কুমিল্লার জনপ্রিয় ৮ দর্শনীয় স্থান

আরো পড়ুনঃ জোহান ড্রিম ভ্যালি পার্ক এন্ড রিসোর্ট

কুমিল্লা বাংলাদেশের অন্যতম প্রাচীন এবং ঐতিহাসিক জেলা শহর। এই জেলায় রয়েছে, বিভিন্ন দর্শনীয় স্থান, যা পরিচয় বহন করে শিক্ষা, শিল্প এবং সংস্কৃতির। চট্টগ্রাম বিভাগের গুরুত্বপূর্ণ এবং ঐতিহাসিক এই জেলাটি ৭ম থেকে ৮ম শতাব্দীতে আশ্রয়স্থল ছিল, প্রত্নতাত্ত্বিক নিদর্শনের।

ধরণা করা হয় এই জেলাটি অনেক আগে সমতট জনপদের অংশ ছিল। কালক্রমে এটি অন্তর্ভুক্ত হয় ত্রিপুরা রাজ্যের। আর কমলাঙ্ক শব্দ থেকে কুমিল্ল নামটি এসেছে, যার বাংলা অর্থ পদ্মের পুকুর। এই জেলা বাংলাদেশসহ বিভিন্ন দেশে পরিচিতি পেয়েছে পর্যটন আকর্ষণের জন্য।

এই জেলায় রয়েছে, দ্বিতীয় বিশ্বযুদ্ধে নিহত সৈন্যদের কবরস্থান, যা বর্তমানে রক্ষণাবেক্ষণ করছেন, কমনোয়েলথ ওয়ার গ্রেভস কমিশন। আর আজকের আর্টিকেলে আমরা আপনাদের সঙ্গে শেয়ার করবো কুমিল্লার জনপ্রিয় দর্শনীয় স্থান সম্পর্কে।

কুমিল্লার জনপ্রিয় ৮ দর্শনীয় স্থান

অপরূপ প্রাকৃতিক সৌন্দর্যে ভরপুর বাংলাদেশে ঘুরে বেড়ানোর স্থানের অভাব নেই। যদিও, বেড়ানোর উপযুক্ত সময় সেপ্টেম্বর থেকে মার্চ পর্যন্ত। কিন্তু ভ্রমন পিপাসুরা মাসের তোয়াক্কা নাকরে, সুযোগ পেলেই বেরিয়ে পড়েন ভ্রমনের উদ্দেশ্যে।

তবে, ভ্রমনকারি বেশির ভাগ মানুষ ছুটে যান, কক্সবাজার ও কুয়াকাটা সমুদ্রে সৈকত, রাঙ্গামাটি, প্রবাল দ্বীপ সেন্টমার্টিন, খাগড়াছড়ি, বান্দরবান, সিলেট এবং শ্রীমঙ্গলের মত দর্শনীয় স্থানগুলো। কিন্তু এইগুলো সময়ের ব্যপার, তাই অনেকে সময়ের কারণে যেতে পারেন না।

তবে, আপনি চাইলেই দেশের বিভিন্ন প্রান্ত থেকে কুমিল্লার দর্শনীয় স্থানগুলো ঘুরে আসতে পারেন একদিনেই। কারণ, আপনি রাতে রওনা করে সকালে কুমিল্লা পৌঁছে সারাদিন ঘুরে আবার রাতের গাড়িতে করে ফিরে যেতে পারবেন।

কুমিল্লা জেলা শহরটি বাংলাদেশের মধ্যে তৃতীয় বৃহত্তম শহর হিসাবে পরিচিত। যদিও, কুমিল্লা দেশের মানুষের কাছে খাদি কাপড় এবং রসমালাইয়ের জন্য বিখ্যাত হয়ে আছে। কিন্তু অনেকেই জানেন না যে, ভ্রমন পিপাসুদের আনন্দ দেওয়ার জন্য জনপ্রিয় দর্শনীয় স্থান সম্পর্কে। চলুন তাহলে যেনে নেই

ময়নামতি শালবন বৌদ্ধ বিহার কুমিল্লা

বাংলাদেশের গুরুত্বপূর্ণ প্রাচীন প্রত্নতাত্ত্বিক নিদর্শনের মধ্যে অন্যতম কুমিল্লার ময়নামতি শালবন বৌদ্ধ বিহার। এই বৌদ্ধ  বিহারটি পাল বংশীয় রাজা ধর্ম পালের শাসনামলে, অস্টম থেকে নবম শতকের দিকে নির্মাণ করেন।

