অপরূপ সৌন্দর্যে ভরা সাফিনা পিকনিক স্পট
আরো পড়ুনঃ ময়মনসিংহের জনপ্রিয় দর্শনীয় স্থান
রাজশাহী জেলা বাংলাদেশের মধ্যে অন্যতম একটি ঐতিহাসিক এবং সাংস্কৃতিক দিক থেকে সমৃদ্ধশালী জেলা। এই জেলাটি প্রাকৃতিক সৌন্দর্য এবং সুস্থ জীবন ধারার জন্য, সারা দেশের মানুষের কাছে অনেক বিখ্যাত।
এখানকার অসংখ্য দর্শনীয় স্থানগুলো পর্যটকদের গুরুত্বপূর্ণ গন্তব্য স্থান হিসাবে পরিচিত। এই সকল স্থানগুলোর মধ্যে অন্যতম জনপ্রিয় স্থান হলো রাজশাহী জেলার গোদাগাড়ি উপজেলায় অবস্থিত সাফিনা পিকনিক স্পট। সাফিনা পিকনিক স্পটটি এখন একটি মনোরোন স্থান।
যেখানে শান্ত পরিবেশ, প্রকৃতির অপূর্ব সৌন্দর্য, যেখানে কিছু সময় কাটালে, যে কারো মন নিমিষে ভালো হয়ে যাবে। তাই, যারা কিছু সময়ের জন্য পরিবার কিংবা বন্ধু বান্ধবদের সঙ্গে সময় কাটাতে চান, তারা ঘুরে আসতে পারেন সাফিনা পিকনক স্পট থেকে।
সাফিনা পিকনিক স্পটের অবস্থান
সাফিনা পিকনিক স্পটটি রাজশাহী জেলা শহর থেকে মাত্র ৩২ কিলোমিটার দূরে এবং নাচোল উপজেলা সদর থেকে মাত্র ১২ কিলোমিটার দূরে অবস্থিত। এই পিকনিক স্পটটি রাজশাহী জেলা শহর এবং নাচোল উপজেলা সদরের কাছাকাছি হওয়ায় খুব সহজে যাওয়া যায়।
সাফিনা পিকনিক স্পটটি অপূর্ব সুন্দর পরিবেশে সজ্জিত এবং আপনি কিছু সময়ের জন্য হারিয়ে যাবেন প্রকৃতির অন্দরমহলে। আর রাজশাহী থেকে সাফিনা পিকনিক স্পটে যাতায়াত অনেক সুবিধাজনক, সেখান কার রাস্তাঘাট এবং উন্নত যোগাযোগের কারণে।
সাফিনা পিকনিক স্পটের অপরূপ সৌন্দর্য
সাফিনা পিকনক স্পটের অন্যতম প্রধান আকর্ষণ হলো, তার অপরূপ প্রাকৃতিক সৌন্দর্য। এখানে রয়েছে, চারপাশে সবুজ গাছপালা, খোলা আকাশ, সুপ্রশান্ত নদী এবং এর সঙ্গে পাহাড়ের নিচে শান্ত প্রকৃতি সৃষ্টি করেছে চমৎকার এক দৃশ্যের।
সাফিনা পিকনিক স্পটে আপনি গেলে দেখতে পাবেন সারিসারি সবুজ মাঠ এবং বিভিন্ন গাছ গাছালির সারি, এককথায় আপনি হারিয়ে যাবেন একদম প্রকৃতির মধ্যে। সেখানে থাকা নদীর পাশের পরিবেশ খুবই সু- শীতল।
আর, তার একধারে তৈরি করেছে সুন্দর একটি পিকনিক স্পট। আপনি যদি পিকনিক করার জন্য আদর্শ স্থান খোজ করেন, তাহলে সাফিনা পিকনিক স্পট হতে পারে, আপনার জন্য আদর্শ স্থান। তাছাড়া, এখানে আপনি পাবেন সাইক্লিং এবং হাটাহাটি করার দুর্দান্ত পরিবেশ।
