মাসরুমের পুষ্টিগুণ, উপকারিতা ও পার্শ্বপ্রতিক্রিয়া

আরো পড়ুনঃ তুলসির গাছ ও পাতার পুষ্টিগুণ, উপকারিতা ও অপকারিতা

"মাসরুম" যেটি গ্রাম বাংলায় অধিক পরিচিত ব্যাঙের ছাতা নামে। আসলে এটি কোন ব্যাঙের ছাতা নয়। এটি এক ধরণের ছত্রাক, যার সাধারণ নম "মাসরুম এবং বৈজ্ঞানিক নাম Agaricus. এটি বর্ষাকালে বাড়ির আশপাশে জন্মায়।

বিশেষ করে, মাসরুম গবর, পচা খড়, ভেজা সেতসেতে মাটি বা পচনশীল স্থান ইত্যাদি জায়গার উপর বেশি জন্মায় এবং এরা মৃতজীবী। এদের বায়ূবীয় অংশ সাধারণত উপরের দিকে বেড়ে উঠে খাড়া হয়ে এবং পরিমিত অবস্থায় দেখতে ছাতার মতো, তাই ব্যাঙের ছাতা বলা হয় এগুলোকে।

বর্তমানে মাসরুম বাণিজ্যিকভাবে বাংলাদেশে চাষ হচ্ছে। মাসরুম খেতে অনেক সুস্বাদু এবং এটি অনেক উপকারি। তবে, কিছু মাসরুম রয়েছে, যেগুলো অনেক বিষাক্ত এবং স্বাস্থ্যের জন্য অনেক ক্ষতিকর। আর আজকের আর্টিকেলে আমরা আপনাদের সঙ্গে শেয়ার করবো মাসরুম সম্পর্কে-

মাশরুমে থাকা বিভিন্ন পুষ্টিগুণ

মাসরুম একটি উচ্চ পুষ্টিগুণ সম্পূর্ণ অধিক উপকারি খাবার, এতে পাওয়া যায় ভিটামিন, প্রোটিন, খনিজ এবং অ্যান্টি অক্সিডেন্ট, যা মানুষের স্বাস্থ্যের জন্য অনেক উপকারি। নিম্নে মাসরুমে থাকা পুষ্টিগুণ সম্পর্কে আলোচনা করা হলো-

  • প্রোটিন- মাশরুমে পাওয়া যায়, উচ্চমাত্রার প্রোটিন, যা সাহায্য করে পেশি গঠনে।
  • ক্যালরি এবং ফ্যাট- এতে রয়েছে কম ক্যালরী এবং ফ্যাট, যা ওজন নিয়ন্ত্রণে সহায়ক।
  • ভিটামিন বি- মাসরুমে থাকা বিভিন্ন বিটামিন বি যেমন বি২, বি৩ বি৫, যা শরীরে শক্রি উতপাদন কর।
  • ভিটামিন ডি- সূর্যের তাপে মাশরুম শুকালে আমরা পেতে পারি, ভিটামিন ডি এর একটি ভালো উৎস।
  • অ্যান্টি অকেডেন্ট- মাশরুমে যে, সেলেনিয়াম এবং এরগোথিওনাইন পাওয়া যায়, তা শরীরকে রক্ষা করে ফ্রি রেডিক্যালের হাত থেকে।

মাশরুম খাওয়ার উপকারিতা

মাশরুম বর্তমান সময়ে বাংলাদেশসহ সারা বিশ্বের অন্যতম একটি জনপ্রিয় খাদ্য উপাদান। মাশরুম ছত্রাক জাতীয় একটি উদ্ভিদ, যা সমৃদ্ধ রয়েছে বিভিন্ন পুষ্টিগুণ এবং স্বাস্থ্য উপকারিতায়। এটি খাওয়ার অনেক উপকারিতা রয়েছে। নিম্নে কয়েকটি বিশেষ উপকারতার কথা উল্লেখ করা হলো-

** উচ্চ পুষ্টি উপাদান- মাশরুমে পাওয়া যায় প্রচুর পরিমাণে ভিটামিন, প্রোটিন, মিনারেল ও ফাইবার। অধিক পুষ্টিগুণ এবং কম ক্যালোরি থাকায়, এটি বিবেচিত হয় স্বাস্থ্যকর খাবার হিসাবে।

** রোগ প্রতিরোধ ক্ষমতা- মাশরুমে থাকা অ্যান্টি অক্সিডেন্ট এবং বিটা গ্লুলান বাড়ায় রোগ প্রতিরোধ ক্ষমতা। যেমন, রক্ষা করে সর্দি কাশিসহ অন্যান্য সংক্রমন থেকে।

** উন্নত করে হার্টের স্বাস্থ্য- মাশরুমে থাকা ফাইবার এবং পটাসিয়াম সাহায্য করে উচ্চ রক্তচাপ নিয়ন্ত্রণে। আবার কোলেস্টেরলের মাত্রা কমিয়ে সুস্থ্য রাখে হার্টের স্বাস্থ্য।

