নারায়ণগঞ্জ জেলার প্রাচীন ইতিহাস | কিসের জন্য বিখ্যাত নারায়ণগঞ্জ জেলা?
আরো পড়ুনঃ রাঙ্গামাটি জেলার প্রাচীন ইতিহাস | রাঙ্গামাটি জেলা কিসের জন্য বিখ্যাত
বাংলাদেশের
যে কয়েটি গুরুত্বপূর্ণ জেলা রয়েছে তার মধ্যে অন্যতম হলো নারায়ণগঞ্জ জেলা। রাজধানী
ঢাকা থেকে এই জেলার দূরত্ব মাত্র ১৭ কিলোমিটার। যা রাজধানী ঢাকা থেকে সবচেয়ে কাছের
জেলা এটি। আজকের আলোচ্যসূচী নারায়ণগঞ্জ জেলা কিসের জন্য বিখ্যাত।
আর আপনি যদি নারায়ণগঞ্জ বা বাংলাদেশের একজন সচেতন নাগরিক হয়ে থাকেন, তাহলে আপনারাও জানা উচিত নারায়ণগঞ্জ জেলা কিসের জন্য বিখ্যাত এবং পাশাপাশি নারায়নগঞ্জ জেলার ইতিহাস সম্পর্কে। চলুন তাহলে আমরা দেখে নেই এই সকল তথ্য-
নারায়ণগঞ্জ জেলার প্রাচীন ইতিহাস
১৭৬৬ সালে বিকন লাল পান্ডে একজন হিন্দু নেতা ইস্ট
ইন্ডিয়া কোম্পানির কাছ থেকে এই এলাকার মালিকানা গ্রহণ করেন। উক্ত নেতা প্রভু
নারায়ণের ব্যয়ভার বহণ করার জন্য শীতলক্ষ্যা নদীর তীরে অবস্থিত একটি মার্কেটকে একটি
উইলের মাধ্যমে ঘোষণা করেন দেবোত্তর সম্পত্তি হিসাবে।
আর সেই কারণে এই স্থানটির নাম করণ করা হয়
নারায়ণগঞ্জ হিসাবে। ১৮৮২ সালে সৃষ্টি হয় নারায়ণগঞ্জ মহকুমা। এটি ১৯৮৪ সালের
ফেব্রুয়ারি ঢাকা জেলার সাবেক মহকুমা থেকে জেলায় উন্নীত হয়। নারায়ণগঞ্জ এর কালেক্টর
ভবনটি প্রথমদিকে অবস্থিত শহরের মীরজুমলা রোডে।
পরবর্তী সময়ে শহরের বৃদ্ধি এবং জেলার কর্ম পরিধি
ব্যাপক আকার ধারণ করলে জেলা প্রশাসকের কার্যালয়টি নারায়ণগঞ্জ- ঢাকা মহাসড়কের নিকট
চানমারি এলাকায় স্থানান্তর করা হয়। নারায়ণগঞ্জ মূলতা মুহকুমা থেকে জেলায় রূপান্তর
করা হয় ১৯৮৪ সালে।
নারায়ণগঞ্জ জেলার ভৌগোলিক অবস্থান
নারায়ণগঞ্জ জেলা নদী বন্দর হিসাবে বাংলাদেশের
দ্বিতীয় বৃহত্তম। প্রাচ্যের ক্যান্ডি হিসাবে বহুল পরিচিত এই জেলাটি রাজধানী ঢাকা
থেকে মাত্র ১৭ কিলোমিটার দূরে অবস্থিত ঢাকা শহরের উপকন্ঠে ২৩.৩৪ ও ২৪.১৫ অক্ষাংশ
আর দ্রাঘিমাংশ ৯০.২৭ ও ৯০.৫৯ এ অবস্থিত।
এই জেলার পূর্ব দিকে মেঘনা নদী পশ্চিমের কিছু অংশ
দিয়ে বুড়িগঙ্গা নদী এবং দক্ষিণ- পশ্চিমাংশে ধলেশ্বরী নদী প্রবাহিত। জেলার উত্তরে ব্রাক্ষণবাড়িয়া
ও নরসিংদী জেলা, দক্ষিণ দিকে মুন্সিগঞ্জ জেলা, পূর্বে কুমিল্লা জেলা এবং
পশ্চিমদিকে ঢাকা জেলা। আর এই জেলার মাঝ দিয়ে প্রবাহিত হয়েছে শীতলক্ষ্যা নদী।
নারায়ণগঞ্জ জেলার উপজেলার নাম
নারায়ণগঞ্জ জেলা মোট ৫টি থানা ও উপজেলা নিয়ে গঠিত
হয়েছে। নিম্নে এই জেলার উপজেলা বা থানার নামের তালিকা দেখানো হলো। চলুন তাহলে আমরা
দেখে নেই উপজেলা বা থানাগুলোর নামের তালিকা-
- বন্দর উপজেলা।
- রূপগঞ্জ উপজেলা।
- সোনারগাঁ উপজেলা।
- আড়াইহাজার উপজেলা।
- নারায়ণগঞ্জ সদর উপজেলা।
কিসের জন্য বিখ্যাত নারায়ণগঞ্জ জেলা?
