কাঁচা কলার উপকারিতা উপকারিতা ও রেসেপি

আরো পড়ুনঃ কাঁকড়া খাওয়ার উপকারিতা ও পার্শ্বপ্রতিক্রিয়া 
কলা বাংলাদেশের একটি অতি পরিচিত সহজলোভ্য ফল। কলা গ্রাম থেকে শুরু করে শহর পর্যন্ত সবখানে পাওয়া যায়। কলা খেতে ভালো বাসেন না, এমন মানুষ পাওয়া ভার। কলা একটি উপকারি ফল একথা প্রায় সকলের কাছেই জানা।


বিশেষ করে পাকা কলার উপকারিতার কথা সবার মুখে মুখে। কিন্তু, কাচা কলার উপকারিতা এবং গুনাগুনের কথা আমাদের অনেকের অজানা। কাচা কলা নিয়ম অনুজায়ী খেলে, এটি খেতে যেমন সুস্বাদু, তেমনি এর উপকারিতা ও গুণাগুণ অনেক।
কিন্তু আমরা অনেকেই এই বিষয়ে জানিনা। তাই, আজকের আর্টিকেলে আমরা আপনাদের সঙ্গে শেয়ার করবো, "কাঁচা কলার উপকারিতা উপকারিতা ও রেসেপি" সম্পর্কে সকল তথ্য। চলুন তাহলে আমরা দেখে নেই কাঁচা কলা সম্পর্কে-

কাঁচা কলায় থাকা পুষ্টিগুণ

একটি কাঁচা মাঝার আকারের বা ১১৮ গ্রাম কলায় রয়েছে, পানি ৭৫ ভাগ, প্রোটিন ১.৩ গ্রাম, ফাইবার ৩ গ্রাম, ক্যালোরি ১০৫ গ্রাম, কার্বোহাইড্রেট ২৭ গ্রাম, চিনি ১৪ গ্রাম, ফ্যাট ০.৩ গ্রাম যা, আমাদের বিভিন্ন স্বাস্থ্য উপকারিতায় সাহায্য করে।

কাঁচা কলার খাওয়ার উপকারিতা

কাঁচা কলায় রয়েছে বিভিন্ন ধরণের পুষ্টি উপাদান। যা, আমাদের ওজন কমানো থেকে শুরু করে শরীরের বিভিন্ন রোগ প্রতিরোধ করতে সাহায্য করে থাকে। নিম্নে কাঁচা কলার উপকারিতা সম্পর্কে আলোচনা করা হলো-

** ওজন কমায়- কাঁচা কলায় রয়েছে রেজিস্টেন্স স্টার্চ যা, দেরিতে হজম হয় এবং দীর্ঘ সময় পেট পূর্ণ রাখে। আর ক্ষুধা কম লাগা মানে, খাবার খেতে দেরি করা এবং এতে শরীরে ক্যালোরি প্রবেশ করে না। এমন অবস্থা চলতে থাকলে ওজন স্বাভাবিকভাবে কমে যাবে।

** পেটের রোগ প্রতিরোধ- কাঁচা কলায় থাকে প্রচুর ফাইবার, আর এটি মানুষের শরীরের প্রবেশ করার সঙ্গে সঙ্গে উন্নতি ঘটায় হজম ক্ষমতার এবং এতে ডাইজেস্টিভ ট্রাকের কার্যকরীতা বৃদ্ধির পাশাপাশি বাওয়েল মুভমেন্টের ক্ষমতা বৃদ্ধিতে গুরুত্বপূর্ণ ভুমিকা পালন করে।

তাই কাঁচা কলা শুধু খারাপ পেট ভালো করে তা নয়, যারা প্রায় সময় অম্বলসহ গ্যাসের সমস্যায় ভোগেন, তারা কাঁচা কলাকে অসুধ হিসাবে কাজে লাগাতে পারেন।

** উচ্চরক্ত চাপ নিয়ন্ত্রণ করে- একটি গবেষণার মাধ্যমে উঠে এসেছে, কাঁচা কলায় থাকা পটাশিয়াম মানুষের শরীরে প্রবেশ করলে, বাড়িয়ে তোলে ব্লাড ভেসেলের কর্মক্ষমতা। যার কারণে শিরা উপশিরার ভেতরে সৃষ্টি হওয়া প্রেসারকেও কমিয়ে দেয়। যার ফলে উচ্চ রক্তচাপ নিয়ন্ত্রণে আসে।

