পর্তুগাল ওয়ার্ক পারমিট ভিসা ২০২৫

আরো পড়ুনঃ আমেরিকা যাওয়ার উপায় ও খরচ ২০২৫

দক্ষিণ পশ্চিম ইউরোপের একটি দেশ পর্তুগাল, যা আইবেরিয়ান উপদ্বীপের পশ্চিমাংশে অবস্থিত। এই দেশটি তার সমৃদ্ধশালি ইতিহাস, সংস্কৃতি এবং সুন্দর প্রাকৃতিক দৃশ্যের জন্য বিখ্যাত। পর্তুগালের প্রধান বাণিজ্যিক এবং সাংস্কৃতিক স্থান হিসাবে পরিচিত লিসবন, যা পর্তুগালের রাজধানী।

দেশটি প্রসিদ্ধ হয়েছে তার সমুদ্র সৈকত এবং বিখ্যাত হয়েছে পর্তুগিজ মদ ও স্যুভলাকির জন্য। পর্তুগাল ন্যাটো, ইউরোপীয় ইউনিয়ন এবং জাতিসংঘের সদস্য। উচ্চ উন্নয়ন সূচকের দেশ পর্তুগাল এবং জীবন জাত্রার মান অনেক উন্নত।

দেশটি তার ঐতিহ্যকে বজায় রাখে এক অনন্য মিশ্রণ এবং আধুনিকতায়। পর্তুগাল বিভিন্ন দেশ থাকে লোক নেয়। আর বাংলাদেশ থেকে পর্তুগাল যাওয়ার জন্য বেশ কিছু উপায় রয়েছে, যেমন টুরিস্ট, স্টাডি এবং ওয়ার্ক পারমিট ভিসায়।  আজকে আলোচনা করবে পর্তুগাল ওয়ার্ক পারমিট ভিসা সম্পর্কে-

পর্তুগাল ওয়ার্ক পারমিট ভিসা ২০২৫

পর্তুগাল ওয়ার্ক পারমিট ভিসা একটি গুরুত্বপূর্ণ দস্তাবেজ, যা বিদেশি কর্মীদের সেই দেশে কাজ করার জন্য জরুরি। তাছাড়া, পর্তুগাল বিদেশি কর্মীদের বিভিন্ন সেক্টরে কাজ করার সুযোগ দেয়, বিশেষ করে প্রযুক্তি, নির্মাণ, হোটেল, কৃষি, ইন্ডাস্ট্রি ইত্যাদি সেক্টরে।

পর্তুগাল ওয়ার্ক পারমিট ভিসা পাওয়ার আবেদনের জন্য, প্রথমে প্রয়োজন একটি বৈধ চাকুরির অফার, যা পর্তুগালের কোন একটি প্রতিষ্ঠান বা কোম্পানী দ্বারা প্রদত্ত। আবেদনকারীর শিক্ষাগত যোগ্যতা, দক্ষতা এবং অভিজ্ঞতার উপর আবেদন পত্র মূল্যায়ন করা হবে।

আর পর্তুগালের ওয়ার্ক পারমিট ভিসার জন্য আবেদন প্রক্রিয়া শুরু হয় তাদের ইমিগ্রেশন অফিসে। আবেদনের জন্য প্রয়োজন হয়, আবেদনকারীর পাসপোর্ট, স্বাস্থ্য পরীক্ষার রিপোর্ট, ব্যাংক স্টেটমেন্ট, পুলিশ ক্লিয়ারেন্স রিপোর্টসহ গুরুত্বপূর্ণ তথ্য এবং ইংরেজি ও পর্তুগিজ ভাষার উপর দক্ষতা।

আবেদনের অনুমোতি পেলে, পর্তুগালের কর্মসংস্থানকারি প্রতিষ্ঠান, কাজের অনুমোতি দেয় বিদেশি কর্মীদের। তবে, ২০২৫ সালে পর্তুগাল সরকার বিদেশি কর্মীদের নতুন কিছু সুযোগ সুবিধা দেবে এবং সে দেশের সরকারের উদ্যোগে গুরুত্ব দেওয়া হবে আন্তর্জাতিক দক্ষতার উপর।

