ত্বকের গুরুত্ব এবং সঠিক যত্নের প্রয়োজনীয়তা
আরো পড়ুনঃ শীতে ত্বক ভালোরাখার সহজ উপায়
মানুষের সৌন্দর্যকে আরো আকর্ষণীয় করে তোলার ক্ষেত্রে সবচেয়ে বড় অঙ্গ হলো ত্বক। সে কারণে যুগের পর, জুগ সৌন্দর্য পিপাসু রমণীরা ত্বকের যত্নে ব্যবহার করে আসছে, বিভিন্ন ধরণের প্রসাধনী সামগ্রী।
তবে, ব্যস্ত জীবনযাত্রা, অস্বাস্থ্যকর খাদ্যাভাস, পরিবেশ দূষণ এবং মানসিক চাপের কারণে অনেক সময় উপেক্ষিত হয় ত্বকের যত্নের প্রতি। আর আজকের আর্টিকেলে আমরা আপনাদের সঙ্গে শেয়ার করবো, কিভাবে একটি স্বাস্থ্যকর স্কিন কেয়ার গড়ে তোলা যায় সেই সম্পর্কে।
ত্বকের গুরুত্ব এবং সঠিক যত্নের প্রয়োজনীয়তা
ত্বক আমাদের শরীরের অন্যতম গুরুত্বপূর্ণ অঙ্গ আর এটি ব্যহিক ক্ষতির হাত থেকে আমাদের রক্ষা করে। সুস্থ এবং সুন্দর ত্বক প্রতিফলন ঘটায় মানসিক এবং শাররীক সুস্থতার। তাই বায়ু দূষণ, ক্ষতিকর রশ্মি এবং ধুলো বালির হাত থেকে রক্ষা করার জন্য, ত্বকের যত্ন নেওয়া প্রয়োজন।
তাই, আমাদের সকলের উচিৎ নিয়মিত ত্বক পরিস্কার রাখা, সানস্ক্রিন ব্যবহার এবং ময়েশ্চারাইজ করা। পুষ্টিকর খাবার গ্রহন এবং পর্যাপ্ত পানি এবং ঘুম ত্বকের উজ্জলতা বাজায় রাখার জন্য, অনেকটা সহায়ক ভুমিকা পালন করে।
কোন ত্বকের যত্নে কি ব্যবহার করতে হবে?
একের মানুষের ত্বকের ধরণ একেক রকমের হয়ে থাকে। কারণ, সব মানুষের ত্বকের ধরন এক নয়। তাই, ত্বকের ধরণ অনুযায়ী ত্বকের যত্ন নেওয়া প্রয়োজন। তবে, ত্বকের ধরণ সাধারণত ৫ প্রকারের হয়ে থাকে। আর নিম্নে ৫ ধরণের ত্বকের যত্ন সম্পর্কে আলোচনা করা হলো-
** স্বাভাবিক ত্বক- স্বাভাবিক ত্বকের জন্য অন্য কোন প্রোডাক্ট ব্যবহার করার প্রয়োজন নেই। কেবলমাত্র ব্যালেন্স করে এবং রুটিন মেনে চললেই হবে।
** সংবেদনশীল ত্বক- সংবেদনশীল ত্বকের জন্য আপনাকে বেচে নিতে হবে সুগন্ধি মুক্ত, অ্যালকোহল মুক্ত এবং সামান্য বা অল্প উপাদানযুক্ত প্রোডাক্ট।
** মিশ্র ত্বক- মিশ্র ত্বকের সাধারণত, তৈলাক্ত থাকে টি জোন এবং শুস্ক থাকে গালের অংশ। আর এই ধরণের ত্বকের জন্য, যত্ন নেওয়ার প্রয়োজন পড়ে ত্বকের ভিন্ন অংশের জন্য ভিন্ন প্রোডাক্ট।
** তৈলাক্ত ত্বক- তৈলাক্ত ত্বকের জন্য আপনি যদি আপনার ত্বকের তৈল নিয়ন্ত্রণ করতে চান, তাহলে আপনাকে বেচে নেওয়া জরুরি লাইটয়েট ওয়াটার-বেসড ময়েশ্চারাইজার এবং নন-কমেডোজেনিক প্রসাধনী।
** শুস্ক ত্বক- শুস্ক ত্বকের জন্য অত্যান্ত গুরুত্বপূর্ণ হলো পর্যাপ্ত পরিমাণে ময়েশ্চারাইজিং করা। আর এই ধরণের ত্বকের জন্য ব্যবহার করা উচিৎ ময়েশ্চারাইজারযুক্ত ক্লিনজার এবং হাইড্রেটিং স্কিন কেয়ার জাতীয় প্রোডাক্ট।
প্রতিদিন কিভাবে ত্বকের যত্ন নেওয়া প্রয়োজন?
