হাঁসের ডিমের পুষ্টিগুণ, উপকারিতা ও অপকারিতা
আরো পড়ুনঃ কোয়েল পাখির ডিমের পুস্টিগুণ উপকারিতা ও অপকারিতা
ডিম সকলের কাছে একটি পরিচিত, জনপ্রিয় এবং পুষ্টিকর খাবার। ডিম পছন্দ করেন না, এমন মানুষ পাওয়া দায়। তাছাড়া ডিমকে বলা হয়ে থাকে প্রোটিন এবং পুষ্টির ভান্ডার। কারণ, ডিমে পাওয়া যায় মানুষের শরীরের জন্য উপকারি সব ধরণের পুষ্টি উপাদান।
যদিও, হাঁসের ডিম ও মুরগির ডিমের স্বাদ ও গন্ধ প্রায় একই, কিন্তু দেখতে মুরগির ডিমের তুলনায় হাঁসের ডিম কিছুটা বড় হয়ে থাকে। তাছাড়া, হাঁসের ডিমের খোসা মুরগির ডিমের খোসার চেয়ে অনেক শক্ত যা, সহজে নষ্ট হয় না, এমনকি ফ্রিজে না রেখেও প্রায় ৬ মাস পর্যন্ত ভালো থাকে।
আর উপকারিতার দিক বলতে গেলে এর সঙ্গে উপকারিতাও জুডিয়ে যায়। কারণ, পৃথিবীর সকল খাবারের উপকারিতার পাশাপাশি উপকারিতাও রয়েছে। সেক্ষেত্রে, হাঁসের ডিমেও এর ব্যতিক্রম নয়। তাই, আজকের আর্টিকেলে আমরা জানবো হাঁসের ডিমের পুষ্টিগুণ উপকারিতা ও অপকারিতা সম্পর্কে।
হাঁসের ডিমে থাকা বিভিন্ন পুষ্টি উপাদান
হাঁসের ডিম দেখতে যেমন আকারে বড়, তেমনি এই ডিমের পুষ্টি উপাদানও তুলনামূলকভাবে অন্যান্য ডিমের চেয়ে বেশি থাকে। আর হাঁসের ডিমে পাওয়া যায় ভিটামিন "এ, সি, ই, ডি, বি ২, বি৬, এবং বি১২", ছাড়াও আয়রণ, প্রোটিন, ফ্যাট, পটাশিয়াম, ফসফরাস, জিঙ্কসহ বিভিন্ন পুষ্টি উপাদান।
হাঁসের ডিম ও মুদ্গির ডিমের তুলনামুলক পার্থক্য
আমাদের মধ্যে বেশিরভাগ মানুষ আছে যারা, ডিম খেতে পছন্দ করেন, কিন্তু কোন ডিমে কি পরিমাণ পুষ্টি উপাদান রয়েছে, সে সম্পর্কে সঠিক ধারণা নেই। আর আপনিও যদি না জেনে থাকেন, তাহলে জেনে নিন নিম্নের টেবিল থেকে।
পুষ্টি
উপাদানের নাম |
হাঁসের
ডিম |
মুরগির
ডিম |
খাদ্যশক্তি |
১৮১ কিলোক্যালরি |
১৭৩ কিলোক্যালরি |
প্রোটিন
(১০০গ্রামে) |
১৩.৫
গ্রাম |
১৩.৩
গ্রাম |
ফ্যাট (১০০ গ্রামে) |
১৩.৭ গ্রাম |
১৩.৩ গ্রাম |
ক্যালসিয়াম |
৭০
মিলিগ্রাম |
৬০
মিলিগ্রাম |
ভিটামিন এ |
২৬৯ মাইক্রগ্রাম |
২৯৯ মাইক্রগ্রাম |
লোহা |
৩
মিলিগ্রাম |
২.১
মিলিগ্রাম |
আসল কথা হলো, মুরগির ডিম ও হাঁসের ডিমের মধ্যে তেমন কোন পার্থক্য না থাকলেও মুরগির ডিমের তুলনায় হাঁসের ডিমে কিছুটা পুষ্টি উপাদান বেশি রয়েছে। তাই, অধিক পুষ্টি পাওয়ার জন্য, হাঁসের ডিম খাওয়া শুরু করা জেতে পারে।
হাঁসের ডিম খাওয়ার উপকারিতা
