সঞ্চয় কি? সঞ্চয়ের উপকারিতা ও অপকারিতা
আরো পড়ুনঃ দৈনিক কিস্তি কি? দৈনিক কিস্তির সুবিধা ও অসুবিধা
সঞ্চয় একটি অত্যান্ত গুরুত্বপূর্ণ অর্থনৈতিক এবং সামাজিক অভ্যাস, যা কোন ব্যক্তি, পরিবার কিংবা সমাজের আর্থিক স্থিতিশীলতাকে মজবুত করতে সাহায্য করে। সঞ্চয় ভবিষ্যতের আর্থিক নিরাপত্তার জন্য, অর্থ সংরক্ষণের গুরুত্বপূর্ণ একটি মাধ্যম।
সঞ্চয় যদি না থাকে, তাহলে হঠাত জরুরি কোন সমস্যার সময় মানুষ অসহায় হয়ে পড়ে। কিন্তু, সঞ্চয়ের যেমন ভালোদিক রয়েছে, তেমনি এর কিছু সীমাবদ্ধতাও রয়েছে। আর আজকের আর্টিকেলে আমরা আপনাদের সঙ্গে শেয়ার করবো " সঞ্চয়ের উপকারিতা ও অপকারিতা সম্পর্কে।
সঞ্চয় কি?/ সঞ্চয়ের সংজ্ঞা
সঞ্চয় হলো আয়ের নির্দিষ্ট একটি অংশ, ব্যয়ের পর অবশিষ্ট রাখা অর্থ বা প্রতিদিনের খরচ থেকে বাঁচিয়ে ভবিষ্যতের জন্য বা বিনিয়োগের জন্য সংরক্ষণ করা। আর এই সঞ্চয় ব্যক্তি, পরিবার, ব্যবসা প্রতিষ্ঠান এমনকি দেশের সরকার পর্যন্ত কোন না কোনভাবে করে।
আর এই সকল সঞ্চয় এর অর্থ বিভিন্ন উপায় রাখা যায়, যেমন কেউ ব্যংকে বা পোস্ট অফিসে আবার অনেকে জমি বা স্বর্ণ ক্রয় করে রাখেন, আবার অনেকে শেয়ার বাজার বা অন্যকোন জায়গায় বিনিয়োগ করে রাখেন।
সঞ্চয়ের অর্থ কোথায় জমা রাখা নিরাপদ
আপনার জমানো সঞ্চয় কোথায় জমা রাখবেন এবং কোথায় আপনার কাছে নিরাপদ মনে হয়, সেটি আপনার ব্যক্তিগত ব্যপার। তবে, নিম্নের আলোচনা করা স্থানগুলো অনেকটা নিরাপদ বলে বিবেচিত হয়। যেমন,
ব্যাংক ও আর্থিক প্রতিষ্ঠানে সঞ্চয় জমা
- সঞ্চয়ী হিসাব- এটি দৈনন্দিন লেনদেন করার জন্য অনেক সহজ এবং নিরাপদ।
- ফিক্সড ডিপোজিট- নির্দিষ্ট একটি সময়ের জন্য টাকা রাখলে, ভালো পরিমাণে মুনাফা পাওয়া যায়।
- ডিপোজিট পেনশন স্কিম- নির্দিষ্ট পরিমাণ একটি অর্থ প্রতিমাসে সঞ্চয়ের মাধ্যমে জমা করে ভবিষ্যতে, বড় অংকের অর্থ পাওয়া যায়।
সরকারী বিভিন্ন সঞ্চয় প্রকল্পে সঞ্চয় জমা
- পোষ্ট অফিস সঞ্চয় স্কিম- এটি অনেক নিরাপদ এবং দীর্ঘমেয়াদী সঞ্চয়ের জন্য অনেক ভালো।
- জাতীয় সঞ্চয় পত্র- ঝুকিমুক্ত, নিরাপদ এবং অধিক মুনাফার জন্য উপজুক্ত স্থান।
বীমা এবং পেনশন ফান্ডে সঞ্চয় জমা
- লাইফ ইন্স্যুরেন্স- নিজের ভবিষ্যৎ সুরক্ষায় লাইফ ইন্স্যুরেন্স করা অনেক ভালো।
- প্রভিডেন্ট ফান্ড এবং পেনশ্ন স্কিম- দীর্ঘ সময়ের সঞ্চয়ের জন্য এটি উপুজুক্ত স্থান।
স্বর্ণ এবং জমি ক্রয়ের মাধ্যমে সঞ্চয় জমা
- স্বর্ণ ক্রয়- এটি মূল্য বৃদ্ধির সম্ভাবনা থাকে দীর্ঘ মেয়াদের জন্য।
- রিয়েল এস্টেট- দীর্ঘমেয়াদের জন্য ভালো একটি বিনিয়োগ হতে পারে রিয়েল এস্টেটে।
স্টক মার্কেট এবং মিউচুয়াল ফান্ডে সঞ্চয় জমা
- শেয়ার বাজার- যদিও, এখানে অনেক ঝুকি আছে, তবে সম্ভাবনা রয়েছে উচ্চ মুনাফার।
- মিউচুয়াল ফান্ড- যদিও, এটি পেশাদারদের দ্বারা বিনিয়োগ পরিচালিত হয়, তবে এখানে ঝুকির পরিমাণ অনেক কম।
নিয়মিত সঞ্চয় জমানোর উপকারিতা
সঞ্চয় জমানো উপকারিতা অনেক, যা অল্প কথায় প্রকাশ করা অনেক মুশকিল। তবে, নিম্নে আমরা নিয়মিত সঞ্চয় জমানোর কয়েকটি বিশেষ উপকারিতা সম্পর্কে সংক্ষেপে আলোচনা করছি। চলুন তাহলে আমরা দেখে নেই-
আরো পড়ুনঃ ঢাকা থেকে কোন জেলার দূরত্ব কত? | কোন জেলার বিখ্যাত খাবার কি?
