কোয়েল পাখির ডিমের পুস্টিগুণ উপকারিতা ও অপকারিতা
আরো পড়ুনঃ লাউয়ের শাক বা ডগার পুষ্টিগুণ, উপকারিতা ও অপকারিতা
বর্তমান পৃথিবীতে যত প্রকারের খাবারের উপযোগী এবং পুষ্টিগুণে ভরপুর ডিম রয়েছে, তার মধ্যে অন্যতম হলো কোয়েল পাখির ডিম। মানুষের বয়স সাধারণত ৪০ বছর পার হলেই, ডিম খাওয়ার ক্ষেত্রে নিয়ম মানা জরুরী হয়ে পড়ে।
যেমন, বয়লার মুরগির ডিম খেলে মানুষের শরীরের কোলেস্টরলের মাত্রা বেড়ে যায়। কিন্তু কোয়েল পাখির ডিম যে কোন বয়সের মানুষ খুব সহজে কোন দিধা না করেই খেতে পারেন। কারণ, কোয়েল পাখির ডিমের কোন ধরণের পার্শ্বপ্রতিক্রিয়া নেই।বরং কোয়েল পাখির ডিমের রয়েছে, বিভিন্ন রোগ প্রতিরোধ ক্ষমতা। তবে, এর কিছু পার্শ্বপ্রতিক্রিয়া বা অপকারিতাও রয়েছে। তাই আজকের আর্টিকেলে আমরা আপনাদের সঙ্গে শেয়ার করবো "কোয়েল পাখির ডিমের পুস্টিগুণ, উপকারিতা ও অপকারিতা" সম্পর্কে।
কোয়েল পাখির ডিমে থাকা পুষ্টিগুণ
কোয়েল পাখির ডিম আকারে অনেকটা ছোট হলেও, এই ডিম থাকে বিভিন্ন পুষ্টি উপাদানে ভরপুর। নিম্নে কোয়েল পাখির ডিমে থাকা প্রধান প্রধান পুষ্টি উপাদান সম্পর্কে আলোচনা করা হলো। চলুন তাহলে আমরা দেখি-
** প্রোটিন- উচ্চমাত্রার প্রোটিনে ভরপুর থাকে কোয়েল পাখির ডিম। কোয়েল পাখির প্রতি ১০০ গ্রাম ডিমে প্রোটিন থাকে প্রায় ১৩ গ্রাম। যা, মানুষের শরীরের কোষের গঠন, পেশি বৃদ্ধি এবং ক্ষয়রোধে সাহায্য করে।
** ভিটামিন- কোয়েল পাখির ডিমে রয়েছে প্রচুর পরিমাণে ভিটামিন "এ, বি২, বি৬, বি১২ এবং ডি"। বিভিন্ন ভিটামিনের কার্যকারিতা নিম্নে দেখুন-
- ভিটামিন এ- চোখের স্বাস্থ্য
ভালো রাখতে সাহায্য করে।
- ভিটামিন ডি- ক্যালসিয়ান
শোসণের মাধ্যমে হাড়কে মজবুত রাখে।
- ভিটামিন বি- স্নায়ুর স্বাস্থ্য
রক্ষা এবং মস্তিস্কের কার্যক্ষমতা বাড়াতে সাহায্য করে।
** মিনারল বা খনিজ- কোয়েল পাখির ডিমে পাওয়া যায় আয়রণ, জিঙ্ক, ফসফরাস এবং পটাসিয়াম। এই সকল পুষ্টি উপাদানের কার্যকারিতা নিম্নে দেখুন-
- আয়রন- রক্তে হিমোগ্লাবিন
উতপাদনসহ রক্তসল্পতা দূর করতে সাহায্য করে।
- জিঙ্ক- রোগ প্রতিরোধ
ক্ষমতা বাড়ানোর পাশাপাশি ত্বকের স্বাস্থ্য ভালো রাখে।
- ফসফরাস- হাড়কে মজবুত এবং দাঁতের গঠনে সাহায্য করে।
- পটাসিয়াম-
রক্তচাপ নিয়ন্ত্রণে রাখতে সাহায্য করে।
