কাঁকড়া খাওয়ার উপকারিতা ও পার্শ্বপ্রতিক্রিয়া
আরো পড়ুনঃ চিয়া সিড খাওয়ার স্বাস্থ্য উপকারিতা
ভোজন প্রিয় বাংলীরা তাদের খাদ্য তালিকায় যে সকল রাখেন, তার মধ্যে অন্যতম হলো কাঁকড়া। জিভে যেন, জল চলে আসে কাকড়ার নাম শুনলেই। কাঁকড়ায় রয়েছে ওমেগা-৩ ফ্যাটি অ্যাসিড, ভিটামিন বি, সেলেনিয়াম, রিবোফ্লোবিন, নিয়াসিন, ক্যালসিয়াম, ম্যাগনেসিয়াম, আয়রন ও ফসফরাস।
তাছাড়া, প্রোটিনের অন্যতম একটি বড় উৎস কাঁকড়া। কাঁকড়া অ্যালজাইমারস কার্ডিওভাসকুলার ডিজিজ, আরথাইটিস, ওবেসিটি ইত্যাদি বিভিন্ন ধরণের রোগ প্রতিরোধ এবং প্রতিকারে অনেক সাহায্য করে।
কাঁকড়া বিভিন্ন রোগ প্রতিরোধ করা ছাড়াও, বিভিন্ন চিকিৎসার প্রয়োজনে কাঁকড়া খাদ্য তালিকায় যোগ করা যায়, বিশেষজ্ঞদের পরামর্শে। আর আজকের আর্টিকেলে আমরা আপনাদের সঙ্গে শেয়ার করবো "কাঁকড়া খাওয়ার উপকারিতা ও পার্শ্বপ্রতিক্রিয়া '' সহ বিভিন্ন বিষয়ে। চলুন দেখে নেওয়া যাক-
আজকের পাঠ্যক্রম- কাঁকড়া খাওয়ার উপকারিতা ও পার্শ্বপ্রতিক্রিয়া
- কাঁকড়ার মাংসে থাকা পুষ্টিগুণ
- কাঁকড়া খাওয়ার স্বাস্থ্য উপকারিতা
- কাঁকড়া খাওয়ার পার্শ্বপ্রতিক্রিয়া
- ইসলামে কাঁকড়া খাওয়া কি হালাল?
- কাঁকড়া খাওয়ার অপকারিতা- শেষকথা
কাঁকড়ার মাংসে থাকা পুষ্টিগুণ
পুষ্টিগুণে ভরপুর, প্রতি ১০০ গ্রাম কাঁকড়ার মাংসে যে পরিমাণ পুষ্টি উপাদান রয়েছে তা, নিম্নের টেবিলের মাধ্যমে দেখানো হলো-
কাঁকড়া খাওয়ার স্বাস্থ্য উপকারিতা
কাঁকড়ায় যেমন রয়েছে বিভিন্ন ধরণের পুষ্টিগুণ ও স্বাস্থ্য উপকারিতা তেমনি খেতেও অনেক সুস্বাদু। চলুন আমরা নিম্নের আলোচনা থেকে জেনে নেই, কাঁকড়া খাওয়ার বিভিন্ন স্বাস্থ্য উপকারিতা সম্পর্কে বিস্তারিতভাবে তথ্য-
** ভরপুর প্রোটিন- প্রচুর প্রোটিন রয়েছে কাঁকড়ায়। কারণ অন্যান্য মাংসে যে পরিমাণ প্রোটিন পাওয়া যায় কাঁকড়ার মাংসেও সে পরিমাণ প্রোটিন রয়েছে। কিন্তু অন্য মাংসে চর্বি থাকে বলে, হার্টের রোগীর জন্য ক্ষতিকর।
তবে, কাঁকড়ার মাংসে চর্বির পরিমাণ খুবই কম। তাই এই মাংস সব বয়সের মানুষ সহজে হজম করতে পারে।