এই বৌদ্ধ বিহারটি ঐতিহাসিকভাবে ব্যবহার করা হত, শিক্ষা কেন্দ্র এবং ভিক্ষুদের ধ্যান ও ধর্মীয় চর্চার স্থান হিসাবে। চারদিকে ১১৫ টি কক্ষ নিয়ে চতুস্কোণ আকৃতির, প্রাচীন এই ময়নামতি শালবন বিহারের আয়তন প্রায় ৫৫০ বর্গমিটার।

বিহারের ঠিক মাঝখানে একটি বিশাল আকারের মন্দির রয়েছে, যেখানে স্থাপন করা হয়েছিল বুদ্ধের মূর্তি। বিহারট খননের সময় পাওয়া গিয়েছিল বিভিন্ন মূল্যবান প্রত্নতাত্ত্বিক নিদর্শন। যার মধ্যে অন্যতম তাম্র লিপি, বিভিন্ন মুদ্রা, পোড়ামাটির ফলক এবং পাথরের মূর্তি।

বর্তমানে এই বৌদ্ধ বিহারটি দেশের অন্যতম জনপ্রিয় একটি পর্যটনকেন্দ্র। এখানে একটি জাদুঘর স্থাপন করা হয়েছে, আর জাদুঘরে সংরক্ষণ করা হয়েছে প্রত্নতাত্ত্বিক নিদর্শন। ঐতিহ্যের এক উজ্জল প্রতিফলন হিসাবে রয়েছে এই বৌদ্ধ বিহারটি।

লালমাই পাহাড় কুমিল্লা

বাংলাদেশের কুমিল্লা জেলায় অবস্থিত লালমাই পাহাড়টি একটি প্রাচীন এবং ঐতিহাসিক পাহাড়ী অঞ্চল। এই পাহাড়ের দীর্ঘ প্রায় ৫০ কিলোমিটার এবং সমুদ্র পৃষ্ঠ থেকে এর গড় উচ্চতা ১৫ থেকে ৫০ মিটার। এটি মূলত লালমাটির জন্য সু পরিচিত এবং যাকে অনন্য এক রূপ দিয়েছে।

লালমাই পাহাড়ের বিভিন্ন স্থানে পাওয়া জায় প্রচুর প্রত্নতাত্ত্বিক নিদর্শন, যা বহন করে প্রাচীন সভ্যতার অস্তিত্বের প্রমাণ। এখানে দর্শনার্থীদের বিশেষভাবে আকর্ষণ করে শালবন বিহার, রসমঙ্গল, ময়নামতি মঠসহ অনেক প্রত্নতাত্ত্বিক স্থান।

আরো পড়ুনঃ অপরূপ সৌন্দর্যে ভরা সাফিনা পিকনিক স্পট

এছাড়াও, ভ্রমণপিপাসুদের এটি আকর্ষণীয় গন্তব্যে পরিনিত করেছে প্রাকৃতিক সৌন্দর্য ভরপুর এই পাহাড়। ইতিহাস এবং প্রকৃতি প্রেমীদের কাছে এখানকার বৈচিত্র্যময় ভূ-প্রকৃতি, সবুজ প্রকৃতি এবং বিভিন্ন প্রত্নতাত্ত্বিক নিদর্শন এনে দেয় অন্য এক অভিজ্ঞতা।

ময়নামতি যুদ্ধ সমাধিস্থল কুমিল্লা

কুমিল্লা জেলায় অবস্থিত বিভিন্ন ঐতিহাসিক স্থানের মধ্যে অন্যতম জেলার কোটবাড়ি এলাকার অবস্থিত ময়নামতি যুদ্ধ সমাধিস্থল। এখানে দ্বিতীয় বিশ্বযুদ্ধের সময়ের (১৯৩৯ থেকে ১৯৪৫ সাল) বিভিন্ন স্মৃতি বিজড়িত রয়েছে। বর্তমানে এই সমাধিস্থলটি রক্ষণাবেক্ষণ করছেন, কমনওয়েলথ যুদ্ধ সমাধি কমিশন।

