নওগাঁ জেলার জনপ্রিয় ১০ দর্শনীয় স্থান
আরো পড়ুনঃ পঞ্চগড় জেলার জনপ্রিয় দর্শনীয় স্থান
নওগাঁ জেলা বাংলাদেশের একটি ঐতিহাসিক ও সাংস্কৃতিকভাবে সমৃদ্ধশালী স্থান। এই জেলায় রয়েছে অনেক দর্শনীয় স্থান, যেগুলো ইতিহাস ও প্রকৃতিপ্রেমীদের জন্য আকর্ষণীয় হতে পারে।
তাই আপনারা যারা নওগাঁ জেলার দর্শনীয় এবং ঐতিহাসিক স্থান সম্পর্কে জানতে চান, তাদের জন্য আজকের আর্টিকেলটি অনেক গুরুত্বপূর্ণ। কারণ, আজকের আর্টিকেলে আমরা আপনাদের সঙ্গে শেয়ার করবো, নওগাঁ জেলার জনপ্রিয় ১০ দর্শনীয় স্থান সম্পর্কে। চলুন তাহলে দেখি-
নওগাঁ জেলার জনপ্রিয় ১০ দর্শনীয় স্থান
বাংলাদেশের উত্তর পশ্চমাঞ্চলে অবস্থিত নওগাঁ জেলা, এই জেলাটি ঐতিহাসিক এবং সাংস্ক্রিতিক দিক থেকে সমৃদ্ধ এলাকা। এখানে অনেক প্রাচীন সভ্যতার নিদর্শন, প্রত্নতাত্তবিক নিদর্শন, মসজিদ, মন্দির, রাজবাড়ি এবং প্রাকৃতিক সৌন্দর্যে ভরপুর, যা আকর্ষণ করে পর্যটকদের।
এখানে ইতিহাসের সাক্ষী হয়ে হাজার বছর ধরে দাঁড়িয়ে আছে পাহাড়পুর/ সোমপুর মহাবিহার, দুবলহাটি রাজবাড়ি, কুসুম্বা মসজিদসহ প্রাকৃতিক সৌন্দর্যে ভরপুর, আত্রাই নদী, মহাদেবপুর দীঘি এবং পতিসর রবীন্দ্র কুঠিবাড়ি।
আর এই সকল স্থানগুলো শুধু নওগাঁ জেলা নয়, সারা বাংলাদেশের ঐতিহ্য ও সস্কৃতির প্রতিচ্ছবি। আপনি যদি নওগাঁ জেলা একদিন ভ্রমন করেন, তাহলে ইতিহাসের সঙ্গে পরিচিত হওয়ার পাশাপাশি উপভোগ করতে পারবেন এর প্রাকৃতিক সোভা।
এই জেলা যেমন প্রত্নতাত্ত্বিক ও ঐতিহাসিক দিক দিয়ে গুরুত্বপূর্ণ, তেমনিভাবে এই জেলার গ্রাম বাংলার বিভিন্ন পরিবেশ, সবুজ প্রক্রিতি এবং নদী- নালা বিশেষভাবে আকর্ষণ করে পর্যটকদের। তাই, ইতিহাস ও প্রকৃতিপ্রেমীদের কাছে আদর্শ গন্তব্য এটি। নিম্নে নওগাঁর ১০ জনপ্রিয় স্থান সম্পর্কে জানুন-
পাহাড়পুর বৌদ্ধ বিহার নওগাঁ
নওগাঁ জেলার বদলগাছী উপজেলার পাহাড়পুরে অবস্থিত ও ইতিহাসিক পাহাড়পুর বৌদ্ধ বিহারটি, এটি একটি গুরুত্বপূর্ণ ঐতিহাসিক স্থান। বিহারটি নির্মিত হয়েছিল ৭ম শতাব্দিতে, এর স্থাপত্য ও সংস্কৃতি ঐতিহ্যবাহী বৌদ্ধ ধর্মের প্রতিফলন।
এই বিহারের স্থাপত্য শৈলী এবং বিহারের থাকা বিভিন্ন প্রাচীন নিদর্শন প্রকাশ করে বৌদ্ধ সভ্যতার উজ্জল দিক। বিশ্ব ঐতিহ্য স্থান হিসাবে ইউনেস্কো ১৯৮৫ সালে ঘোষণা করে। এটি বৌদ্ধ ধর্মের অনুসারী তীর্থযাত্রীদের কাছে অনেক গুরুত্বপূর্ণ গন্তব্য।
দুবলহাটি রাজবাড়ি নওগাঁ
নওগাঁ জেলার একটি ঐতিহাসিক স্থাপনা দুবলহাটি রাজবাড়ি, যা নওগাঁ জেলা সদরে অবস্থিত। ১৭০০ সালের দিকে স্থানীয় জমিদার এই রাজবাড়িটি নির্মাণ করেন। প্রায় ধবংশপ্রাপ্ত এই রাজবাড়িটি একসময় সৌন্দর্যের প্রতিক এবং প্রাচুর্যে ভরপুর ছিল।
