কালোজিরার তেলের পুষ্টিগুণ, উপকারিতা ও অপকারিতা
আরো পড়ুনঃ বরই ফলের উপকারিতা ও অপকারিতা
কালোজিরার তেলের উপকারিতা ও অপকারিতা। কালোজিরা এবং কালোজিরার তেল প্রাচীন কাল থেকেই ব্যবহার হয়ে আসছে, ঔসুধ থেকে শুরু করে একাধিক ক্ষেত্রে। তবে, আমরা সাধারণত কালোজিরা ব্যবহার করি রান্নার মসলা হিসাবে।
কালোজিরার বিজ্ঞান সম্মত নাম Nigella Sativa Linn । কালোজিরা সর্বাধিক পরিচিত রান্নার মসলা হিসাবে। তাছাড়া, কালোজিরা পাঁচ ফোড়ন মসলার একটি অন্যতম উপাদান। রান্নার মশলার পাশাপাশি কালোজিরা ও এর তেলের রয়েছে ঔসুধি গুণাগুণ।
আর এই কারণে কালোজিরা ও এর তেল বহুকাল থেকে, বিভিন্ন চিকিৎসায় ব্যবহার হয়ে আসছে। তবে, কালোজিরার তেল ব্যবহারের ক্ষেত্রে কিছু সতর্কতা অবলম্বন করা প্রয়োজন। তাই আজকের আর্টিকেলে আমরা আপনাদের সঙ্গে শেয়ার করবো, কালোজিরার তেলের পুস্টিগুণ, উপকারিতা ও অপকারিতা।
কালোজিরার তেলের পুষ্টিগুণ, উপকারিতা ও অপকারিতা
বিভিন্ন গুণে গুণান্বিত কালোজিরা ও এর তেল বিভিন্ন জটিল ও কঠিন রোগের চিকিৎসায় ব্যবহার হয়ে আসছে, হাজার বছরের অধিক সময় ধরে। এর তেল অত্যান্ত পুষ্টিকর এবং এতে বিভিন্ন স্বাস্থ্য উপকারিতায় ভরপুর রয়েছে।
কালোজিরার তেলে পাওয়া যায় প্রচুর শক্তিশালী অ্যান্টি অক্সিডেন্ট এবং প্রদাহ বিরোধী উপাদান। যা, মানুষের শরীরের জন্য অত্যান্ত উপকারি। তবে, এর কিছু অপকারিতা বা পার্শ্বপ্রতিক্রিয়া রয়েছে। তাই, এটি ব্যবহারের জন্য অনেক সময় সতর্কতা অবলম্বন করা জরুরি।
নিম্নে এর পুস্টিগুণ, উপকারিতা ও অপকারিতা সম্পর্কে জানবো। চলুন তাহলে আমরা দেখি-
কালোজিরার তেলে থাকা পুস্টি উপাদান
কালোজিরার জিরার তেলে পাওয়া যায়, থাইমোকুইনোন নামক একটি বিশেষ উপাদান, যা কালোজিরার অন্যতম প্রধান একটি সক্রিয় উপাদান। যাতে রয়েছে, অ্যান্টি অক্সিডেন্ট এবং প্রদাহ বিরোধী বহনকারি বৈশিষ্ট্য। তাছাড়া, এতে থাকা প্রধান প্রধান উপাদানগুলো হলো-
- প্রোটিন।
- আয়রন।
- ফসফরাস।
- ভিটামিন বি।
- ভিটামিন সি।
- ক্যালসিয়াম।
- অ্যামিনো অ্যাসিড।
- ওমেগা ৩ ফ্যাটি অ্যাসিড।
- ওমেগা ৬ ফ্যাটি অ্যয়াসি ইত্যাদি।
কালোজিরার তেলের স্বাস্থ্য উপকারিতা
