দৈনিক কিস্তি কি? দৈনিক কিস্তির সুবিধা ও অসুবিধা
আরো পড়ুনঃ ঢাকা থেকে কোন জেলার দূরত্ব কত? | কোন জেলার বিখ্যাত খাবার কি?
বর্তমান সময়ে অর্থনৈতিক উন্নতি করতে ব্যবসায়িক ভাবে অর্থ সংস্থান করা খুবই গুরুত্বপূর্ণ একটি বিষয়। কিন্তু ব্যবসা করতে গিয়ে অনেক সময়, প্রয়োজনীয় পরিমাণ অর্থ হাতে না থাকার কারণে প্রয়োজন পড়ে ঋণের।
আর এই ঋণ পরিশোধের জন্য রয়েছে বিভিন্ন উপায় বা পদ্ধতি, যেমন, দৈনিক কিস্তি, সাপ্তাহিক কিস্তি, মাসিক কিস্তি ইত্যাদি। এই সকল কিস্তির মধ্যে বর্তমানে বেশ জনপ্রিয় হয়ে উঠেছে দৈনিক কিস্তি। তাছাড়া এটি অনেক কম সময়ের মধ্য পাওয়া যায়।
দৈনিক কিস্তি মূলত ক্ষুদ্র এবং মাঝারি ব্যবসায়ীদের জন্য অনেক সুবিধা জনক। কারণ, প্রতিদিনে আয় থেকে খুব সহজে এই কিস্তি পরিশোধ করা যায় এবং একসঙ্গে বেশি টাকা পরিশোধের প্রয়োজন পড়েনা। তবে, এই কিস্তি সম্পর্কে অনেকের সঠিক ধারণা নেই।
যদিও, দৈনিক কিস্তি আপাতত দৃষ্টিতে দেখতে অনেক সুবিধা জনক মনে হলেও, "দৈনিক কিস্তি একটি মরণ ফাঁদ"। হ্যাঁ আজকের আর্টিকেলে আমরা আপনাদের সঙ্গে শেয়ার করবো দৈনিক কিস্তি সম্পর্কে বিভিন্ন গুরুত্বপূর্ণ তথ্য। চলুন তাহলে আমরা দেখি-
দৈনিক কিস্তি কি?
দৈনিক কিস্তি বলতে গ্রহনকৃত ঋণ পরিশোধের একটি ব্যবস্থাকে বুঝায়। যেখানে একজন ঋণ গ্রহীতা প্রতিদিন নির্দিষ্ট পরিমাণ করে টাকা, পরিশোধের ব্যবস্থাকে বুঝানো হয়েছে। বর্তামানে বাংলাদেশে কয়েক ধরণের ঋণ পরিশোধ ব্যবস্থা চালু রয়েছে। এর মধ্যে অন্যতম হলো দৈনিক কিস্তি।
এই ঋণ মূলত, ছোট ব্যবসায়ীদের জন্য অনেক সহজতর করে দেওয়া হয়। যারা প্রতিদিন লেনদেন করে এবং অল্প কিছু করে পরিশোধ করতে সক্ষম হন। এটি সাধারণত ব্যাংক, এনজিও, ক্ষুদ্রঋণ সংস্থা, ফাইনান্স কোম্পানি এবং ব্যক্তি পর্যায়ে পদ্ধতিটি চালু রয়েছে।
দৈনিক কিস্তির সুবিধা
দৈনিক কিস্তির বেশ কিছু সুবিধা রয়েছে, যা কোন ব্যবস্থা থেকে এই সুযোগ পাওয়া জায় না। নিম্নে দৈনিক কিস্তির সুযোগ সম্পর্কে সংক্ষেপে আলোচনা করা হলো-
** ঋণ পাওয়া অনেক সহজতর- এই ঋণ খুব সহজ শর্তে বিভিন্ন ব্যবসায়ী বিশেষ করে খুদ্র ব্যবসায়ীদের এনজিও প্রতিষ্ঠান প্রদান করে থাকে।
** ঋণ পরিশোধ প্রক্রিয়া অনেক সহজ- দৈনিক কিস্তি পরিশোধের ক্ষেত্রে, বিশেষ সুবিধা হলো যে, এখানে ঋণ গ্রহীতাকে একসঙ্গে টাকা পরিশোধ করতে হয় না। বরং প্রতিদিন নির্দিষ্ট একটি টাকা যা অল্প অল্প করে পরিশোধ করার সুযোগ পান।
