সিলেট শহরের জনপ্রিয় দর্শনীয় স্থান
আরো পড়ুনঃ ইতিহাসের সাক্ষী রাণী ভবানীর রাজবাড়ি
শহরের যান্ত্রিক এবং ব্যস্ত জীবিন থেকে অন্তত কয়েকটা দিনের জন্য মুক্তি পেতে সকলেই চায়। আর এর জন্য একটু সময়ের জন্য, ভালো কোন স্থান থেকে ঘুরে আসা প্রয়োজন। তাই আপনি হয়তো ভাবছেন, কোথায় যাওয়া যায় তা নিয়ে।
তাহলে, আপনি কোন চিন্তা না করেই সিদ্ধান্ত নিতে পারেন, সিলেটের প্রাকৃতিক সৌন্দর্য উপভোগ করার জন্য। কারণ, সিলেটে রয়েছে চা বাগান, পাহাড়- নদী, ঝর্ণা, আদিবাসী গ্রামসহ অনেক ঐতিহাসিক এবং প্রাচীন স্থাপনা। যা দেখেলে যে কারো মন সহজেই ভরে উঠে।
আর এই সকল দর্শনীয় স্থানগুলো ভ্রমনে আসেন প্রতিদিন হাজার হাজার দেশি বিদেশি পর্যটক। তাই, আপনিও ব্যবস্থাতা কাটাতে যোগ দিন। আর আপনি ঘুরে আসতে পারেন নিম্নের জনপ্রিয় স্থানগুলো। চলুন তাহলে যেনে নেই স্থানগুলো সম্পর্কে।
সিলেট শহরের জনপ্রিয় দর্শনীয় স্থান
সিলেট শহর গড়ে উঠেছে বিভিন্ন ধর্ম থেকে শুরুকরে ভাষা এবং সংস্কৃতির মিলন মেলায়। গোটা সিলেট শহর এবং এর আনাচে- কানাচে রয়েছে, প্রচুর পরিমাণে প্রাকৃতিক নিদর্শন ছাড়াও ঐতিহাসিক স্থাপনা এবং বিভিন্ন ওলি আওলিয়ার মাজার।
আপনি যদি সিলেটের প্রাচীন ইতিহাস সম্পর্কে জানতে চান, তাহলে আপনাকে জেতে হবে সিলেটের মাটিতে চির নিদ্রায় শয়িত থাকা হযরত শাহ জালাল (রঃ), শাহ পরান (রাঃ) এর মাজার, ওসমানী জাদুঘর, ক্কিন ব্রিজ এবং আলী আমজাদের ঘড়িঘর।
আর সিলেটের প্রাকৃতিক দৃশ্য উপভোগ করার জন্য আপনাকে যেতে হবে, অপরূপ সৌন্দর্যে ভরা লাক্কাতুর চা বাগান, সুরমা নদী এবং শুকরাতা প্রকৃতি নিবাসের মত স্থানগুলো। আমরা নিম্নে সংক্ষিপ্ত ভাবে আলোচনা করছি কয়েকটি স্থান সম্পর্কে। চলুন তাহলে দেখে নেওয়া যাক-
হযরত শাহজালাল (রঃ) এর মাজার সিলেট
ওলকুল শিরোমণি হযরত শাহজালাল (রঃ) সিলেটের মাটিতে শোয়িত আছেন। পূন্যভূমি হিসাবে খ্যাত সিলেট ৩৬০ আউলিয়ার নগরি। পূন্যভূমি সিলেটের মাটিতে যে সকল পীর আওলিয়া শোয়িত রয়েছেন, তাদের মধ্যে অনতম হলেন, হযরত শাহজালাল (রঃ)। তিনি সকল ধর্মের মানুষের প্রিয় পাত্র ছিলেন।
