আমেরিকা যাওয়ার উপায় ও খরচ ২০২৫

আরো পড়ুনঃ রাশিয়া ওয়ার্ক পারমিট ভিসা খরচ ২০২৫

"আমেরিকা" সারা পৃথিবীর লক্ষ লক্ষ মানুষের কাছে ভিসা পাওয়া এবং জাওয়া একটি স্বপনের মতো। বিশ্বের শক্তিশালী অর্থনীতি এবং উচ্চ জীবন যাত্রার জন্য অনেকের কাঙ্ক্ষিত দেশ আমেরিকা।

আর প্রতিবছর লক্ষ লক্ষ মানুষ স্বপ্ন পূরণের জন্য পাড়ি জমান আমেরিকায়। আমেরিকা যাওয়ার জন্য অনেক মানুষ বৈধ উপায়ে আবার অনেকে আছেন, যারা অবৈধ উপায়ে সাগর, নদী,  জঙ্গল পেরিয়ে জীবনের ঝুকি নিয়ে যাওয়ার চেষ্টা করেন।

বিশ্বজুড়ে নানান সংকট, বিশেষ করে অর্থনৈতিক সমস্যা এবং নিপীড়ন- নির্যাতন থেকে বাঁচতে আবার অনেকে স্বপ্ন পূরণ করতে পাড়ি জমান আমেরিকা। কিন্তু অনেকেই জানেন না, আমেরিকা যাওয়ার বৈধ উপায় সম্পর্কে, তাই আমেরিকা যাওয়ার উপায় সম্পর্কে জানার জন্য অনেকে গুগলে সার্চ করেন।

আর আপনি যদি আমেরিকা যাওয়ার বৈধ উপায় বা কৌশল সম্পর্কে জানতে চান, তাহলে আজকের আর্টিকেলটি আপনার কাছে অনেক গুরুত্বপূর্ণ। কারণ, আজকে আমরা আপনাদের সঙ্গে সেয়ার করবো "আমেরিকা যাওয়ার উপায় ও খরচ ২০২৫" সম্পর্কে। চলুন তাহলে দেখি-

আমেরিকা যাওয়ার উপায় ও খরচ ২০২৫

বাংলাদেশসহ সারা বিশ্বের স্বপ্নের দেশ আমেরিকা যাওয়ার উপায় ২০২৫ এর ক্ষেত্রে বেশ কিছু গুরুত্বপূর্ণ দিক এবং তথ্য জড়িত। যা, একজন ব্যাক্তি বা পরিবারের জন্য একটি সুচিন্তিত এবং সঠিক পরিকল্পনা গড়ে তুলতে সহায়ক।

তাই আজকে আমরা বাংলাদশী যে কোন নাগরিকের ২০২৫ সালের জন্য, স্বপ্নের দেশ আমেরিকা বৈধ উপায়ে যাওয়ার ক্ষেত্রে প্রয়োজনীয় সকল ধরণের প্রক্রিয়া এবং উপায় সম্পর্কে বিস্তারিতভাবে আলোচনা করবো। সে কারণে, আর্টিকেলটি মনোযোগের সঙ্গে পড়লে আশাকরি উপকৃত হবেন।

আমেরিকা যাওয়ার জন্য প্রয়োজনীয় নথি এবং প্রস্তুতি

আমেরিকা বা বিশ্বের যে কোন দেশে ভ্রমণে যাওয়ার জন্য বেশ কিছু, গুরুত্বপূর্ণ নথিপত্র বা ডকুমেন্ট প্রস্তুত করা অতীব জরুরি। এর মধ্যে উল্লেখযোগ্য নথি বা ডকুমেন্ট সম্পর্কে আলোচনা করা হলো। চলুন আমরা দেখে নেই- 

** পাসপোর্ট- পাসপোর্ট এমন একটি দলিল, যেটি না থাকলে বিশ্বের কোন দেশে ভ্রমন করা সম্ভাব নয়। তাই, আমেরিকা যাওয়ার খেত্রেও একটি বৈধ পাসপোর্ট প্রয়োজন। এটি জারি করা হয় সাধারণত ৫ বছরের জন্য এবং আপনার ভ্রমনের শেষ তারিখ থেকে ৬ মাস পর্যন্ত বৈধ থাকতে হবে।

** ভিসা- ভিসা হলো এক ধরনের অনুমোদন, যা পাসপোর্ট এর সঙ্গে স্ট্যাম্প বা স্টিকার হিসাবে যুক্ত থাকে। আমেরিকা যাওয়ার জন্য ভিসা অত্যান্ত গুরুত্বপূর্ণ। আর আমেরিকা যাওয়ার জন্য ২০২৫ সালে নিম্নের ক্যাটাগরির ভিসাগুলি পাওয়া যায়। যেমন-