** ওজন নিয়ন্ত্রণ করে- মাশরুমে প্রোটিন ও ফাইবার বেশি এবং কম ক্যালোরি থাকায় সাহায্য করে ওজন কমাতে। কারণ, মাশরুম খেলে অধিক সময় পেট পূর্ণ থাকে, ফলে বেশি খাওয়ার প্রবণতা কমে।

** ডায়াবেটিসের ক্ষেত্রে- গ্লাইসেমিক ইনডেক্স কম থাকে মাশরুমে, ফলে সাহায্য করে রক্তে শর্করার মাত্রা, যা ডায়াবেটিস রোগীর জন্য অনেক উপকারি।

** ক্যানসার প্রতিরোধ করে- গবেষণার মাধ্যমে উঠে এসেছে যে, মাশরুমে পাওয়া যায় বিশেষ কিছু যৌগ যা, সাহায্য করে ক্যানসারের ঝুকি কমাতে। বিশেষ করে এটি সহায়ক, স্তন ও প্রোস্টেট ক্যানসার প্রতিরোধে।

** মস্তিস্কের কার্যকারিতা বাড়ায়- মাশরুমে থকে প্রচুর অ্যান্টি অক্সিডেন্ট যা, কার্যকরীতা বাড়ায় মস্তিস্কের এবং পারকিন্সন ও আলজগেইমার রোগ প্রতিরোধে সাহায্য করে।

** উন্নত করে হাড়ের স্বাস্থ্য- মাশরুম পাওয়া যায় ভিটামিন ডি যা, হাড়ের গঠন এবং শক্তিশালী করতে বিশেষ ভূমিকা রাখে। আবার মাশরুম সাহায্য করে অস্টিওপরোসিস প্রতিরোধে।

আরো পড়ুনঃ কালোজিরার তেলের পুষ্টিগুণ, উপকারিতা ও অপকারিতা

** বৃদ্ধি করে ত্বকের সৌন্দর্য- মাশরুমে পাওয়া যায় ভিটামিন সি এবং অ্যান্টি অক্সিডেন্ট যা, ত্বককে উজ্জল এবং বলিরেখা প্রতিরোধে সাহায্য করে।

** উন্নত করে হজম প্রক্রিয়াকে- মাশরুমে থাকে প্রাকৃতিক প্রোবায়োটিন যা, উন্নত করে হজম শক্তিকে এবং দূর করে গ্যাস ও সাহায্য করে কোষ্ঠকাঠিণ্য কমাতে।

মাশরুম খাওয়ার সঠিক নিয়ম

মাশরুম, স্যুপ, সালাদ, ভাজি, নুডলস বা মাংসের সঙ্গে রান্না করে খাওয়া যায়। তবে, সব ধরণের খাবার জন্য কিছু নিয়ম অনুসরণ করা প্রয়োজন। আর মাশরুম খাওয়ার ক্ষেত্রেও এর উপকারিতা পাওয়ার জন্য কিছু নিয়ম মেনে চলা উচিৎ। চলুন নিম্নে মাশরুম খাওয়ার সঠিক নিয়ম দেখে নেই-

** সঠিক মাশরুম- সব ধরণের মাশরুম খাওয়া স্বাস্থ্যের জন্য উপকারি নয়। তাই বাজার থেকে খাওয়ার উপযোগী বিশেষ করে পরিচিত মাশরুন ক্রয় করুন।

** ভালোকরে পরিস্কার করুন- মাশরুন রান্না করার আগে ভালোকরে ধুয়ে পরিস্কার করতে হবে। কারণ, এতে যেন কোন মাটি বা ব্যাকটেরিয়া না থাকে।

** সেদ্ধ বা রান্না করে খাওয়া- কাচা মাশরুম খাওয়া উচিৎ নয়, কারণ অনেক মাশরুম আছে, যেগুলো কাচা খেলে পেটের সমস্য দেখা দেয়।

** অতিরিক্ত মাশরুম না খাওয়া- অতিরিক্ত পরিমাণে মাশরুম খাওয়া থেক এডিয়ে চলুন, কারণ বেশি পরিমাণে মাশরুম খেলে অ্যালার্জি ও হজম সমস্যা হতে পারে।

মাশরুম খাওয়ার অপকারিতা বা পার্শ্বপ্রতিক্রিয়া

সকল ভালোর পিছনে কিছু খারপ দিক রয়েছে। আর এক্ষেত্রে মাশরুম খাওয়ারও কিছু অপকারিতা বা পার্শ্বপ্রতিক্রিয়া রয়েছে। যদিও, সেটি তুলনামূলক অনেক কম। নিম্নে মাশরুম খাওয়ার উপকারিতা বা পার্শ্বপ্রতিক্রিয়া সম্পর্কে সংক্ষেপে আলোচনা করা হলো- 

