ডুমুরের পুষ্টিগুণ | ডায়াবেটিস নিয়ন্ত্রণে ডুমুরের উপকারিতা
আরো পড়ুনঃ ডায়াবেটিস নিয়ন্ত্রণে রাখার সহজ এবং কার্যকর উপায়
ডায়াবেটিস বর্তমানে একটি বৈশ্বিক সমস্যায় পরিণত হয়েছে। যা, ব্যাপকভাবে প্রভাব ফেলতেছে মানুষের স্বাস্থ্য এবং জীবনজাত্রার উপর। আর ডায়াবেটিস এমন একটি শারীরিক অবস্থানের নাম, যার ফলে মানুষের শরীর প্রয়োজনীয় ইনসুলিন উৎপাদন করতে পারে না।
তবে, প্রাকৃতিকভাবে বিভিন্ন উপায়ে ডায়াবেটিস অনেকটা নিয়ন্ত্রণ করা যায়। তার মধ্যে অন্যতম হল ডুমুর, যা এই রোগ নিয়ন্ত্রণে গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা পালন করে থাকে। আর আজকের আর্টিকেলে আমরা আপনাদের সঙ্গে শেয়ার করবো "ডায়াবেটিস নিয়ন্ত্রণে ডুমুরের উপকারিতা সম্পর্কে" গুরুত্বপূর্ণ তথ্য।
ডুমুরের বিভিন্ন ধরণের পুষ্টি উপাদান
ডুমুর ভিটামিন, খনিজ এবং অ্যান্টি অক্সিডেন্ট সমৃদ্ধ একটি পুষ্টিকর ফল। ডুমুরে পাওয়া যায় ভিটামিন "এ, সি, এ এবং কে", যা আমাদের সাহায্য করে শরীরের রোগ প্রতিরোধ ক্ষমতা বাড়াতে। ডুমুরে রয়েছে প্রচুর ফাইবার, উন্নত করে হজম প্রক্রিয়া এবং নিয়ন্ত্রণে রাখে শর্করার মাত্রাকে।
এছাড়াও ডুমুরে রয়েছে, ক্যালসিয়াম, ম্যাগনেসিয়াম এবং পটাশিয়াম যা, হাড়ের স্বাস্থ্য এবং হৃদ রোগের জন্য উপকারি। ডুমুরে থাকা অ্যান্টি অক্সিডেন্ট কমায় শরীরের প্রদাহ এবং রক্ষা করে কোষের ক্ষতি, ফলে এটি প্রচুর উপকারি স্বাস্থ্যগত দিক থেকে।
ডায়াবেটিস নিয়ন্ত্রণে ডুমুরের উপকারিতা
ডুমুর একটি অধিক পুষ্টিকর ফল, যাতে ভরপুর থাকে ভিটামিন, খনিজ, শর্করা এবং অ্যান্টি অক্সিডেন্টে। যদিও, বিভিন্ন ধরণের প্রাকৃতিক উপাদান রয়েছে ডায়াবেটিস নিয়ন্ত্রণের জন্য। কিন্তু অন্য সকল উপাদানের মধ্যে অন্যতম প্রধান উপাদান হলো "ডুমুর"।
তাই, বিভিন্ন পুষ্টি উপাদানে ভরপুর ডুমুর হতে পারে ডায়াবেটিস রোগীদের জন্য অনেক উপকারি একটি ফল। আর যে কারণে ডায়াবেটিস রোগীদের জন্য এই ফল উপকারি হতে পারে, সে সম্পর্কে নিম্নের আলোচনায় আপনাদের সমনে তুলে ধরার চেষ্টা করছি। তাহলে চলুন দেখি-
** রক্তে শর্করার নিয়ন্ত্রণ করে- ডুমুরের সবচেয়ে বড় উপকারিতা বা গুণ হলো, এটি সাহায্য করে রক্তে শর্করার মাত্রা নিয়ন্ত্রণে রাখতে। কারণ, ডুমুরে থাকা ফাইবার বা আঁশ এবং পেকটিন নামক এক ধরণের উপাদান সাহায্য করে, শরীরে গ্লুকোজের শোষণকে ধীর গতি করতে।
এর ফলে শরীরের রক্তে শর্করার স্তর দ্রুত বাড়ে না। এটি বিশেষভাবে উপকারি টাইপ ২ ডায়াবেটিস রোগীর জন্য, যারা ইনসুলিনের প্রতি সঠিক প্রক্রিয়া দেখতে পারেন না।
ডুমুরে রয়েছে পলিফেনলস, যা এক ধরণের অ্যান্টি অক্সিডেন্ট, যা সাহায্য করে শরীরে গ্লুকোজের পরিমাণ কমাতে এবং সাহায্য করে ইনসুলিন রেজিস্ট্যান্স (Insulin Resistance) কমাতে। এর ফলে শরীরে বৃদ্ধ পায় গ্লুকোজের ব্যবহার ক্ষমতা এবং নিয়ন্ত্রণে থাকে ডায়াবেটিস।