হযরত শাহজালাল (রঃ) মাজার এর পার্শ্বে উত্তর দিকে রয়েছে একটি পুকুর। এই পুকুরে রয়েছে অসংখ্য গজর মাছ। কথিত আছে যে, হযরত শাহজালাল (রঃ) সহ ৩৬০ আউওলিয়া সিলেটে আসার সময় গজর মাছ এনেছিলেন। এই সকল মাছ দর্শনার্থীদের কাছে অনেক প্রিয় এবং তারা মাছেদের খাবার দেন।
হযরত শাহজালাল (রঃ) মাজারের কাছে থাকা একটি কূপে রয়েছে, সোনালী এবং রূপালী রঙের মাছ। মাজারের দক্ষিণ দিকে তারকা খচিত গ্রীলে ঘেরা ২ফুট চোওড়া একটি ঘর রয়েছে। এখানে হযরত শাহজালাল (রঃ) ব্যবহার করতেন চিল্লাখানা হিসাবে।
সিলেট ওসমানি জাদুঘর
জেনারেল আতাউল গনি ওসমানী বাংলাদেশের মহান মুক্তিজুদ্ধের খ্যাতিমান ব্যক্তিত্ব এবং এর আবাস স্থান সিলেটে। এখানে আপনি দেখতে পাবেন, গ্যালারিতে সাজানো ওসমানীর ব্যাক্তিগত বিভিন্ন জিনিসপত্র এবং তার ঐতিহাসিক বিভিন্ন ছবি।
তাছাড়া এই স্মৃতি জাদুঘরে আরো রয়েছে, ব্রিফকেস, আসবাবপত্র, টেলিফোনসহ জামা কাপড় এবং তার ব্যবহারিক অনেক জিনিস। এই ঐতিহাসিক জাদুঘরটি সিলেট ওসমানী বিমানবন্দর থেকে ১২ এবং সিলেট রেল ষ্টেশন থেকে ৩ কিলোমিটার দূরে অবস্থিত।
আলী আমজাদের ঘড়িঘর সিলেট
জমিদার আলী আমজাদ ছিলেন, সিলেটের কুলাউড়ার জমিদার। তার এই ঐতিহাসিক ঘড়িঘরটি সুরমা নদীর চাঁদনী ঘাটে অবস্থিত। তিনি তার নিজের বাসায় বিভিন্ন ঘড়ির সংশালা শুরু করেন, দিল্লির শাহাজাদীর ঘড়ি সংগ্রহ দেখে। তার ঘড়ি ঘরের চুড়ায় রয়েছে ০৯ ফুট লম্বা একটি ঘড়ি।
শাহী ঈদ্গাহ সিলেট
মোঘল আমলে ১৭০০ শতকে মোঘলদের নির্মিত, ঐতিহাসিক এই শাহী ঈদ্গাহটি নির্মাণ করেন ফৌজদার ফরহাদ খাঁ। রাজকীয়ভাবে নির্মাণশৈলীর এই ঈদগাহে একসঙ্গে প্রায় ১ লক্ষ ৫০ হাজার মানুষ নামাজ আদায় করতে পারেন। ১০ গেটের এই ঈদ্গাহের টিলার উপরে অবস্থিত বন কর্মকর্তার বাংলো।
আরো পড়ুনঃ প্রত্নতাত্ত্বিক জাদুঘর মহাস্থানগড় বগুড়া
শুকরাতা প্রকৃতি নিবাস সিলেট
পাহাড়ের চুড়ার উপরে নির্মিত এই নিবাসটি শৈল্পিক স্থাপত্য ভরপুর। শুকতারা প্রকৃতি নিবাসটি সিলেট শহরের প্রাণকেন্দ্র থেকে মাত্র ৭ কিলোমিটার দূরে অবস্থিত। শুকরাতা প্রকৃতি নিবাসে রয়েছে, শিশুদের খেলার বিভিন্ন সামগ্রীসহ বেশ কিছু কটেজ, রেস্তরা এবং লাইব্রেরী।
সিলেটের লাক্কাতুরা চা বাগান
সিলেট জেলার চৌকিঢাকি উপজেলার বিমানবন্দর এর নিকট লাক্কাতুরা চা বাগানটি অবস্থিত। ৩ হাজার ২ শত একরের বিশাল চা বাগানে এটি, এখানে চা বাগান ছাড়াও রয়েছে, আতর ও আগর গাছসহ কমলা, সুপারি এবং ট্যাং এর কাছ। এখানে আপনি হেঁটে হেঁটে সময় কাটাতে পারবেন, পাহাড়ের উচু নিচু স্থানে।