মুরগির ডিমের মত হাঁসের ডিমও আমাদের দেশে অনেক জনপ্রিয় একটি খাবার। তাছাড়া হাঁসের ডিম মুরগির ডিমের চেয়ে একটু বড় এবং এর স্বাদও ভিন্ন। তাছাড়া হাঁসের ডিমে পাওয়া যায় বিভিন্ন পুষ্টি উপাদান যা, মানুষের স্বাস্থ্যের জন্য অনেক উপকারি। নিম্নে হাঁসের ডিমের উপকারিতা দেখুন-
** পুষ্টির উৎস- হাঁসের ডি্মে থাকে বিভিন্ন পুস্টিতে সমৃদ্ধ, যেমন ভিটামিন "এ, সি, ই, ডি, বি২, বি৬, এবং বি১২", ছাড়াও আয়রণ, প্রোটিন, ফ্যাট, পটাশিয়াম, ফসফরাস, জিঙ্কসহ বিভিন্ন পুষ্টি উপাদান। আর এই সকল উপাদান হাড়ের স্বাস্থ্য, রোগ প্রতিরোধসহ বিভিন্নভাবে উপকারিতায় সাহায্য করে।
** ভালো রাখে চোখের স্বাস্থ্য- হাঁসের ডিমের কুসুমে পাওয়া যায় লুটেইন ও জেক্সাথিন, আর এই অ্যান্টি অক্সিডেন্ট উপাদান দুটি রক্ষা করে চোখের স্বাস্থ্য। তাছাড়া এই উপাদান দুটি ম্যাকুলার ডিজেনারেশন এবং চোখার ছানি পড়ার ঝুকি রোধে সাহায্য করে।
** মস্তিস্কের বিকাশ- হাঁসের ডিমে পাওয়া যায় প্রচুর পরিমাণে কোলিন, যা মস্তিস্কের বিকাশ ঘটাতে কার্যকরী ভুমিকা পালন করে। ফলে ফোকাস উন্নত করাসহ বৃদ্ধি করে স্মৃতিশক্তি এবং শেখার ক্ষমতা।
** দীর্ঘস্থায়ী শক্তি জোগায়- হাঁসের ডিমে পাওয়া যায় স্বাস্থ্যকর চর্বি বা ফ্যাট, যা দীর্ঘ সময় শক্তি যোগায়। তাছাড়া, হাঁসের ডিম পরিপূর্ণ একটি খাবার, এটি খেলে কয়েক ঘন্টা পেট পূর্ণ থাকে।
** প্রোটিনের উৎস- হাঁসের ডিমে পাওয়া যায়, উচ্চ মানের বিভিন্ন প্রোটিন যা, আমাদের শরীরের প্রোটিন বৃদ্ধি ও টিসু মেরামতসহ বিভিন্ন গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা পালন করে।
হাঁসের ডিম নিয়মিত কেন খাবেন
হাঁসের ডিম মানুষের শরীরের জন্য একটি উপকারি খাবার। হাঁসের না মুরগীর ডিম, কোনটি বেশি উপকারি এই নিয়ে বিতর্ক অনেক পুরানো। বিশেষ করে স্বাস্থ্য সচেতন ব্যক্তিরা ডিমের পুষ্টিগুণ এর বিষয় নিয়ে মাথা ঘামান এবং গুণাগুণ বিশ্লেষণ করেন।
হাঁসের ডিম তুলনা মূলকভাবে মুরগির ডিমের চেয়ে একটু বড় এবং খোসাও শক্ত। আর হাঁসের ডিম আকারে বড় হওয়ার কারণে এর কুসুমও বড়। তাছাড়া, হাঁসের ডিম কয়েক রঙের হয়ে থাকে। আর খোসা শক্ত হওয়ার কারণে ফাটাতেও একটু আসুবিধা হয়।
আরো পড়ুনঃ লাউয়ের শাক বা ডগার পুষ্টিগুণ, উপকারিতা ও অপকারিতা