** আর্থিক নিরাপত্তা দেয়- সঞ্চয় মানুষকে বিভিন্নভাবে আর্থিক নিরাপত্তা প্রদান করে থাকে। এটি কোন আসুস্থতা, দুর্ঘটনা কিংবা হঠাত কোন অপরিকল্পিত ব্যয় মেটাতে সাহায্য করে। নিজের সঞ্চয় থাকলে ঋণের উপর নির্ভরশীল না হয়ে, নিজের জমানো সঞ্চয় ব্যবহার করা যায়।
** সহজ করে ভবিষ্যৎ পরিকল্পনা- দীর্ঘমেয়াদী স্বপ্ন এবং পরিকল্পনা গ্রহন করতে সাহায্য করে সঞ্চয়। কারণ, একজন মানুষ যখন নিয়মিত সঞ্চয় করে, তখন তার ভবিষ্যৎ কোন পরিকল্পনা করতে সহজ হয়। যেমন, সন্তানের শিক্ষা, ব্যবসা শুরু করা এমনকি স্থায়ী সম্পদ ক্রয় করতে সাহায্য করে।
** বিনিয়োগের সুযোগ সৃষ্টি- বিনিয়োগের ক্ষেত্রে সঞ্চয় মূলধন সরবরাহ করে। যেমন, স্টক মার্কেটে এবং ব্যবসায় বিনিয়োগ করে অধিক মুনাফা অর্জন করা যায়। তাছাড়া গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা পালন করে অর্থনৈতিক প্রবৃদ্ধির ক্ষেত্রে।
** সামাজিক স্থিতিশীলতা বৃদ্ধি- সঞ্চয় ব্যক্তিগত এবং সমষ্টিগতভাবে ত্বরান্বিত করে অর্থনৈতিক উন্নয়ন। যেমন, একটি সমাজের অধিকাংশ মানুষ যখন সঞ্চয় করা শুরু করে, তখন অর্থনৈতিক স্থিতিশীলতা খুব দ্রুত বৃদ্ধি পায়।
** স্বচ্ছলতা পায় অবসর জীবনে- যারা নিজের কর্ম জীবনে সঞ্চয় করে, তাদের স্বচ্ছলতা পায় অবসর জীবনে। কারণ, বার্ধক্যে যখন আয়ের সুযোগ কমে যায় বা বন্ধ হয়ে যায়, তখন সঞ্চিত অর্থ জীবনজাত্রা অব্যাহত রাখতে সাহায্য করে।
** মুনাফার মাধ্যমে আয়ের সুযোগ- যদি কোন ব্যক্তি ব্যাংক বা অন্য কোথাও সঞ্চয় স্কীমে অর্থ জমা রাখে, সেখান থকে মুনাফার মাধ্যমে অতিরিক্ত আয় করা সম্ভাব হয়। এটি একটি প্যাসিভ ইনকামের অন্যতম সহজ মাধ্যম।
** ঝুকি মোকাবিলা করা সহজ- মানুষের জীবনে হঠাত করে সমস্যা আসতে পারে। আর এই সমস্যা সামাধানে সাহায্য করে সঞ্চিত অর্থ। ফলে মানসিক চাপ কমার পাশাপাশি ঋণ গ্রহণের প্রয়োজন পড়ে না।
নিয়মিত সঞ্চয় জমানোর অপকারিতা
সকল উপকারিতার সঙ্গে জড়িত থাকে অপকারিতাও। আর নিয়মিত সঞ্চয় জমানোর খেত্রেও একই। তবে, উপকারিতার তুলনায় অপকারিতা অনেক কম। নিম্নের আলোচনা থেকে আমরা দেখে নেই সঞ্চয়ের অপকারিতাগুলো-
** ঋণের সহজলোভ্যতা কমে যায়- যদি কোন দেশের অধিকাংশ মানুষ, তাদের অর্থ শুধুমাত্র সঞ্চয় করে রাখে এবং বিনিয়োগ না করে, সেক্ষেত্রে কমে যায় অর্থনৈতিক প্রবাহ। এরফলে বিভিন্ন ব্যাংক বা আর্থিক প্রতিষ্ঠানের মূলধনের পরিমাণ কমে যায়, যা বাধা হয়ে দাঁড়ায় দেশের উন্নয়ন ও ব্যবসার ক্ষেত্রে।
** ব্যবসায়িক মন্দাভাব দেখা দেয়- দেশের অধিকাংশ মানুষ যদি খরচ কমিয়ে দেয় এবং অতিরিক্ত সঞ্চয় করে, তাহলে কমে যাবে অর্থনীতিতে লেনদেনের পরিমাণ। ফলে বাজারে চাহিদা কমে যাবে এবং ব্যবসায়িক মন্দা দেখা দেয়।