** হৃদরোগের ঝুকি কমায়- গবেষণায় দেখা গেছে যে, পাকা কলার মতই কাঁচা কলাতেও রয়েছে প্রচুর পরিমাণে পটাশিয়াম। আর গবেষকদের দাবি মতে, প্রতিদিন ৪৭০০ মিলিগ্রাম পটাশিয়াম যদি কোন ব্যক্তি গ্রহন করে, তার হৃদ রোগের ঝুকি হ্রাস পায়।

তবে, আমাদের জেনে রাখা ভালো যে, পটাশিয়াম সকলের জন্য কিন্তু নিরাপদ নয়। আর কিডনি রোগ ও উচ্চ রক্তচাপের রোগীদের কাঁচা কলা পরিমাণমত বা চিকিৎসকের পরামর্শ অনুযায়ী খাওয়া উচিত।

** ডায়াবেটেস নিয়ন্ত্রণে রাখে- আপনি যদি পর্যাপ্ত পরিমাণে কাঁচা কলা খেলেও শর্করার মাত্রা বাড়ার সম্ভাবনা থাকে না। বরং কাঁচা কলা সুগারের মাত্রা নিয়ন্ত্রণে রাখতে সাহায্য করে। সেই কারণে ডায়াবেটিস রোগীরা কাঁচা কলা খেতে পারেন নিশ্চিন্তে।

** রোগ প্রতিরোধ ক্ষমতা বাড়ায়- গবেষকদের মতে নিয়মিতভাবে কাঁচা কলা খাওয়ার ফলে, শরীরের ভেতর বৃদ্ধি পেতে শুরু করে, অ্যান্টি অক্সিডেন্টের মাত্রা। এর ফলে শরীরের খারাপ টক্সিনের পরিমাণ কমে যায় এবং রোগ প্রতিরোধ ক্ষমতা বৃদ্ধি পায়।

** পুস্টির ঘাটতি পূরণ- কাঁচা কলায় রয়েছে বেশ কিছু পুষ্টি উপাদান যা, সর্বক্ষণ খেয়াল রাখে, জাতে খাবারে থাকা পুষ্টিকর উপাদানগুলো শরীরে সঠিকভাবে কাজে লাগে। তাই, নিশ্চিন্তে বলা যায় যায় যে, কাঁচা কলা শরীরের পুষ্টির ঘাটতি পূরণ করে।

কাঁচা কলার খাওয়ার সহজ কিছু রেসিপি

কলা সারা বিশ্বে গ্রীস্মমন্ডলীয় এলাকার অন্যতম প্রধান খাদ্য এবং কাঁচা কলা বিভিন্নভাবে খাওয়া যেতে পারে। কাঁচা কলায় রয়েছে মানুষের শরীরের জন্য অত্যন্ত প্রয়োজনীয় প্রচুর পরিমাণে খনিজ এবং বিভিন্ন ভিটামিনসহ পুষ্টিগুণ।

তাছাড়া, কাঁচা কলায় রয়েছে প্রচুর পরিমাণে ফাইবার যা, খুদা হ্রাস করতে সাহায্য করে। আবার কাঁচা কলা খাওয়ার ফলে আপনাকে স্বাস্থ্যকর রাখতে অন্ত্রের ব্যাকটেরিয়াকে সাহায্য করে। কাঁচা কলা্র শর্ট- চেইন ফ্যাটি অ্যাসিড সমূহ উৎপাদনকে বাড়িয়ে তোলতে সাহায্য করে।

আর কাঁচা কলা হজমের জন্য বিশেষ ভুমিকা পালন করে থাকে। আবার সবুজ বা কাঁচা কলায় থাকা পেকটিন উপাদান রক্তের শর্করা পরিমাণ নিয়ন্ত্রণে সাহায্য করে থাকে। নিম্নে কাঁচা কলা খাওয়ার কয়েকটি রেসিপি আলোচনা করা হলো- 