** মানসিক ক্রিয়াকলাপ- কাঁকড়া ভিটামিন বি২, কপার, সেলেনিয়াম এবং সমৃদ্ধ থাকে ওমেগা-৩ ফ্যাটি অ্যাসিডে। মস্তিস্কের জন্য দুর্দান্ত এই খনিজগুলো এবং সামগ্রীক কার্যকারিতা উন্নত করে স্নায়ুতন্ত্রের।
**রোগ প্রতিরোধ ক্ষমতা বৃদ্ধি- কাঁকড়ার মাংস উল্লেখযোগ্যভাবে দেহে অ্যান্টি অক্সিডেন্টের উতপাদন বাড়িয়ে তুলতে পারে। তাছাড়া এতে রয়েছে, সেলেনিয়াম যা বিভিন্ন রোগ থেকে মুক্তি পাওয়ার জন্য দারুনভাবে উপকারি।
আর এই সকল কারণে ঝুকি কমে দীর্ঘস্থায়ী রোগ হওয়ার। তাই, মাঝে মধ্যেই আমাদের প্রতিদিনের খাদ্য তালিকায় অন্তর্ভুক্ত করা উচিত কাঁকড়ার মাংস।
আরো পড়ুনঃ যে কারণে বাঁধাকপি বেশি করে খাবেন
** হার্ট করে শক্তিশালী- কাঁকড়ার নিয়মিতভাবে খাওয়ার সবচেয়ে বড় উপকারিতা হলো, এটি সুরক্ষা প্রদান করে হার্টকে। যদিও কাঁকড়ার মাংস খাওয়ার কারণে, বাড়তে পারে কোলেস্টেরলের মাত্র। তবে, কাঁকড়ায় ওমেগা ৩ ফ্যাটি অ্যাসিড বেশি থাকার কারণে, এটি ভারসাম্যপূর্ণ হতে পারে।
তাছাড়া, কাঁকড়ার মাংস বজায় রাখে রক্তে কোলেস্টেরলের মাত্রার ভারসাম্যকে এবং হ্রাস করে শরীরের প্রদাহ। যা চাপ কমিয়ে প্রতিরোধ করে হার্টের সমস্যা। ফলে হ্রাস করে হার্ট অ্যাটাক এবং স্ট্রোকের ঝুকি।
** রক্ত সঞ্চালন- আমাদের সুস্থ্য থাকার অন্যতম প্রধান চাবিকাটি হলো, রক্ত সঞ্চালন সঠিক রাখা, বিশেষ করে মস্তিস্ক এবং হার্টের মতো গুরুত্বপূর্ণ অঙ্গগুলির জন্য। আর কাঁকড়া সাহায্য করে দেহে রক্ত চলাচল উন্নত করতে।
কাঁকড়া মসৃণ রক্ত সঞ্চালন ছাড়াও, ভুকিকা রাখে শরীরে অক্সিজেন বিস্তার নিয়ন্ত্রণে। তাছাড়া কাঁকড়ার মাংস তৈরি করে লোহিত কণিকা এবং সাহায্য করে ক্লান্তি রোধে।
** রিবোফ্লাভিন সমৃদ্ধ- প্রচুর পরিমাণে রিবোফ্লাভিন রয়েছে কাঁকড়ার মাংসে। চোখ, ত্বক ও স্নায়ুর জন্য রিবোফ্লাভিন খুবই গুরুত্বপূর্ণ। রিবোফ্লাভিন শরীরে লোহিত কণিকা তৈরিতে বিশেষ ভূমিকা পালন করে। তাই যারা বেশি পরিশ্রম করেন, তাদের জন্য কাঁকড়ার মাংস হতে পারে রিবোফ্লাভিনের উৎস।
** মজবুত হাড় গঠন- হাড়ের স্বাস্থ্যের জন্য ক্যালসিয়াম অত্যান্ত গুরুত্বপূর্ণ। হাড়ের স্বাস্থ্যের জন্য দ্বিতীয় গুরুত্বপূর্ণ ফসফরাস। আর প্রচুর পরিমাণে ফসফরাস রয়েছে কাঁকড়াতে। যা, অত্যান্ত গুরুত্বপূর্ণ, হাড় এবং দাতের স্বাস্থ্যের জন্য। তাই, দাড় সুস্থ্য এবং শক্তি বজায় রাখার জন্য কাঁকড়া খেতে পারেন।
কাঁকড়া খাওয়ার পার্শ্বপ্রতিক্রিয়া