  • স্টুডেন্ট ভিসা (F-1)- কেউ যদি আমেরিকা পড়াশুনা করতে যান, তাদের জন্য এই ভিসা প্রয়োজন।
  • ট্যুরিস্ট ভিসা (B-2)- আমেরিকায় পরিবারের সঙ্গে দেখে বা ভ্রমনের জন্য এই ভিসা আবশ্যক।
  • ওয়ার্ক ভিসা (H-1B, L-1)- যারা আমেরিকায় কাজ করতে যেতে চান, তাদের জন্য এই ভিসা দরকার।
  • ইমিগ্রান্ট ভিসা- দীর্ঘদিন আমেরিকা থাকার জন্য ইমিগ্র্যান্ট ভিসার মাধ্যমে শুরু হয়, স্থায়ী নাগরিকত্বের প্রক্রিয়া।

** ভিসা আবেদন প্রক্রিয়া- আমেরিকা আবেদন করার জন্য আপনাকে প্রথমে টিভিএস ফি (ট্রাভেল ভিসা অ্যাপ্লিকেশন) পরিশোধ করতে হবে এবং এরপর ক্যনস্যুলেট বা দূতাবাসে ভিসার আবেদন করতে হবে।

আমেরিকা যাওয়ার প্রধান উপায়

বাংলাদেশ থেকে প্রতিবছর প্রচুর মানুষ বিভিন্ন ভিসার মাধ্যমে আমেরিকা যান। আমেরিকা বর্তমানে নিম্নের ভিসার মাধ্যমে যাওয়া যায়। চলুন তাহলে আমরা দেখে নেই- 

** পর্যটক হিসাবে- অনেক বাংলাদেশী নাগরিক আমেরিকা ভ্রমণের জন্য আবেদন করেন পর্যটন (B-২) ভিসা। আর পর্যটন ভিসা সাধারণত ব্যবহৃত হয় ট্যুরিস্ট ভ্রমণ, বিনোদনের উদ্যেশ্যে বা পরিবারের সঙ্গে দেখা করার জন্য।

তবে, পর্যটক ভিসার জন্য আবেদনকারিকে অবশ্যই নিশ্চিত হতে হবে যে, সে শুধুমাত্র ভ্রমণের জন্য সেই দেশে যাচ্ছেন এবং সেখানে দীর্ঘদিন থাকবেন না।

** স্টুডেন্ট ভিসা (F-1)- উচ্চ শিক্ষার জন্য আমেরিকা যেতে চা্ন, তাদের জন্য জনপ্রিয় একটি উপায় হলো স্টুডেন্ট ভিসা (F-1) আবেদন করা। ২০২৫ সালে অনেক বাংলাদেশী শিক্ষার্থী আমেরিকার থাকা বিভিন্ন বিশ্ববিদ্যালয়ে ভর্তি হতে পারেন। আর স্টুডেন্ট ভিসার সাধারণ নিয়ম নিম্নে দেখুন-

  • ইংরেজি ভাষা দক্ষতা- আপনাকে TOEFL বা IELTS পরীক্ষায় সফলভাবে উত্তীর্ণ হতে হবে।
  • ভর্তি গ্রহন- আমেরিকায় স্টুডেন্ট ভিসায় যেতে চাইলে সেখানে কোন বিশ্ববিদ্যালয়ে ভর্তি হতে হবে।
  • আই- 20 ফরম- আমেরিকার বিশ্ববিদ্যালয় থেকে আপনাকে আই- ২০ ফরম নিয়ে, সেটি আবেদনের সঙ্গে জমা দিতে হবে।

**কর্মসংস্থান ভিসা- যারা আমেরিকা বিভিন্ন কাজ করতে চান, তাদের জন্য জনপ্রিয় একটি উপায় হলো H-1B বা L-1 ভিসা। এই ভিসা সাধারণত যাদের নির্দিষ্ট যোগ্যতা এবং দক্ষতা রয়েছে, শুধু তাদের প্রদান করা হয়। এই ভিসা সম্পর্কে জরুরি কিছু দরকারি তথ্য এবং প্রস্তুতি নিম্নে দেখুন-

  • কর্মসংস্থানের প্রস্তাব- আবেদনকারীকে আমেরিকার কোন বিনিয়োগকারি প্রতিষ্ঠানে কাজের প্রস্তাব পেতে হবে।
  • পেশাগত যোগ্যতা- আমেরিকা কাজ করার জন্য নির্দিষ্ট কোন পেশাগত জোগ্যতার প্রমাণপত্র অবশ্যই থাকতে হবে।
** পারিবারিক সংযুক্তি- যারা আমেরিকায় ইতিমধ্যেই বসবাস করছেন, তারা আমেরিকায় যেতে পারবেন পারিবারিক সংযুক্তির মাধ্যমে। এটি একটি দীর্ঘ সময়ের প্রক্রিয়া, তবে তাদের পরিবারের সঙ্গে থাকার জন্য এটি একটি অনেক জনপ্রিয় উপায়।

