ডায়াবেটিস নিয়ন্ত্রণে রাখার সহজ এবং কার্যকর উপায়

আরো পড়ুনঃ হাঁসের ডিমের পুষ্টিগুণ, উপকারিতা ও অপকারিতা

বর্তমান সময়ে শুধু বাংলাদেশ নয়, সারা বিশ্বে ডায়াবেটিস একটি কমন বা সাধারণ রোগে পরিনত হয়েছে। আর এই রোগটি ব্যাপক হারে বেড়ে যাওয়ার জন্য, মূলত অস্বাস্থ্যকর খাদ্যাভাস, অনিয়ন্ত্রিত জীবনযাপন এবং ব্যায়ামের অভাব অনেকটা দায়ী।

তাই আমরা যদি নিয়মিত কয়েকটি অভ্যাস পরিত্যাগ এবং সহজ কিছু নিয়ম মেনে চলতে পারি, তাহলে ডায়াবেটিস নিয়ন্ত্রণে রাখা সম্ভব। আর আজকের আর্টিকেলে আমরা আপনাদের সঙ্গে শেয়ার করবো, ডায়াবেটিস নিয়ন্ত্রণে রাখার সহজ এবং কার্যকর উপায় সম্পর্কে। চলুন তাহলে আমরা দেখি-

ডায়াবেটিস নিয়ন্ত্রণে রাখার সহজ এবং কার্যকর উপায়

ডায়াবেটিস এখন এমন একটি রোগ যা ছোট থেকে বড় কেউ বাদ পড়ছে না এর হাত থেকে। তাছাড়া এই রোগ এতো ব্যপক হারে বেড়ে গেছে যে, কোন স্থানে যদি ৩ জন লোক থাকে, তাহলে জানতে হবে সেখানে কমপক্ষে ১ জন লোক ডায়াবেটিসে আক্রান্ত।

তবে, ডায়াবেটিস রোগটি যতই ব্যপক আকার ধারণ করুক না কেন, একে নিয়ন্ত্রণেও রাখা যায় খুব সহজে। তবে, এর জন্য আমাদেরকে কেবল কয়েকটি অভ্যাস পরিত্যাগ করতে হবে এবং কিছু কাজ নিয়মিতভাবে করতে হবে। চলুন দেখি ডায়াবেটিস নিয়ন্ত্রণে রাখার সহজ এবং কার্যকর উপায়গুলো-

ডায়াবেটিস নিয়ন্ত্রণে রাখতে সঠিক খাদ্যাভাস

স্বাস্থ্যকর খাদ্যভাস গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা পালন করে ডায়াবেটিস নিয়ন্ত্রণে। কম গ্লাইসেমিক ইনডেক্সযুক্ত খাবার রক্তের শর্করা নিয়ন্ত্রণে খুবই জরুরি। তাই শর্করা জাতীয় খাবার যেমন, মিস্টি জাতীয় খাবার, সাদা ভাত ও পরিহার করতে হবে প্রক্রিয়াজাত খাবার।

এর পরিবর্তে যোগ করতে হবে, আঁশ জাতীয় খাবার যেমন, শাকসবজি, বাদান পূর্ণশস্য ও বীজজাতীয় খাবার। গ্রহণ করতে হবে প্রতিদিন পর্যাপ্ত পরিমাণ প্রোটিন যেমন, চিয়া সিড, মাছ, মুরগী ও ডাল। আবার রক্তে শর্করার ভারসাম্য রক্ষা করে বাদাম, অলিভয়েল এবং অ্যাভোকোডো।

তাছাড়া সঠিক সময়ে নিয়মিত খাবার গ্রহন এবং অল্প অল্প করে বার বার খাওয়ার অভ্যাস করা জরুরি। ডায়াবেটিস নিয়ন্ত্রণে সাহায্য করে প্রচুর পানি পান এবং প্রক্রিয়াজাত খাবার এডিয়ে চলা। খাদ্যভাস সঠিক রাখার পাশাপাশি ওজন নিয়ন্ত্রণ এবং ব্যয়ামের মাধ্যমে সম্ভাব সুস্থ্য জীবণ যাপন করা।