বাংলাদেশের সকল জেলাই কোন কোন কারণে বিখ্যাত হয়েছে। আর আজকের আর্টিকেলের মূল বিষয় যেহেতু কিসের জন্য বিখ্যাত নারায়ণগঞ্জ জেলা, তাই আমাদের অবশ্যই জানতে হবে, নারায়ণগঞ্জ জেলা কি কারণে বিখ্যাত সেই সম্পর্কে।
তাহলে দেখে নেওয়া যাক নারায়ণগঞ্জ জেলার বিখ্যাত সব জিনিস। নারায়ণগঞ্জ জেলা প্রাচ্যের ড্যান্ডি হিসাবে পরিচিতি লাভ করেছে, সেখানকার সোনালী আঁশ পাটের জন্য। কিন্তু শুধু সনালী আঁশ পাঠের জন্যই নারায়ণগঞ্জ জেলে বক্যাত নয়।
ঢাকা শহরের সবচেয়ে কাছের জেলা নারায়ণগঞ্জ জেলায় যেমন রয়েছে অনেক বিখ্যাত দর্শনীয় স্থান, বিখ্যাত ব্যক্তি এবং সেই সঙ্গে রয়েছে বিখ্যাত কিছু খাবার। চলুন তাহলে আমরা দেখে নেই নারায়ণগঞ্জ জেলার বিখ্যাত জিনিসগুলো।
নারায়ণগঞ্জ জেলার বিখ্যাত দর্শনীয় স্থান
নারায়ণগঞ্জ জেলা একটি প্রাচীন জেলা হওয়ার কারণে,
সেখানে রয়েছে অনেক প্রাচীন এবং ঐতিহাসিক স্থান। নিম্নে কয়েকটি জনপ্রিয় এবং দর্শনীয়
স্থান সম্পরকে সংক্ষেপে আলোচনা করা হলো। চলুন তাহলে আমরা দেখা নেই-
আরো পড়ুনঃ কক্সবাজার জেলা কিসের জন্য বিখ্যাত
** সোনারগাঁও- সুলতানি সাসনামলে বাংলার রাজধানী ছিল সোনারগাঁও,
যার সমৃদ্ধ ইতিহাস এবং সংস্কৃতির জন্য অনেক পরিচিত। সোনারগাঁও গেলে আপনি দেখতে
পাবেন, পুরনো শহরের ধবংসাবেশ এবং এই এলাকায় থাকা বেশ কিছু জাদুঘর এবং ঐতিহাসিক
স্মৃতিস্তম্ভগুলো।
** সেকেন্দার দুর্গ- ১৬ শতকে আরাকান রাজাদের
আমলে নির্মিত দুর্গটি সেকেন্দার দুর্গ। এই ঐতিহাসিক দুর্গটি নির্মাণ করা হয়েছে একটি
পাহাড়ের চূড়ায়। এখানে গেলে আপনি দেখতে পাবেন, দুর্গের চারপাশে থাকা গ্রামের অপূর্ব
সব দৃশ্য।
** পানাম নগর- প্রাচীন বাঙ্গালীদের ঐতিহ্যবাহী
একটি গ্রামের নাম পানাম নগর, যা বর্তমানে সংরক্ষণ করা হয়েছে জীবন্ত একটি জাদুঘর
হিসাবে। এখানে আপনি দেখতে পাবেন, পুরনো বেশ কিছু দালানসহ একটি জমিদার বাড়ি, একটি
মসজিদ এবং একটি মন্দির।
** কদম রসুল দরগা- কদম রসুল মূলতা একটি
মাজার, যা উৎসর্গ করা হয়েছিল কদম রসুল নামে একজন সুফী সাধককে। সোনারগাঁও শহরে
অবস্থিত এই মাজারটি সারা বাংলাদেশের মুসলমানাদের কাছে অন্যতম একটি জনপ্রিয় স্থান।
** বিবি মরিয়মের সমাধি
এবং মসজিদ-