** ব্যবসার প্রবাহ বজায় থাকে- এই পদ্ধতিতে ব্যবসায়ীরা প্রতিদিন অল্প অল্প করে গ্রহনকৃত টাকা পরিশোধ করতে পারেন। ফলে একসঙ্গে অনেক টাকা পরিশোধ করার প্রয়োজন পড়ে না এবং তাদের ব্যবসা প্রতিষ্ঠানেও বড় ধরণের চাপ পড়ে না।
** ক্রেডিট স্কোর উন্নত হয়- -যদি কোন ব্যবসায়ী বা ঋণ গ্রহতা তার কিস্তি সঠিক বা নিয়মিতভাবে পরিশোধ করেন, তাহলে তার ভবিষ্যতে অধিক ঋণ পাওয়ার সম্ভাবনা থাকে।
দৈনিক কিস্তির অসুবিধা
সকল সুবিধার পিছনে অসুবিধা থাকাটাই স্বাভাবিক। তবে, অন্য সকল ক্ষেত্রে সুবিধার চেয়ে অসুবিধা কম থাকে, কিন্তু দৈনিক কিস্তির ক্ষেত্রে সুবধার চেয়ে অসুবিধা অনেক বেশি। নিম্নে এর অসুবিধা সম্পর্কে সংক্ষেপে আলোচনা করা হলো-
** অধিক সুদের হার- দৈনিক কিস্তির সুদের হার অন্য যে কোন ঋণের সুদের চেয়ে অনেক বেশি।
** নিয়মিত কিস্তি পরিশোধ অনেক কঠিন- নিয়মিতভাবে প্রতিদিন ঋণের কিস্তি পরিশোধ করা অনেক কঠিন, কারণ অনেক সময় ব্যবসার মন্দাভাব, এমনকি প্রতিষ্ঠান বন্ধ থাকলেও কিস্তি দেওয়া লাগে।
** লাভের অংশ কমে যায়- ব্যবসায়ীদের তাদের ব্যবসা প্রতিষ্ঠান থেকে আয়ের টাকা পরিশোধ করতে ব্যয় করতে হয়, সে কারণে তাদের ব্যবসা বৃদ্ধি পায়না এবং তাদের লাভের হার কমে যায়।
আরো পড়ুনঃ ডেঙ্গু জ্বরের লক্ষণ কারণ এবং প্রতিকার
** আর্থিক জটিলতা- সময়মত কিস্তির টাকা পরিশোধ করতে না পারলে অতিরিক্ত জরিমানাসহ অন্যান্য জটিলতা তৈরি হতে পারে।
দৈনিক কিস্তি নেওয়ার উপায় কি?
বর্তমানে বিভিন্ন ঋণ প্রদানকারি ব্যক্তি ও প্রতিষ্ঠান এই ঋণ প্রদান করে থাকে। নিম্নে যে সকল স্থান থেকে দৈনিক কিস্তি প্রদান করে সে সম্পর্কে আলোচনা করা হলো। চলুন তাহলে দেখি-
** এনজিও- বর্তমানে বেশ কিছু এনজিও বিশেষ করে সমবায় অধিদপ্তর থেকে লাইসেন্স প্রাপ্ত প্রতিষ্ঠান দৈনিক কিস্তির মাধ্যমে ঋণ প্রদান করে থাকে।
** ব্যাংক ও ফাইনান্স কোম্পানী- কিছু ব্যাংক ও ফাইনান্স কোম্পানি আছে যারা, খুদ্র ও মাঝারি মানের ব্যবসায়ীদের দৈনিক কিস্তির ভিত্তিতে ঋণ প্রদান করে থাকে।
** ব্যাক্তিগত ঋণদাতার কাছ থেকে- কিছু ব্যক্তি রয়েছেন, যারা অনেক সময় দৈনিক কিস্তির ভিত্তিতে ক্ষুদ্র এবং মাঝারি ব্যবসায়ীদের ঋণ প্রদান করে থাকে।
** অনলাইন প্ল্যাটফর্ম- বর্তমানে তথ্য প্রজুক্তির বিশ্বে বেশ কিছু ডিজিটাল অনলাইন প্লাটফর্ম আছে, যারা বিভিন্ন শর্ত সাপেক্ষে দৈনিক কিস্তিতে ঋণ প্রদান করে থাকেন।
দৈনিক কিস্তি কাদের জন্য উপযুক্ত?