** উন্নত করে হৃদযন্ত্রের স্বাস্থ্য- হৃদরোগ হলো ডায়াবেটিস রোগের সঙ্গে সম্পর্কিত অন্যতম একটি সাধারণ রোগ। আর ডুমুরে থাকা ফাইবার, পটাশিয়াম এবং ম্যাগনেশিয়াম বিশেষভাবে সাহায্য করে হৃদ রোগের ঝুকি কমাতে।
তাছাড়া, এটি রক্তচাপ নিয়ন্ত্রণে রাখার পাশাপাশি উন্নত করে হৃদরোগের কার্যকরীতাকে। আর হৃদরোগের ঝুকি কমার ফলে, আরো উন্নত স্বাস্থ্য নিশ্চিত হয় ডায়াবেটিস রোগীদের জন্য।
** উচ্চ মাত্রার ফাইবার- ডুমুরে পাওয়া যায় উচ্চ মাত্রার প্রচুর ফাইবার, যা সহজ করে তোলে হজম প্রক্রিয়াকে এবং উন্নতি সাধন করে অন্ত্রের স্বাস্থ্যের। তাছাড়া, ফাইবার রক্তে শর্করার পরিমাণকে স্থিতিশীল রাখতে গুরুত্বপূর্ণ ভুমিকা পালন করে।
এটি হজমের সময় গ্লকোজের শোষণকে করে দেয় ধীর গতি এবং শরীরে সরবরাহ করে প্রয়োজনীয় পুষ্টি। সেই সঙ্গে ফাইবার আপনাকে দীর্ঘ সময় ধরে পেটপূর্ণ থকতে সাহায্য করে, ফলে কমানো সম্ভাব হয় অতিরিক্ত খাওয়ার প্রবণতাকে।
** কমানো যায় ইনসুলিন রেজিস্ট্যান্স- ইনসুলিন রেজিস্ট্যান্স হলো এমনি একট জটিল অবস্থা, যার ফলে অনেক কমে যায়, শরীরে থাকা কোসগুলোর ইনসুলিনের প্রতি প্রতিক্রিয়া।
আরো পড়ুনঃ হাঁসের ডিমের পুষ্টিগুণ, উপকারিতা ও অপকারিতা
আর ডুমুরে থাকা বিভিন্ন উপাদান যেমন, ফাইবার এবং অ্যান্টি অক্সিডেন্ট শরীরের কোষগুলিকে ইনসুলিনের প্রতি প্রতিক্রিয়া বাড়াতে সাহায্য করে। আর এতে করে বৃদ্ধিপায় ইনসুলিনের কার্যকরীতাকে এবং কমে আসে রক্তে শর্করার মাত্রা।
** ডুমুরে থাকা পুষ্টি উপাদান- ডুমুরে যে সকল পুষ্টি উপাদান পাওয়া যায়, তা ডায়াবেটিস রোগীদের শক্তি যোগায়। এটি সাহায্য করে শরীরের সেলগুলোকে সঠিক কার্যক্রমে এবং দ্রুত পুনরুদ্ধারে। আর এতে থাকা খনিজ উপাদান এবং ভিটামিন "এ, সি, ই" সাহায্য করে শরীরকে সামগ্রীক উন্নত করতে।
** ডায়াবেটসের পার্শ্বপ্রতিক্রিয়া কমানো- ডুমুরে যে সকল খনিজ উপাদান এবং অ্যান্টি অক্সিডেন্ট থাকে, সেগুলো ডায়াবেটসের কারণে হওয়া পার্শ্বপ্রতিক্রিয়া যেমন, চোখ, স্নায়ু, কিডনি ইত্যাদির সমস্যা কমাতে সাহায্য করে। কারণ, ডুমুর শরীরের রোগ প্রতিরোধ ক্ষমতা বাড়াতে সাহায্য করে।
** কোষ্ঠকাঠিণ্য রোধ- ডুমুরে রয়েছে ফাইবার, যা কোষ্ঠকাঠিণ্য রোধ করতে সাহায্য করে। কারণ, কোষ্ঠকাঠিণ্য ডায়াবেটিস রোগীর বড় একটি সমস্যা, যা সৃষ্টি করে হজমের মত জটিল সমস্যার। আর ডুমুর পারে দূর করতে এবং উন্নত করতে পারে অন্ত্রের কার্যকরীতাকে।
** অ্যান্টি ইনফ্লামেটরি গুণাবলী- ডুমুরে রয়েছে অ্যান্টি ইনফ্লামেটরি গুণাবলী, যা সাহায্য করে শরীরের প্রদাহ কমাতে। ডায়াবেটিস একটি প্রদাহ জনিত রোগ, যা ক্ষতি করে শরীরের বিভিন্ন অঙ্গের। ডুমুরে থাকা অ্যান্টি ইনফ্লামেটরি গুণাবলী লড়াই করে প্রদাহের বিরুদ্ধে ও সু-রক্ষা করে শরীরের টিসুগুলোকে।
** ডুমুরের পাতা ও রস- ডুমুরের পাতা ও রস ডায়াবেটিস নিয়ন্ত্রণে সাহায্য করে। ডুমুরের পাতায় থাকা উপাদানগুলো রক্তে শর্করার মাত্রা কমাতে সাহায্য করে ও ইনসুলিনের কার্যকরীরা বাড়ায়। ডুমুরের পাতা সেদ্ধ করে, রস পান করলে শরীরের গ্লুকোজের পরিমাণ কমাতে সাহায্য করে।
ডুমুর খাওয়ার ক্ষেত্রে সতর্কতা বা অপকারিতা