কাঁচা কলার নাগেটস তৈরির নিয়ম

প্রথমে মাঝারি আকারের দুটি কাঁচা কলা সেদ্ধ করে নিন, সেদ্ধ হলে কলা দুটোকে কেটে কেটে টুকরো করুন এবং একটি পাত্রে ম্যাশ করুন। এখন ১ কাপ গ্রেটেড ব্রকলি, হাফ কাপ গ্রেটেড পানি এবং ১ চামচ করে গ্রীন চিলির সস এবং রেডড চিলির সস মিশিয়ে নিন।
এর সঙ্গে আরো যোগ করুন চিলি ফ্লাক্স ১ চমচের সঙ্গে পরিমাণমত লবন। এখন সকল উপাদান ভালোকরে মিশিয়ে সেগুলোকে তৈরি করে নিন ন্যগেট আকারে। এখন তৈরি হয়ে গেল কাঁচা কলার নাগেটস।

কাঁচা কলার সুস্বাদু টিক্কা তৈরির নিয়ম

প্রথমে মাঝারি আকারের ২ টি করে কাঁচা কলা এবং আলু ও সামান্য পানি প্রেসার কুকারে করে ১০ মিনিটের মত সেদ্ধ করে নিতে হবে। সেদ্ধ হয়ে গেলে পানি সরান এবং কিছুক্ষণ ঠান্ডা করার পর, কলা এবং আলুর খোসা ছাড়িয়ে নিন।

এবার উপকরণগুলো একটি বাটিতে করে কাঁচা কলা এবং আলুগুলো সুন্দর করে ম্যাশ করে নিন। এর সঙ্গে ১ চামচ করে লাল মরিচের গুড়োে এবং শুকনা পুদিনা পাতার গড়ো ও পরিমাণমত পানি মেশান। এখন পরিমাণ ময়দা মিশিয়ে নিন। এখন আপনার সুস্বাদু কাঁচা কলার সুস্বাদু টিক্কা তৈরি।

কাঁচা কলার সামুচা তৈরির নিয়ম

প্রথমে কাঁচা কলার খোসা ছাড়িয়ে তাতে, হাফ কাপ গমের আটা এবং ময়দা হাফ চামচের সঙ্গে পরিমাণমত পানি মিশিয়ে এর সঙ্গে যোগ করুন কোয়াটার চামচ ব্রেকিং সোডা। এবার একটি পাত্রে হালকা গরম তেল ও সামান্য পানি দিয়ে কলাটি সেদ্ধ করে নিন।

এখন পরিমাণ মত তেল দিয়ে এর সঙ্গে আরো যোগ করুন হাফ চামচ করে জিরা ও পুদিনার গুড়ো এবং পরিমাণ মত ঝালের গুড়ো ভালোকরে মিশিয়ে নিন। এবার আপনি সামুচা তৈরি করুন এবং তেলে ভেজে পরিবেশন করুন।

কাঁচা কলার চিপস তৈরির রেসিপি

প্রথমে মাঝারি আকারের ৪ কাঁচা কলার খোসা ছাড়িয়ে নিন এবং পানিতে ডুবিয়ে রাখুন ১৫ মিনিটের মত সময়। একটি পাত্রে করে কলাগুলো ভালোকরে সেদ্ধ করে নিন এবং সেদ্ধ কাঁচা কলাগুলো কেটে টুকরো করে চিপস তৈরি করুন।

এবার চিপসের সঙ্গে নারকেল তেল ২ টেবিল চামচ এবং পরিমাণ মত লবন ও মরিচের গুড়ো ভালোকরে মিশিয়ে নিন। এখন চিপসগুলো একটি ট্রেতে করে ৩০ মিনিট সময় বের করে রাখুন। ৩০ মিনিট পর চিপস এ বাদামের গুড়ো দিয়ে চুলায় ভেজে নিন। আপনার সুস্বাদু কাঁচা কলার চিপস তৈরি।

কাঁচা কলা খাওয়ার অপকারিতা

সকল ভালো খাদ্যের অনেক উপকারিতার সঙ্গে সঙ্গে কিছু পার্শ্ব প্রতিক্রিয়া বা অপকারিতা থাকে। সেক্ষেত্রে কলারও রয়েছে। যদিও কলাতে প্রচুর পরিমাণে পুষ্টিগুণ রয়েছে এবং কলা খেলে শরীরে ক্যালোরি জমা হয়।