** জীবনযাত্রায় সীমাবদ্ধতা সৃষ্টি হয়- মানুষ অতিরিক্ত সঞ্চয়ের নেশার কারণে, কৃপণতা শুরু করে প্রয়োজনীয় খরচের খেত্রেও, যা জীবনযাত্রার মান কমিয়ে দেয়। অনেক সময় এটি মানসিক চাপেরও কারণ হয়ে দাঁড়ায়।
** সামাজিক সম্পর্ক অনেক দুর্বল হয়ে পড়ে- যে সকল মানুষ অতিরিক্ত পরিমাণে সঞ্চয় করে, তারা ব্যয় কমিয়ে দেন বিভিন্ন সামাজিক এবং পারবারিক অনুষ্ঠানে। এতে অনেকের সামাজিক সম্পর্কও দুর্বল হয়ে পড়ে।
** মূল্যস্ফীতি দ্বারা ক্ষতি- যদি সঞ্চয়ের অর্থ ব্যাংক বা অন্য কোন স্থানে মুনাফার জন্য রাখা হয়, তবে মূল্যস্ফীতি বৃদ্ধি পায়। ফলে প্রকৃত মূল্যের দিক থেকে ক্রয় ক্ষমতা কমে যায়।
** বিনিয়োগের ঝুকি- অনেক সময় মানুষ তাদের সঞ্চয় ভূল যায়গায় বিনিয়োগের কারণে, মূলধন হারনোর সম্ভাবনা থাকে। এতে বিনিয়োগের ঝুকি অনেক বেড়ে যায়।
নিয়োমিত সঞ্চয়ের সমন্বিত দৃষ্টিভঙ্গি
সঞ্চয় করা অবশ্যই একটি ভালো অভ্যাস, তবে সেটি যদি অধিক পরিমাণে হয়, সেক্ষেত্রে বেশ কিছু নেতিবাচক দিকও সৃষ্টি হতে পারে। তাই নিয়োমিত সঞ্চয়ের করার পাশাপাশি নজর দেওয়া উচিত, সঠিক বিনিয়োগ এবং প্রয়োজনীয় ব্যয়ের দিকে।
তাই সকলে যদি সমন্বিতভাবে সঠিক পরিকল্পনা অনুজায়ী ভারসাম্য অর্থনৈতিক কৌশল অবলম্বন করে, তাহলে, সঞ্চয়ের সর্বাধিক সুবিধা পাওয়া সম্ভাব।
সঞ্চয়ের সুবিধা ও অসুবিধা- শেষকথা
সঞ্চয় অর্থনৈতিক মুক্তি পেতে এবং ভবিষ্যৎ নিরাপত্তা বিধানে অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা রাখে। এটি ব্যক্তিগত, পারিবারিক ও সামষ্টিক অর্থনীতিকে করে তোলে শক্তিশালী। তবে, মাত্রাতিরিক্ত সঞ্চয় করার কারণে কিছু নেতিবাচক প্রভাবও দেখা দিতে পারে।
সেকারণে, সঞ্চয়ের সাথে সাথে বিনিয়োগ ও খরচের মধ্যে একটি সুস্থ সমন্বয় গড়ে তোলা উচিত। আর সচেতনভাবে সঞ্চয় করলে, এটি শুধু ব্যক্তিগত উন্নয়ন নয়, বরং সামগ্রিক অর্থনৈতিক প্রবৃদ্ধিতেও অবদান রাখতে পারে।
প্রিয় পাঠক পাঠিকাগণ, আমরা আশাকরি আপনাদের সঙ্গে শেয়ার করতে পেরেছি "সঞ্চয় কি? সঞ্চয়ের উপকারিতা ও অপকারিতা" সম্পর্কে গুরুত্বপূর্ণ অনেক তথ্য। যা আপনাদের অনেক উপকারে আসবে বলে আমরা অনেক আশাবাদী।
আরো পড়ুনঃ ডেঙ্গু জ্বরের লক্ষণ কারণ এবং প্রতিকার
আর্টিকেলটি যদি আপনাদের ভালোলাগে এবং উপকারি বলে মনে হয়, তাহলে এটি অন্যের সঙ্গে শেয়ার করতে ভুলবেন না। আরো নতুন নতুন তথ্য জানার জন্য আমাদের পরবর্তী আর্টিকেল পড়ুন এবং আমাদের সঙ্গে থাকুন, ধন্যবাদ।
এই ওয়েবসাইটের নীতিমালা মেনে কমেন্ট করুন। প্রতিটি কমেন্ট রিভিউ করা হয়।
comment url