বরই ফলের উপকারিতা ও অপকারিতা
আরো পড়ুনঃ ডুমুরের পুষ্টিগুণ | ডায়াবেটিস নিয়ন্ত্রণে ডুমুরের উপকারিতা
বরই একটি মৌসুমি ফল। এই ফলটি শীতের শেষে এবং বসন্তের (মাঘ- ফাল্গুন) শুরুতে পাওয়া যায়। বরই বা কুল বাংলাদেশের অনেক জনপ্রিয় এবং উপকার একটি ফল। এই ফলটি বাংলাদেশের সকল অঞ্চলে পাওয়া যায়।
বরই স্বাস্থ্যের জন্য অত্যান্ত উপকারি একটি ফল। কারণ, এটি সমৃদ্ধ থাকে বিভিন্ন ভিটামিন, খনিজ এবং অ্যান্টি অক্সিডেন্টে। তবে, বরই ফল কিছু কিছু ক্ষেত্রে ক্ষতির কারণও হতে পারে। তাই, আজকের আর্টিকেলে আমরা আপনাদের সঙ্গে শেয়ার করবো, বরই ফল সম্পর্কে বিস্তারিত সকল তথ্য।
বরই বা কুলের প্রকার ভেদ
বরই বা কুল টক মিষ্টি স্বাদের একটি ফল, যা বিভিন্ন এলাকায় বিভিন্ন নামে পরিচিত। আর এর রয়েছে কয়েক ধরণের জাত, যা টক মিষ্টি স্বাদ, রঙ, আকৃতি এবং উৎপত্তির উপর ভিত্তি করে, ভিন্ন ধরণের হয়ে থাকে। তবে, বরই বা কুল ২ প্রকারের হয়ে থাকে। যেমন-
** দেশি বরই বা কুল- এটি আকারে অনেকটা ছোট এবং এগুলো সাধারণত জন্মায় বিভিন্ন ঝোপঝাড়ে। দেশি বরই আবার বেশ কয়েক জাতের হয়ে থাকে। যথা-
- কাঠা বরই- আকারে ছোট ও শক্ত এবং স্বাদে টক।
- ঝুঁটি বরই- এটি দেখতে কিছু লম্বা আবার কিছু গোল হয়।
- রাজ বরই- এটি দেখতে অনেকটা লম্বা এবং খেতে মিষ্টি স্বাদের।
- গোলাপি বরই- এটি কিছু এলাকায় পাওয়া যায় এবং এর রঙ গোলাপী।
- পাহাড়ী বরই- এটি পাহাড়ী এলাকায় জন্মায় এবং স্বাদে অনেকটা টক।
** উন্নত জাতের বরই- এই জাতের বরই সাধারণত আকারে বড়, স্বাদে বেশ মিষ্টি এবং এই গাছগুলো চাষ করা হয়ে থাকে। এর অনেক জাত রয়েছে, তারমধ্যে নিম্নে কয়েকটির তালিকা দেওয়া হলো-
- বাউকুল- রসালো, সুস্বাদু এবং আকারে বড়।
- বাংলা কুল- খেতে টক মিষ্টি মিশ্রিত স্বাদের।
- তাইওয়ানিস কুল- আকারে অনেকটা বড় এবং মিষ্টি স্বাদের।
- আপেল কুল- আকারে মাঝারি, দেখতে আপেলের মতো এবং মিষ্টি স্বাদের।
- নাসপাতি কুল- এটি দেখতে অনেকটা নাসপাতির কতো এবং খেতে মিষ্টি স্বাদের।
বরই বা কুলের জাত এবং স্বাদ মূলত অনেকটা নির্ভর করে উৎপাদন এলাকা এবং উৎপাদন ক্ষমতার উপর পাথক্যর কারণে দেখা যায়। তাছাড়া, বরই বা কুলের জাতটি ভালো হবে, তা নির্ভর করে চাষাবাদ এবং ব্যক্তিগত পছন্দের উপর।
বরই বা কুলের স্বাস্থ্য উপকারিতা
বরই বা কুলের স্বাস্থ্য উপকারিতা অনেক, কারণ এই ফল সমৃদ্ধ থাকে বিভিন্ন ধরণের ভিটামিনসহ অ্যান্টি অক্সিডেন্ট এবং খনিজ পদার্থ। তার মধ্যে নিম্নে কয়েকটি বিশেষ উপকারিতার সম্পর্কে সংক্ষেপে আলোচনা করা হলো-
- পুষ্টিগুণে ভরপুর- বরই ফল থাকে ভিটামিন "সি এবং এ", আয়রন, ক্যালসিয়াম, ফসফরাস এবং অ্যান্টি অক্সিডেন্টে সমৃদ্ধ। যা, আমাদের শরীরের রোগ প্রতিরোধ খমতাকে বাড়াতে সাহায্য করে।