** ক্যালোরি এবং চর্বি- কোয়েল পাখির ডিমে পাওয়া যায় স্যাচুরেটেড ও আনস্যাচুরেটেড
উভয় ফ্যাট। আর এতে কোলেস্টরলের থাকে কম, যা হৃদরোগের ঝুকি কমায়। তাছাড়া ১৪ ক্যালোরি থাকে প্রতিটি কোয়েল পাখির ডিমে, যা ওজন নিয়ন্ত্রণে সাহায্য করে।
কোয়েল পাখির ডিমের উপকারিতা
কোয়েল পাখির ডিমের যেমন রয়েছে, রোগ প্রতিরোধ ক্ষমতা, তেমনিভাবে এটি অনেক জটিল রোগ সারতে সাহায্য করে। যেমন, হার্ট, কিডনি, ফুসফুস, ওজন স্মরণ শক্তি, উচ্চ ও নিম্ন রক্তচাপ, পাকস্থলীসহ বিভিন্ন সমস্যা সমাধানে ভূমিকা রাখে। নিম্নে এর উপকারিতা জেনে নেই-
** দেহকে পরিস্কার করে- পরিবেশ বা অন্য কোন কিছু যেমন ময়লা হয় তেমনিভাবে মানুষের শরীরের ভেতরও বিভিন্ন ময়লা এবং আবর্জনা হয়। আর মানুষের শরীরের ময়লা দূর করতে গুরুত্বপূর্ণ এই ডিম। যা, ময়লাকে দূর করে মূত্রের মাধ্যমে রক্তপ্রবাহ থেকে।
** শরীরের রক্তসল্পতা দূর করে শক্তি বাড়ায়- কোয়ল পাখির ডিম মানুষের শরীরের শক্তি বাড়াতে শক্তির উৎস হিসাবে কাজ করে। কোয়েল পাখির ডিমে থাকে অ্যামিনো এসিড, যা টিস্যুর ক্ষয় রোধের পাশাপাশি নতুন টিস্যু তৈরি, ব্লাড সুগার নিয়ন্ত্রণ এবং আয়রনের অভাব দূর করার মাধ্যমে দূর করে রক্ত সল্পতা।
** সুস্থ্য রাখে শরীরকে- কোয়েল পাখির ডিমকে চাইনিজেরা ব্যবহার করে, রোগ নিরাময়কারি হিসাবে। বিশেষ করে অ্যাজমা, ডায়াবেটিস, টিবি ইত্যাদি রোগের। কোয়েল পাখির ডিম সুস্থ্য রাখে লিভার, কিডন এমনকি সাহায্য করে পিত্তথলির পাথরকেও গলাতে।
** শিশুর শারীরিক ও মানসিক বিকাশ- সকল বয়সের মানুষ যেমন কোয়েল পাখির ডিম খেতে পারে, তমনিভাবে এই ডিম শিশুদের জন্য অনেক উপকারি। কারণ, স্মরনশক্তি বাড়াতে সাহায্য করে এই ডিম, ফলে শিশুর শারীরিক ও মানসিক বিকাশ ঘটে।
** এলার্জি প্রতিরোধক- আমাদের মধ্যে অনেকে আছেন, যাদের সারা বছর সর্দি, জ্বর ও এলার্জি ভোগতে হয়। আর এই সকল সমস্যার সমাধান করতে কোয়েল পাখির ডিম অনেক কার্যকরী। কারণ, কোয়েল পাখির ডিমে পাওয়া যায় এলার্জি প্রতিরোধকারি উপাদান।
** বয়সের ছাপ কমায়- প্রচুর পরিমাণে ভিটামিন "এ", লাইসিন নামক অ্যামিনো এসিড এবং কোলিন পাওয়া যায় কোয়েল পাখির ডিমে। আর ভিটামিন এ চোখের জন্য উপকারি এবং ডিমের সাদা অংশে থাকা লাইসিন এসিড ত্বকের কোলাজেল সৃষ্টি করে ও কোলিন পুস্টি বৃদ্ধির মাধ্যমে বয়সের ছাপ কমায়।
** ত্বক ও চুলের জন্য- আমাদের শরীরের অন্য অঙ্গের চেয়ে আমরা ত্বক এবং চুলের যত্ন বেশি নিয়ে থাকি। আর কোয়েল পাখির ডিমে রয়েছে ভিটামিন "বি" যা, চোখের দৃষ্টিশক্তি বাড়ানোর পাশাপাশি রক্তে লোহিত কোণিকা উৎপাদন করে, যা ত্বক এবং চুলের জন্য অনেক উপকারি।
আরো পড়ুনঃ ডালিম বা আনারের উপকারিতা অপকারিতা এবং খাওয়ার নিয়ম