রাতারগুল সোয়াম্প ফরেস্ট সিলেট
একমাত্র মিঠা পানির বন হিসাবে রাতারগুল সোয়াম্প ফরেস্ট বাংলাদেশে বিখ্যাত। ৫ শত ৪ একরের বিশাল জঙ্গলে রয়েছে বিভিন্ন ধরণের দেশি বিদেশি পাখির আবাসস্থাল। তাছাড়া, শীতকালে এখানে আগমন ঘটে বিভিন্ন অতিথি পাখির, যা আরো উপভোগ্য করে তোলে।
শাহ পরাণের (রঃ) মাজার
বিখ্যাত সুফী সাধক এবং ধর্ম প্রচারক হযরত শাহজালাল (রাঃ) এর ভাগনে হযরত শাহ পরাণ (রাঃ)। এই মাজার শরীফটি সিলেট শহর পূর্বদিকে মাত্র ১০ কিলোমিটার দূরে খাদিম পাড়ার বটগাছের ছায়ায় অবস্থিত। এই মাজারটি একটি টিলার উপর অবস্থিত, আর মাজারে উঠানামা করার জন্য রয়েছে সিড়ি। সেখানে ৫ শত মানুষ ধারণ খমতার একটি সুন্দর মসজিদ রয়েছে।
ক্কিন ব্রিজ সিলেট
ব্রিটিশ শাসকেরা এই ব্রিজটি ১৯৩৬ সালে নির্মাণ করেন। লম্বায় প্রায় ১১৫০ ফুটের এই ব্রিজটি অবস্থিত, সিলেটের সুরমা নদীর উপর। ১৯৭১ সালের স্বাধীনতা যুদ্ধের সময় ব্রিজের কিছু অংশ ক্ষতিগ্রস্থ হলে, সেটি সংস্কার করেন আশির দশকে। এই ব্রিজকে বলা হয় সিলেটের প্রবেশ দ্বার।
সিলেটের দর্শনীয় স্থান- শেষকথা
সিলেটে রয়েছে অনেক দর্শনীয় স্থান। আপনি চাইলে ঢাকা বা দেশের যে কোন স্থানে থেকে, খুব সহজেই এই সকল স্থানগুলো, একটু সময় করে ঘুরে আসতে পারেন। আপনি আপনার মনের প্রশান্তির জন্য, দেশের বিভিন্ন স্থান ভ্রমন করুন।
প্রিয় পাঠক পাঠিকাগণ, আমরা আশাকরি আপনারা যদি আর্টিকেলটি শুরু থেকে শেষ পর্যন্ত পড়ে থাকেন, তাহলে নিশ্চয়ই যেনে গেছেন, "সিলেট শহরের জনপ্রিয় দর্শনীয় স্থান" সম্পর্কে অনেক তথ্য। যা আমরা ইতিপূর্বেই আর্টিকেলে আলোচনা করেছি।
আরো পড়ুনঃ প্রত্নতাত্ত্বিক স্থাপনা মহস্থানগড় বগুড়া । বগুড়ার জনপ্রিয় দর্শনীয় স্থান
আশাকরি আর্টিকেলটি আপনাদের অনেক উপকারে আসবে। আর্টিকেলটি যদি ভালোলাগে এবং উপকারি বলে মনে হয়, তাহলে এটি অন্যের সঙ্গে শেয়ার করবেন। আরো নতুন নতুন তথ্য জানার জন্য আমাদের পরবর্তী আর্টিকেল পড়ুন এবং আমাদের সঙ্গে থাকুন, ধন্যবাদ।
এই ওয়েবসাইটের নীতিমালা মেনে কমেন্ট করুন। প্রতিটি কমেন্ট রিভিউ করা হয়।
comment url