ত্বকের যত্ন নেওয়ার ক্ষেত্রে যদি প্রতিদিন একটি নিয়ম অনুসরণ করা যায়, তাহলে আমাদের ত্বক দীর্ঘদিন থাকবে সুস্থ, কোমল এবং হাস্যউজ্জল। তাই, আপনাদের সুবিধার জন্য নিম্নে মৌলিক বা জরুরি কিছু নিয়ম সম্পর্কে আলোচনা করা হলো-
** সানস্ক্রিন- রোদ থেকে ত্বককে বাঁচানোর জন্য, ঘরের বাইরে যাওয়ার সময় প্রতিদিন কমপক্ষে (SPF) সান প্রটেকশন ফেক্টর ৩০ যুক্ত সানস্ক্রিন ব্যবহার করা অত্যান্ত জরুরি।
** এক্সফোলিয়েশন- ত্বকের মৃত কোষ দূর করার মাধ্যমে, ত্বকের উজ্জলতা বাড়ানোর জন্য প্রতি সপ্তাহে কমপক্ষে ২ থেকে ৩ বার স্ক্রাব ব্যবহার করা প্রয়োজন।
** ময়েশ্চারাইজিং- ত্বককে সবসময় হাইড্রেটেড রাখার পাশাপাশি ত্বকে বয়সের ছাপ কমানোর জন্য ব্যবহার করা উচিৎ ভালোমানের ময়েশ্চারাইজার।
** সিরাম ও টার্গেটেড ট্রিট্মেন্ট- ত্বকের বিভিন্ন ধরণের সমস্যা সমাধানের করতে ভিটামিন "সি", নিয়াসিনামাইড, হায়ালুরনিক অ্যাসিড এবং রেটিনল যুক্ত সিরামের ব্যবহার।
আরো পড়ুনঃ ত্বকের যত্নে গাজরের যত ফেস প্যাক
** ক্লিনজিং বা মুখ ধোয়া- ত্বকের মৃত কোষসহ ত্বকের ময়লা, অতিরিক্ত তেল দূর করার জন্য প্রতিদিন সকালে এবং রাতে ঘুমানোর আগে ব্যবহার করতে হবে মৃদু ক্লিনজার।
** টোনিং- নিয়মিতভাবে টোনার ব্যবহার করলে ত্বকের potential of Hydrogen (PH) অর্থাৎ হাইড্রোজেনের সম্ভাবনা বা সঠিক ব্যালেন্স বজায় থাকার পাশাপাশি ত্বক থাকে সতেজ।
ঘরোয়া উপায়ে কিভাবে ত্বকের যত্ন নেওয়া যাবে?
অনেকে বাজার থেকে কেনা বিভিন্ন প্রোডাক্ট ব্যবহার করার পাশাপাশি, প্রাকৃতিক উপাদান দিয়ে ঘরোয়া উপায়ে ত্বকের যত্ন নিতে পছন্দ করেন। কারণ, ঘরোয়া উপাদান ব্যবহার করা অনেক নিরাপদ ও কার্যকর। নিচে কয়েকটি ঘরোয়া উপাদানের ব্যবহার সম্পর্কে আলোচনা করা হলো-
- ওট্মিল ও দই- ত্বক পরিস্কার এবং ময়েশ্চারাইজিং রাখার জন্য ওটমিল ও দই নিয়ম করে ব্যবহার করা যেতে পারে।
- লেবুর রস ও মধু- লেবু প্রাকৃতিক ব্লিচিং উপাদান হিসাবে এবং মধু ব্যবহার করা যেতে পারে ত্বকের হাইড্রেশন বাড়ানোর জন্য।
- গোলাপ জল- গোলাপ জল কাজ করে প্রাকৃতিক টোনার হিসাবে। তাই, ত্বককে সুস্থ্য, সতেজ এবং হাস্যউজ্জল করে তুলতে ব্যবহার করুন গোলাপ জল।
- মধু ও হলুদ- হাইড্রেটিং সমৃদ্ধ উপাদান মধু এবং অ্যান্টি ব্যাকটেরিয়াল সমৃদ্ধ উপাদান হলুদ। আর ত্বকের উজ্জলতা বাডানোর জন্য এই দুটি উপাদান ব্যবহার করা যায়।
ত্বক ভালো রাখতে যে সকল ভুল কারা যাবেনা?
আমাদের কিছু সাধারণ অভ্যাস রয়েছে, যে সকল অভ্যেসের কারণে আমাদের অজান্তেই ত্বকের খতি হয়ে থাকে। তাই নিম্নে কয়েকটি জরুরি এবং সাধারণ ভুল সম্পর্কে সংক্ষেপে আলোচন করা হলো। চলুন তাহলে দেখি-
- মুখের উপর বেশি বেশি হাত দেওয়া- এর কারণে ত্বকে ব্রুণ ছাড়াও ইনফেকশন হওয়ার সম্ভাবনা থাকে।
- সানস্ক্রিন ব্যবহার না করা- সানসক্রিম ছাড়া রোদে বাইরে যাওয়ার কারণে ত্বকে পোড়া দাগসহ অকাল বাখেপ এর ছাপ হতে পারে।
- সঠিক খাদ্যাভাস না মানা- প্রক্রিয়াজাত খাবারসহ ভাজা পোড়া খাবার এড়িয়ে চলুন এবং প্রতিদিন সবজি এবং ফল খাওয়ার চেস্টা করুন।
- পর্যাপ্ত পরিমাণে পানি না খাওয়া- শরীরে পানির সল্পতার পারণে ত্বক শুস্ক এবং রুক্ষ হয়ে পড়ে। তাই প্রতিদিন কমপক্ষে ৮ থেকে ১০ গ্লাস পানি পান করুন।
- অধিক পরিমাণে প্রসাধনী ব্যবহার- অধিক পরিমাণে প্রসাধনী ত্বকে ব্যবহার করা থেকে বিরত থাকার চেস্টা করুন এবং মেকাপ তোলার পর, ভালোভাবে ত্বক পরিস্কার করুন।
এই ওয়েবসাইটের নীতিমালা মেনে কমেন্ট করুন। প্রতিটি কমেন্ট রিভিউ করা হয়।
comment url