রাঙ্গামাটির সেরা দর্শনীয় স্থান | মেঘ-পাহাড়-লেকের অপূর্ব সৌন্দর্যের রাজ্য

আরো পড়ুনঃ কুমিল্লার জনপ্রিয় ৮ দর্শনীয় স্থান

আপনি কি বাংলাদেশের সুন্দরতম স্থানের মধ্যে অন্যতম রাঙ্গামাটি ভ্রমন করতে চাচ্ছেন। আর এই জন্য রাঙ্গামাটি জেলার সবচেয়ে সুন্দর এবং জনপ্রিয় স্থান সম্পর্কে খোজ করছেন। তাহলে আপনি সঠিক স্থানেই এসেছেন।

কারণ, আমরা আজকের আর্টিকেলে শেয়ার করতে যাচ্ছি বাংলাদেশের অন্যতম সুন্দর পর্যটন এলাকা রাঙ্গামাটির সেরা দর্শনীয় স্থান সম্পর্কে। আজকের আর্টিকেলটি আপনার জন্য অনেক গুরুত্বপূর্ণ।তাই এটি মনোজোগের সঙ্গে পড়ুন-

রাঙ্গামাটির সেরা ও জনপ্রিয় দর্শনীয় স্থান

বাংলাদেশের পার্বত্য জেলাগুলোর মধ্যে অন্যতম জেলা রাঙ্গামাটি, আর আয়তনের দিক থেকে এই জেলাটি বাংলাদেশের সবচেয়ে বড় জেলা। প্রকৃতির অপার সৃষ্টি এই জেলায় প্রায় ১০ ভাষার ১১টি জনগোস্টির নিজস্ব সংস্কৃতি এবং নৃতাত্ত্বিক কৃষ্টি কালচার রয়েছে।

রাঙ্গামাটি জেলায় রয়েছে অনেক জনপ্রিয় ভ্রমণ স্পট যেমন, কাপ্তাই হ্রদ, রাজবন বিহার, সাজেক ভ্যালী, ঝুলন্ত সেতু, শুভলং ঝরনা, কাপ্তাই বাধ, কাপ্তাই জাতীয় উদ্যান, নৌ বাহিনীর পিকনিক স্পট, পেদা টিং টিং, ঢাকাইয়া পাহাড়, দেবতার পাহাড়, কর্ণফুলি পানি বিদ্যুৎ কেন্দ্র ইত্যাদি উল্লেখযোগ্য।

এছাড়াও, বীরশ্রেষ্ঠ ল্যান্সনায়েক মুন্সি আব্দুর স্মৃতি ভাস্কর্য, কর্ণফুলি কাগজকল, উপজাতীয় জাদুঘর, প্যানোরমা জুম রেস্তরা, বেতবুনিয়া ভূ-উপগ্রহ কেন্দ্র, চিতমরম বৌদ্ধ বিহার, টিকটুক ইকো ভিলেজ, বনশ্রী পর্যটন কমপ্লেক্স, ডলুছড়ি জেতবন বিহার ইত্যাদি।

আর আজকের আর্টিকেলে আমরা আপনাদের সঙ্গে শেয়ার করতে যাচ্ছি, রাঙ্গামাটি জেলার জনপ্রিয় ৮টি দর্শনীয় স্থান সম্পর্কে। চলুন তাহলে আমরা দেখে নেই রাঙ্গামাটি জেলার সেরা এবং জনপ্রিয় দর্শনীয় স্থান সম্পর্কে- 

মেঘের রাজ্য সাজেক ভ্যালি

সাজেক ভ্যালি বাংলাদেশের সুন্দর ও জনপ্রিয় পর্যটন স্থানের মধ্যে অন্যতম, এটি রাঙ্গামাটি জেলার বাঘাইছড়ি উপজেলায় অবস্থিত। তবে, এখানে খাগড়াছড়ি উপর দিয়ে যাতায়াত করতে হয়। এর উচ্চতা সমুদ্রপৃষ্ঠ থেকে প্রায় ১,৮০০ ফুট হওয়ার কারণে একে "মেঘের রাজ্য" বলা হয়। 

কারণ, এখানে পাহাড়ের গায়ে ভেসে বেড়ায় মেঘ। সাজেকের প্রধান ও মূল আকর্ষণ হলো, মনোমুগ্ধকর সূর্যোদয় ও সূর্যাস্ত, সবুজ পাহাড় আর অপূর্ব প্রাকৃতিক সৌন্দর্য। এছাড়া, ভ্রমণপ্রেমীদের অন্যতম প্রিয় স্থান রুইলুই পাড়া, কংলাক পাহাড় ও কাসালং নদী। 