ডায়াবেটিস নিয়ন্ত্রণে নিয়মিত ব্যায়াম করা

নিয়মিত ব্যায়াম সুস্থ জীবনযাপনের জন্য অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ। এটি শরীরকে কর্মক্ষম রাখার পাশাপাশি হৃদরোগ, ডায়াবেটিস উচ্চ রক্তচাপের ঝুঁকি কমায়। দৈনিক ৩০-৪৫ মিনিট হাঁটা, দৌড়ানো, সাইক্লিং বা সাঁতার কাটা শরীরের শক্তি বাড়ায় এবং রোগপ্রতিরোধ ক্ষমতা উন্নত করে।

ব্যায়াম করলে মেটাবলিজম সক্রিয় থাকে, ফলে ওজন নিয়ন্ত্রণ সহজ হয়। নিয়মিত শারীরিক পরিশ্রম মন ভালো রাখে স্ট্রেস কমায়, কারণ ব্যায়ামের ফলে এন্ডরফিন হরমোন নিঃসৃত হয়। বিশেষ করে যারা দীর্ঘসময় বসে কাজ করেন, তাদের জন্য ব্যায়াম আরও জরুরি।

সুস্থ কর্মক্ষম থাকতে হলে প্রতিদিন সামান্য সময় ব্যায়ামের জন্য বরাদ্দ করা উচিত। এটি শুধু শরীর নয়, মনকেও প্রশান্ত রাখে সুস্থ রাখে।

ডায়াবেটিস নিয়ন্ত্রণে পর্যাপ্ত পানি পান করা

ডায়াবেটিস নিয়ন্ত্রণে রাখার ক্ষেত্রে পানি খাওয়া খুবই উপকারি। কারণ, পানি শরীর থেকে অতিরিক্ত গ্লুকোজ বের করতে সাহায্য করে এবং নিয়ন্ত্রণে রাখে রক্তের শর্করা। পর্যাপ্ত পানি পান করলে রোধ হয় ডিহাইড্রেশন, ফলে ইনসুলিনের কার্যকারীতা বাড়ে।

একটি গবেশনার মাধ্যমে দেখা জায় যে, যদি কোন ব্যক্তি নিয়মিতভাবে পর্যাপ্ত পরিমাণে পানি পান করেন, তাহলে তার টাইপ ২ ডায়াবেটিস হওয়ার ঝুকি অনেকটা কমে যায়। পাশাপাশি আপনাকে এডিয়ে চলতে হবে, মিষ্টি জাতীয় জুস এবং সফট ড্রিংকস।

কারণ, এই জাতীয় খাবার রক্তের শর্করার মাত্রা দ্রুত বাড়তে সাহায্য করে। তাই ডায়াবেটিস নিয়ন্ত্রণ এবং শরীর সুস্থ্য রাখার জন্য প্রতিদিন কমপখে ৮/১০ গ্লাস পানি পান করুন। স্বাস্থ্যকর জীবন জাপনের ক্ষেত্রে প্রয়োজন অনুজায়ী পানি পান করা উচিৎ।

ডায়াবেটিস নিয়ন্ত্রণে মানসিক চাপ কমানো

 

ডায়াবেটসের ক্ষেত্রে মানসিক চাপ ক্ষতিকর, কারণ এটি শরীরে র্টিসল ও অ্যাড্রেনালিন হরমোন বাড়িয়ে দেয়, যা রক্তের শর্করার মাত্রা বাড়ায়। তাই ডায়াবেটিস নিয়ন্ত্রণের ক্ষেত্রে মানসিক চাপ কমানো অত্যান্ত জরুরি।

আরো পড়ুনঃ কোয়েল পাখির ডিমের পুস্টিগুণ উপকারিতা ও অপকারিতা

আর নিয়মিত মেড়িটেশন, যোগব্যায়াম এবং শ্বাস প্রশাসের অনুশীলন সাহায্য করে মানুষিক চাপ কমাতে। দৈনন্দিন কাজের ফাকে বিশ্রাম নেওয়া এবং পর্যাপ্ত ঘুম প্রয়োজন। বন্ধু বান্ধব এবং পরিবারের সঙ্গে সময় দেওয়া এবং পছন্দমত কাজ মানুষিক শান্তি আনে।

তাছাড়া, চাপ থেকে মুক্ত থাকার জন্য ইতিবাচক চিন্তা করা ও ব্যায়াম করা সুস্থ্য জীবনের জন্য প্রয়োজন। সহজ কথায় বলা যায় ডায়াবেটিস নিয়ন্ত্রণে রাখা এবং উন্নত জীবিনজাপনের জন্য মানসিক প্রশান্তি অনেক জরুরি।