পর্তুগাল ওয়ার্ক পারমিট ভিসার খরচ ২০২৫

পর্তুগাল ওয়ার্ক পারমিট ভিসার খরচ নির্ভর করে, ভিসার মেয়াদ এবং ভিসার ধরণের উপর। তবে, সাধারণত বাংলাদেশ থেকে ২০২৫ সালে পর্তুগাল ওয়ার্ক পারমিট ভিসায় যেতে সর্বমোট খরচ হবে, প্রায় ১২ লক্ষ টাকা থেকে ১৬ লক্ষ টাকার মতো। 

কিন্তু অনেক সময় পর্তুগালের নিয়োগদাতা প্রতিষ্ঠান কর্মীর বিমান ভাড়া এবং ভিসার খরচ বহন করে থাকেন। সেক্ষেত্রে আবেদনকারীর খরচ অনেকটাই কমে যায়। তাছাড়া, এটি অনেকটা নির্ভর করে ভিসা এজেন্সি বা দালালের উপর।

পর্তুগাল কাজের বেতন ২০২৫

পর্তুগালে বিদেশি কর্মীদের বিভিন্ন সেক্টরে কাজের সুযোগ রয়েছে এবং কাজের সেক্টর ও অভিজ্ঞতার উপর বেতন নির্ভর করে। তবে, ইউরোপের অন্যতম সমৃদ্ধশালী দেশ পর্তুগালে প্রায় সকল ধরণের কর্মীর বেতন মোটামুটি সন্তোষ জনক।

সেখানে একজন কর্মীর বেতন সর্বনিম্ন ৯০০ ইউরো থেকে ২০০০ ইউরো, যা বাংলাদেশী টাকায় প্রায় ১৪৫০০০ টাকা থেকে ২৫৩০০০ টাকা পর্যন্ত হতে পারে। যা কাজের ধরণ, দক্ষতা, অভিজ্ঞতা এবং ভাষা দক্ষতার উপর নির্ভর করে।

পর্তুগালে কোন কাজের চাহিদা বেশি?

পর্তুগালে প্রায় সেক্টরে বিদেশি কর্মীর চাহিদা রয়েছে। তবে, বেশ কিছু সেক্টর রয়েছে, যে সকল সেক্টরে বাংলাদেশীসহ বিদেশি কর্মীর প্রচুর চাহিদা আছে। নিম্নে কয়েকটি অধিক চাহিদা সম্পূর্ণ সেক্টরের তালিকা দেওয়া হলো-

  • ইঞ্জিনিয়ারিং- মেশিন, বিল্ডিং এবং নির্মাণ ইঞ্জিনিয়ারিং কাজের চাহিদা রয়েছে।
  • কৃষি ও কৃষি প্রযুক্তি- কৃষক এবং কৃষি বিশেষজ্ঞদের অনেক চাহিদা রয়েছে পর্তুগালে।
  • স্বাস্থ্যখাত- বিশেষ পেনশন ভোগী জনসাধারণের জন্য সেখানে ডাক্তার, নার্স ও স্বাস্থ্য কর্মী নিয়োগ করে।
  • হেলথ অ্যান্ড ফিটনেস- প্রশিক্ষক, ফিজিক্যাল ফিটনেস বিশেষজ্ঞ এবং শারীরিক থেরাপিস্টদের চাহিদা রয়েছে।
  • তথ্য প্রযুক্তি/ আইটি- সিস্টেম অ্যানালিস্ট, সফটওয়্যার ডেভলপার এবং সাইবার সিকিউরিটি বিশেষজ্ঞদের চাহিদা রয়েছে।
  • পর্যটন এবং আতিথিয়তা- বিভিন্ন সেবা প্রদানকারি, যেমন হোটেল কর্মী, রেস্তরা কর্মী এবং গাইট এর প্রচুর চাহিদা রয়েছে।
  • লোকবল ও কাস্টমার সার্ভিস- কল সার্ভিস সেন্টার এবং অন্যান্য গ্রাহকদের সাহায্য বিষয়ক চাকুরীর জন্য প্রচুর চাহিদা রয়েছে।
  • শিক্ষা- শিক্ষক, বিশেষ করে ইংরেজি ভাষার শিক্ষক এবং অন্যান্য শিক্ষাগত যোগ্যতা যেমন, বিদেশি ভাষা শেখানোর জন্য চাহিদা রয়েছে।

পর্তুগালে কোন কাজের বেতন কত?