আবার আপনি চাইলে হাঁসের ডিম ফ্রিজে না রেখেও দীর্ঘদিন পর খাওয়া যায়। যদিও সকল খাবার টাটকা খাওয়াটাই স্বাস্থ্যের জন্য বেশি উপকারি। যাইহোক, এর কুসুম বড় হওয়ার কারণে মুরগির ডিমের চেয়ে হাঁসের ডিমে কোলেস্টেরল এবং চর্বিও বেশি থাকে।
আবার খনিজ এবং কার্বোহাইড্রেটের পরিমাণ যদিও সমান, কিন্তু ওমেগা-৩ ফ্যাটি অ্যাসিড এবং প্রোটিন হাঁসের ডিমে বেশি থাকে। তাই, যারা উচ্চ চর্বিযুক্ত খাবার খেতে চান, তাদের জন্য হাঁসের ডিম উত্তম। আর হাঁসের ডিমে খনিজ এবং ভিটামিন প্রচুর পরিমাণে থাকে।
হাঁসের ডিমে পাওয়া যায় প্রচুর পরিমাণে ভিটামিন বি ১২ যা, ডিএনএ সংশ্লেসণ, রোক্তের লোহিত কোণিকা এবং স্বাস্থ্যকর স্নায়ুর জন্য অত্যান্ত প্রোয়োজন। তাছাড়া, হাঁসের ডিমে থাকা ভিটামিন বি ১২ ক্যান্সার এবং হৃদ রোগের ঝুকি কমায়।
হাঁসের ডিম পাওয়া যায় প্রচুর পরিমাণে ভিটামিন "এ", আর ভিটামিন "এ" দৃষ্টিশক্তি বাড়ানোর পাশাপাশি ভালো রাখে রক্ত ও ত্বকের স্বাস্থ্য। তাছাড়া হাঁসের ডিমে রয়েছে, রিবোফ্লাভিন নামক একটি শক্তিশালি অ্যান্টি অক্সিডেন্ট ও সেলেনিয়াম, যা রোগ প্রতিরোধ ক্ষমতা বাড়ায়।
পুষ্টির দিক বিবেচনা করলে মুরগীর চেয়ে এগিয়ে রয়েছে হাঁসের ডিম। কারণ, হাঁসের ডিমে মুরগির ডিমের চেয়ে ১০০ গ্রাম বেশি থাকে ভিটামিন এ, ভিটামিন বি-১২, ্থায়ামিন, ক্যালসিয়াম, ম্যাগনেসিয়াম এবং আয়রন ইত্যাদি।
আর এই উপাদানগুলো ওমেগা ৩ ফ্যাটি অ্যাসিডের দুর্দান্ত উৎস, যা প্রতিটি স্বাভাবিক মানুষের জন্য প্রয়োজন। একটি গবেষণা উঠে এসেছে যে, হাঁসের ডিমের সাদা অংশে যে পেপ্টাইটগুলি রয়েছে, তা প্রয়োজনীয় খনিজ এবং ক্যালসিয়াম শোষণ করার মাধ্যমে বৃদ্ধি করে জহম খমতাকে।
তাছাড়া হাঁসের ডিমের সাদা অংশ হাড়কে মজবুত এবং ভালো রাখে দাতের স্বাস্থ্যকে। আর উপরের বিভিন্ন উপকারিতার কারণে আমাদের নিয়মত হাঁসের ডিম খাওয়া জরুরি।
হাঁসের ডিম কিভাবে খেতে হবে?
হাঁসের ডিম এবং মুরগির ডিম দূটোই খাওয়ার নিয়ম প্রায় একই ধরণের। তবে, হাঁসের ডিম প্রতিদিন ১ থেক ২ টি করে খাওয়া যায়। আর যারা ব্যায়াম করেন, তাদের ক্ষেত্রে ব্যায়াম শুরুর আগে ১টি এবং ব্যায়াম শেষে ১টি ডিম খেলে অনেক উপকার পাওয়া যায়।
তাছড়া আপনি চাইলে দিনের শুরুতে বা সকাল বেলা একটি ডিম খেতে পারলে ভালো উপকার পাওয়া যায়। অনেকে আছেন যাদের ওজন কম এবং ওজন বাড়াতে চান, তারা নিয়মিত রাতে ঘুমানোর আগে হাঁসের ডিম ১টি খেলে ওজন খুব সহজে বাড়বে।
হাঁসের ডিম খেলে কি এলার্জি হয়?