- রোগ প্রতিরোধ ক্ষমতা বৃদ্ধি করে- বরইয়ে থাকা ভিটামিন "সি" এবং ফ্লাভোনয়েড বৃদ্ধি করে শরীরের রোগ প্রতিরোধ খমতাকে এবং রক্ষা করে বিভিন্ন সংক্রামণ থেকে।
- হজমশক্তি উন্নত করে- বরইয়ে থাকা ফাইবার ভালো রাখে অন্ত্রের স্বাস্থ্যকে এবং হজমশক্তি বৃদ্ধির পাশাপাশি দূর করতে সাহায্য করে কোষ্ঠকাঠিণ্যর সমস্যা।
- ডায়াবেটিস নিয়ন্ত্রণে সাহায্য করে- বরই ফলে থাকা ফাইবার এবং প্রাকৃতিক চিনি রক্তের শর্করার পরিমাণ নিয়ন্ত্রণে সাহায্য করে, যা ডায়াবেটিস রোগীর জন্য অনেক উপকারি।
- হৃদরোগের ঝুকি কমায়- বরইয়ে পাওয়া ফাইবার এবং অ্যান্টি অক্সিডেন্ট নিয়ন্ত্রণ করে কোলেস্টেরলের মাত্রা এবং ঝুকি কমায় হৃদরোগের।
- ওজন নিয়ন্ত্রণ করে- বরই উচ্চ ফাইবার সমৃদ্ধ এবং কম ক্যালোরিযুক্ত হওয়ার কারণে, এটি ওজন কমাতে অনেক সাহায্য করে।
- মানসিক চাপ কমায়- বরই ফলের নির্যাস সাহায্য করে মানসিক চাপ এবং উদ্বেগ কমাতে। যা ভালো নিদ্রায় সহায়ক।
- শক্তিশালি হাড় গঠন- বরইয়ে রয়েছে আয়রন, ক্যালসিয়াম এবং ফসফরাস, যা হাড়কে মজবুত করতে সাহায্য করে।
- প্রদাহ কমায়- বরইয়ে পাওয়া যায়, ফ্লাভোনয়েড ও অ্যান্টি অক্সিডেন্ট, যা সাহায্য করে প্রদাহ কমাতে।
- ত্বকের সৌন্দর্য বৃদ্ধি- বরই ফলে আছে ভিটামিন সি এবং অ্যান্টি অক্সিডেন্ট, যা সুস্থ্য রাখে ত্বকের কোষগুলিকে এবং সুস্থ্য রাখার পাশাপাশি ত্বকের বলিরেখা কমিয়ে বৃদ্ধি করে উজ্জলতা।
বরই বা কুলের পাতার উপকারিতা
বরইয়ের মতো এর পাতারও রয়েছে অনেক ঔষধিগুণ এবং উপকারিতা। কারণ, বরই পাতায় প্রাকৃতিক উপায়ে পাওয়া যায়, অ্যান্টি ব্যাকটেরিয়াল, অ্যান্টি অক্সিডেন্ট এবং অ্যান্টি ইনফ্লেমেটরি উপাদান। নিম্নে বরই পাতার কয়েকটি উপকারিতা সংক্ষেপে আলোচনা করা হলো-
** চুলের যত্নে সহায়ক- বরই পাতা চুলের জন্য অনেক উপকারি যেমন, কুশকি, চুলের গোড়া দূর্বল হওয়া, চুলপড়া ইত্যাদি। এর পাতা পানিতে ভিজিয়ে রাখা পানি দিয়ে চুল পরিস্কার করলে চুলের স্বাস্থ্য ভালো হয়।
** ত্বকের জন্য উপকারি- বরই পাতার রস সাহায্য করে ত্বকের প্রদাহ এবং ব্রণ দূর করতে। তাছাড়াও, এতে থাকা অ্যান্টি ব্যাকটেরিয়াল উপাদান, যা ত্বকের সংক্রামণ দূর করতে সাহায্য করে।
** রোগপ্রতিরোধ ক্ষমতা বাড়ায়- বরই পাতা প্রাকৃতিকভাবে সমৃদ্ধ থাকে এন্টি অক্সিডেন্টে, যা সাহায্য করে রোগ প্রতিরোধ ক্ষমতা বাড়াতে এবং প্রতিরোধ করে ফ্রি র্যাডিক্যালস।
** ডায়াবেটিস নিয়ন্ত্রণে সহায়ক- বরই পাতার নির্যাস সাহায্য করে রক্তের শর্করার মাত্রা নিয়ন্ত্রণে, যা ডায়াবেটিস রোগীদের জন্য অত্যান্ত উপকারি হতে পারে।
** ক্ষত সারাতে সয়ায়ক- বরই পাতার নির্যাস সাহায্য করে দ্রুত ক্ষত সারতে এবং প্রদাহ কমাতে। তাছাড়া বরই পাতার নির্যাস অ্যান্টি ব্যাকটেরিল হিসাবে পরিচিত।
** হজম শক্তি বাড়ায়- বরই পাতা বদহজম, পাকস্থলীর গ্যাস এবং পেট ফাপা কমাতে সাহায্য করে এবং সাহায্য করে লিভার পরিস্কার রাখতে।
** দূর করে অনিদ্রা- বরই পাতায় শান্তি প্রদানকারি (সেডেটিভ) উপয়াদান রয়েছে। যা সাহায্য করে মানসিক চাপ ও ভালো ঘুমাতে।
** উচ্চ রক্তচাপ কমায়- বরই পাতার নির্যাস সাহায্য করে রক্তচাপ নিয়ন্ত্রণে। যা, উচ্চ রক্তচাপ জনিত সমস্যার ঝুকি কমায়।
বরই পাতার অপকারিতা বা পার্শ্বপ্রতিক্রিয়া