দ্বিতীয় বিশ্বযুদ্ধের সময় নিহত হওয়া মিত্রবাহিনীর সৈন্যদের এখানে কবরস্থ করা হয়। এখানে কবর রয়েছে ৭৩৭ সৈনিকের, যাদের বেশির ভাগের বাড়ি ব্রিট্রিশ, ভারতীয়, অস্ট্রেলিয়ান, কানাডিয়ান এবং কমনওয়েলথ এর বিভিন্ন দেশ থেকে আগত সেনারা।

এখানে খোদাই করা রয়েছে নিহতের নাম ফলক, স্মৃতি ফলক এবং সকল কবরের পরিচয় সংবলিত ফলক। ইতিহাসপ্রেমী এবং পর্যটকদের এই ঐতিহাসিক স্থানটি অনেক আকর্ষণ করে।

সবুজ প্রকৃতির মাঝে ঘসে ঘেরা এবং সুন্দর করে রক্ষণাবেক্ষণ করা অবস্থায় থাকা সমাধিস্থলটি স্মরণ করিয়ে দেয়, বীর সেনাদের এবং সচেতনতা বাড়িয়ে দেয় যুদ্ধের ভয়াবহতা সম্পর্কে। এই স্থানটি কুমিল্লার অন্যতম ঐতিহাসিক এবং দর্শনীয় স্থা্ন।

কোটবাড়ি ইকোপার্ক কুমিল্লা

কুমিল্লা জেলার কোটবাড়ি এলাকায় অবস্থিত কোটবাড়ি ইকোপার্কটি বর্তমান সময়ের অন্যতম একটি জনপ্রিয় বিনোদন কেন্দ্রে। বাংলাদেশ বনবিভাগ কর্তৃক প্রতিষ্ঠিত, এটি একটি পরিবেশ বান্ধব উদ্যান, এটি মূলত ময়নামতি এবং লালমাই পাহাড়ের একটি অংশ।

এই পার্কটি মূলত আকর্ষণ করে প্রকৃতি প্রামী এবং অ্যাডভেঞ্চার প্রেমীদের। এখানে রয়েছে, নানান প্রজাতির গাছ-গাছালি, পাহাড়ি বনভূমি এবং বিভিন্ন ধরণের বন্যপ্রাণী। পার্কে হাটাচলার জন্য রয়েছে ট্রেইল, বসার স্থান এবং ছোট জলাশয়, যা দর্শনার্থীদের অনুপ্রাণিত করে।

পার্কের রয়েছে ময়নামতি প্রত্নতাত্ত্বিক স্থল, বাংলাদেশ একাডেমিক ফর ডেভেলপমেন্ট এবং শালবন বিহার। যেখানে কুমিল্লা শহর থেকে খুব সহজে জাওয়া যায়।  কোটবাড়ি ইকোপার্কটি শিক্ষা সফর থেকে শুরু করে বরিবার এবং বন্ধু বান্ধবদের নিয়ে ঘু্রে বেড়ানোর আদর্শ স্থান।

রূপবান মুরাল কুমিল্লা

কুমিল্লার অন্যতম আকর্ষণীয় এবং নান্দনিক স্থাপনা রূপবান মুরাল, যা পরিচিতি পেয়েছে কুমিল্লা শহরের শিল্পকলা এবং সাংস্কৃতিক প্রতিক হিসাবে। এটি কুমিল্লা শহরের কান্দির পাড়ে অবস্থিত এবং এটি নির্মাণ করছেন কুমিল্লা সিটি কর্পোরেশন।

রূপবান মুরাল মূলত বাংলার বিখ্যাত লোককথার চরিত্র "রূপবান" এর প্রতিচিত্র হিসাবে তুলে ধরা হয়ে থাকে। এটি নির্মাণ করা হয়েছে অত্যান্ত শৈল্পিকভাবে, যেখানে ফুটে উঠেছে বাংলার ঐতিহ্য, সংস্কৃতি এবং কল্পনার সংমিশ্রণ।

বাংলা লোককথায় উল্লেখ রয়েছে যে, রূপবান ছিলেন একজন অসাধারণ সুন্দরী নারী, এখানে তাঁর চরিত্র এবং করুণ কাহিনীর অংশ ফুটে উঠেছে। এই মুরালটি রূপবানের ঐতিহ্যকে ধরে রাখার প্রচেষ্টা করা হয়েছে, এটি কুমিল্লার অন্যতম দর্শনীয় স্থান।