এখানে পর্যটকদের বিশেষভাবে মুগ্ধ করে তোলে, পাহাড়ি আদিবাসীদের জীবনযাত্রা ও সংস্কৃতি। নির্জন পরিবেশের মাঝে রঙিন পাহাড়ি ঘর-বাড়ি আর নির্মল বাতাস, সাজেককে করে তুলেছে প্রকৃতিপ্রেমীদের জন্য এক স্বপ্নীল গন্তব্যে।

কাপ্তাই লেক রাঙ্গামাটি

কাপ্তাই কৃত্রিম লেকটি বাংলাদেশের সবচেয়ে বড় লেক, যা রাঙ্গামাটি জেলার প্রধান আকর্ষণীয় স্থানের অন্যতম প্রধান। ১৯৬০ সালে এই বাধটি নিরমাণের কারণে, এখানে কর্ণফুলী নদীর পানি জমে তৈরি হয় কাপ্তাই লেকের।

এই লেকটি প্রায় ৭২৫ বর্গ মিলোমিটার বিস্তৃত এবং লেকের রয়েছে, দ্বীপের মতো ছোট ছোট গ্রাম ও পাহাড়ি এলাকা। লেকটি পর্যটকদের কাছে অনেক আকর্ষণীয় করে তুলেছে, নৌকা ভ্রমণ, মাছ শিকার এবং পাহাড়ি প্রাকৃতিক সৌন্দর্য উপভোগের জন্য।

কাপ্তাই লেকের চারপাশে রয়েছে, রাজবন বিহার, শুভালং ঝরনা, পেদা টিং টিংসহ বিভিন্ন দর্শনীয় স্থান। এটি মৎস্যসম্পদের উৎস এবং স্থানীয় চাকমাদের জীবনজাত্রার অংশ। তাছাড়া, প্রকৃতি প্রেমিদের কাছে কাপ্তাই লেক অন্যন্য এক গন্তব্য।

শুভলং ঝরনা রাঙ্গামাটি

রাঙ্গামাটির অন্যতম জনপ্রিয় এবং সুন্দর পর্যটন স্থান শুভলং ঝরনা। কাপ্তাই লেকের নিকট অবস্থিত এই ঝরনাটির সৌন্দর্য আরো উপভোগ্য হয়ে উঠে বর্ষাকালে। পাহাড়ের উপর থেকে পানি প্রবল বেগে নিচে পড়ে যা, সৃষ্টি করে অপূর্ব দৃশ্যের।

তবে, শুভলং ঝরনা যাওয়ার প্রধান মাধ্যম নৌকা বা স্প্রিডবোড, সেখানে সহজে জাওয়া যায় কাপ্তাই লেক দিয়ে। এই ঝরনার পাশে থাকা সবুজ বন ও পাহাড় মনোমুগ্ধ করে তোলে পর্যটকদের। এখানে পর্যটকরা আসেন বিশেষ করে ফটোশুট ও পিকনক করতে।

শুভলং ঝরনাপাশেই রয়েছে পাহাড়ি বাজার, সেখানে আদিবাসি সংস্কৃতি এবং তাদের বিভিন্ন খাবারের স্বাদ পাওয়া যায়। এই স্থানটি প্রকৃতি এবং অ্যাডভেঞ্চার প্রেমিদের দারুন এক গন্তব্য স্থান।

সাপছড়ি ঝরনা রাঙ্গামাটি

রাঙ্গামাটি জেলার সাপছড়ি ঝরনাটি মনোমুগ্ধকর সুন্দর একটি ঝরনা। যা, পরিচিতি লাভ করেছে পাহাড়ি পরিবেশ এবং তার অপরূপ প্রাকৃতিক সৌন্দর্যের কারণে। এটি রাঙ্গামাটি শহর থেকে একটু দূরে এবং সেখানে যাওয়ার জন্য ট্রেকিং করতে হয়।

অনেক উচু স্থান থেকে এই ঝরনার পানি পড়ে, যা তৈরি করে শীতল এবং প্রশান্তিদায়ক পরিবেশ।  বিশেষ করে বর্ষাকালে এই ঝরনার পানি বেশি প্রবাহিত হয় এবং সেই সময় এর সৌন্দর্য আরো বহুগুণ বেড়ে যায়।