মুঘল সাসনামলে ১৬ শতকের দিকে নির্মাণ করা হয়, বিবি মরিয়মের সমাধি এবং মসজিদ। মুঘল
সম্রাট আকবরের প্রিয়তমা স্ত্রী বিবি মরিয়মকে উৎসর্গ করে এই ঐতিহাসিক মসজিদটি
নির্মাণ করা হয়েছিল।
** বারদী লোকনাথ আশ্রম- বারদী লোকনাথ আশ্রম মূলত
একটি হিন্দু মঠ, যা উৎসর্গ করা হয়েছিল বাঙ্গালী সাধক লোকনাথকে। সারা বাংলাদেশের
হিন্দুদের অন্যতম জনপ্রিয় একটি তীর্থস্থানটি নারায়ণগঞ্জ শহরে অবস্থিত।
** জিন্দা পার্ক- নারায়ণগঞ্জ জেলা শহরের
প্রাণকেন্দ্র অবস্থিত জনপ্রিয় এই জিন্দা পারকটি। এই পার্কটি নারায়ণগঞ্জ বাসী ছোট-
বড় সকল বয়সের মানুষের কাছে অনেক জনপ্রিয়। এই পার্কে রয়েছে বিভিন্ন ধরণের রাইডস, সে
কারণে এটি বেশি জনপ্রিয় হয়ে উঠেছে।
** হাজীগঞ্জ দুর্গ- হাজীগঞ্জ দুর্গটি মুঘল
সাসনামলে ১৭ শতকের দিকে নির্মাণ করা হয়েছিল। হাজীগঞ্জ ঐতিহাসিক দুর্গটি
নারায়ণপগঞ্জ জেলার মেঘনা নদীর তীরে অবস্থিত। এই দুর্গে গেলে দেখতে পাবেন চারপাশে
থাকা গ্রামের অপরূপ দৃশ্য।
** বাংলার তাজমহল- বাংলার তাজমহল অবস্থিত নারায়ণগঞ্জ জেলার সোনারগাঁও
উপজেলার পেরাব গ্রামে। সেখানে গেলে আপনি অনেকটাই অনুধাবন করতে পারবেন ভারতের
আগ্রার তাজমহল সম্পর্কে। আমাদের বেশিরভাগ মানুষের ভারতে গিয়ে তাজমহল দেখা সম্ভাব
নয়, তাই এটি দেখে তাজমহল দেখার সাধ মেটান।
** বাংলার
পিরামিড- আমরা সকলেই জানি মিশরের পিরামিড সম্পর্কে, কিন্তু যাওয়া সম্ভাব
নয়। তাই আপনি চাইলেলেই নারায়ণগঞ্জ জেলার সোনারগাঁও উপজেলার পেরাব গ্রামে গিয়ে দেখে
আস্তে পারেন বাংলার পিরামিড।
** সাতগ্রাম
জমিদার বাড়ি- এই ঐতিহাসিক জমিদার বাড়িটি নারায়ণগঞ্জ জেলার সাত
গ্রামে অবস্থিত। লোক মুখে শুনাজায় এই জমিদার বাড়িটি নির্মাণ করা হয় ব্রিট্রিশ
শাসনামলে। এই ঐতিহাসিক বাড়িটির নির্মাণ এবং কারুকাজ দেখার জন্য প্রতিদিন পর্যটকেরা
ভিড় জমান।
** কাচপুর
সেতু- বাংলাদেশের দীর্ঘ সেতুর মধ্যে অন্যতম হলো কাচপুর সেতু। এই
সেতুর দীর্ঘ ৩৯৭.৩০ মিটার এবং ১৮.১ মিটার প্রস্থ।
** নীলকুঠি- সোনারগাঁও
উপজেলার পানামে অবস্থিত নীলকুঠি। আপনি যদি নীলকুঠি দেখতে গেলে সেখানকার মনোরোম এবং
সুন্দর দৃশ্য দেখতে পারবেন।
নারায়ণগঞ্জের বিখ্যাত খাবার