ডুমুর খাওয়ার অনেক উপকারিতা রয়েছে, একথা বলার অপেক্ষা রাখে না। বিশেষ করে ডায়াবেটিস রোগীদের ক্ষেত্রে অনেক উপকারিতা রয়েছে। তবে, এই উপকারি ফল খাওয়ার ক্ষেত্রে কিছু সাবধানতা অবলম্বন করা জরুরি। নিম্নে এর সতর্কতা সম্পর্কে আলোচনা করা হলো-
** অতিরিক্ত না খাওয়া- ডুমুর খাওয়ার ক্ষেত্রে এর পরিমাণের প্রতি নজর দেওয়া বিশেষ প্রয়োজন। কারণ, এই ফলে কিছু পরিমাণ শর্করা থাকে, যা বেশি পরিমণে খাওয়ার কারণে রক্তে শর্করার পরিমাণ বেড়ে যেতে পারে।
** ডায়াবেটিস রোগীর ক্ষেত্রে সতর্কতা- যেহেতু ডুমুর খাওয়ার কারণে, রক্তে শর্করার পরিমাণ পরিবর্তন হয়। সেহেতু, ডায়াবেটিস রোগীরা ডুমুর খাওয়ার পূর্বে ডাক্তারের পরামর্শ নেওয়া প্রয়োজন।
** পেট ও এলার্জির সমস্যা থাকলে- অনেক আছেন যারা ডুমুর খাওয়ার পর এলার্জি বা পেটের সমস্যায় পড়েন। তাই প্রথমবার ডুমুর খাওয়ার আগেই ভালো করে পরীক্ষা করে দেখা উচিৎ।
** খালি পেটে ডুমুর না খাওয়া- যদিও ডুমুর খাওয়ার কারণে, সাহায্য করে পরিপূর্ণতা অনুভব করতে, তবুও খালি পেটে ডুমুর না খাওয়াই ভালো। কারণ, এতে আপনার হজমের সমস্যা হতে পারে।
** অতিরিক্ত শর্করা এড়িয়ে চলুন- চিনিযুক্ত এবং প্রক্রিয়াজাত ডুমুরের খাবারকে এড়িয়ে চলা উচিৎ। কারণ, অতিরিক্ত শর্করা ক্ষতির কারণ হতে পারে শরীরের জন্য।
** শারীরিক সমস্যা- আপনার যদি শারীরিক সমস্যা থাকে, সেক্ষেত্রে চিকিৎসকের পরামর্শ ছাড়া ডুমুর খাওয়া উচিৎ নয়।
ডুমুর খাওয়ার উপকারিতা ও অপকারিতা- শেষকথা
ডুমুর একটি প্রাকৃতিক এবং পুষ্টিকর ফল, যা ডায়াবেটিস রোগীদের জন্য অনেক উপকারি। এই ফলে রয়েছে বিভিন্ন উপাদান যেমন, ফাইবার, পলিফনলস, অ্যান্টি অক্সিডেন্ট এবং খনিজ, যা ডায়াবেটিস নিয়ন্ত্রণে সাহায্য করে।
তাছাড়া ডুমুর শরীরের বিভিন্ন সমস্যার প্রতিকার করতে সাহায্য করে। তবে, ডায়াবেটিস নিয়ন্ত্রণে ডুমুরের উপকারিতা পেতে ডাক্তারের পরামর্শ নেওয়া উচিৎ। কারণ, অনেক সময় এটি মানুষের শরীরে ভিন্ন পরিস্থিতির সৃষ্টি করতে পারে।
প্রিয় পাঠক পাঠিকাগণ, আমরা আশাকরি আপনারা আর্টিকেলটি শুরু থেকে শেষ পর্যন্ত মনোযোগের সঙ্গে পড়েছেন এবং জেনে গেছেন "ডুমুরের পুষ্টিগুণ ও ডায়াবেটিস নিয়ন্ত্রণে ডুমুরের উপকারিতা" সম্পর্কে অনেক তথ্য।
আরো পড়ুনঃ কোয়েল পাখির ডিমের পুস্টিগুণ উপকারিতা ও অপকারিতা
যা আমরা আর্টিকেলে ইতিপূর্বেই আলোচনা করেছি। আর্টিকেলটি যদি আপনাদের ভালোলাগে এবং উপকারি বলে মনে হয়, তাহলে এটি অন্যের সঙ্গে শেয়ার করবেন। আরো নতুন নতুন তথ্য জানার জন্য আমাদের পরবর্তী আর্টিকেল পড়ুন এবং আমাদের সঙ্গে থাকুন, ধন্যবাদ।
এই ওয়েবসাইটের নীতিমালা মেনে কমেন্ট করুন। প্রতিটি কমেন্ট রিভিউ করা হয়।
comment url