বরই এবং এর পাতার রয়েছে অনেক উপকারিতা। তবে, সব উপকারিতার পেছনে কিছু অপকারিতা বা পার্শ্বপ্রতিক্রিয়াও রয়েছে। তাই, বরই খাওয়ার ক্ষেত্রে কিছু সাবধনতা অবলম্বন করে খাওয়া উচিৎ। নিম্নে বরইয়ের অপকারিতা বা পার্শ্বপতিক্রিয়া সম্পর্কে আলোচনা করা হলো-
** রক্তের শর্করার মাত্রা কমিয়ে দিতে পারে- কনেকে আছেন যারা অধিক পরিমাণে বরই খান, তাদের রক্তে শর্করার মাত্রা কমিয়ে দিতে পারে। যা, সৃষ্টি করতে পারে নিম্ন রক্তচাপ বা হাইপোগ্লাইসেনিয়ার সমস্যা।
** উচ্চ রক্তচাপের সমস্যা- যাদের উচ্চ রক্তচাপের সমস্যা রয়েছে, তারা বেশি পরিমাণে বরই খেলে সমস্যা হতে পারে। আবার এটি অনেক সময় রক্তচাপ কমিয়ে দিতে পারে।
** গর্ভবতী নারীদের ক্ষেত্রে সাবধনতা- গর্ভবতী নারীদের ক্ষেত্রে বরই খাওয়া ক্ষতির কারণ হতে পারে। তাছাড়া, এটি জরায়ুর সংকোচন ঘটাতে পারে।
** দাঁতের সমস্যা- বরই খাওয়ার পর ভালোকরে মুখ পরিস্কার না করলে দাঁতে ব্যাক্টরিয়ার সংক্রামণ হতে পারে, যা সৃষ্টি করতে পারে ক্যাভিটির।
** পেটের সমস্যা দেখা দিতে পারে- বরইয়ে রয়েছে উচ্চ মাত্রার ফাইবার, যা অতরিক্ত খাওয়ার কারণে ডায়রিয়া বা পেট ব্যাথা হতে পারে।
** অ্যালার্জির সম্ভাবনা- অনেক মানুষ রয়েছে, যাদের বরই খেলে অ্যালার্জির সমস্যা দেখা দেয়। যেমন, চুলকানা, শ্বাসকষ্ট বা ফুসকু্কুড়
** গ্যাস্টিকের সমস্যা- যাদের অধিক গ্যাসটিকের সমস্যা রয়েছে, তারা বেশি বরই খাওয়া থেকে বিরত থাকুন, কারণ এতে সমস্যা হতে পারে।
বরই ফলের উপকারিতা ও অপকারিতা- শেষকথা
বরই ফলের রয়েছে প্রচুর স্বাস্থ্য উপকারতা। তবে, এই ফল খাওয়ার ক্ষেত্রে পরিমিত পরিমাণ খাওয়াই উত্তম। কারণ, ভূল উপায়ে বা অতিরিক্ত খাওয়ার কারণে সমস্যার সৃষ্টি হতে পারে। সে কারণে, বরই খাওয়ার পূর্বে বিবেচনা করতে হবে নিজের শারীরিক অবস্থার।
প্রিয় পাঠক পাঠিকাগণ, আপনারা যদি আজকের এই গুরুত্বপূর্ণ আর্টিকেলটি শুরু থেকে শেষ পর্যন্ত মনোযোগের সঙ্গে পড়ে থাকেন, তাহলে নিশ্চয়ই জেনে গেছেন, "বরই ফলের উপকারিতা ও অপকারিতা'' সম্পর্কে অনেক তথ্য।
যা, আমরা আর্টিকেলে ইতিপূর্বেই আলোচনা করেছি। আর্টিকেলটি যদি আপনাদের ভালোলাগে ও উপকারি বলে মনে হয়, তাহলে এটি অন্যের সঙ্গে শেয়ার করবেন। আরো নতুন নতুন তথ্য জানার জন্য আমাদের পরবর্তী আর্টিকেলটি পড়ুন এবং আমাদের সঙ্গে থাকুন, ধন্যবাদ।
এই ওয়েবসাইটের নীতিমালা মেনে কমেন্ট করুন। প্রতিটি কমেন্ট রিভিউ করা হয়।
comment url