মিষ্টি কুমড়া ও এর বিচির উপকারিতা ও অপকারিতা

আরো পড়ুনঃ কাঁচা কলার উপকারিতা উপকারিতা ও রেসেপি

শীতকালের শবজির মধ্যে অন্যতম হলো মিষ্টি কুমড়া, মিষ্টি কুমড়া খেতে যেমন সুস্বাদু এবং সবাস্থ্যের জন্য খুবই উপকারি। মিষ্টি কুমড়া থাকে ভিটামিন, খনিজ ও অ্যান্টি অক্সিডেন্টে ভরপুর। এটি মানুষের শরীরের পাশাপাসি চোখ, চুল এবং ত্বকের জন্য অত্যান্ত উপকারি।

কিন্তু আমরা অনেকেই জানিনা যে, মিষ্টি কুমড়ার উপকারিতার পাশাপাশি কোন কোন ক্ষেত্রে মিষ্টি কুমড়া খাওয়া নিষেধ সেই সম্পর্কে। তাই, আজিকের আর্টিকেলে আমরা আপনাদের সঙ্গে শেয়ার করবো মিষ্টি কুমড়া সম্পর্কে বিস্তারিত তথ্য। 

আর আপনি যদি মিষ্টি কুমড়া সম্পর্কে জানতে চান, তাহলে আজকের আর্টিকেলটি আপনার কাছে অনেক গুরুত্বপূর্ণ। তাই আর্টিকেলটি শুরু থেকে শেষ পর্যন্ত মনোযোগের সঙ্গে পড়ুন। চলুন তাহলে-

মিষ্টি কুমড়ায় কি কি পুষ্টি উপাদান থাকে?

মিষ্টি কুমড়ায় প্রায় ১৫ থেকে ২০ ধরণের পুষ্টি উপাদান রয়েছে। যেমন, ভিটামিন "এ" ভিটামিন "সি" আমিষ, শর্করা, ফাইবার, চর্বি, শক্তি ছাড়াও, রয়েছে ক্যালসিয়াম, পটাশিয়াম, সোডিয়াম, ফসফরাস, লৌহ, জিঙ্ক ইতাদি।

মিষ্টি কুমড়া খাওয়ার উপকারিতা

মিষ্টি কুমড়ায় রয়েছ বিভিন্ন পুস্টিগুণ, যা মানুষের মাথা থেকে পা পর্যন্ত সমস্ত শরীরের জন্য উপকারি। যেমন, চোখের যত্নে, ওজন কমাতে ক্যান্সার প্রতিরোধ থেকে শুরু করে চুলের ও ত্বকের যত্নে মিষ্টি কুমড়া অনেক কার্যকরী ভুমিকা পালন করে।

নিম্নে মিষ্টি কুমড়ার কয়েকটি বিশেষ বিশেষ উপকারিতা সম্পর্কে সংক্ষেপে আলোচনা করা হলো- চলুন তাহলে আমরা মিষ্টি কুমড়ার উপকারিতা সম্পর্কে জেনে নেই-

** চোখের জন্য উপকারি- মিষ্টি কুমড়ায় রয়েছে প্রচুর পরিমাণে ভিটামিন "এ" যা, চোখের স্বাস্থ্যের জন্য অত্যান্ত গুরুত্বপূর্ণ। বিশেষ করে মিষ্টি কুমড়া মক্যুলা ডিজেনারেশন বা রাতের অন্ধত্ব প্রতিরোধে গুরুত্বপূর্ণ।

** ওজন কমায়- প্রচুর পরিমাণে ফাইবার থাকে মিষ্টি কুমড়ায়, যা দীর্ঘ সময় আপনার পেটকে পূর্ণ রাখে। তাই ঘন ঘন খাবারের প্রয়োজন পড়েনা, এতে ওজন কমাতে সাহায্য করে।

** ডায়াবেটিস নিয়ন্ত্রণে রাখে- মিষ্টি কুমড়ায় রয়েছে ভিটামিন এবং খনিজ পদার্থ। আর এই উপাদান গুলা নিয়ন্ত্রণে রাখে রক্তের শর্করার মাত্রা এবং কমাতে ডায়াবেটিসের ঝুকি।

** রক্তচাপ নিয়ন্ত্রণে সহায়ক- উচ্চ রক্তচাপ নিয়ন্ত্রণে সাহায্য করে পটাশিয়াম এবং ম্যাগনেশিয়াম, যা মিষ্টি কুমড়ায় পাওয়া যায়। তাছাড়া, এটি কিডনি, স্ট্রোক এবং হৃদরোগের ঝুকি কমায়।

