লাউয়ের শাক বা ডগার পুষ্টিগুণ, উপকারিতা ও অপকারিতা

আরো পড়ুনঃ ব্রোকলি বা সবুজ কপির উপকারিতা ও অপকারিতা

লাউ আমাদের দেশের একটি অতি পরিচিত সবজি। লাউ খেতে প্রায় সকলেই পছন্দ করেন, এর অপূর্ব স্বাদের জন্য। তাছাড়া লাউ একটি উপকারি সবজি, ইসলাম ধর্মে লাউ খাওয়ার গুরুত্ব অপরিসীম। তবে, শুধুমাত্র লাউ নয়, লাউয়ের শাক বা ডগা অনেক সুস্বাদু এবং স্বাস্থ্যের জন্য প্রচুর উপকারি।

আমরা প্রায় সমলেই লাউয়ের ডগা এবং পাতা বিভিন্ন উপায়ে খেয়ে থাকি। কিন্তু এর উপকারিতা সম্পর্কে আমাদের অনেকের সঠিক ধারণা নেই। তাই শুধুমাত্র লাউয়ের ডগা বা পাতা তরকারি হিসাবে খাবারের স্বাদ বাড়াতে আমরা এটি খেয়ে থাকি।

তাছাড়া, লাউয়ের ডগা বা পাতার শুধু উপকারিতা কথা মাথায় রাখলে চলবে না, এর কয়েকটি পার্শ্বপ্রতিক্রিয়াও রয়েছে, সে কারণে আজকের আর্টিকেলে আমরা আপনাদের সঙ্গে শেয়ার করবো, "লাউয়ের শাক বা ডগার পুষ্টিগুণ, উপকারিতা  অপকারিতা" সম্পর্কে সকল তথ্য-

লাউইয়ের শাক বা ডগায় থাকা বিভিন্ন পুষ্টিগুণ

লাউ শাক থেকে পাওয়া যায় বিভিন্ন পুষ্টিগুণ। কারণ, লাউ শাককে বলা হয়ে থাকে পুস্টির ভান্ডার। আর লাউ শাকে প্রায় ১৫ ধরণের বিভিন্ন পুষ্টি উপাদান রয়েছে। যেমন, ভিটামিন "সি", ভিটামিন "বি " ক্যালোরি, ক্যালসিয়াম, পটাশিয়াম, সোডিয়াম, প্রোটিন, ফ্যাট, ফাইবার, খনিজ, কার্বোহাইডেট ইত্যাদি।

লাউয়ের শাক বা ডগার খাওয়ার উপকারিতা

লাউগাছ বাংলাদেশের একটি সহজলোভ্য গাছ। এটি বাংলাদেশের যে কোন জায়গায়, ঘরের চালা থেকে শুরু করে বাড়ির আনাচে কানাচে, খেত খামারে সবখানে অতি সহজেই জন্মায়। আর লাউ শাক বাংলাদেশের অধিকাংশ মানুষের পছন্দের খাবার। লাউ শাক খায়না বা পছন্দ করেন না এমন বাঙালী খুজে পাওয়া মুসকিল।

আমরা লাউশাককে যতই সহজলোভ্য বা সাদাসিদে বলে থাকি না কেন, এর উপকারিতা অনেক। আর লাউ শাক যে, মানুষের শরীরে বিভিন্ন সবাস্থ্য উপকারিতায় গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা পালন করে, তা আমরা নিম্নের আলোচনা থেকে জানবো। চলুন তাহলে দেখে নেওয়া যাক-

** রোগ প্রতিরোধ ক্ষমতা- লাউয়ের শাক বা ডগায় রয়েছে প্রচুর পরিমাণে ভিটামিন ", সি এবং " আর ভিটামিনগুলো মানুষের শরীরের রোগ প্রতিরোধ ক্ষমতা বাড়িয়ে তুলতে সাহায্য করে।