পিকনিকের জন্য জনপ্রিয় স্থান সাফিনা পিকনিক স্পট
সাফিনা পিকনিক স্পটটি বর্তমান সময়ের অন্যতম জনপ্রিয় একটি পিকনিক স্পট। এখানে পরিবার পরিজন, বন্ধুবান্ধব কিংবা সহপাটিসহ অন্যান্য যে কারো সঙ্গে, একত্রিত হয়ে আনন্দঘন সময় কাটানোর জন্য উপযুক্ত।
বিশাল জায়গা রয়েছে সাফিনা পিকনিক স্পটের ভিতরে। এখানে আপনি উপভোগ করতে পারবেন, প্রাকৃতিক সৌন্দর্যের মাঝে দেশি বিদেশি বিভিন্ন পাখির কলকাকলি। বিশেষ করে স্থানটি অনেক জনপ্রিয় শীতকালে।
কারণ, শিতের সময় উপভোগ্য হয়ে উঠে এখানের তাপমাত্রা ও প্রকোট আকার ধারণ করে প্রাকৃতিক সৌন্দর্য। ক্যাম্পিং, র্যাফটিং এবং মাছ ধরা এখানকার অ্যাডভেঞ্চার কার্যক্রমও রয়েছে, যা আরো বেশি আনন্দ দেয় এবং উত্তেজনা সৃষ্টি করে।
পিকনিকের সঙ্গে সঙ্গে আপনি চাইলে, সেখানে থাকা নদীতে নৌকা ভ্রমনসহ নদীর পাড়ে বসে আড্ডা দেওয়ার সাথে সাথে, স্ন্যাক্স কিংবা মিষ্টি পানীয়র স্বাদ নিতে পারবেন। ্তবে, এখানে নিরাপত্তা বিশেষ করে ছোট শিশুদের বিসয়টই বিবেচনা করা প্রয়োজন।
সাফিনা পিকনিক স্পটে স্থানীয় খাবার ও সংস্কৃতি
সাফিনা পিকনিক স্পট যেমন আপনাকে মুগ্ধ করবে, তেমনিভাবে সেখানকার স্থানীয় খাবারের স্বাদ আপনাকে নিয়ে যাবে অন্য এক জগতে। তাছাড়া, সেখানকার স্থানীয় খাবারের পাশাপাশি নিতে পারবেন রাজশাহীর "দই, মিষ্টি এবং বড়ির স্বাদ।
সাফিনা পিকনিক স্পট এলাকার মানুষের আথিতিয়তা এবং ভাষা, সংস্কৃতি আপনাকে খুব সহজেই সেই এলাকার পরিবেশের সঙ্গে মানিয়ে নিতে সাহায্য করবে। যা, আপনি একবার না গেলে বুঝতে পারবেন না।
সাফিনা পিকনিক স্পটের কাছে থাকা আরো দর্শনীয় স্থান
সাফিনা পিকনিক স্পটের কাছে বেশ কিছু জনপ্রিয় দর্শনীয় স্থান রয়েছে, যেখানে প্রতিদিন অসংখ্য পর্যটক ভিড় জমান। এইগুলোর উল্লেখজোগ্য এবং জনপ্রিয় কয়েকটি দর্শনীয় স্থান সম্পর্কে নিম্নে সংক্ষেপে আলোচনা করা হল-
আরো পড়ুনঃ নাটোর জেলার জনপ্রিয় দর্শনীয় স্থান
ঐতিহাসিক ছোট সোনা মসজিদ
ঐতিহাসিক ছোট সোনা মসজিদটি চাঁপাইনবাবগঞ্জ জেলার শিবগঞ্জ উপজেলায় অবস্থিত। চাঁপাইনবাবগঞ্জ থেকে প্রায় ৩৫ কিলোমিটার দূরে কানসাটে অবস্থিত। যাওয়ার জন্য বাস, সিএনজি এবং অটোরিক্সায় করে প্রায় ১ ঘন্টা সময় লাগে।
