ব্রোকলি বা সবুজ কপির উপকারিতা ও অপকারিতা

আরো পড়ুনঃ মিষ্টি কুমড়া ও এর বিচির উপকারিতা ও অপকারিতা

আমাদের দেশে শীত মৌসুমে বিভিন্ন ধরণের শীত কালীন সবজীতে বাজার সয়লাব হয়ে যায়। আর এই সকল সবজীতে রয়েছে মানুষের শরীরের জন্য প্রয়োজনীয় বিভিন্ন উপকারি পুষ্টি উপাদান। এর মধ্যে অন্যতম হলো ব্রোকলি বা সবুজ ফুলকপি।

ব্রোকলি দেখতে যেমন সুন্দর তেমনিভাবে খেতেও সুস্বাদু এবং এর পুষ্টিগুণ অনেক। বর্তমানে ক্যানসার বিরোধী যে কয়টি খাবার রয়েছে, তার মধ্যে সবুজ কপি বা ব্রোকলি স্থান করে নিয়েছে। তাছাড়া, একে বলা হয়ে থাকে পুষ্টির ভান্ডার এবং এর সবাস্থ্য উপকারিতাও প্রচুর।

আজকের আর্টিকেলে আমরা আপনাদের সঙ্গে করবো "সবুজ কপি বা ব্রোকলির স্বাস্থ্য উপকারিতা, অপকারিতা এবং খাওয়ার নিয়ম সম্পর্কে। আর আপনি যদি ব্রোকলি বা সবুজ কপির সম্পর্কে জানতে চান, তাহলে আর্টিকেলটি শুরু থেকে শেষ পর্যন্ত মনোযোগের সঙ্গে পড়ুন।

ব্রোকলি বা সবুজ কপির উপকারিতা

ব্রোকলি বা সবুজ কপির উপকারিতা অনেক, যা বলে শেষ করা অনেকটা মুসকিল। তবে, নিম্নের আলোচনায় আমরা আপনাদের শেয়ার করবো কয়েকটি গুরুত্বপূর্ণ উপকারিতা সম্পর্কে। চলুন তাহলে আমরা দেখে নেই, ব্রোকলি বা সবুজ কপির উপকারিতা সম্পর্কে-

** পুষ্টির ভান্ডার- ব্রোকলি বা সবুজ কপিকে বলা হয় পুষ্টির ভান্ডার। কারণ, ব্রোকলি বা সবুজ কপিতে রয়েছে ভরপুর অ্যান্টি অক্সিডেন্টসহ ভিটামিন "এ,বি,এবং সি" পটাশিয়াম, ক্যালসিয়াম, ফাইবার এবং আয়রণ। যা মানুষের মাথার চুল থেকে শুরু করে ত্বক এবং স্বাস্থ্য উপকারিতায় অনেক গুরুত্বপূর্ণ।

** উন্নত করে হজম প্রক্রিয়াকে- ব্রোকলি বা সবুজ কপিতে রয়েছে ফাইবার। যা অন্ত্রের স্বাস্থ্যের জন্য অনেক উপকারি। এটি অন্ত্রের সঞ্চালন বা পেরিস্টালসিস বাড়িয়ে তোলে, ফলে হজম প্রক্রিয়াকে সহজ এবং প্রতিরোধ করে কোষ্ঠকাঠিণ্যর সমস্যা।

তাছাড়া এতে থাকা সালফোরাফেন সাহায্য করে, পেটের ভেতরে থাকা ব্যাকটেরিয়া বৃদ্ধির মাধ্যমে মানুষের হজম প্রক্রিয়াকে আরো উন্নত করতে।

** ভালো রাখে হৃদ যন্ত্রকে- ব্রোকলি নিয়মিত খাওয়ার ফলে সাহায্য করে হৃদ রোগের ঝুকি কমাতে। ব্রোকলিতে থাকা ফ্ল্যাভোনয়েট সাহায্য করে রক্তচাপ নিয়ন্ত্রণে এবং ফাইবার সাহায্য করে রক্তের কোলেস্টরল কমাতে। আর ভিটামিন "কে" প্রচুর উপকারি রক্তনালির স্বাস্থ্যের জন্য।

তাছাড়া, ব্রোকলি বা সবুজ কপি সবচেয়ে উপকারি রক্তের জমাট বাঁধাকে নিয়ন্ত্রণের মাধ্যমে, হার্ট ব্লক হওয়ার ঝুকি কমানোর ক্ষেত্রে।

** নিয়ন্ত্রণ করে রক্তের শর্করা- ব্রোকলি বা সবুজ কপি ইনসুলিন সংবেদনশীল রাখার খেত্রে, যা বিশেষভাবে উপকারি ডায়াবেটিস টাইপ- ২ রোগীদের জন্য। আর এতে থাকা ফাইবার বাড়তে দেয় না রক্তের গ্লুকোজকে। যা, খুব সহজে নিয়ন্ত্রণে রাখা যায় ব্লাড সুগার।