এমনকি কলা খেলে পেট পূর্ণ হয়। তবে, কলা খেলে যতই ভালো হোক না কেন, কখনই বেশি পরিমাণে কলা খাওয়া ঠিক নয়। কারণ, কলার উপকারিতার সঙ্গে সঙ্গে অপকারিতাও রয়েছে। নিম্নে কলা খোয়ার অপকারিতা বা পার্শ্ব প্রতিক্রিয়া আলোচনা করা হলো- 
  • হাইপারক্যালেমিয়া- কলায় রয়েছে প্রচুর পরিমাণে পটাশিয়াম, তাই অতিরিক্ত কলা খেলে সমস্যা হতে পারে হাইপারক্যালেমিয়ার।
  • মাইগ্রেন- কারো মাইগ্রেনের সমস্যা থাকলে কলাকে এডিয়ে চলার চেস্টা করুন, কারণ কলাতে মাইগ্রেনের সমস্যা হতে পারে।
  • ক্লান্তি- ট্রিপটোফ্যান আমাইনো অ্যাসিড রয়েছে পাকা কলাতে। আর অ্যামাইনো এসিডের কারণে ক্লান্তি দেখে দেয়।
  • পেট ব্যাথা- বাজারের কেনা কলা সাধারণত রাসায়নিকের মাধ্যমে পাকানো হয়। তাই এটি খাওয়ার ফলে পেট ব্যাথা হতে পারে।
  • দাঁতের ক্ষয়- কলাতে প্রচুর শর্করা থাকে, তাই বেশি পরিমাণে কলা খেলে দাঁতের ক্ষয় এবং দাঁতের স্বাস্থ্যের ক্ষতি হয়।
  • কোষ্ঠকাঠিন্য- কালা হৃদ যন্ত্র চলনে সাহায্য করে। কিন্তু অধিক পরিমাণে কলা খেলে কোষ্ঠকাঠিন্য এর সমস্যা দেখে দেয়।
  • ওজন বৃদ্ধি- কলাতে প্রচুর পরমাণে ক্যালোরী থাকে। তাই অধিক পরিমাণে কলা খেলে ওজন বেড়ে যেতে পারে।
  • ডায়াবেটিস- কলাতে প্রচুর পরিমাণে সুগার থাকে। তাই অধিক পরিমাণে কলা খেলে ডায়াবেটিস বেড়ে যেতে পারে।
  • অ্যালার্জি- কলাতে অনেকের এলার্জি থাকে। তাই তাদের কলা খাওয়া থেকে বিরত থাকা উচিৎ।
  • শ্বাস সমস্যা- যাদের শ্বাস কষ্টের সমস্যা রয়েছে, তারা বেশি মাত্রায় কলা খাবেন না।
  • গ্যাস- অধিক পরিমাণে কলা খেলে গ্যাসের সমস্যা দেখে দিতে পারে।

শেষকথা 

আশাকরি আপনারা যদি আর্টিকেলটি শুরু থেকে শেষ পর্যন্ত পড়ে থাকেন, তাহলে নিশ্চয়ই জেনে গেছেন কাঁচা কলার সম্পর্কে অনেক তথ্য। যা আপনাদের অনেক উপকারে আসবে বলে আমরা অনেক আশাবাদী।
আর্টিকেলটি যদি ভালোলাগে ও উপকারি বলে মনে হয়, তাহলে এটি অন্যের সঙ্গে শেয়ার করবেন। আরো নতুন নতুন তথ্য জানার জন্য আমাদের পরবর্তী আর্টিকেল পড়ুন এবং আমাদের সঙ্গে থাকুন, ধন্যবাদ সবাইকে।

এই পোস্টটি পরিচিতদের সাথে শেয়ার করুন

পূর্বের পোস্ট দেখুন পরবর্তী পোস্ট দেখুন
এই পোস্টে এখনো কেউ মন্তব্য করে নি
মন্তব্য করতে এখানে ক্লিক করুন

এই ওয়েবসাইটের নীতিমালা মেনে কমেন্ট করুন। প্রতিটি কমেন্ট রিভিউ করা হয়।

comment url