আমেরিকা যাওয়ার জন্য ফান্ডিং এবং খরচ

আমেরিকা যাওয়ার ক্ষেত্রে অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ হলো অর্থের পরিমাণ এবং খরচ। ২০২৫ সালে আমেরিকা যাওয়ার খরচের মধ্যে অন্যতম হলো পাসপোর্ট, ভিসা, টিকিট, থাকা খাওয়ার ব্যবস্থাসহ অন্যান্য কিছু খরচ সংযুক্ত থাকতে পারে।

স্টুডেন্ট ভিসা (F-1) এবং কর্মসংস্থান ভিসা (H-1B) এর ক্ষেত্রে প্রয়োজন আর্থিক প্রমাণপত্র যেমন ব্যাংক স্টেটমেন্ট এবং স্টুডেন্ট ভিসার ক্ষেত্রে দরকার পড়বে শিক্ষা খরচের দাখিল করার।

আমেরিকার অভিবাসন প্রক্রিয়া

যারা স্থায়ীভাবে আমেরিকায় বসবাস করতে চান, তাদেরকে আবেদন করতে হবে ইমিগ্রান্ট ভিসার জন্য। তবে, আমেরিকার ইমিগ্রাশন প্রক্রিয়াটি অনেক জটিল এবং দীর্ঘ সময়ের ব্যাপার, তবে এই ভিসাটি অনেকের কাছে হতে পারে একটি কাঙ্খিত লক্ষ।

আর আপনি যদি ইমিগ্রেশন ভিসায় আমেরিকায় যেতে চান, তাহলে নিম্নের আলোচিত ধাপগুলো অনুসরণ করা অনেক জরুরি-

** কর্মসংস্থান ভিত্তিক ইমিগ্রেশন- যারা আমেরিকায় কোন কাজ পেয়েছেন, তারা এই প্রক্রিয়ার মাধ্যমে আমেরিকায় স্থায়ীভাবে বসবাসের জন্য অনুমোদন পেতে পারেন।

** কনজুগাল বা পারিবারিক সম্পর্ক- যদি কোন পাত্র বা পাত্রী ইতিমধ্যেই আমেরিকায় বসবাস করে থাকেন, সেক্ষেত্রে তার পরিবারকে সংযুক্তির জন্য এই ভিসার জন্য আবেদন করতে পারেন।

আমেরিকা যাওয়ার ড্রিম গ্রান্ড প্রোগ্রাম

একটি উত্তেজনাপূর্ণ সুযোগ হলো ডাইভারসিটি ভিসা প্রোগ্রাম (DV Lottery), যা বিশ্বের বেশ কিছু দেশের নাগরিকের জন্য উপলব্ধ। বাংলাদেশসহ বিশ্বের বিভিন্ন দেশের নাগরিকেরা এই লটারির মাধ্যমে আমেরিকায় স্থায়ীভাবে বসবাসের সুযোগ পেয়ে থাকেন।

প্রতি বছরের ন্যায় ২০২৫ সালে এই প্রগ্রামটি যেভাবে কার্যকর হবে, তা বিশেষভাবে নজর রাখতে হবে।

আমেরিকা ভিসা আবেদন ফি ২০২৫

আমেরিকা বা মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রে ভ্রমণের জন্য কয়েক ধরণের ভিসা রয়েছে, যা নির্ভর করে ভিসার সময়সীমা এবং ভ্রমনের উপর নির্ভর করে এবং খরচ নির্ভর করে ভিসার ধরণের উপর। নিম্নে প্রধান প্রধান কয়েকটি ভিসা ও আবেদন ফি আলোচনা করা হলো- 

অ- অভিবাসী ভিসা- Non- Immigrant Visas

  • স্টুডেন্ট ভিসা (F-1)- কেউ যদি আমেরিকা পড়াশুনা করতে যান, তাদের জন্য এই ভিসা প্রয়োজন। আবেদন ফি $185 যা, বাংলাদেশী প্রায় ২২,০০০ টাকা। 
  • ট্যুরিস্ট ভিসা (B-2)- আমেরিকায় পরিবারের সঙ্গে দেখে বা ভ্রমনের জন্য এই ভিসা আবশ্যক। আবেদন ফি প্রায় $160 যা, বাংলাদেশী প্রায় ১৭,০০০ টাকা। 
  • ওয়ার্ক ভিসা (H-1B, L-1)- যারা আমেরিকায় কাজ করতে যেতে চান, তাদের জন্য এই ভিসা দরকার। আবেদন ফি $190 যা, বাংলাদেশী প্রায় ২২,০০০ টাকা। 
  • ব্যবসায়িক ভিসা (B-1) এই ভিসাটি শুধুমাত্র ব্যবসায়ীক কার্যক্রম পরিচালনার জন্য ব্যবহৃত হয়। আবেদন ফি $160 যা, বাংলাদেশী প্রায় ১৭,০০০ টাকা।  