** হাড়ের জোড়াকে করে মজবুত- লাউয়ের শাকে বা ডগায় পাওয়া যায় ক্যালসিয়াম ম্যাগনেসিয়াম। যা হাড়কে মজবুত করতে সাহায্য করে। তাছাড়াও, লাউয়ের শাক বা ডগা নিয়মিত খাওয়ার ফলে রক্ষা পাওয়া যায়, অস্টিও পোরোসিসের মতো রোগ থেকে।

** ক্যানসারের বিরুদ্ধে লড়াই করে- লাউয়ের শাকে বা ডগায় রয়েছে প্রচুর পরিমাণে অ্যান্টি অক্সিডেন্ট যা, মানুষের শরীরকে মুক্ত রাখে র‍্যাডিকেলের ক্ষতিকর প্রভাব থেকে। ফলে অনেকটাই রক্ষা পাওয়া যায়, ক্যান্সারের ঝুকির হাত থেকে।

** নিয়ন্ত্রণ করে রক্তচাপ- লাউয়ের শাকে বা ডগায় থাকা পটাশিয়াম, মানুষের শরীরে থাকা অতিরিক্ত সোডিয়ামকে বের করে দিতে সাহায্য করে। ফলে, উচ্চ রক্তচাপ নিয়ন্ত্রণে রেখে ঝুকি কমায় হ্রিদরোগের।

** নিয়ন্ত্রণে রাখে রক্তের শর্করা- লাউয়ের শাকে বা ডগায় থাকা ফাইবার ধীরে ধীরে বৃদ্ধি করে রক্তের শর্করা, যা ইনস্যুলের কার্যকরীতা উন্নত করে। সেই কারণে এটি ডায়াবেটিস রোগীর জন্য খুবই উপকারি খাবার।

আরো পড়ুনঃ মিষ্টি কুমড়া ও এর বিচির উপকারিতা ও অপকারিতা

** উন্নত করে দৃষ্টিশক্তিকে- লাউ শাক বা ডগায় রয়েছে প্রচুর পরিমাণে ভিটামিন "সি" আর ভিটামিন সি চোখের রেটিনাকে সুস্থ রাখে। সে কারণে চোখের দৃষ্টি শক্তি উন্নত করতে এবং বিভিন্ন সংক্রামণ প্রতিরোধ করতে, লাউ শাক বা ডগা অনেক উপকারি।

** বৃদ্ধি করে হজম শক্তিকে- লাউ শাক বা ডগায় রয়েছে ফাইবার। আর এতে থাকা ফাইবার হজম প্রক্রিয়াকে সহজ করে তোলে। ফলে, এই সবজীটি কোষ্ঠকাঠিন্যর সমস্যা দূর করার পাশাপাশি ভালো রাখতে সাহায্য করে অন্ত্রের স্বাস্থ্যকে

** শরীরের ব্যাথা দূর করে- লাউ শাকে পাওয়া যায় প্রচুর ফাইটো নিউট্রিয়েন্ট। আর এই উপাদানটি মানুষের শরীরের বিভিন্ন ধরণের ব্যাথা দূর করতে সাহায্য করে।

** ভালো রাখে হার্ট- লাউ শাক বা ডগায় থাকে ফাইবার এবং পটাশিয়াম। আর এই সকল উপাদান মানুষের রক্তচাপকে নিয়ন্ত্রণের পাশাপাশি সুস্থ্য রাখতে সাহায্য করে হার্ট বা হৃদপিণ্ডকে।

** ত্বককে করে উজ্জল- লাউ শাক বা ডগায় থাকা ভিটামিন "সি" ত্বককে সাহায্য করে কোলাজেন উৎপাদনে। আর কোলাজেন ত্বকের মৃত কোষকে দূর করে এবং সৃষ্টি করে নতুন কোষ। ফলে ত্বককে করে তোলে স্বাস্থ্য উজ্জল, কোমল এবং মসৃণ।

লাউয়ের শাক বা ডগার অপকারিতা বা পার্শ্বপ্রতিক্রিয়া

লাউয়ের শাক বা ডগার অনেক উপকারিতা রয়েছে। কিন্তু সকল জিনিসের উপকারিতার পাশাপাশি কিছু অপকারিতা বা পার্শ্বপ্রতিক্রিয়া থাকে। সেক্ষেত্রে এর কয়েকটি পার্শ্বপ্রতিক্রিয়া রয়েছে। নিম্নে লাউয়ের শাক বা ডগার অপকারিতা বা পার্শ্বপ্রতিক্রিয়া সম্পর্কে আলোচনা করা হলো। চলুন দেখি-