ডায়াবেটিস নিয়ন্ত্রণে নিয়মিত ডাক্তারের সঙ্গে পরামর্শ

ডায়াবেটিস নিয়ন্ত্রণে ডাক্তারের পরামর্শ নিয়মিত নেওয়া অনেক জরুরি। কারণ, রক্তের শর্করার মাত্রা নিয়মিত পর্যবেক্ষণ করলে অনেক জটিলতা সহজে এডানো যায়। ডায়াবেটিস একটি দীর্ঘমেয়াদি রোগ, যা কিডনি, চোখ, হৃদপিণ্ড এবং স্নায়ুর ক্ষতি করতে পারে।

তাই, ডায়াবেটিস নিয়ন্ত্রণে রাখার ক্ষেত্রে ডাক্তারের পরামর্শ মতে ওষুধ সেবন, খাদ্যাভাস গ্রহণ এবং জীবন জাত্রার পরিবর্তন প্রয়োজন। সেই কারণে, নিয়মিত স্বাস্থ্য পরীক্ষা করা যেমন, রক্ত পরীক্ষা করা, ব্লাড সুগার এবং কোলেস্ট্রেরল ইত্যাদি।

তাছাড়া, যদি কারণে শরীরের কোন অস্বাভাবিক অবস্থা দেখা দেয়, তখন দেরি নাকরে চিকিৎসকের শরনাপন্ন হওয়া উচিৎ। কারণ, নিয়মিত ডাক্তারের পরামর্শ নেওয়ার মাধ্যমে ডায়াবেটিস নিয়ন্ত্রণ রেখে ঝুকি কমিয়ে সুস্থ্য জীবন যাপন করা সম্ভাব।

ডায়াবেটিস নিয়ন্ত্রণে ধুমপান ও অ্যালকোহল পরিহার

ধূমপান এবং অ্যালকোহল পরিহার করা ডায়াবেটিস নিয়ন্ত্রণের জন্য অনেক গুরুত্বপূর্ণ। কারণ ধূমপান কমিয়ে দেয় ইনসুলিনের কার্যকারিতা, ফলে বেড়ে যায় রক্তে শর্করার মাত্রা এবং স্ট্রোক, হৃদরোগ এবং স্নায়ুর সমস্যা বেড়ে যায়।

তাছাড়া, অ্যালকোহল ব্যহত করে লিভারের কার্যক্রম, সেই কারণে সৃষ্টি করতে পারে রক্তে গ্লোকজ নিয়ন্ত্রণের মাত্রা। আবার এটি যে কোন সময় রক্তের শর্করা কমিয়ে বা বাড়িয়ে দিতে পারে, যা ডায়াবেটিসের জন্য অনেক বিপদজনক। 

তাই, ডায়াবেটিস নিয়ন্ত্রণে রাখার জন্য অ্যালকোহল বা ধুমপান একেবারেই পরিহার করা উচিৎ। এর পরিবর্তে গড়ে তুলুন স্বাস্থ্যকর অভ্যাস যেমন, পুষ্টিকর খাদ্য গ্রহন, ব্যায়াম এবং যথেষ্ট বিশ্রাম নেওয়া ডায়াবেটিসের জন্য গুরুত্বপূর্ণ।

ডায়াবেটিস নিয়ন্ত্রণের জন্য স্বাস্থ্যকর জীবনযাপন করা

ডায়াবেটিস নিয়ন্ত্রণে রাখার ক্ষেত্রে স্বাস্থ্যকর জীবনযাপন করা অনেক জরুরি। আর সেক্ষেত্রে সুসম খাবার, নিয়মিত ব্যায়াম এবং মানসিক প্রশান্তি বজায় রাখার পাশাপাশি নিয়ন্ত্রণে রাখে ডায়াবেটিসের মাত্রাকেও।

নিয়মিত পুষ্টিকর খাবার যেমন, শাকসবজি, স্বাস্থ্যকর প্রোটিন, পূর্ণশস্য এবং কম গ্লাইসেমিক ইনডেক্স যুক্ত খাবার প্রয়োজন। চিনি ও প্রক্রিয়াজাত খাবার এড়িয়ে চলা, পর্যাপ্ত পানি পান করা, নিয়মিত হাটা, যোগব্যায়াম এবং শারীরিক পরিশ্রম বৃদ্ধি করে ইনস্যুলিনের কার্যকরীতা।