** ক্যান্সার প্রতিরোধ করে- অ্যান্টি অক্সিডেন্ট এবং বিটা- ক্যারোটিন এই উপাদান শরীরের কোষকে ক্ষতির হাত থেকে বাঁচায়, আর এই উপদানগুলো পাওয়া যায় মিষ্টি কুমড়ায়। ফলে, মিষ্টি কুমড়া কমিয়ে দেয় বিভিন্ন ক্যান্সারের ঝুকি।

** হজম শক্তি বাড়ায়- মিষ্টি কুমড়ায় পাওয়া যায় ফাইবার, যা হজম শক্তি ভালোরাখার পাশাপাশি পাকস্থলীর স্বাস্থ্য ভালো রাখে। ফলে হজমের সমস্যা সমাধান এবং দূর করে কোষ্ঠকাঠিণ্য।

** বাড়ায় রোগ প্রতিরোধ ক্ষমতা- প্রচুর পরিমাণে ভিটামিন সি রয়েছে মিষ্টি কুমড়ায়। যা, মানুষের শরীরের রোগ প্রতিরোধ ক্ষমতা বাড়ানোর পাশাপাশি রক্ষা করে বিভিন্ন সংক্রমণ থেকে।

** হার্টের জন্য উপকারি-  মিষ্টি কুমড়ায় থাকা পটাশিয়াম নিয়ন্ত্রণে রাখে রক্তচাপ, ফলে হৃদরোগ বা হার্টের ঝুকি অনেক কমে যায়।

মিষ্টি কুমড়ার বিচির উপকারিতা

মানুষের স্বাস্থ্যের জন্য মিষ্টি কুমড়া যেমন অনেক উপকারি, তেমনি এর বিচিও মানুষের শরীরের জন্য অনেক উপকারি। কারণ, মিষ্টি কুমড়া থাকে বিভিন্ন পুষ্টিগুণে ভরপুর। তাই, নিম্নে বর্ণীত উপকার পেতে মিষ্টি কুমড়ার বিচি খাওয়া অনেক জরুরী। চলুন দেখি উপকারিতাগুলো-

আরো পড়ুনঃ কাঁকড়া খাওয়ার উপকারিতা ও পার্শ্বপ্রতিক্রিয়া

** মানসিক স্বাস্থ্য- মিষ্টি কুমড়ার বিচিতে রয়েছে, ট্রিপ্টোফ্যান নামক এক ধরণের অ্যামাইনো অ্যাসিড যা, সাহায্য করে সেরোটোনিন। আর এই উপদানটি ভালো ঘুম এবং মানসিক চাপ কমাতে সাহায্য করে।

** বার্ধক্যজনিত সমস্যা- মিষ্টি কুমড়ার বিচিতে থাকা ভিটামিন "ই" এবং অন্যান্য অ্যান্টি অক্সিডেন্ট মানুষের শরীরকে রক্ষা করে ফ্রি র‍্যাডিক্যালের বিভিন্ন ক্ষতির প্রভাব থেকে। ফলে বার্ধক্যজনিত সমস্যা থেকে রক্ষা করে।

** হার্টের স্বাস্থ্য ভালো রাখে- মিষ্টি কুমড়ার বিচিতে পাওয়া যায়, উন্নতমানের স্বাস্থ্যকর ওমেগা ৩ ফ্যাটি অ্যাসিড আর ম্যানেসিয়াম যা, রক্তচাপ নিয়ন্ত্রণের সঙ্গে সঙ্গে রক্ষা করে হৃদযন্ত্রের স্বাস্থ্য।

** ডায়াবেটিস নিয়ন্ত্রণে রাখে- মিষ্টি কুমডার বিচিতে থাকা গ্লাইকেমিক ইনডেক্স অনেক কম হওয়ার কারণে, এটি সাহায্য করে রক্তের গ্লুকোজ নিয়ন্ত্রণে।

** শক্তিশালি করে ইমিউন সিস্টেম- মিষ্টি কুমড়ায় রয়েছে তস্তা বা জিঙ্ক যা, মজবুত করে ইমিউন সিস্টেম এবং বাড়িয়ে তোলে রোগ প্রতিরোধ ক্ষমতা।

** ওজন কমায়- মিষ্টি কুমড়ার বিচিতে রয়েছে প্রচুর পরিমাণে ফাইবার, যা দীঘ সময় পেট পূর্ণ রাখে এবং ফলে খেতে হয় না, আর এতে ওজন কমতে সাহায্য করে।

** কোলেস্টেরল কমায়- মিষ্টি কুমড়ার বিচিতে রয়েছে স্বাস্থ্যকর ফ্যাট এবং ফাইবার, যা কোলেস্টরল কমানোর পাশাপাশি হৃদযন্ত্র ভালো রাখে।

** হাড় করে শক্তিশালী- ম্যাগনেসিয়াম এবং ফসফরাস হাড়ের গঠন এবং স্বাস্থ্য মজবুত করে। আর এই উপাদানগুলো পাওয়া যায়, মিষ্টি কুমড়ার বিচিতে।