তবে, ছোট সোনা মসজিদ খুব কাছাকাছি অনেক গুরুত্বপূর্ণ এবং ঐতিহাসিক আরো বেশ কয়েকটি দর্শনীয় স্থান রয়েছে। যা আপনি সোনা মসজিদ ভ্রমনে গিয়ে, খুব সহজেই দেখে আসতে পারবে। যেমন-
- কোতোয়ালী দরওয়াজা।
- তোহাখানা কমপ্লেক্স।
- খঞ্জনদীঘির মসজিদ।
- তিন গম্বুজ মসজিদ।
- দারাসবাড়ী মসজিদ।
- চামচিকা মসজিদ।
- শাহ্ নেয়ামতউল্লাহ (রহঃ) এর মাজার এবং
- বীরশ্রেষ্ঠ শহীদ ক্যাপ্টেন মহিউদ্দিন জাহাঙ্গীরের সমাধি।
ঐতিহাসিক আলী শাহপুর মসজিদ
ঐতিহাসিক আলী শাহপুর মসজিদটি নাচোল উপজেলা সদর থেকে মাত্র ১০ কিলোমিটার পশ্চিমে প্রত্যান্ত গ্রাম আলী শাহাপুরে অবস্থিত। এই মসজিদে জাওয়ার জন্য নাচোল থেকে অটোরিক্সা, নসিমন বা মোটর সাইকেলে খুব সহজে যাওয়া যায়।
বাবু ডাইং পিকনিক স্পট
বাবু ডাইং পিকনিক স্পটটি চাপাইনবাবগঞ্জ উপজেলা সদর থেকে মাত্র ১০ কিলোমিটার দূরে অবস্থিত। এটি পাকা রাস্তা এবং কাচাকাছি হওয়ার কারণে চাপাইনবাবগঞ্জ থেকে যে কোন, যানবাহনে করে খুব সহজে যাওয়া যায়।
রাজশাহীর জনপ্রিয় স্থান টি বাঁধ
রাজশাহী শহরের প্রাণ কেন্দ থেকে, একটু এগিয়ে গেলেই রাজশাহী টি-বাঁধ। এটি রাজশাহী শহরের পদ্মা নদীর তীরে অবস্থিত একটি গুরুত্বপূর্ণ প্রতিরক্ষা বাঁধ। এই বাধটি মূলত রাজশাহী শহরকে রক্ষার জন্য নির্মিত হলেও, এখন এটি একটি জনপ্রিয় পর্যটন স্থান হিসেবে পরিচিত।
এটি পদ্মা নদীর তীব্র ভাঙন থেকে শহরকে রক্ষা করতে নির্মাণ করা হয় ১৯৯০-এর দশকে। টি-বাঁধ নামটি এসেছে এর আকৃতির কারণে। কারণ, এটি দেখতে ইংরেজি ‘T’ অক্ষরের মতো দেখায়। এটি রাজশাহী শহরের কাটাখালি এলাকা থেকে শুরু হয়ে পদ্মা নদীর তীর বরাবর বিস্তৃত।
বাঁধটি স্থানীয় তথা রাজশাহী শহরে বসবাসকারি বাসিন্দাদের জন্য হাঁটাচলা ও বিশ্রামের জায়গা হিসেবে ব্যবহৃত হয়। বিশেষ করে সন্ধ্যায় ও শীতের মৌসুমে এখানে প্রচুর ভ্রমণার্থী আসেন। এখান থেকে পদ্মা নদীর নয়নাভিরাম দৃশ্য উপভোগ করা যায়।
অনেকেই এই বাঁধে বসে পদ্মা নদীর ঠাণ্ডা বাতাস উপভোগ করেন এবং সূর্যাস্তের অপরূপ সৌন্দর্য দেখতে আসেন। রাজশাহী টি-বাঁধের আশেপাশে কিছু খাবারের দোকান ও বসার স্থান রয়েছে, যা এটিকে আরও আকর্ষণীয় করে তুলেছে।