বিশ্বের বিভিন্ন দেশে যেমন কাজের বেতন নির্ধারিত হয়, কাজের ধরন, দক্ষতা এবং অভিজ্ঞতার উপর নির্ভর করে। সেরূপ ইউরোপের দেশ পরতুগালেও একই নিয়ম প্রযোজ্য হয়ে থেকে। নিম্নে কয়েকটি জনপ্রিয় কাজের বেতন আলোচনা করা হলো-

  • নির্মাণ শ্রমিক- ৮০০- ১২০০ ইউরো যা বাংলাদেশী টাকায় প্রায় ১ লক্ষ থেকে ১ লক্ষ ৫০ হাজার টাকা।
  • কর্মচারী/ হোটেল ওয়েটার- ৮০০- ১২০০ ইউরো যা বাংলাদেশী টাকায় প্রায় ১ লক্ষ থেকে ১ লক্ষ ৫০ হাজার টাকা।
  • শিক্ষক- প্রফেশনাল- ১০০০- ২০০০ ইউরো যা বাংলাদেশী টাকায় প্রায় ১ লক্ষ ২৬ হাজার থেকে ২ লক্ষ ৫২ হাজার টাকা।
  • ডেভলপার/ আইটি সাপোর্ট-  ১২০০- ২৫০০ ইউরো যা বাংলাদেশী টাকায় প্রায় ১ লক্ষ ৫০ হাজার থেকে ৩ লক্ষ ১৫ হাজার টাকা।
  • ইঞ্জিনিয়ারিং/ টেকনিক্যাল প্রফেশনাল- ১৫০০- ৩০০০ ইউরো যা বাংলাদেশী টাকায় প্রায় ১ লক্ষ ৯০ হাজার থেকে ৩ লক্ষ ৮০ হাজার টাকা।
  • স্বাস্থ্যসেবা কর্মী- প্রফেশনাল- ১৫০০- ৩৫০০ ইউরো যা বাংলাদেশী টাকায় প্রায় ১ লক্ষ ৯০ হাজার থেকে ৪ লক্ষ ৪০ হাজার টাকা।

পর্তুগাল ভিসা আবেদন প্রক্রিয়া

পর্তুগাল ওয়ার্ক পারমিট ভিসা পাওয়ার আবেদন করার জন্য কয়েকটি ধাপে এগুতে হয়। নিম্নে ভিসা আবেদনের ধাপ সম্পর্কে আলোচনা করা হলো-

** চাকুরীর অফার লেটার- প্রথমে আপনি পর্তুগালের কোন কোম্পানি বা প্রতিষ্ঠানে চাকুরি করবেন তার অফার লেটার লাগবে।

** ওয়ার্ক পারমিটের জন্য আবেদন- চাকুরীর অফার পাওয়ার পর, পর্তুগালের ইমিগ্রেশন দপ্তরে ওয়ার্ক পারমিটের জন্য আবেদন করতে হবে।

** ভিসা আবেদন- ওয়ার্ক পারমিট অনুমোদিত হলে ভিসার জন্য আবেদন করতে হবে, এরজন্য ভারতে থাকা পর্তুগালের দূতাবাসে গিয়ে ভিসার জন্য আবেদন করতে হবে।

বিঃদ্রঃ আন্তর্জাতিক জব পোর্টাল বা সরাসরি কোম্পানির ওয়েবসাইটের মাধ্যমে পর্তুগাল ভিসার আবেদন করা যায়।

পর্তুগাল ভিসার প্রয়োজনীয় ডকুমেন্ট

বিশ্বের যে কোন দেশে ভিসা পাওয়ার জন্য, তাদের নিয়ম অনুজায়ী বেশ কিছু গুরুত্বপূর্ণ ডকুমেন্ট জমা দেওয়ার প্রয়োজন হয়। পর্তুগাল ভিসা আবেদনের জন্য যে সকল ডকুমেন্ট প্রয়োজন, নিম্নে তার তালিকা দেওয়া হলো-