** ক্যানসার প্রতিরোধকারি- ব্রোকলিতে রয়েছে সালফোরাফেন নামক বিশেষ এক ধরণের যৌগ, যা প্রতিরোধ করতে সক্ষম ক্যানসারের কোষ বৃদ্ধিতে। বিশেষ করে সাহায্য করে কোলন, ফুসফুস এবং স্থন ক্যানসার হওয়ার সম্ভাবনা কমিয়ে আনতে।

** ওজন নিয়ন্ত্রণ করে- ব্রোকলি উচ্চ ফাইবার সমৃদ্ধ এবং তুলনামুলকভাবে কম ক্যালোরি যুক্ত সবজি হওয়ার কারণে, এটি সাহায্য করে ওজন নিয়ন্ত্রোনে রাখতে। কারণ ব্রোকলি খুদা কমায় এবং মেটাবলিজম কমায় শরীরের।  তাই যারা ওজন নিয়ন্ত্রোন বা কমাতে চান, তাদের জন্য এই সবজিটি অনেক উপকারি।

** দৃষ্টিশক্তি ভালো রাখে- ব্রোকলিতে পাওয়া যায়, লুটেইন এবং জিয়াক্স্যান্থিন, যা চোখের রেটিনাকে রক্ষা করে ক্ষতিকর আলোর হাত থেকে। তাছাড়া, ক্যাটারাক্ট বা ছানি এবং ম্যাকুলার ডিজেনারেশন এর ঝুকি কমায়। তাই এটি খাওয়ার ফলে, দৃষ্টিশক্তি ভালো রাখের সঙ্গে সঙ্গে ঝুকি কমায় বয়স জনিত রোগের হাত থেকে।

** চুল ও ত্বকের জন্য- এই সবজীতে রয়েছে অ্যান্টি অক্সিডেন্ট যা, চুল এবং ত্বকের জন্য উপকারি। তাছাড়া ভিটামিন "সি" কোলাজেন উৎপাদন করার মাধ্যমে সজিব এবং ত্বক টান টান এবং বজায় রাখে মসৃণতা। ফ্রি জারডিকেলসের কারণে সৃষ্ট ত্বকের বিভিন্ন ক্ষতি রোধ, বয়সের ছাপ এবং দূর করে বলিরেখা।

** প্রতিরোধ করে অস্টিওপোরোসিস- এই সবজীতে রয়েছে, ভিটামিন "কে" এবং ক্যালসিয়াম, যা ভালোরাখে হাড়ের স্বাস্থ্য। ক্যালসিয়াম হাড়ের ঘনত্ব এবং শক্তিশালী করে হাড় ও ভিটামিন "কে" মজবুত করে হাড়ের কাঠামো। তাই নিয়মিত এই সবজি খেলে অস্টিওপোরোসিস এবং হাড়ের ক্ষয় হওয়ার সম্ভাবনা অনেক কমে যায়।

আরো পড়ুনঃ কাঁচা কলার উপকারিতা উপকারিতা ও রেসেপি

** মানিসিক উন্নতি- ব্রোকলিতে থাকা অ্যান্টি অক্সিডেন্ট এবং ফাইটো নিউট্রিয়েন্ট শরীরকে সুস্থ্য রাখার পাশাপাশি উন্নত করে মানসিক স্বাস্থ্যের। তাছাড়া, এটি সাহায্য করে অক্সিডেটিভ কমাতে এবং এতে থাকা ভিটামিন বি৬ সাহায্য করে মস্তিস্কের, ফলে ভালো রাখতে সাহায্য করে মনকে।

ব্রোকলি খাওয়ার নিয়ম বা রেসিপি

ব্রোকলি একটি উপকারি এবং সহজলোভ্য শীতকালীন সবজি। এই শীতকালীন বহুগুণে গুণান্বিত সবজিটি বিভিন্ন উপায়ে রান্না করে খাওয়া যায়। নিম্নে ব্রোকলী খাওয়ার কয়েকটি সহজ নিয়ম আলোচনা করা হলো। চলুন তাহলে আমরা দেখে নেই-  