বেশ কিছুদিন থেকে এই বাধটি শুধু এখন একটি রাজশাহী শহর প্রতিরক্ষা বাঁধ নয়, বরং রাজশাহী এবং এর আশপাশের এলাকার মানুষের বিনোদনের একটি কেন্দ্রবিন্দুও। এছাড়াও, রাজশাহী শহরে থাকা আরো কয়েটি জনপ্রিয় বিনোদন কেন্দ্র রয়েছে। যেমন-
- ওয়াটার পার্ক।
- পদ্মা গার্ডেন।
- আই বাঁধ।
- লালন শাহ মুক্তমঞ্চ।
- প্যারিস রোড রাজশাহী বিশ্ব বিদ্যালয়।
- রাজশাহীর কয়েকটি কয়েকটি আলোকসজ্জিত রোড।
- দৃষ্টি নন্দন রাজশাহী কলেজ।
- শহীদ জিয়া শিশু পার্ক।
- রাজশাহী চিড়িয়াখানা।
সাফিনা পিকনিক স্পটের নিরাপত্তা ব্যবস্থা
সাফিনা পিকনিক স্পটটি পর্যটকদের কাছে অনেক জনপ্রিয় এবং নিরাপদ স্থান। এখানে প্রচুর নিরাপত্তা বিশেষকরে আলাদা নিরাপত্তা ব্যবস্থা রয়েছে ক্যাম্পিং বা ত্রিপের জন্য। এছাড়াও, এখানে পর্যটকদের জন্য রয়েছে, বসার স্থান, খাবার দোকানসহ বিভিন্ন ধরণের দোকান, রেস্টুরেন্ট এবং টয়েলেটের ব্যবস্থা।
এছাড়াও, সাফিনা পিকনিক স্পটটি খুবই পরিচ্ছন্ন এবং পরিবেশবান্ধব। পিকনিক স্পট কর্তৃপক্ষ এখানে নিয়মিত পরিস্কার-পরিচ্ছন্নতা বজায় রাখেন, যাতে পর্যটকরা একটি স্বাস্থ্যকর পরিবেশে আনন্দ উপভোগ করতে পারেন।
প্রাকৃতিক সৌন্দর্য ভরা সাফিনা পিকনিক স্পট- শেষকথা
সাফিনা পিকনিক স্পট তার প্রাকৃতিক সৌন্দর্য, উন্নত যোগাযোগ ব্যবস্থা এবং নিরাপদ পরিবেশের কারণে পর্যটকদের কাছে একটি আদর্শ ভ্রমণস্থান। যারা প্রকৃতিকে ভালোবাসেন এবং প্রকৃতির মাঝে কিছুটা সময় কাটাতে চান, তাদের জন্য হতে পারে এটি এক অনন্য গন্তব্য।
প্রিয় পাঠক পাঠিকাগণ, আপনারা যদি আর্টিকেলটি শুরু থেকে সেস পর্যন্ত মনোযোগের সঙ্গে পড়ে থাকেন, তাহলে নিশ্চয়ই জেনে গেছেন, "অপরূপ সৌন্দর্যে ভরা সাফিনা পিকনিক স্পট" সম্পর্কে অনেক গুরুত্বপূর্ণ তথ্য।
আরো পড়ুনঃ মাটির মায়া ইকো রিসোর্ট গাজিপুর
যা, আপনাদের অনেক উপকারে আসবে বলে আমরা আসাবাদি। আর্টিকেলটি যদি ভালোলাগে এবং উপকারি বলে মনে হয়, তাহলে এটি অন্যের সঙ্গে শেয়ার করবেন। আরো নতুন নতুন তথ্য জানার জন্য আমাদের পরবর্তী আর্টিকেলটি পড়ুন এবং আমাদের সঙ্গে থাকুন, ধন্যবাদ।
এই ওয়েবসাইটের নীতিমালা মেনে কমেন্ট করুন। প্রতিটি কমেন্ট রিভিউ করা হয়।
comment url