ঋণ গ্রহণ করা সহজ এবং ঋণ দেওয়ার জন্য অনেক প্রতিষ্ঠান রয়েছে। কিন্তু আপনাকে জানতে হবে যে, আপনি কোন ঋণ পাওয়ার যোগ্য। কারণ, আপনাকে মনে রাখতে হবে যে, এটি হলো ঋণ, যা আপনাকে পরিশোধ করতে হবে। তবে, নিম্নের শ্রেণীর মানুস দৈনিক কিস্তি নিতে পারে।
- ক্ষুদ্র ও মাঝারি ব্যবসায়ী যারা প্রতিদিন আয় করবেন।
- যারা বেশি পরিমাণে টাকা একসঙ্গে পরিশোধ করতে পারবেন না।
- খুদ্র উদ্যোক্তা যাদের দৈনিক ইনকাম আছে, কিন্তু মুলধন বৃদ্ধি করা প্রয়োজন।
- শ্রমজীবী মানুষ, যাদের প্রতিদিন আয় আছে এবং আয় থেকে কিস্তির টাকা দিতে সক্ষম।
দৈনিক কিস্তির বিকল্প কিস্তি কি?
জীবন চলার পথে মানুষকে বিভিন্ন সময় বিভিন্ন সমস্যার সম্মুখীন হতে হয়। বিশেষ করে আর্থিক সমস্যার সম্মুখীন হতে হয়। তাই, প্রয়োজন পড়ে ঋণ গ্রহণের। তবে, আপনার পেশার উপর নির্ভর করে ঋণ গ্রহন করা দরকার।
কারণ, ঋণের টাকায় দিয়ে যেমন সমস্যা সমাধান করা যায়। তেমনিভাবে আপনাকে স্মরণ রাখতে হবে যে, ঋণের টাকা আপনি কিভাবে পরিশোধ করতে পারবেন সেই দিকে। নিম্নে কয়েক ধরণের কিস্তি বা ঋণ সম্পর্কে আলোচনা করা হলো-
- দৈনিক কিস্তি।
- মাসিক কিস্তি।
- বার্ষিক কিস্তি ইত্যাদি।
দৈনিক কিস্তির উপকারিতা ও অপকারিতা- শেষকথা
দৈনিক কিস্তি ঋণ ব্যবস্থাপনার ক্ষেত্রে একটি কার্যকরী সমাধান হতে পারে, বিশেষ করে ক্ষুদ্র ও মাঝারি ব্যবসায়ীদের জন্য। এটি ব্যবসার মূলধন বাড়াতে সাহায্য করে, তবে ঋণের শর্তাবলী বুঝে নেওয়া এবং সময়মতো পরিশোধ করাও জরুরি।
যথাযথ পরিকল্পনা এবং অর্থনৈতিক শৃঙ্খলা বজায় রেখে দৈনিক কিস্তি ঋণ নেওয়া হলে তা একজন উদ্যোক্তার ব্যবসার প্রবৃদ্ধি ও আর্থিক স্থিতিশীলতা আনতে সহায়ক হতে পারে।
প্রিয় পাঠক পাঠিকাগণ, আমরা আশাকরি আপনারা যদি আর্টিকেলটি শুরু থেকে শেষ পর্যন্ত মনোযোগের সঙ্গে পড়েন থাকেন, তাহলে নিশ্চয়ই জেনে গেছেন " দৈনিক কিস্তি কি? এর সুবিধা ও অসুবিধা" অনেক তথ্য বিস্তারিতভাবে।
আরো পড়ুনঃ আখেরি চাহার সোম্বা ২০২৪ কত তারিখে
আমরা আশাকরি আর্টিকেলটি আপনাদের অনেক উপকারে আসবে। আর্টিকেলটি যদি আপনাদের ভালোলাগে ও উপকারি বলে মনে হয়, তাহলে এটি শেয়ার করে দিবেন। আরো নতুন নতুন তথ্য জানার জন্য আমাদের পরবর্তী আর্টিকেল পড়ুন এবং আমাদের সঙ্গে থাকুন, ধন্যবাদ।
এই ওয়েবসাইটের নীতিমালা মেনে কমেন্ট করুন। প্রতিটি কমেন্ট রিভিউ করা হয়।
comment url