অভিবাসী ভিসা- Immigrant Visas

  • পরিবারের ভিত্তিতে ভিসা- শুধুমাত্র যুক্তরাষ্ট্রের নাগরিক হয়েছেন বা স্থায়ী বাসিন্দাদের পরিবারের সদস্যদের জন্য। আবেদন ফি $675 যা, বাংলাদেশী প্রায় ৮০,০০০ টাকা। 
  • কাজের ভিত্তিতে ভিসা: শুধুমাত্র কাজের মাধ্যমে স্থায়ী বসবাসের জন্য এই ভিসা। আবেদন ফি $345 যা, বাংলাদেশী প্রায় ৪২,০০০ টাকা। 

আমেরিকা ভিসা প্রক্রিয়া খরচ ২০২৫

আমেরিকা ভিসা আবেদিন ফি ছাড়াও, আরো খরচ রয়েছে, যেমন পুলিশ প্লিয়ারেন্স, মেডিক্যাল ফিটনেস পরীক্ষা, বিমান ভাড়া, ডকুমেন্টেশনসহ আরো কিছু আনুসাঙ্গীক খরচ যুক্ত হয়। তাছাড়া আমেরিকা যাওয়ার মোট খরচ ভ্রমণের উদ্দেশ্য, ভিসার ধরণের উপর নির্ভর করে।

বর্তমানে আমেরিকা যাওয়ার জন্য সরকারি এবং বেসরকারি বা এজেন্সির উভয় মাধ্যমে জাওয়া যায়। সাধারনত সরকারিভাবে আমেরিকা যেতে খরচ হয় ৮ থেকে প্রায় ৯ লক্ষ টাকা এবং বেসরকারি এজেন্সির মাধ্যমে ১০ থেকে প্রায় ১২ লক্ষ টাকা পর্যন্ত খরচ লাগে।

বিঃদ্রঃ ভিসা ফি ও প্রক্রিয়া অনেক সময় পরিবর্তন হয়ে থাকে।

আমেরিকা ভিসার তথ্য- শেষকথা

২০২৫ সালে আমেরিকা যাওয়ার জন্য বর্তমানে অনেক উপায় রয়েছে এবং আর আপনি যদি এসব উপায় সঠিকভাবে অনুসরণ করেন, তাহলে ভ্রমণ সহজ হতে পারে। তবে, এই প্রক্রিয়াগুলো কঠিন এবং সময়সাপেক্ষ, সেকারণে ধৈর্য্য এবং সঠিক পরিকল্পনা থাকা গুরুত্বপূর্ণ।

প্রিয় পাঠক পাঠিকাগণ, আমরা আশাকরি আপনারা যদি আর্টিকেলটি শুরু থেকে শেষ পর্যন্ত মনোযোগের সঙ্গে পড়ে থাকেন, তাহলে অবশ্যই জেনে গেছেন " আমেরিকা যাওয়ার উপায় ও খরচ ২০২৫" সম্পর্কে অনেক গুরুত্বপূর্ণ তথ্য।

আরো পড়ুনঃ কাতার কাজের ভিসার দাম কত টাকা | কাতার কোন কাজের বেতন কত টাকা

যা, আপনাদের অনেক উপকারে আসবে বলে আমরা আশাবাদী। আর্টিকেলটি যদি ভালোলাগে এবং উপকারি বলে মনে হয়, তাহলে এটি অন্যের সঙ্গে শেয়ার করবেন। আরো নতুন নতুন তথ্য জানার জন্য আমাদের পরবর্তী আর্টিকেল পড়ুন এবং আমাদের সঙ্গে থাকুন, ধন্যবাদ।

এই পোস্টটি পরিচিতদের সাথে শেয়ার করুন

পূর্বের পোস্ট দেখুন পরবর্তী পোস্ট দেখুন
এই পোস্টে এখনো কেউ মন্তব্য করে নি
মন্তব্য করতে এখানে ক্লিক করুন

এই ওয়েবসাইটের নীতিমালা মেনে কমেন্ট করুন। প্রতিটি কমেন্ট রিভিউ করা হয়।

comment url