ডালিম বা আনারের উপকারিতা অপকারিতা এবং খাওয়ার নিয়ম
আনার বা ডালিম একটি পরিচিত ফল। ডালিম
চেনেনা এমন মানুষ খুজে পাওয়া অনেকটাই কঠিন। তাছাড়া, ডালিমের উপকারিতা সম্পর্কেও
প্রায় সকলেই জানেন। কারণ, ডালিম বা আনারকে বলা হয় "সুপার ফুড"।
ডালিম বা বেদনা তুলনামুলক দামি একটি ফল হলেও, এতে রয়েছে মানুষের বিভিন্ন রোগ প্রতিরোধকারী গুনাগুণ। আর আজকের আর্টিকেলে আমরা আপনাদের সঙ্গে শেয়ার করবো ডালিমের উপকারিতা অপকারিতা এবং খাওয়ার নিয়ম সম্পর্কে বিস্তারিত তথ্য। চলুন তাহলে আমরা দেখে নেই-
ডালিম বা আনারের পুষ্টিগুণ
ডালিম বা আনার মানুষের শরীরের জন্য
উপকারি এমন বেশকিছু পুষ্টিগুণ রয়েছে। নিম্নে ১০০ গ্রাম ডালিম বা আনারে থাকা
পুষ্টিগুণ এবং মানুষের শরীরের দৈনিক চাহিদা কতখানি মেটায় তা, টেবিলের মাধ্যমে
দেখানো হলো। আমরা নিম্নের টেবিল থেকে দেখে নেই-
১০০ গ্রাম ডালিমে পুস্টির নাম ও দৈনিক চাহিদা মেটায় |
||
ক্রঃনং |
পুস্টির নাম |
দৈনিক চাহিদা মেটায় |
১ |
ভিটামিন সি |
১২.০০% |
২ |
ভিটামিন কে |
২০.০০% |
৩ |
ভিটামিন বি৯ |
৯.০০% |
৪ |
প্রোটিন |
৩.০০% |
৫ |
ক্যালোরি |
৪.০০% |
৬ |
ডায়েটারি ফাইবার |
১৬.০০% |
৭ |
সোডিয়াম |
০.০০% |
৮ |
পটাসিয়াম |
৫.০০% |
৯ |
কার্বো হাইড্রেট |
৬.০০% |
১০ |
চিনি |
১৬.০০% |
১১ |
চর্বি |
২.০০% |
ডালিম বা আনার খাওয়ার উপকারিতা
ডালিম বা আনার দেখতে যেমন সুন্দর, তেমনি এই ফলটি খেতে অনেক সুস্বাদু এবং এর উপকারিতাও অনেক। এই ফলটি আমাদের দেশে সারা বছর পাওয়া যায়। আর বাজারে এই ফলটির দাম অন্যান্য ফলের চেয়ে কিছুটা বেশি হলেও, এর উপকারিতার দিক বিবেচনা করে এটি খাওয়া প্রয়োজন।
আমাদের দেশের পরিচিত ফলের মধ্যে অন্যতম একটি ফল ডালিম বা আনার। আবার
অনেকে এই ফলকে বেদানা বলে থাকেন। লোক কথার বিভিন্ন গল্পে যৌবন বা সৌভাগ্যের প্রতিক
হিসাবে এই ফলকে উপস্থাপন করা হয়। যদিও ডালিম বা আনার পারস্যের আদি একটি ফল।
পরবর্তী সময়ে এই ফলটি বাংলাদেশ, ভারত, পাকিস্থান, আকেরিকাসহ বিশ্বের
বিভিন্ন দেশে ছড়িয়ে পড়ে। এই ফলের সৌন্দর্যের সঙ্গে সঙ্গে মিল রয়েছে স্বাদ এবং
উপকারিতার। শরীরকে সুস্থ্য এবং সজিব রাখতে এই ফলের রয়েছে অতুলনীয় ভূমিকা। নিম্নের
আলোচনা থেকে আমরা দেখে নেই এই ফলের উপকারিতা সম্পর্কে-