কালোজিরার তেলের রয়েছে বিভিন্ন স্বাস্থ্য উপকারিতা। পবিত্র ইসলাম ধর্মে কালোজিরা সম্পর্কে বলা হয়ে থাকে "মৃত্যু ছাড়া সকল রোগের ঔসুধ"। তবে, নিম্নে কয়েকটি গুরুত্বপূর্ণ উপকারিতা সম্পর্কে সংক্ষেপে আলোচনা করা হলো-
** রোগ প্রতিরোধ খমতা বৃদ্ধি- কালোজিরার তেল শক্তিশালী করে ইমিউন সিস্টেমকে। এতে থাকা অ্যান্টি অক্সিডেন্ট ও প্রদাহরোধী উপাদান শরীরকে ভাইরাস ও ব্যাকটেরিয়ার সংক্রমণ থেকে রক্ষা করে। ঠান্ডা, কাশি ও ফ্লুর প্রকোপ থেকে রক্ষা পেতে নিয়মিত সেবন করুন কালোজিরার তেল।
** ত্বকের জন্য উপকারি- কালোজিরার তেলে পাওয়া যায় অ্যান্টি ব্যাকটেরিয়াল ও অ্যান্টি ইনফ্লেমেটরি গুণ, যা ত্বকের ব্রণের সমস্যাসহ একজিমা ও সোরিয়াসিসের মতো সমস্যা দূর করতে সাহায্য কর। এটি ত্বককে করে ময়েশ্চারাইজ এবং হাস্যউজ্জল।
আরো পড়ুনঃ ডুমুরের পুষ্টিগুণ | ডায়াবেটিস নিয়ন্ত্রণে ডুমুরের উপকারিতা
** ক্যানসার প্রতিরোধ করে- বিভিন্ন গবেষণায় দেখা গেছে যে, কালোজিরার তেল বিশেষ কিছু ধরণের ক্যানসারের বিরুদ্ধে প্রতিরোধ গড়ে তুলতে সক্ষম। বিশেষ করে এতে থাকা থাইমোকুইনোন উপাদান বাধাগ্রস্থ করে, টিউমারের কোষের বৃদ্ধিকে।
** ডায়াবেটিস নিয়ন্ত্রণে সাহায্য করে- গবেষণার মাধ্যমে উঠে এসেছে যে, এই তেল ইনস্যুলিনের সংবেদনশীলতাকে বাড়ানোর মাধ্যমে সাহায্য করে, রক্তে শর্করার পরিমাণ নিয়ন্ত্রণে রাখতে। এট বিশেষ করে টাইপ- ২ ডায়াবেটিস রোগীদের জন্য অনেক উপকারি।
** হৃদরোগ প্রতিরোধে সাহায্য করে- এতে থাকা ওমেগা- ৩ এবং ৬ ফ্যাটি অ্যাসিড নিয়ন্ত্রণে রাখতে সাহায্য করে কোলেস্টেরলের মাত্রা এবং বৃদ্ধি করে হৃদযন্ত্রের কার্যকরীতাকে। তাছাড়া, এটি উচ্চ রক্তচাপ নিয়ন্ত্রণে সাহায্য করে।
** ওজন নিয়ন্ত্রণে সাহায্য করে- ওজন নিয়ন্ত্রণে এটি গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা পালন করে। কারণ, এতে রয়েছে থাইমোকুইনোন উপাদান, যা উন্নত করে বিপাক প্রক্রিয়াকে এবং বাধা দেয় শরীরের অতিরিক্ত চর্বি জমতে।
** চুলের জন্য উপকারি- কালোজিরার তেল চুলের বৃদ্ধিকে ত্বরান্বিত করে, কারণ এর তেল মাথার ত্বকে রক্ত সঞ্চাললনকে বাড়িয়ে তোলে। ফলে চুল পড়া কমানোর পাশাপাশি সাহায্য করে কুশকি দূর করতে।
** হজম ক্ষমতা বৃদ্ধি করে- কালোজিরার তেল উন্নত করে পাকস্থলীর কার্যকরীতাকে এবং দূর করে হজমের সমস্যা। তাছাড়া, এটি বিশেষভাবে সাহায্য করে অ্যাসিডেটি এবং গ্যাসের সমস্যা সমাধানে।
কালোজিরার তেল ব্যবহারের নিয়ম