** ওষুধ সেবনের ক্ষেত্রে- কিছু মাশরুম রয়েছে, যেগুলো খেলে রক্ত পাতলা করার কাজ করে এবং অন্যান্য ওষুধের সঙ্গে প্রতিক্রিয়া সৃষ্টি করতে পারে। সে কারণে, যদি কেউ বিশেষ কোন ওষুধ সেবন করেন, তাহলে ডাক্তারের সঙ্গে পরামর্শ করে মাশরুম খাওয়া উচিৎ।

** বিষাক্ত মাশরুম- সকল মাশরুম খাওয়ার উপযোগী নয়। অনেক প্রজাতির মাশরুম আছে, যেগুলো বিষাক্ত, এমনকি মৃত্যুর কারণ হতে পারে। বিশেষ করে, বন্য মাশরুম খাওয়ার আগে বিশেষজ্ঞদের পরামর্শ নেওয়া অনেক জরুরি।

** অতিরিক্ত খাওয়ার ক্ষেত্রে- অতিরিক্ত মাশরুম খাওয়ার কারণে, পরিপাকতন্ত্রে সমস্যা সৃষ্টি হতে পারে এবং শরীরে অতিরিক্ত ইউরিক অ্যাসিড জমার ফলে, কিডনির জন্য ক্ষতিকর হতে পারে।

** পরিপাকতন্ত্রের সমস্যা- অনেক মানুষ আছে, যাদের মাশরুম হজমে সমস্যা হয়, বিশেষ করে অধিক পরিমাণে খাওয়ার ফলে, পেট ফাঁপা, গ্যাস বা ডায়রিয়ার সমস্যা হতে পারে।

** ছত্রাকের সমস্যা- নিম্নমানের অপরিষ্কার মাশরুমে ফাঙ্গাস ও ব্যাকটেরিয়া থাকতে পারে, যা খাদ্যবাহিত রোগের সৃষ্টি হতে পারে।

** অ্যালার্জির সমস্যা- কিছু কিছু মানুষের মাশরুমে অ্যালার্জির সমস্যা সৃষ্টি হয়, যা ফোলা, চুলকানি বা শ্বাস কষ্টের সমস্যা দেখা দেয়। তাদের মাশরুন এড়িয়ে চলা উচিৎ।

মাশরুম নিয়মিত খাওয়ার ফলে স্বাস্থ্যের অনেক উপকার হয়। তবে, সব মাশরুম খাওয়া উচিৎ নয়, বিশেষ করে বুনো মাশরুম খাওয়া উচিৎ নয়, কারণ সেগুলোর বেশির ভাগ বিষাক্ত হয়।

মাশরুমের উপকারিতা ও অপকারিতা- শেষকথা

মাশরুম অনেক পুষ্টিকর একটি খাদ্য, যা স্বাস্থ্য ভালো রাখার ক্ষেত্রে গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা পালন করে। তবে, মাশরুম খাওয়ার ব্যপারে সতর্কতা অবলম্বন করা উচিৎ। বিষাক্ত মাশরুম এড়িয়ে চলা, সংরক্ষণ ও রান্না সঠিক উপায়ে করা এবং অতিরিক্ত না খাওয়া নিরাপদ ও স্বাস্থ্যকর উপায়।

প্রিয় পাঠক পাঠিকাগণ, আমরা আশাকরি আপনারা যদি আর্টিকেলটি শুরু থেকে শেষ পর্যন্ত পড়েন, তাহলে নিশ্চয়ই জেনে গেছেন, মাসরুমের পুষ্টিগুণ, উপকারিতা, খাওয়ার নিয়ম ও পার্শ্বপ্রতিক্রিয়া সম্পর্কে অনেক গুরুত্বপূর্ণ তথ্য।

আরো পড়ুনঃ বরই ফলের উপকারিতা ও অপকারিতা

যা, আপনাদের অনেক উপকারে আসবে বলে আমরা আশাবাদি। আর্টিকেলটি যদি ভালোলাগে এবং উপকারি বলে মনে হয়, তাহলে এটি অন্যের সঙ্গে শেয়ার করবেন। আরো নতুন নতুন তথ্য জানার জন্য আমাদের পরবর্তী আর্টিকেল পড়ুন এবং আমাদের সঙ্গে থাকুন, ধন্যবাদ।

এই পোস্টটি পরিচিতদের সাথে শেয়ার করুন

পূর্বের পোস্ট দেখুন পরবর্তী পোস্ট দেখুন
এই পোস্টে এখনো কেউ মন্তব্য করে নি
মন্তব্য করতে এখানে ক্লিক করুন

এই ওয়েবসাইটের নীতিমালা মেনে কমেন্ট করুন। প্রতিটি কমেন্ট রিভিউ করা হয়।

comment url