রাজবাড়ির বিশালাকৃতির মূল ফটক এবং স্থাপত্যশৈলী অতীতের গৌরবময় দিনের কথা, এখনো স্মরণ করিয়ে দেয়। বলিহার রাজবাড়িটি বর্তমানে যারা ইতিহাস এবং ঐতিহ্যের খোজ করেন বা ভালোবাসেন, সে সকল পর্যটকদের অনেক আকর্ষণীয় স্থান।
কুসুম্বা মসজিদ মান্দা নওগাঁ
নওগাঁ জেলার মান্দা উপজেলায় অবস্থিত কুসুম্বা মসজিদ, এটি একটি ঐতিহাসিক স্থাপনা। আফগান শাসক সুলতান গিয়াসউদ্দিন বাহাদুর শাহের শাসনামলে ১৫৫৮ সালে এটি নির্মিত হয়। মসজিদটি কালো পাথরের তৈরি বলে এটিকে "কালো পাথরের মসজিদও" বলা হয়ে থাকে।
চমৎকার কারুকাজ আর সুন্দর খোদাই করা দেয়াল, এই মসজিদে রয়েছে মুগল স্থাপত্যশৈলীর প্রভাবযুক্ত। বাংলাদেশের অন্যতম একটি প্রত্নতাত্ত্বিক নিদর্শন এটি। মুসলিম স্থাপত্যের অনন্য উদাহরণ, যা দর্শনার্থীদের ব্যাপকভাবে আকর্ষণ করে।
আরো পড়ুনঃ প্রকৃতিপ্রেমীদের স্বর্গরাজ্য বান্দরবান: বান্দরবান জেলার সেরা ১০টি দর্শনীয় স্থান
আলতাদীঘি জাতীয় উদ্যান নওগাঁ
আলতাদীঘি জাতীয় উদ্যানটি নওগাঁ জেলার ধামইরহাট উপজেলায় অবস্থিত একটি প্রাকৃতিক সৌন্দর্যে ভরপুর অভয়ারণ্য। এখানে রয়েছে প্রায় ১০৭৪ হেক্টর আয়তনের বন্যপ্রাণী সংরক্ষণ কেন্দ্র, যেখানে বিভিন্ন প্রজাতির পশু-পাখি ও গাছপালা রয়েছে।
আলতাদীঘি জাতীয় উদ্যানটি প্রকৃতি প্রেমী এবং বন্যপ্রাণী গবেষকদের অন্যতম একটি আদর্শ স্থান। এখানে রয়েছে বিভিন্ন প্রজাতির সাপ, শূকর মেছো বাঘসহ অন্যান্য বন্যপ্রাণী এবং শাল গাছসহ বিভিন্ন ধরনের গাছপালার সমাহার। এই উদ্যানটি শান্তি এবং প্রাকৃতিক দৃশ্যের জন্য পর্যটকদের কাছে আকর্ষণীয় স্থান।
বড় শিব মন্দির পাহাড়পুর নওগাঁ
নওগাঁ জেলার দুবলহাটি এলাকায় অবস্থিত বড় শিব মন্দির একটি ঐতিহাসিক মন্দির। এটি রাজা বল্লাল সেনের আমলে ১৮২৩ সালে নির্মিত হয় বলে ধারণা করা হয়। মন্দিরটি বিখ্যাত হওয়ার কারণ, এর টেরাকোটা শিল্প ও চমৎকার স্থাপত্যশৈলীর জন্য।
প্রায় ৭০ ফুট উচ্চতা বিশিষ্ট ঐতিহাসিক এই মন্দিরটি বাংলাদেশের অন্যতম বৃহৎ শিব মন্দির। প্রত্নতাত্ত্বিক দৃষ্টিকোণ থেকে গুরুত্বপূর্ণ এই মন্দিরটি হিন্দু ধর্মাবলম্বীদের জন্য পবিত্র স্থা্ন। যা স্থানীয় সংস্কৃতির অংশ হিসাবে শিব চতুর্দশী উপলক্ষে এখানে প্রতিবছর মেলা বসে।
নজিপুর রাজবাড়ি নওগাঁ
নওগাঁ জেলার পত্নীতলা উপজেলায় অবস্থিত নজিপুর রাজবাড়িটি একটি ঐতিহাসিক স্থাপনা। স্থানীয় জমিদারদের বাসভবন হিসেবে ব্রিটিশ আমলে ব্যবহৃত হতো। রাজবাড়িটি নির্মিত হয়েছে অনন্য স্থাপত্যশৈলীতে। এখানে রয়েছে প্রশস্ত অঙ্গন, সুদৃশ্য প্রবেশদ্বার ও সুরম্য দালান।
এটি একসময় প্রশাসনিক ও সামাজিক কর্মকাণ্ডের কেন্দ্র ছিল। বর্তমানে রাজবাড়িটি ঐতিহ্যের নিদর্শন হিসেবে দাঁড়িয়ে আছে, যা দর্শনার্থীদের আকর্ষণ করে। অতীতের গৌরবময় ইতিহাসের স্মারক হিসেবে নজিপুর রাজবাড়ি নওগাঁ জেলার অন্যতম দর্শনীয় স্থান।