কালোজিরার তেল ব্যবহার করা যায় সেবন এবং বাহ্যিক উভয়ভাবে। নিম্নে কালোজিরার তেল ব্যবহারের নিয়ম সম্পর্কে সংক্ষেপে আলোচনা করা হলো-
সেবনের মাধ্যমে-
- কালোজিরার তেল প্রতিদিন সকালে খালি পেটে ১ টেবিল চামচ করে খাওয়া যেতে পারে।
- কালোজিরার তেলের সঙ্গে মধু বা পানি মিশিয়ে নিয়মিতভাবে খাওয়া যেতে পারে।
- ত্বকের যত্নে- সরাসরি আক্রান্ত স্থানে বা মুখোমন্ডলে ম্যাসাজ করুন।
- চুলের যত্নে- মাথার ত্বকে হালকাভাবে ম্যাসাজ করার ১ ঘন্টা পর শ্যাম্পু করে ধুয়ে ফেলুন।
- যন্ত্রণার জন্য- সন্ধ্যার সময় অন্য তেলের সঙ্গে কালোজিরার তেল মিশিয়ে, ব্যথার স্থানে ম্যাসাজ করলে আরাম পাওয়া যায়।
কালোজিরার তেলের পার্শ্বপ্রতিক্রিয়া ও সতর্কতা
- অধিক পরিমাণে ব্যবহার করলে সমস্যা হতে পারে লিভারের।
- গর্ভবতী মহিলাদের ক্ষেত্রে, চিকিৎসকের পরামর্শ ছাড়া ব্যবহার করা উচিত নয়।
- যাদের নিম্ন রক্তচাপ, তারা এটি ব্যবহার থেকে বিরত থাকুন, কারণ এতে রক্তচাপ কমে যেতে পারে।
- অনেক মানুষের ত্বকে কালোজিরার তেলে অ্যালার্জি রয়েছে, তারা এটি ব্যবহার করা থেকে বিরত থাকুন।
কালোজিরার তেলের উপকারিতা ও অপকারিতা- শেষকথা
তবে, কালোজিরার তেলের একাধিক উপকারতা থাকলেও, এই তেল ব্যবহার এবং গ্রহণের ক্ষেত্রে সতর্কতা অবলম্বন করা জরুরি। তাই, এটি ব্যবহার করার ক্ষেত্রে চিকিৎসকের পরামর্শ মোতাবেক ব্যবহার করলে, অনেক উপকার পাওয়া যায়।
প্রিয় পাঠক পাঠিকাগণ, আমরা আশাকরি আপনারা আর্টিকেলটি শুরু থেকে শেষ পর্যন্ত মনোযোগের সঙ্গে পড়েছেন এবং জেনে গেছেন, "কালোজিরার তেলের পুষ্টিগুণ, উপকারিতা ও অপকারিতা" সম্পর্কে অনেক গুরুত্বপূর্ণ তথ্য।
আরো পড়ুনঃ ডায়াবেটিস নিয়ন্ত্রণে রাখার সহজ এবং কার্যকর উপায়
যা, আমরা আর্টিকেলে ইতিপূরবেই আপনাদের সঙ্গে সেরার করেছি। আর্টিকেলটি যদি ভালোলাগে এবং উপকারি বলে মনে হয়, তাহলে এটি অন্যের সঙ্গে শেয়ার করবেন। আরো নতুন নতুন তথ্য জানার জন্য আমাদের পরবর্তী আর্টিকেল পড়ুন এবং আমাদের সঙ্গে থাকুন, ধন্যবাদ।
এই ওয়েবসাইটের নীতিমালা মেনে কমেন্ট করুন। প্রতিটি কমেন্ট রিভিউ করা হয়।
comment url