মানসিক চাপ কমাতে পর্যাপ্ত ঘুম, বিনোদন ও মেডিটেশনে সময় দেওয়া দরকার। পরিহার করতে হবে অ্যালকোহল ও ধূমপান। সুস্থ জীবন যাত্রা ডায়াবেটিস নিয়ন্ত্রণ অনেকটা সহজ হয়, সুস্থ এবং দীর্ঘ জীবন যাপন নিশ্চিত করা সম্ভাব।

ডায়াবেটিস নিয়ন্ত্রণে প্রাকৃতিক ও ভেষজ উপাদান

ডায়াবেটিস নিয়ন্ত্রণে গুরুত্বপূর্ণ অবদান রাখে প্রাকৃতিক ও ভেষজ উপাদান। অনেক গবেষণায় দেখা গেছে যে, নিমপাতা, করলা, মেথি, আমলা এবং দারুচিনি নিয়ন্ত্রণে সাহায্য করে রক্তের শর্করার মাত্রাকে।

করলার উপাদান- সাহায্য করে গ্লুকোজের মাত্রা, মেথি দানা- কার্যকরীতা বাড়ায় ইনসুলিনের মাত্রা, দারুচিনি- বৃদ্ধি করে ইনসুলিনের সংবেদনশীলতা, আমলা- অ্যান্টি অক্সিডেন্ট সমৃদ্ধ হওয়ার কারণে সক্রিয় রাখে প্যানক্রিয়াসিকে এবং সাহায্য করে ইনসুলিন উৎপাদনে।

আবার ভেষজ উপাদান গ্রহণের ক্ষেত্রে আগে ডাক্তারের পরামর্শ নেওয়া অনেক জরুরি। তবে, প্রাকৃতিক উপাদানের পাশাপাশি খেতে হবে সুষম খাবার এবং নিয়মিতভাবে ব্যায়ামের অনুসরণ করলে সহজ হয় ডায়াবেটিস নিয়ন্ত্রণ করা।

ডায়াবেটিস নিয়ন্ত্রণের সহজ উপায়- শেষকথা

ডায়াবেটিস নিয়ন্ত্রণে রাখা কোন কঠিন কাজ নয়, তবে এর জন্য নিয়মিত কিছু খাদ্যাভ্যাসের গ্রহনের পাশাপাশি সঠিক খাদ্যভাস, পর্যাপ্ত পানি পান, ব্যায়াম এবং মানসিক চাপ নিয়ন্ত্রণের মাধ্যমে আমরা খুব সহজে নিয়ন্ত্রণে রাখতে পারি ডায়াবেটিসকে।

প্রিয় পাঠক পাঠিকাগন, আমরা আশাকরি আপনারা যদি আর্টিকেলটি শুরু থেকে শেষ পর্যন্ত মনোযোগের সঙ্গে পড়ে থাকেন, তাহলে নিশ্চই আপনারা জেনে গেছেন "ডায়াবেটিস নিয়ন্ত্রণে রাখার সহজ এবং কার্যকর উপায়" সম্পর্কে অনেক তথ্য।

আরো পড়ুনঃ লাউয়ের শাক বা ডগার পুষ্টিগুণ, উপকারিতা ও অপকারিতা

আশাকরি আর্টিকেলটি আপনাদের অনেক উপকারে আসবে। আর্টিকেলটি যদি আপনাদের ভালোলাগে এবং উপকারি বলে মনে হয়, তাহলে এটি অন্যের সঙ্গে শেয়ার করবেন। আরো নতুন নতুন তথ্য জানার জন্য আমাদের পরবর্তী আর্টিকেল পড়ুন এবং আমাদের সঙ্গে থাকুন, ধন্যবাদ।

এই পোস্টটি পরিচিতদের সাথে শেয়ার করুন

পূর্বের পোস্ট দেখুন পরবর্তী পোস্ট দেখুন
এই পোস্টে এখনো কেউ মন্তব্য করে নি
মন্তব্য করতে এখানে ক্লিক করুন

এই ওয়েবসাইটের নীতিমালা মেনে কমেন্ট করুন। প্রতিটি কমেন্ট রিভিউ করা হয়।

comment url