  1. বৈধ পাসপোর্ট।
  2. ব্যাংক স্টেটমেন্ট।
  3. জাতীয় পরিচয় পত্র।
  4. স্বাস্থ্য পরীক্ষার রিপোর্ট।
  5. চাকুরীর অফার লেটার।
  6. পাসপোর্ট সাইজের ছবি।
  7. শিক্ষাগত যোগ্যতার সনদ।
  8. কাজের অভিজ্ঞতার প্রমাণ।।
  9. কাজের দক্ষতার সার্টিফিকেট।
  10. পর্তুগাল ভিসা আবেদন ফরম।
  11. ইংরেজী ভাষার দক্ষতার সনদ।
  12. পুলিশ ক্লিয়ারেন্স সার্টটিফিকে।

পর্তুগাল ভিসা এম্বাসির ঠিকানা

পর্তুগালের কোন স্থায়ী দূতাবাস বর্তমানে বাংলাদেশে নেই। তবে, ঢাকায় একটি অনারারি কনস্যুলেট রয়েছে, যেখানে ভিসা সংক্রান্ত সেবা দিয়ে থাকে। ভিসা পাওয়ার জন্য বাংলাদেশি নাগরিকেরা নিকটস্থ দূতাবাস, ভারতের নয়া দিল্লিতে থাকা দূতাবাসের মাধ্যমে আবেদন করতে পারবেন।

সাম্প্রতিক একটি সংবাদ অনুযায়ী, পর্তুগাল সরকার ২০২৫ সালে ঢাকায় একটি ভিসা অফিস বা দূতাবাস চালুর বিষয়ে বিবেচনা করছে, যা অতি দ্রুত বাস্তবায়িত হওয়ার সম্ভাবনা রয়েছে। এটি বাংলাদেশী নাগরিকের জন্য ভিসা প্রাপ্তিতে অনেক সহজ হবে।

বর্তমানে পর্তুগালের ভিসা পাওয়ার জন্য, ভিসা সংক্রান্ত তথ্য ও আবেদিন প্রক্রিয়ার জন্য বাংলাদেশীদের ভারতে থাকা পর্তুগাল দূতাবাসের সঙ্গে যোগাযোগ করতে হবে।

পর্তুগাল ভিসা ২০২৫- শেষকথা

পর্তুগাল বা যে কোন দেশে যাওয়ার জন্য বিশ্বস্ত বা পরিচিত উৎস থেকে ভিসার আবেদন করুন। কোন দালাল বা এজেন্সি বা মধ্যস্থতাকারীদের মাধ্যমে কাজ করলে, তাদের সম্পর্কে আগে থেকে ভালো করে জেনে নিন। প্রয়োজনীয় ডকুমেন্ট সঠিকভাবে প্রস্তুত ও সাবমিট করুন।

প্রিয় পাঠক পাঠিকাগণ, আমরা আশাকরি আপনাদের সঙ্গে শেয়ার করতে পেরেছি, "পর্তুগাল ওয়ার্ক পারমিট ভিসা ২০২৫" সম্পর্কে অনেক গুরুত্বপূর্ণ তথ্য। যা আপনাদের অনেক উপকারে আসবে বলে আমরা আশাবাদী।

আরো পড়ুনঃ ইতালি কোন ভিসার খরচ কত ২০২৫? | কোন কাজের চাহিদা ইতালিতে বেশি?

আর্টিকেলটি যদি আপনাদের ভালোলাগে এবং উপকারি বলে মনে হয়, তাহলে এটি আপনার পরিচিতদের সঙ্গে শেয়ার করে দিবেন। আরো নতুন নতুন তথ্য জানার জন্য আমাদের পরবর্তী আর্টিকেল পড়ুন এবং আমাদের সঙ্গে থাকুব, ধন্যবাদ।

এই পোস্টটি পরিচিতদের সাথে শেয়ার করুন

পূর্বের পোস্ট দেখুন পরবর্তী পোস্ট দেখুন
এই পোস্টে এখনো কেউ মন্তব্য করে নি
মন্তব্য করতে এখানে ক্লিক করুন

এই ওয়েবসাইটের নীতিমালা মেনে কমেন্ট করুন। প্রতিটি কমেন্ট রিভিউ করা হয়।

comment url