প্রতিটি উপকারি খাবারের পিছনে কিছু অপকারিতা বা পার্শ্বপ্রতিক্রিয়া থাকাই কিন্তু স্বাভাবিক। আর কাঁকড়া খাওয়ার খেত্রেও কিছু পার্শ্বপ্রতিক্রিয়া দেখা দিতে পারে। চলুন দেখে নেওয়া যাক পার্শ্বপ্রতিক্রিয়া বা সতর্কতাগুলো-
- জটিল কোন রোগে আপনি যদি আক্রান্ত থাকেন বা নিয়মিত ওসুধ সেবন করেন, তাহলে চিকিৎসকের পরামর্শ ক্রমে কাঁকড়া খাওয়া উচিৎ।
- কাঁকড়া খাওয়ার কারণে, অনেকের অ্যালার্জি সমস্যা হয়। তাই যাদের কাঁকড়াতে অ্যালার্জি আছে, তারা কাঁকড়া খাওয়া থেকে বিরত থাকুন।
- যারা কোলেস্টেরলের ঝুকির মধ্যে রয়েছেন এবং কিডনী সমস্যায় ভুগছেন, তাদের কাঁকড়া খাওয়া থেকে বিরত থাকা উচিৎ।
ইসলামে কাঁকড়া খাওয়া কি হালাল?
** জেহেতু মহানবী (সাঃ) হাদিসের মধ্যে বলেছেন, নদী বা সমুদ্রের যেই সকল মৃত প্রাণী রয়েছে, সেগুলো সবটাই হালাল। আর এই সকল প্রাণীর মধ্যে কাঁকড়া পড়ে, তাই কাঁকড়া খাওয়া হালাল হবে। যা হাদিস দ্বারা স্পষ্ট বোঝা যায়।
** তবে, আলেমদের মধ্যে একটু বিতর্ক রয়েছে, এই মাসয়ালাটি নিয়ে। যদি কেউ খেতে চান, সে খেতে পারেন। কারণ এটি রুচির ব্যপার। জোর করে আপনি যদি খাওয়াত চান, তাহলে সমস্যা হতে পারে তার।
কাঁকড়া খাওয়ার অপকারিতা- শেষকথা
কাঁকড়া খাওয়ার অপকারিতা সম্পর্কে এখনো তেমন কোন ধারণা নেই। কারণ, এটি বাংলাদেশের মানুষ কেবল খাওয়া শুরু করেছে, যদিও এটি খাওয়া হালাল না হারাম তা নিয়ে বিভিন্ন মতামত রয়েছে। তবে, কাঁকড়া একটি প্রোটিনযুক্ত এবং সুস্বাদু খাবার, যা স্বাস্থ্যের জন্য অনেক উপকারি।
প্রিয় পাঠক পাঠিকাগণ, আমরা আশাকরি আপনারা যদি আর্টিকেলটি শুরু থেকে শেষ পর্যন্ত পড়ে থাকেন, তাহলে নিশ্চয়ই জেনে গেছেন "কাঁকড়া খাওয়ার উপকারিতা ও পার্শ্বপ্রতিক্রিয়া'' সম্পর্কে অনেক অজানা তথ্য।
আরো পড়ুনঃ ইসবগুলের ভুসি যে কারণে নিয়মিতি খাবেন
যা আমরা আর্টিকেলে ইতিপূর্বেই আলোচনা করেছি। আর্টিকেলটি যদি আপনাদের ভালোলাগে ও উপকারে আসে, তাহলে এটি অন্যের সঙ্গে শেয়ার করতে ভুলবেন না। আরো নতুন নতুন তথ্য জানার জন্য আমাদের পরবর্তী আর্টিকেল পড়ুন এবং আমাদের সঙ্গে থাকুন। ধন্যবাদ।
এই ওয়েবসাইটের নীতিমালা মেনে কমেন্ট করুন। প্রতিটি কমেন্ট রিভিউ করা হয়।
comment url