স্থানীয় লোকজনের জন্য সাপছড়ি ঝরনাটি অনেক গুরুত্বপূর্ণ স্থান। তাছাড়া, এটি একাধিক নদী এবং ঝরনা দ্বারা পরিবেষ্টিত। এটি উত্তেজনাপূর্ণ অভিজ্ঞতা দেয় অয়াডভেঞ্চার প্রেমীদের। তবে, শখের ও প্রকৃতিপ্রেমী পর্যটকদের কাছেও এটি একটি আদর্শ স্থান।

রাজবন বিহার রাঙ্গামাটি

রাঙ্গামাটি জেলার প্রাচীন এবং গুরুত্বপূর্ণ একটি মন্দির রাজবন বিহার। শহরের কেন্দ্র থেকে একটু দূরে শান্তিপূর্ণ পরিবেশে পাহাড়ের উপরে এটি অবস্থিত। এটি বৌদ্ধ ধর্মাবলম্বীদের একটি ধর্মীয় কেন্দ্র ও পর্যটকদের আকর্ষণীয় স্থান।

এখানে রয়েছে বিভিন্ন বৌদ্ধ প্রতিকৃতি এবং বৌদ্ধ ভিক্ষুদের অনেক পুরানো উপাসনালয়। এই বিহারের চারিদিকের পরিবেশ অত্যান্ত শান্তিদায়ক। যেখানে রয়েছে পাইন গাছের সারি এবং শান্তিতে ভরা সবুজ প্রকৃতি।

আরো পড়ুনঃ জোহান ড্রিম ভ্যালি পার্ক এন্ড রিসোর্ট

এই বিহারটি স্থানীয় চাকমা জনগোস্টির ধর্মীয় জীবনের গুরুত্বপূর্ণ একটি অংশ। দর্শনার্থীরা এখানে আসলে ধ্যানে মগ্নতা এবং প্রাকৃতিক পরিবেশের সৌন্দর্যের পাশাপাশি উপভোগ করতে পারেন শান্তি। এটি আবেগে ভরপুর ধর্মীয় এবং সাংস্কৃতিক স্থান

ঝুলন্ত সেতু রাঙ্গামাটি

রাঙ্গামাটির সবচেয়ে পরিচিত এবং আকর্ষণীয় জনপ্রিয় স্থান ঝুলন্ত সেতু। এই আধুনিক মানের সেতুটি কাপ্তাই লেকের উপর নির্মিত, যা দেখতে অনেক মনোমুগ্ধকর। এটি অত্যাধুনিকভাবে নির্মিত একটি সেতু, যা প্রাকৃতিক সৌন্দর্যের মধ্যে এক চমৎকার স্থাপত্যশিল্পের মিশ্রণ।

এই সেতুর উপর থেকে উপভোগ করা যায় লেকের দৃশ্য এবং পারাপার হওয়া যায় এর উপর দিয়ে। সেতুটির একদিকে পাহাড় এবং অপরদিকে সংযুক্ত রয়েছে লেকের সঙ্গে। এটি অসাধারণ একটি অভিজ্ঞতা দেয় ভ্রমণকারীদের।

সেতুটি শুধুমাত্র পারাপারের মাধ্যম নয় বরং এটি অন্যতম একটি জনপ্রিয় পর্যটন গন্তব্য স্থান। তাছাড়া, এর আশেপাশে রয়েছে অনেক দর্শনীয় স্থান, যার মধ্যে অন্যতম হলো কাপ্তাই লেকের দৃশ্য এবং প্রাকৃতিক সৌন্দর্য, যা মন জয় করে নিয়েছে পর্যটকদের।

ঢাকাইয়া পাহাড় ও দেবতার পাহাড় রাঙ্গামাটি

রাঙ্গামাটির অন্যতম জনপ্রিয় পর্যটন স্থান ঢাকাইয়া পাহাড় ও দেবতার পাহাড়, যা অতি আদর্শ স্থান অ্যাডভেঞ্চার প্রেমীদের এবং প্রকৃতিপ্রেমীদের কাছে। পাহাড় দুটি পাশাপাশি অবস্থিত এবং পাহাড়ের উপর দাঁড়িয়ে উপভোগ করা যায়, আশেপাশের সুন্দর প্রাকৃতিক দৃশ্য।