বাংলাদেশে প্রাচীন এবং ঐতিহাসিক
জেলা নারায়ণগঞ্জ জেলা হওয়ার কারণে, সেই জেলার স্থানীয় কিছু খাবার রয়েছে, যা
সেখানকার মানুষ থেকে শুরু করে সারা দেশে বেশ জনপ্রিয় এবং বিখ্যাত। চলুন তাহলে আমরা
দেখে নেই-
** নারায়ণগঞ্জের
পিঠা- প্রাচীন কাল থেকে বাঙ্গালীর ইতিহাস এবং ঐতিহ্যের সঙ্গে
অতোপ্রথভাবে জড়িয়ে রয়েছে, বিভিন্ন উৎসব এবং আমেজে পিঠা। বাঙ্গালী ঐতিহ্যের সঙ্গে
তাল মিলিয়ে বাদ পড়েনি নারায়ণগঞ্জ জেলাও। এই জেলায় রয়েছ বিভিন্ন ধরণের পিঠা।
** নারায়ণগঞ্জের
মিস্টি- বাংলার ভোজন প্রিয় মানুষের প্রথম পছন্দের তালিকায় রয়েছে মিস্টি।
আর নারায়ণ গঞ্জে রয়েছে বেশ কিছু মোন ভোলানা মিস্টি। আর নারায়ণগঞ্জের মিস্টি অনেক
সুস্বাদু যা, দেশের বিভিন্ন এলাকার মানুষের কাছে প্রিয়।
** বিরিয়ানি-
নারায়ণগঞ্জের মানুষের অনেক পছন্দের খাবার বিরিয়ানি। আর এই সুস্বাদু বিরিয়ানি পাওয়া
জায়, সেখান কয়ার বিভিন্ন হোটেল এন্ড রেস্টুরন্টে।
** পায়েস- বাংলাদেশের অইতিহ্যবাহী
খাবারের মধ্যে অন্যতম হলো পায়েস। এই জেলার যে কোন আত্মীয়- সজন বিশেষ করে জামাই
আসলে মেহমানদারীতে পায়েস ছাড়া চলবেই না।
যে কারণে নারায়ণগঞ্জ জেলা বিখ্যাত- শেষকথা
বাংলাদেশের জন্য অন্যতম গুরুত্বপূর্ণ জেলা নারায়ণগঞ্জ। এই জেলায় থাকা প্রাচীন এবং ঐতিহাসিক স্থাপনা আজও কালের সাক্ষী জানান দিচ্ছে সেই সময়ের রাজা- জমিদারের শাসনামলের কথা। তাই, আপনি সময় করে ঘুরে আসতে পারেন নারায়ণগঞ্জ থেকে।
প্রিয় পাঠক পাঠিকাগণ, আমরা আশাকরি আপনারা যদি আর্টিকেলটি শুরু থেকে শেষ পর্যন্ত মনোযোগের সঙ্গে পড়ে থাকেন, তাহলে অবশ্যই জেনে গেছেন, "নারায়ণগঞ্জ জেলার প্রাচীন ইতিহাস ও কিসের জন্য নারায়ণগঞ্জ জেলা বিখ্যাত? সেই সম্পর্কে।
আরো পড়ুনঃ কুষ্টিয়া জেলা কিসের জন্য বিখ্যাত
যা আমরা আর্টিকেলে ইতিপূর্বেই আপনাদের সঙ্গে শেয়ার করেছি। আর্টিকেলটি যদি আপনাদের ভালোলাগে এবং উপকারি বলে মনে হয়, তাহলে এটি অন্যের সঙ্গে শেয়ার করবেন। আরো নতুন নতুন তথ্য জানার জন্য আমাদের পরবর্তী আর্টিকেল পড়ুন এবং আমাদের সঙ্গে থাকুন, ধন্যবাদ।
এই ওয়েবসাইটের নীতিমালা মেনে কমেন্ট করুন। প্রতিটি কমেন্ট রিভিউ করা হয়।
comment url