  • Ø  ভাজি- এই সবজিটি খাওয়ার খুব সহজ রেসিপিটি তৈরির জন্য বেশ কয়েকটি উপাদান প্রয়োজন পড়ে এবং স্বাদের জন্য অনেক দুর্দান্ত।
  • Ø  পনির স্টাফট শাঁস- এই সবজিটি তৈরিতে অনেক কয়েকটি উপাদান প্রয়োজন এবং এই স্টাফ খোসাতে পনির এবং ব্রোকলি একসাথে দিয়ে রান্না করলে খেতেও অনেক দুর্দান্ত।
  • Ø  কুইন সালাদ- আপনি যদি হালকা মানের খাবার খোজ করে থাকেন, তাহলে ব্রোকলির সালাদ হতে পারে আপনার জন্য উপযুক্ত। কুইনোয়া ও ব্রোকলির মধ্যে অনেক মিল এবং এর সঙ্গে শুকনো ক্র্যানবেরি এবং সামান্য চূর্ণ ফোটা যোগ করলে এটি খেতে অনেক সুন্দর লাগে।

Ø  এছাড়াও, আরো সুস্বাদু খাবার খাওয়ার জন্য নিম্নের যে কোন উপায়ে খেলেই আপনি উপভোগ করতে পারবেন, সুস্বাদু এই খাবার।

  • ব্রোকলি এবং কুইনো সালাদ।
  • ব্রোকলি পেস্টোসহ স্প্যাগেটি।
  • ব্রোকলি এবং পনির স্টাফ শাঁস।
  • ব্রোকলি এবং মুরগীর সাথে পিরজা।
  • ভাজা ব্রোকলি এবং মিস্টি আলুর সুপ।

ব্রোকলির উপকারিতা বা পার্শ্বপ্রতিক্রিয়া

** ব্রোকলিতে রয়েছে প্রচুর পরিমাণে ফাইবার। তাই অতিরিক্ত ব্রোকলি খাওয়ার ফলে গ্যাস বা ফোলাভাব দেখা দিতে পারে। এই কারণে, যাদের গ্যাস এবং ফোলাভাব রয়েছে, তাদের ব্রোকলি খাওয়ার ব্যপারে সাবধনতা অবলম্বন করা উচিত।

** ব্রোকলিতে রয়েছে রাফিনোজ নামের একটি যৌগ, এটি এক প্রকারের চিনি যার ফলে, হজমে সমস্যা হতে পারে। তাই এটি খাওয়ার ফলে কোষ্ঠকাঠিণ্যর সমস্যা হতে পারে। কোষ্ঠকাঠিণ্যর সমস্যা আছে এমন ব্যক্তিদের এটি কম পরিমাণে খাওয়া উচিত।

** অনেকের ব্রোকলিতে অ্যালার্জির সমস্যা হতে পারে। অ্যালার্জির সমস্যার কারণে ফোলাভাব, শ্বাসকোস্ট বা চুলকানির মত সমস্যা দেখা দেয়। তাই অ্যালার্জির সমস্যা থাকলে ব্রোকলি খাওয়ার ব্যাপারে সাবধনতা অবলম্বন করা উচিত।

শীতকালীন সবজি ব্রোকলি বা সবুজ কপি- শেষকথা

শীতকালীন সবজি ব্রোকলি বা সবুজ কপিকে শুধুমাত্র সবজি মনে করা ঠিক নয়, কারণ এর স্বাস্থ্য উপকারিতা অনেক। এই সহজিটি শীতকালে অনেক সহজলোভ্য। সেই কারণে, ব্রোকলির উপকারিতা পাওয়ার জন্য, শীতকালে এই সবজিটি নিয়মিত খাদ্য তালিকায় রাখা উচিৎ।

প্রিয় পাঠক পাঠিকাগণ, আপনারা যদি আর্টিকেলটি শুরু থেকে শেষ পর্যন্ত মনোযোগের সঙ্গে পড়ে থাকেন, তাহলে নিশ্চয়ই জেনে গেছেন, "ব্রোকলি বা সবুজ কপির উপকারিতা ও অপকারিতা" সম্পর্কে অনেক তথ্য।

আরো পড়ুনঃ কাঁকড়া খাওয়ার উপকারিতা ও পার্শ্বপ্রতিক্রিয়া 

যা, আপরা আর্টিকেলে ইতিপূর্বেই আলোচনা করেছি। আর্টিকেলটি যদি ভালোলাগে এবং উপকারি বলে মনে হয়, তাহলে এটি অন্যের সঙ্গে শেয়ার করবেন। আরো নতুন নতুন তথ্য জানার জন্য আমাদের পরবর্তী আর্টিকেল পড়ুন এবং আমাদের সঙ্গে থাকুন, ধন্যবাদ।

এই পোস্টটি পরিচিতদের সাথে শেয়ার করুন

পূর্বের পোস্ট দেখুন পরবর্তী পোস্ট দেখুন
এই পোস্টে এখনো কেউ মন্তব্য করে নি
মন্তব্য করতে এখানে ক্লিক করুন

এই ওয়েবসাইটের নীতিমালা মেনে কমেন্ট করুন। প্রতিটি কমেন্ট রিভিউ করা হয়।

comment url