ঢাকাইয়া পাহাড় একটি পবিত্র স্থান হিসাবে, বিশেষ গুরুত্ব বহন করে স্থানীয় জনগনের কাছে।   অনেক পর্যটক এখানে ট্রেকিং করে পৌঁছান পাহাড়ের চুড়ায় এবং কাছ থেকে উপভোগ করেন পাহাড়ি জীবন এবং প্রকৃতির সৌন্দর্যকে।

দেবতার পাহাড় অনেক গুরুত্বপূর্ণ একটি ধর্মীয় স্থান, যেখানে ধর্মীয় উপাসনা করেন স্থানীয় আদিবাসিরা। এই পাহাড়ের চুড়ায় উঠলে দেখা যায়, কাপ্তাই লেকের অপূর্ব দৃশ্যসহ রাঙ্গামাটি শহর। এখানে শান্তি এবং প্রাকৃতিক সৌন্দর্য উপভোগ করার জন্য বিখ্যাত স্থান।

পেদা টিং টিং রাঙ্গামাটি

রাঙ্গামাটির অন্যতম দর্শনীয় পর্যটন স্থান পেদা টিং টিং, এটি অবস্থিত কাপ্তাই লেকের পাশেই। পেদা টিং টিং মূলত একটি পাহাড়ি এলাকা। যেখানে গেলে কাছ থেকে দেখা যায়, চাকমা সাংস্কৃতির জীবনযাত্রার পাশাপাশি পরিচয় পাওয়া যায় তাদের খাদ্য প্রথার।

জায়গার নাম পেদা টিং টিং, যার অর্থ হলো "বিশাল পাহাড়ের উপর বসবাস। পেদা টিং টিংয়ে যাওয়ার জন্য ট্রেকিং বা নৌকা ভ্রমণ করা যায়। এখানে পাহাড়ের গা ঘেসে রয়েছে, ছোট ছোট অনেক ঝরনা এবং সবুজ প্রকৃতি যা, দেখতে সত্যিই অসাধারণ।

এটি মুলতা নির্জনতা এবং অনেক শান্তিপূর্ণ স্থান হিসাবে বেশ জনপ্রিয়। প্রকৃতিপ্রেমীদের কাছে এটি একটি জনপ্রিয় গন্তব্য স্থান। তাছাড়াও, এখানে গামছা, স্থানীয় আদিবাসীদের সংস্কৃতি এবং নিতে পারবেন তাদের খাবারের স্বাদ।

রাঙ্গামাটির জনপ্রিড় দর্শনীয় স্থান- শেষকথা

রাঙ্গামাটি শুধুমাত্র একটি জনপ্রিয় পর্যটন কেন্দ্র নয়, এটি প্রকৃতি, সংস্কৃতি ও শান্তির এক অপরূপ মিলনস্থল। পাহাড়, লেক, ঝরনা, সেতু এবং আদিবাসী সংস্কৃতির সমন্বয়ে গঠিত এটি একটল ভ্রমণপ্রেমীদের জন্য এক স্বপ্নের গন্তব্য।  

যারা প্রকৃতির সান্নিধ্যে কিছু্টা সময় কাটাতে চান, তাদের জন্য হতে পারে রাঙ্গামাটি একটি আদর্শ স্থান। তাই, আপনি যদি প্রকৃতির সৌন্দর্য উপভোগ করতে চান এবং মনের প্রশান্তি খুঁজে পেতে চান, তাহলে রাঙ্গামাটি ভ্রমণ করা অবশ্যই উচিত। এটি আপনার জীবনে এনে দেবে এক অবিস্মরণীয় অভিজ্ঞতা।

আরো পড়ুনঃ অপরূপ সৌন্দর্যে ভরা সাফিনা পিকনিক স্পট

প্রিয় পাঠক পাঠিকাগণ, আর্টিকেলটি যদি ভালোলাগে এবং উপকারি বলে মনে হয়, তাহলে এটি অন্যের সঙ্গে শেয়ার করবেন। আরো নতুন নতুন তথ্য জানার জন্য, আমাদের পরবর্তী আর্টিকেল পড়ুন এবং আমাদের সঙ্গে থাকুন, ধন্যবাদ।

এই পোস্টটি পরিচিতদের সাথে শেয়ার করুন

পূর্বের পোস্ট দেখুন পরবর্তী পোস্ট দেখুন
এই পোস্টে এখনো কেউ মন্তব্য করে নি
মন্তব্য করতে এখানে ক্লিক করুন

এই ওয়েবসাইটের নীতিমালা মেনে কমেন্ট করুন। প্রতিটি কমেন্ট রিভিউ করা হয়।

comment url