কোয়েল পাখির ডিম প্রতিদিন খাওয়ার নিয়ম
কোয়েল পাখির ডিম সকল বয়সের মানুষের জন্য উপকারি, তেমনিভাবে শিশুদের জন্যও অনেক উপকারি। কিন্তু এই ডিম খাওয়ার ক্ষেত্রে কিছু নিয়ম মেনে চলা উচিত। চলুন আমরা দেখে নেই একজন শিশু বা ব্যক্তি প্রতিদিন কয়টি ডিম খেতে পারবে।
- ০১ থেকে ০৭ বছর বয়সী শিশু- ২ থেকে ৩
টি ডিম প্রতিদিন খাওয়া নিরাপদ।
- ০৮ থেকে ১৫ বছর বয়সী শিশু- ৩ থেকে ৪
টি ডিম প্রতিদিন খাওয়া নিরাপদ।
- ১৬ থেকে ১৮ বছর বয়সী কিশোর- ৪ থেকে ৫
টি ডিম প্রতিদিন খাওয়া নিরাপদ।
- ১৮ বছরের উপরে বা প্রাপ্ত বয়স্ক ব্যক্তি ৫ টি ডিম প্রতিদিন খাওয়া নিরাপদ।
উপরে উল্লেখিত পরিমাণে ডিম একজন শিশুর দৈনিক চাহিদা মেটাতে সক্ষম এবং সাহায্য করবে শিশুর স্বাস্থ্য ভালো রাখতে। তবে, আপনাকে মনে রাখতে হবে যে, নতুন কোন খাবার, শিশুকে খাওনোর আগে চিকিৎসকের পরামর্শ নেওয়া জরুরি।
শিশুদের কোয়েল পাখির ডিম খাওয়ার উপকারিতা
শিশুদের স্বাস্থ্যের জন্য কোয়েল পাখির ডিম গুরুত্বপূর্ণ একটি খাবার। কারণ, কোয়েল পাখির ডিমে রয়েছে, প্রাকৃতিক বিভিন্ন পুষ্টি উপাদান। যার মধ্যে রয়েছে, ভিটামিন "এ, ই, বি৬, বি ১২", আয়রন, সোডিয়াম, পটাশিয়াম, ম্যাগনেসিয়াম, থায়ামিন, নিয়াসিন, রিবোফ্লাভিন এবং জিঙ্ক।
কোয়েল পাখির ডিমে থাকা এই সকল উপাদান শিশুর মস্তিস্কের বিকাশ, শারীরিক বৃদ্ধি এবং মজবুত হাড় গঠনে সাহায্য করে। তাছাড়া এই ডিম বিভিন্ন রোগ প্রতিরোধ ক্ষমতা বাড়ানোর পাশাপাশি দূর করে জন্মগত সমস্যা। তাই সুষম পুষ্টি এবং স্বাস্থ্যের উন্নতির জন্য এটি গুরুত্বপূর্ণ।
গর্ভবতীদের কোয়েল পাখির ডিম খাওয়ার উপকারিতা
গর্ভবতী মা- বোনদের জন্য অন্যতম পুস্টিকর খাবার কোয়েল পাখির ডিম। কারণ, কোয়েল পাখির ডিমে রয়েছে, প্রাকৃতিক বিভিন্ন পুষ্টি উপাদান। যার মধ্যে রয়েছে, ভিটামিন "এ, ই, বি৬, বি ১২", আয়রন, সোডিয়াম, পটাশিয়াম, ম্যাগনেসিয়াম, থায়ামিন, নিয়াসিন, রিবোফ্লাভিন এবং জিঙ্ক।
আর উপরের পুষ্টি উপাদানগুলো গর্ভবতী মা- বোনদের বিভিন্ন পুষ্টি যোগাতে সাহায্য করার পাশাপাশি সাহায্য করে শিশুর হাড়ের গঠন, জন্মগত সমস্যা দূর এবং নিশ্চিত করে শিশুর সুস্টু বিকাশে গুরুত্বপূর্ণ ভাবে।