পতিসর কুঠিবাড়ি পতিসর নওগাঁ
নওগাঁ জেলার আত্রাই উপজেলায় অবস্থিত পতিসর কুঠিবাড়ি জদিও রবীন্দ্রনাথ ঠাকুরের জন্মস্থান নয়, তবে তিনি এখানেই শৈশবকালের বেশিরভাগ সময় কাটিয়েছেন। তাছাড়া, এটি রবীন্দ্রনাথের প্রিয় স্থান ছিল, যেখানে তিনি সৃষ্টিশীল লেখালেখির কাজ করতেন।
কুঠিবাড়িটি বর্তমানে একটি ঐতিহাসিক স্থান হিসেবে পরিচিত, যা রবীন্দ্রনাথের জীবন ও সাহিত্যকে ধারণ করে। এখানকার প্রাকৃতিক পরিবেশ এবং বাড়ির স্থাপত্য বাংলাদেশের সাহিত্যপ্রেমী ও ইতিহাস অনুসন্ধানকারীদের জন্য অন্যতম একটি গুরুত্বপূর্ণ দর্শনীয় স্থান।
ভীমের পান্টি/ ঘাট ধামইরহাট নওগাঁ
নওগাঁ জেলার ধামইরহাট উপজেলার ভীমের পান্টি বা ঘাট বাংলাদেশের অন্যতন একটি ঐতিহাসিক স্থান, যা স্থানীয় folklore এবং পুরাণের সঙ্গে সম্পর্কিত। এখানে একটি বড় পাথর যা, ভীমের পান্টি হিসাবে স্থানীয়দের কাছে পরিচিত।
লোক কথা অনুযায়ী, মহাভারতের ভীম এই স্থানে বিশ্রাম নিয়েছিলেন। যা, দর্শনার্থীদের মধ্যে ঐতিহাসিক আগ্রহ সৃষ্টি করে, বিশেষত যারা পুরাণের সঙ্গে সংযুক্ত স্থানগুলো দেখতে পছন্দ করেন। তাছাড়া, এটি প্রাকৃতিক সৌন্দর্য ও ঐতিহাসিক গুরুত্বের জন্য স্থানীয়দের কাছে জনপ্রিয়।
জগদল বিহার ধামইরহাট নওগাঁ
জগদল বিহার নওগাঁ জেলার ধামইরহাট উপজেলার অবস্থিত একটি ঐতিহাসিক স্থান, যা নওগাঁ জেলার অংশ। এটি ধর্মীয় দিক থেকে গুরুত্বপূর্ণ, বিশেষ করে বৌদ্ধ ধর্মাবলম্বীদের জন্য। এখানে রয়েছে ধ্বংসপ্রাপ্ত প্রাচীন একটি বৌদ্ধ বিহার, যা ভ্রমণকারী ও ইতিহাস-অনুরাগীদের জন্য আকর্ষণীয় স্থান।
বিহারের নির্মাণশৈলী ও সংস্কৃতির নিদর্শনগুলি প্রাচীন এবং ঐতিহাসিক গুরুত্ব বহন করে। এটি নওগাঁ জেলা শহর থেকে প্রায় ৬০ কিলোমিটার এবং জয়পুরহাট জেলা সদর থেকে মাত্র ২৫ কিলোমিটার দূরে অবস্থিত। এই বিহারটি বাংলাদেশের অন্যতম ঐতিহাসিক স্থান।
শেষকথা
প্রিয় পাঠক পাঠিকাগণ, আমরা আশাকরি আপনারা যদি আর্টিকেলটি শুরু থেকে শেষ পর্যন্ত পড়ে থাকেন, তাহলে নিশ্চয়ই জেনে গেছেন, "নওগাঁ জেলার জনপ্রিয় ১০ দর্শনীয় স্থান" সম্পর্কে অনেক গুরুত্বপূর্ণ তথ্য। যা আমরা ইতিপূর্বেই আপনাদের সঙ্গে শেয়ার করেছি।
আরো পড়ুনঃ রাঙ্গামাটির সেরা দর্শনীয় স্থান | মেঘ-পাহাড়-লেকের অপূর্ব সৌন্দর্যের রাজ্য
আশাকরি আর্টিকেলটি আপনাদের অনেক উপকারে আসবে। আর্টিকেলটি যদি আপনাদের ভালোলাগে এবং উপকারি বলে মনে হয়, তাহলে এটি অন্যের সঙ্গে শেয়ার করবেন। আরো নতুন নতুন তথ্য জানার জন্য পরবর্তী আর্টিকেলটি পড়ুন এবং আমাদের সঙ্গে থাকুন, ধন্যবাদ।
এই ওয়েবসাইটের নীতিমালা মেনে কমেন্ট করুন। প্রতিটি কমেন্ট রিভিউ করা হয়।
comment url