মিষ্টি কুমড়ার বিচি খাওয়ার নিয়ম

মিষ্টি কুমড়ার বিচি ভেজে, কাঁচা এবং বিভিন্ন সালাদে খাওয় যায়। তবে, কোন কিছুই অতিরিক্ত খাওয়া ঠিক নয়, সেই হিসাবে মিষ্টি কুমড়ার বিচিও অতিরিক্ত খাওয়া যাবে না। প্রতিদিন নিয়ম করে ১০/১৫ টি বিচি খোয়া যায়।

আর মিষ্টি কুমড়ার বিচি প্রথমে সংগ্রহ করে পানি দিয়ে পরিস্কার করার পর, ভালোকরে শুকিয়ে নিন। এবার শুকানো বিচি সালাদ, বিস্কুট, স্যুপ, সিরিয়াল, স্মুদি, পাস্তা অথবা রান্না করে এবং মচমচে করে ভেজে বাদামের মত খেতে পারেন।

মিষ্টি কুমড়া খাওয়ার অপকারিতা

মিষ্টি কুমড়ার খাওয়ার প্রচুর পরিমাণে উপকারিতা থাকলেও এর কিছু অপকারিতা বা পার্শ্বপ্রতিক্রিয়া রয়েছে। জদিও, উপকারতার তুলনায় সেটি অনেকটাই কম। বিশেষ করে অতিরিক্ত পরিমাণে খেলে কিছু সমস্যা বা পার্শ্বপ্রতিক্রিয়া দেখা দেয়। চলুন দেখে নেই-

  • মিষ্টি কুমড়া খাওয়ার কারণে অনেকের এলার্জির সমস্যা দেখে দেয়। তাই যাদের মিষ্টি কুমড়ায় এলার্জির আছে তাদের শ্বাসকষ্ট, ত্বক ফোলা, চুলকানি ইত্যাদি সমস্যা দেখা দেয়।
  • মিষ্টি কুমড়ায় রয়েছে প্রচুর পরিমাণে ফাইবার, যা অতিরিক্ত পরমাণে খেলে, পেট ব্যাথা, পেট ফাঁপা বা ডায়রিয়ার সমস্যা দেখে দিতে পারে।
  • ফ্রুক্টোজ নামক একধরণে উপাদান মিষ্টি কুমড়ার বিচিতে রয়েছে। তাই এটি অনেকের পক্ষে হজম করা কঠিন। তাই তাদের বদ হজমসহ গ্যাসের সমস্যা দেখা দিতে পারে।
  • ভিটামিন "এ" এর ভালো উৎস হলো মিষ্টি কুমড়া। আর গর্ভঅবস্থায় মা-বোনদের ভিটামিন "এ" এর বেড়ে গেলে অনাগত সন্তানের সমস্যা হতে পারে।

মিষ্টি কুমড়ার উপকারিতা ও অপকারিতা- শেষকথা

মিষ্টি কুমড়া এবং এর বিচিতে রয়েছে প্রচুর পরিমাণে স্বাস্থ্য উপকারিতা, একথা কারো অস্বীকার করার উপায় নেই। তবে, এর যেহেতু কিছু পার্শ্বপ্রতিক্রিয়া বা অপকারিতা রয়েছে, তাই এটি খাওয়ার ক্ষেত্রে সতর্কতা অবলম্বন করে, নিয়মানুযায়ী খাওয়া উচিত।

প্রিয় পাঠক পাঠিকাগণ, আমরা আশাকরি আপনারা আর্টিকেলটি শুরু থেকে শেষ পর্যন্ত মনোযোগের সঙ্গে পড়েছেন, তাহলে নিশ্চয়ই জেনে গেছেন, "মিষ্টি কুমড়ার উপকারিতা ও অপকারিতা" সম্পর্কে বিস্তারিত সকল প্রকার তথ্য।
যা, আমরা আর্টিকেলে ইতিপূর্বেই আলোচনা করছি। আর্টিকেলটি যদি আপনাদের ভালোলাগে এবং উপকারি বলে মনে হয়, তাহলে এটি অন্যের সঙ্গে শেয়ার করবেন। আরো নতুন নতুন তথ্য জানার জন্য আমাদের পরবর্তী আর্টিকেলটি পড়ুন এবং আমাদের সঙ্গে থাকুন, ধন্যবাদ।

এই পোস্টটি পরিচিতদের সাথে শেয়ার করুন

পূর্বের পোস্ট দেখুন পরবর্তী পোস্ট দেখুন
এই পোস্টে এখনো কেউ মন্তব্য করে নি
মন্তব্য করতে এখানে ক্লিক করুন

এই ওয়েবসাইটের নীতিমালা মেনে কমেন্ট করুন। প্রতিটি কমেন্ট রিভিউ করা হয়।

comment url