তাই, গর্ভবতী মা- বোনসহ শারীরিক দুর্বল ব্যক্তিদের বিভিন্ন কাঁচা বা আধাসিদ্ধ ডিম না খেয়ে রান্না করা কোয়েল পাখির ডিম নিয়মিত খাওয়া উচিৎ। তাছাড়া অনেকের মুরগী বা হাঁসের ডিমে এলার্জি হয়, কিন্তু কোয়েল পাখির ডিমে এলার্জির সম্ভাবনা অনেক কম।
কোয়েল পাখির ডিম খাওয়ার অপকারিতা বা পার্শ্বপ্রতিক্রিয়া
সকল উপকারিতার সঙ্গে কিছু অপকারিতা বা পার্শ্বপ্রতিক্রিয়া থাকাটা স্বাভাবিক বা থাকে। সেক্ষেত্রে কোয়েল পাখির ডিম খাওয়ারও কয়েকটি অপকারিতা বা পার্শ্বপ্রতিক্রিয়া রয়েছে। যদিও সেটি অনেক কম। নিম্নের আলোচনা থেকে আমরা দেখে নেই অপকারিতা বা পার্শ্বপ্রতিক্রিয়া সম্পর্কে-
** ডায়াবেটিস ও হৃদরোগ- অনেকে আছেন, যাদের ডায়াবেটিস ও হৃদরোগ অধিক মাত্রায় বা নিয়ন্ত্রণের বাইরে চলে গেছে, তাদের এই ডিম এডিয়ে চলা ভালো। কারণ, কোয়েল পাখির ডিমে রয়েছে প্রচুর ফ্যাট। আর এই ফ্যাট উক্ত রোগের সমস্যা সৃষ্টি করতে পারে।
** কোলেস্টেরল- কোয়েল পাখির ডিমে পাওয়া যায় প্রচুর কোলেস্টেরল। যেমন, ১০০ গ্রাম কোয়েলের ডিমে পাওয়া যায় প্রায় ৮৪৪ কোলেস্টেরল। যা অন্য যে কোন ডিমের চেয়ে অনেক বেশি। তাই, যারা কোলেস্টেরলের সমস্যায় আছেন, তাদের এই ডিম এড়িয়ে চলা বা বেশি না খাওয়া উচিৎ।
কোয়েল পাখির ডিমের উপকারিতা ও অপকারিতা- শেষকথা
কোয়েল পাখির ডিমে রয়েছে প্রচুর উপকারিতা এ কথা বলার অপেক্ষা রাখে না। তবে, এর কিছু অপকারিতাও রয়েছে। তাই, এই ডিম অতিরিক্ত পরিমাণে না খেয়ে, নিয়ম অনুযায়ী খাওয়া উচিৎ। কারণ, কোন খাবার নিয়মের অধিক খাওয়া ঠিক নয়।
প্রিয় পাঠক পাঠিকাগণ, আমরা আশাকরি আপনারা যদি আর্টিকেলটি শুরু থেকে শেষ পর্যন্ত পড়ে থাকেন, তাহলে নিশ্চয়ই জেনে গেছেন, "কোয়েল পাখির ডিমের পুস্টিগুণ, উপকারিতা ও অপকারিতা'' সম্পর্কে বিস্তারিত সকল তথ্য। যা, আমরা আর্টিকেলে ইতিপূর্বেই আলোচনা করেছি।
আরো পড়ুনঃ ব্রোকলি বা সবুজ কপির উপকারিতা ও অপকারিতা
আশাকরি আর্টিকেলটি আপনাদের অনেক উপকারে আসবে। আর আর্টিকেলটি যদি আপনাদের ভালো লাগে এবং উপকারি বলে মনে হয়, তাহলে এটি অন্যের সঙ্গে শেয়ার করবেন। আরো নতুন নতুন তথ্য জানার জন্য আমাদের পরবর্তী আর্টিকেল পড়ুন এবং আমাদের সঙ্গে থাকুন, ধন্যবাদ।
এই ওয়েবসাইটের নীতিমালা মেনে কমেন্ট করুন। প্রতিটি কমেন্ট রিভিউ করা হয়।
comment url