**
ক্যানসার প্রতিরোধে সহায়ক- আনার বা ডালিমে রয়েছে, অ্যান্টি
অক্সিডেন্ট উপাদান। আর গবেষণায় উঠে এসেছে যে, আনারে থাকা অ্যান্টি অক্সিডেন্ট
ক্যানসার বেড়ে উঠাকে এবং নতুন সেল তৈরিতে বাধা প্রদান করে। সেই কারণে ক্যানসার
প্রতিরোধে আনার অনেক কার্যকরী।
**
হৃদ রোগের সম্ভাবনা হ্রাস- আনার বা ডালিমে পাওয়া যায় প্রচুর পরিমাণে
অ্যান্টি অক্সিডেন্ট, এমনকি মাত্র কয়েক গ্রাম আনারে যথেষ্ট পরিমাণ অ্যান্টি
অক্সিডেন্ট রয়েছে। আর অ্যান্টি অক্সিডেন্ট হার্ট এটাক বা হৃদ রোগের ঝুকি কমায়। রক্তে
কোলাএস্টরেলের মাত্রা কমিয়ে দেয়, ফলে হৃদ রোগের সম্ভাবনা অনেক হ্রাস পায়।
** রোগ
প্রতিরোধ ক্ষমতা বাড়ায়- ভিটামিন "এ এবং সি" এর উৎস বলা
হয়ে থাকে আনার বা ডালিমকে। আর এই দুইটি ভিটামিন মানুষের রোগ প্রতিরোধ ক্ষমতাকে
বাড়িয়ে তোলতে গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা পালন করে।
**
হজম ক্ষমতা বৃদ্ধি করে- আনারে রয়েছে প্রচুর পরিমাণে ফাইবার। তাই
আনার খেলে খাদ্যনালি এবং পাকস্থালীর পরিপাক এবং হজমের দক্ষতা অনেক বেড়ে যায়।
তাছাড়া আনার খাওয়ার ফলে গাটে থাকা উপকারি ব্যাকটেরিয়ার পরিমাণ বৃদ্ধির সঙ্গে সঙ্গে
হেলদি রাখে গাটকে।
** ডায়াবেটিস
নিয়ন্ত্রণে রাখে- প্রাকৃতিক ইনস্যুলিন পাওয়া যায় ডালিম বা আনারে, ফলে এটি ডায়াবেটিসের
জন্য খুবই উপকারি। অ্যান্টি ভাইরাল এবং অ্যান্টি ব্যাকটেরিয়াল প্রোপাটিজে পরিপূর্ণ
ফল ডালিম হওয়ার কারণে, এটি খেলে মুখের ভিতরে থাকা ক্ষতিকর জীবাণু নষ্ট হয়ে যায়।
** ওজন
নিয়ন্ত্রণে রাখে- ডালিম বা আনার উচ্চ ফাইবার সমৃদ্ধ কিন্তু, এটিতে ক্যালোরি খুব কম।
তাই আনার খাওয়ার ফলে ওজন নিয়ন্ত্রণে সাহায্য করে। আনার খেলে বার বার খেতে হয় না,
তাই ওজন নিয়ন্ত্রণে থাকে। সেই কারণে, ওজন নিয়ন্ত্রনের জন্য আনার বা ডালিম উপকারি।
** শরীর রাখে সজিব- আনারে রয়েছে শক্তিশালী অ্যান্টি অক্সিডেন্ট, যা, মানুষের শরীরের সজিবতা ধরে রাখতে সাহায্য করে। তাছাড়া আনার নিয়মিত খাওয়ার ফলে মানুষের শরীরে থাকা বিভিন্ন ধরণের ক্ষতিকারক জীবাণুর হাত থেকে রক্ষা পাওয়া যায়
**
ত্বকের সজিবতা ধরে রাখে- আনার বা ডালিমের জুস মানুষের ত্বকের জন্য
গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা পালন করে থাকে। কারণ, আনারের জুস মানুষের শরীরের গভীরে ঢুকে
পানি সরবরাহ করে এবং সাইট্রো কেমিক্যাল এবং মাইক্রনিউট্রিয়েন্ট উপাদানের যোগান
দেয়। সে কারণে ত্বকের সজিবতা ধরে রাখতে ডালিম খাওয়া জরুরি।
**
পুনরুজ্জীবিত করে কোষ- আনার বা ডালিমে রয়েছে প্রচুর পরিমাণে ফ্যাটি এসিড। তাছাড়া আনারে
রয়েছে ক্যারটিন ধরে রাখার প্রয়োজনীয় গুনাগুণ। তাই, ত্বকে বয়সের ছাপ দূর করে ত্বককে
পুনরুজ্জীবিত করতে আনার বা ডালিমের রয়েছে গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা।
**
কোলাজেল গঠনে সাহায্য করে- মানুষের ত্বকের একটি স্তর ডার্মিস, যা
গঠিত বা তৈরি আঁশ বা ফাইবার দিয়ে। আর কোলাজেন ঠিক রাখে ডার্মিসকে, এর জন্য
প্রয়োজন ভিটামিন "সি" এবং প্রোটিন। আনার বা ডালিম কোলাজেনের ফাইবারকে
ঠিক রাখার পাশাপাশি কাজ করে অ্যান্টি এজিং এজেন্ট হিসাবে। ফলে প্রতিরোধ করে ত্বককে
অকাল বুড়িয়ে যাওয়ার হাত থেকে।
ডালিম বা আনার খাওয়ার নিয়ম
আনার বা ডালিম সাধারণত খাওয়া হয়ে থাকে, পাকা ডালিমের ভিতরে থাকা টসটসে
বাদাম চিবিয়ে অথবা তার বাদামকে জুস বানিয়ে। তবে, এটি খাওয়ার উপযুক্ত সময় হলো
ব্যায়াম করার ৩০ মিনিট পূর্বে এক বাটি ডালিম বা আনার খেলে ভালো শক্তি পাওয়া যায়
পেশিতে।
কারণ, ডালিম বা আনারে রয়েছে, নাইট্রেড যা, কর্মক্ষমতাকে অনেকটা
বাড়িয়ে তোলে অ্যাথলেটদের। তাছাড়াও, উপকারি এই ফলে থাকা ভিটামিন "সি" এবং
অ্যান্টি অক্সিডেন্ট যে, কোনা মানুষের শরীরের জন্য অনেক উপকারি। তাই আপনি যে কোন
উপায়ে ডালিম বা আনার খেতে পারেন।
ডালিম বা আনার খাওয়ার অপকারিতা
বেদনা বা ডালিম মানুষের শরীরের জন্য খুবই উপকারি, একথা আর নতুন করে বলার অপেক্ষা রাখে না। কিন্তু অনেক উপকারি ডালিম বা বেদনার উপকারের পাশাপাশি কিছু মানুষের জন্য এর অপকারিতা বা পার্শ্ব প্রতিক্রিয়া রয়েছে। তাই তাদের এটি খাওয়া থেকে বিরত থাকা ভালো। চলুন নিম্নে দেখে নেওয়া যাক এর অপকারিতা সম্পর্কে-
