ।
** সার্জারির রোগীর ক্ষেত্রে- রক্ত জমাট বাধার প্রক্রিয়াকে প্রভাবিত করে তুলসি পাতা, তাই অস্ত্রোপাচার করার কম পক্ষে ২ সপ্তাহ আগে, এটি গ্রহন করা থেকে বিরত থাকা উচিৎ।
** অ্যালার্জির ঝুকি বাড়ে- অনেক মানুষ আছে, যারা তুলসি পাতা গ্রহন করলে অ্যালার্জির কারণে চুলকানি, ফুসকুড়ি এবং শ্বাসকষ্টের সমস্যা সৃষ্টি হয়। তাই তাদের এটি এডিয়ে চলা উচিৎ।
** শিশুদের ক্ষেত্রে সতর্কতা- ছোট ছেলে মেয়েদের অতিরিক্ত পরিমাণে তুলসি পাতা গ্রহন করা থেকে বিরত থাকা জরুরি। কারণ, তুলসি পাতা তাদের জন্য বেশি শক্তিশালী হয়ে উঠতে পারে।
** ঔষধ সেবনের ক্ষেত্রে- অনেকে আছেন যারা নিয়মিতভাবে বিভিন্ন ঔষধ সেবন করেন বা শারীরিক সমস্যা আছে, তাদের ক্ষেত্রে এটি গ্রহনের আগে চিকিৎসকের পরামর্শ গ্রহন করা উচিৎ।
তুলসি পাতার উপকারিতা ও অপকারিতা- শেষকথা
তুলসি পাতা একটি বিস্ময়কর ঔষধ, যা বিভিন্ন ধরণের রোগ প্রতিরোধে এবং নিরাময়ে গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা রাখে। তবে, তুলসি পাতা গ্রহনের ক্ষেত্রে কিছু সতর্কতা মেনে বা ডাক্তারের পরামর্শ নেওয়া উচিৎ। সর্বপুরি এটি সঠিক নিয়মে সেবনের ফলে সুস্বাস্থ্য এবং রোগমুক্ত জীবন গড়া যায়।
প্রিয় পাঠক পাঠিকাগণ, আপনারা যদি আর্টিকেলটি শুরু থেকে শেষ পর্যন্ত মনোযোগের সঙ্গে পড়ে থাকেন, তাহলে নিশ্চয়ই জেনে গেছেন, "তুলসির পুষ্টিগুণ, উপকারিতা ও অপকারিতা" সম্পর্কে অনেক গুরুত্বপূর্ণ তথ্য।
আরো পড়ুনঃ ডুমুরের পুষ্টিগুণ | ডায়াবেটিস নিয়ন্ত্রণে ডুমুরের উপকারিতা
যা, আমরা আর্টিকেলে পূর্বেই আলোচনা করেছি। আর্টিকেলটি যদি ভালোলাগে এবং উপকারি বলে মনে হয়, তাহলে এটি অন্যের সঙ্গে শেয়ার করবেন। আরো নতুন নতুন তথ্য জানার জন্য আমাদের পরবর্তী আর্টিকেল পড়ুন এবং আমাদের সঙ্গে থাকুন, ধন্যবাদ।
এই ওয়েবসাইটের নীতিমালা মেনে কমেন্ট করুন। প্রতিটি কমেন্ট রিভিউ করা হয়।
comment url