নানায়ার দিঘী কুমিল্লা

কুমিল্লা শহরের অইতিহ্যের প্রতিক হিসাবে মনে করা হয় নানায়ার দিঘিকে। এটি  কুমিল্লা শহরের অন্যতম ঐতিহাসিক এবং সুন্দরতম জলাশয়, যা খনন করা হয়েছিল কয়েক শত বছর আগে। দিঘিটি কুমিল্লা নগরীর প্রাণকেন্দ্রে থাকায়, শহরের সৌন্দর্য বৃদ্ধিতে ভূমিকা রেখেছে।

নানায়ার দিঘি আয়তনের দিক থেকে অনেক বড় এবং কুমিল্লা শহরের মানুষের বিনোদনের অন্যতম স্থান। দীঘির চারিদিকি সবুজ গাছ পালায় ঘেরা এবং চারিদিকে হাটার রাস্তা থাকায় শহরের মানুষেরা এখানে সকাল বিকাল হাটার জন্য আসেন।

বিভিন্ন উৎসব, সামাজিক কর্মকাণ্ড কিংবা ধর্মীয় অনুষ্ঠানে স্থানীয়দের কাছে এটি বিবেচিত হয় গুরুত্বপূর্ণ স্থান হিসাবে। যে সকল মানুষ প্রকৃতির সৌন্দর্য উপভোগ করতে চান, সেই সকল পর্যটকদের কাছে এটি একটি আকর্ষণীয় স্থান।

ধর্ম সাগর নদী কুমিল্লা

কুমিল্লা শহরের প্রাণকেন্দ্রে অবস্থিত ধর্ম সাগর নদীটি একটি ঐতিহাসিক জলাশয়, এটি ত্রিপুরার রাজা ধর্মমানিক্য ১৫ শতকে খনন করেন। কুমিল্লার অন্যতম প্রাচীন দিঘি এটি, যা পানির উৎস হিসাবে কুমিল্লার জনগনের কাছে এর গুরুত্ব অন্যতম।

দীঘিটির আয়তন প্রায় ২৩ একর, যা কুমিল্লা শহরের সবুজ পরিবেশের সৌন্দর্যকে বাড়িয়ে তুলেছে। এর চারপাশে সবুজ ছায়ায় ঘেরা বৃক্ষরাজি এবং খোলা পরিবেশ বিনোদনের জন্য করে তুলেছে আরো আকর্ষণীয়। শহরের স্থানীয় জনগন এখানে মাছ শিকার এবং অবসর যাপনের জন্য আসেন।

কুমিল্লার ঐতিহাসিক এবং দর্শনীয় স্থান- শেষকথা

কুমিল্লা বাংলাদেশের অন্যতম একটি প্রাচীন এবং ঐতিহাসিক জেলা। এই জেলার বিভিন্ন স্থানে ছড়িয়ে রয়েছে অনেক দর্শনীয় এবং ঐতিহাসিক স্থাপনা। যা, দেশ বিদেশের ভ্রমণ পিপাসু এবং পর্যটকদের বিশেষভাবে আকর্ষণ করে।

প্রিয় পাঠক পাঠিকাগণ, আমরা আশাকরি আপনাদের সঙ্গে শেয়ার করতে পেরেছি "কুমিল্লার জনপ্রিয় ৮ দর্শনীয় স্থান" সম্পর্কে অনেক তথ্য। যা, আপনাদের অনেক উপকারে আসবে বলে আমরা আশাবাদী। বিশেষ করে যারা কুমিল্লা ভ্রমণে যেতে ইচ্ছুক তাদের ক্ষেত্রে।

আরো পড়ুনঃ ময়মনসিংহের জনপ্রিয় দর্শনীয় স্থান

আর্টিকেলটি যদি আপনাদের ভালোলাগে ও উপকারি বলে মনে হয়, তাহলে আটি আপনাদের পরিচিতদের সঙ্গে শেয়ার করবেন। আরো নতুন নতুন তথ্য জানার জন্য, আমাদের পরবর্তী আর্টিকেল পড়ুন এবং আমাদের সঙ্গে থাকুন, ধন্যবাদ।

এই পোস্টটি পরিচিতদের সাথে শেয়ার করুন

পূর্বের পোস্ট দেখুন পরবর্তী পোস্ট দেখুন
এই পোস্টে এখনো কেউ মন্তব্য করে নি
মন্তব্য করতে এখানে ক্লিক করুন

এই ওয়েবসাইটের নীতিমালা মেনে কমেন্ট করুন। প্রতিটি কমেন্ট রিভিউ করা হয়।

comment url