  •  উচ্চ রক্তচাপ- লাউ শাক বা ডগায় থাকে পটাশিয়াম, যা রক্তচাপ নিয়ন্ত্রণে সাহায্য করে। আর অতিরিক্ত পটাশিয়াম শরীররে সৃষ্টি করতে পারে হাইপোবাস্থ্যকের একটি অবস্থার। তাই লাউয়ের ডগা অধিক পরিমাণে খাওয়ার কারণে, বাড়তে পারে দুর্বলতা, অস্বস্তি এমনকি বাড়তে পারে হৃদরোগের ঝুকি।
  • হৃদরোগের ঝুকি- অনেকে আছেন, যারা হৃদরোগে আক্রান্ত, তাদের ক্ষেত্রে লাউইয়ের শাকা বা ডগা খাওয়ার ক্ষেত্রে ডাক্তারের পরামর্শ নেওয়া উচিৎ। কারণ, লাউয়ের শাক বা ডগায় রয়েছে প্রচুর পরিমাণে পটাশিয়াম। তাই অতিরিক্ত পরিমানে এটি খেলে সমস্যা হতে পারে।
  • গর্ভবতী বা স্তনদানকারি মা- বোন- লাউইয়ের শাকা বা ডগা গর্ভবতী বা স্তনদানকারি মা- বোনদের খাওয়ার ক্ষেত্রে সাবধনতা অবলম্বন করা জরুরি। কারণ, অতিরিক্ত লাউয়ের শাক বা ডগা খাওয়ার কারণে শিশুর ক্ষতি হতে পারে।
  • কিডনি রোগী- লাউইয়ের শাকা বা ডগায় রয়েছে প্রচুর পরিমাণে পানি। তাই এটি অতিরিক্ত পরিমাণে খাওয়ার কারণে, শরীরে পানি জমতে পারে, ফলে কিডনির সমস্যা হতে পারে।
  • অ্যালার্জি- অনেকের লাউইয়ের শাক বা ডগা খাওয়ার কারণে অ্যালার্জির সমস্যা দেখা দেয়। এর কারণে ত্বক লাল, ফুসকুড়ি, চুলকানি বা শ্বাসকষ্ট দেখা দিতে পারে। তাই এটি তাদের এড়িয়ে চলাই ভালো।

শেষকথা

প্রিয় পাঠক পাঠিকাগণ, আমরা আশাকরি আপনারা যদি আজকের এই আর্টিকেলটি শুরু থেকে শেষ পর্যন্ত মনোযোগের সঙ্গে পড়ে থাকেন, তাহলে নিশ্চয়ই যেনে গেছেন, "লাউয়ের শাক বা ডগার পুষ্টিগুণ, উপকারিতা ও অপকারিতা" সম্পর্কে বিস্তারিতভাবে সকল তথ্য।
যা, আমরা আর্টিকেলে ইতিপূর্বেই আলোচনা করেছি। আর্টিকেলটি যদি আপনাদের ভালোলাগে এবং উপকারি বলে মনে হয়, তাহলে এটি অন্যের সঙ্গে শেয়ার করবেন। আরো নতুন নতুন তথ্য জানার জন্য আমাদের পরবর্তী আর্টিকেল পড়ুন এবং আমাদের সঙ্গে থাকুন, ধন্যবাদ।

এই পোস্টটি পরিচিতদের সাথে শেয়ার করুন

পূর্বের পোস্ট দেখুন পরবর্তী পোস্ট দেখুন
এই পোস্টে এখনো কেউ মন্তব্য করে নি
মন্তব্য করতে এখানে ক্লিক করুন

এই ওয়েবসাইটের নীতিমালা মেনে কমেন্ট করুন। প্রতিটি কমেন্ট রিভিউ করা হয়।

comment url