** যাদের নিম্ন রক্তচাপ রয়েছে- অনেকে আছেন, যারা নিম্ন রক্তচাপে ভুগছেন, তারা ডালিম এড়িয়ে চলুন। কারণ, ডালিমের রয়েছে শিতল ভাব, যা শরীরের রক্ত চলাচল কমিয়ে দেয়। বিশেষজ্ঞদের মতে, যারা নিম্ন রক্তচাপের ওষুধ সেবন করেন, তারা ডালিম খেলে ক্ষতি হতে পারে।
** অ্যালার্জির সমস্যা- অনেকের ডালিমে অ্যালার্জির সমস্যা দেখা দেয়, তাদের ডালিম না খাওয়াই ভালো। কারণ, এতে সমস্যা বাড়তে পারে। ডালিম খেলে শরীরের রক্ত বাড়ে, কিন্তু অ্যালার্জি থাকলে শরীরে লাল এবং গোটা গোটা ভাব দেখা দিতে পারে।
** কোষ্ঠকাঠিণ্যের সমস্যা- যদি কেউ কোষ্ঠকাঠিণ্যের সমস্যায় ভোগেন, তাদের ডালিম এড়িয়ে চলাই ভালো। কারণ, ডালিম খেলে হজমের সমস্যা আরো বাড়তে পারে। তাছাড়া যাদের অধিক গ্যাস রয়েছে, তাদেরও ডালিম বা বেদনা না খাওয়া উচিত।
** অ্যাসিডিটির সমস্যা থাকেল- যারা অ্যাসিডিটির সমস্যায় ভূগছেন, তাদের ডালিম খাওয়া উচিত নয়। কারণ, ডালিম একটি ঠান্ডা জাতীয় খাবার, তাই এটি খাওয়ার কারণে হজমে সমস্যা হতে পারে, এমনকি এতে পেটের সমস্যাও হতে পারে।
** কাশিতে আক্রান্ত থাকলে- ডালিম একটি ঠান্ডা জাতীয় খাবার, তাই কাশিতে এবং ইনফলুঞ্জায় আক্রান্তদের ডালিম খাওয়া থেকে বিরত থাকা উচিৎ। তাই এই সকল সমস্যার ব্যাক্তিদের ডালিম খেলে সমস্যা আরো বেড়ে জেতে পারে।
** মানসিক রোগের ওষুধ সেবন কারি- মানসিক রোগে আক্রান্ত হয়েছেন এবং মানসিক রোগের ওষুধ সেবন করছেন, তাদের ডালিম বা বেদনা খাওয়া থেকে বিরত থাকতে হবে। কারণ, যারা মানসিক রোগের ওষুধ সেবন করেন, তাদের জন্য ডালিম অনেক ক্ষতিকর।
ডালিমার উপকারিতা ও অপকারিতা- শেষকথা
ডালিম বা আনারে রয়েছে প্রচুর পরিমানে ফসফরাস, যা আনারসের ৭গুন, আম,
আপেল ও কলার ৪গুন এবং আঙ্গুর ও আতার ২গুন। তবে, এই ফল খাওয়ার যেমন প্রচুর
উপকারিতা রয়েছে, তেমনি এর কিছু অপকারিতাও রয়েছে। তাই এটি খাওয়ার ক্ষেত্রে সাবধণতা
অবলম্বন করা উচিৎ।
প্রিয় পাঠক পাঠিকাগণ, আপনারা যদি আর্টিকেলটি শুরু থেকে শেষ পর্যন্ত মনোযোগের সঙ্গে পড়ে থাকেন, তাহলে নিশ্চয়ই যেনে গেছেন, "ডালিমের উপকারিতা অপকারিতা এবং খাওয়ার নিয়ম" সম্পর্কে অনেক তথ্য।
যা, আপনাদের অনেক উপকারে আসবে বলে আমরা আশাবাদী। আর আর্টিকেলটি যদি আপনাদের ভালোলাগে এবং উপকারি বলে মনে হয়, তাহলে এটি অন্যের সঙ্গে শেয়ার করবেন। আরো নতুন নতুন তথ্য জানার জন্য আমাদের পরবর্তী আর্টিকেল পড়ন এবং আমাদের সঙ্গে থাকুন, ধন্যবাদ।
এই ওয়েবসাইটের নীতিমালা মেনে কমেন্ট করুন। প্রতিটি কমেন্ট রিভিউ করা হয়।
comment url