আপনারা অনেকে আছেন যারা, জানতে চান হাঁসের ডিমে এলার্জি আছে কি না? উত্তর হলো হাঁসের ডিমে এলার্জি আছে। তবে, কোন খাবারে কোন ব্যক্তির এলার্জি আছে, সেটা সেই ব্যক্তি নির্ধারণ করতে পারে। কারণ, প্রায় সব খাবারেই কারো না কারো এলার্জি থাকে।
তাই, যদি কোন ব্যক্তির হাঁসের ডিম খাওয়ার পরে তার শরীরে এলার্জি সমস্যা বা উপসর্গ দেখা যায়, তাহলে তার হাঁসের ডিমে এলার্জি আছে। আর দেখা না গেলে নাই। তবে, যাদের চর্ম রোগ আছে তাদের হাঁসের ডিম পাশাপাশি বেগুন না খাওয়াটাই ভালো।
হাঁসের ডিম খেলে পেসার বাড়বে কি?
শুধু হাঁসের নয়, ডিম খেলেই পেসার বাড়ার সম্ভাবনা থাকে। তাছাড়া, হাঁসের ডিম বেশি খেলে কোলেস্টেরল এমনকি হৃদরোগের ঝুকি বাড়ে। তবে, আপনি যদি নিয়মিতভাবে ২টি করে হাঁসের ডিম খান, তবে পেশার বাড়বেনা। আর এইরোগে ভূগছেন, তারা সিদ্ধ ডিম না খেয়ে ভেজে খাবেন।
হাঁসের ডিম খাওয়ার অপকারিতা বা পার্শ্বপ্রতিক্রিয়া
হাঁসের ডিমের অপকারিতা বা পার্শ্বপ্রতিক্রিয়া বলতে অতিরিক্ত হাঁসের ডিম খেলে ক্ষতি হতে পারে। কারণ, কোন কিছু অতিরিক্ত খাওয়া ঠিক নয়। তাই, অতিরিক্ত হাঁসের ডিম খেলে আপনার শরীরে বেড়ে যেতে পারে, কোলেস্টেরলের মাত্রা। আর শরীরে খারাপ কোলেস্টেল বেড়ে গেলে হৃদরোগ হতে পারে।
হাঁসের ডিমের উপকারিতা ও অপকারিতা- শেষকথা
নিসন্দেহে হাঁসের ডিমের রয়েছে অনেক উপকারিতা। পাশাপাশি এর অপকারিতা বা পার্শ্বপ্রতিক্রিয়াও বিদ্যমান। আর বেশি উপকারিতা পাওয়ার জন্য, কখনো অতিরিক্ত হাঁসের ডিম খাওয়া উচিৎ নয়। তাই, নিয়ম করে পরিমিত হারে ডিম খাওয়া উচিৎ।
প্রিয় পাঠক পাঠিকাগণ, আমরা আশাকরি আপনারা যদি আর্টিকেলটি শুরু থেকে শেষ পর্যন্ত পড়ে থাকেন, তাহলে নিশ্চয়ই জেনে গেছে, "হাঁসের ডিমের পুষ্টিগুণ উপকারিতা ও অপকারিতা" সম্পর্কে অনেক গুরুত্বপূর্ণ তথ্য।
আরো পড়ুনঃ ডালিম বা আনারের উপকারিতা অপকারিতা এবং খাওয়ার নিয়ম
যা, আমরা আর্টিকেলে ইতিপূর্বেই আলোচনা করেছি। আর্টিকেলটি যদি ভালোলাগে এবং উপকারি বলে মনে হয়, তাহলে এটি অন্যের সঙ্গে শেয়ার করে দিবেন। আরো নতুন নতুন তথ্য জানার জন্য আমাদের পরবর্তী আর্টিকেল পড়ুন এবং আমাদের সঙ্গে থাকুন, ধন্যবাদ।
এই ওয়েবসাইটের নীতিমালা মেনে কমেন্ট করুন। প্রতিটি কমেন্ট রিভিউ করা হয়।
comment url