ইতিহাসের সাক্ষী রাণী ভবানীর রাজবাড়ি
আরো পড়ুনঃ প্রত্নতাত্ত্বিক জাদুঘর মহাস্থানগড় বগুড়া
কবি জীবননান্দ দাশের নাটোরের বনলতা সেনকে সারাদেশ বিশেষ করে রাজশাহী বিভাগের মানুষের কাছে খুব ভালোভাবে পরিচিত। এইরূপ নাটোর তার প্রাচীন ইতিহাস, ঐতিহ্যের জৌলুস, সুদূর অতীতের রাজা রাণী কিংবা জমিদারদের স্মৃতি এর প্রাচীন সব সোনালী দিনগুলোকে আজো বুকে ধারণ করে কালের সাক্ষী হয়ে দাঁড়িয়ে আছে অনেক প্রত্নতত্ব নিদর্শন।
এরমধ্যে অন্যতম রাণী ভবানীর রাজবাড়ি, দিঘাপতিয়া রাজবাড়ি, দয়ারামপুর রাজবাড়ি, বোর্ণী মারীয়াবাদ ধর্মপল্লী, লুরদের রাণী মা মারিয়া ধর্মপল্লী বর্তমান পর্যটকদের কাছে বেশ জনপ্রিয় হওয়ায়, সেখানে প্রতিনিয়ত ভীড় জমাচ্ছেন তাঁরা।
তবে, এর মধ্যে জনপ্রিয় শীর্ষে রয়েছে, রানী ভবানির রাজবাড়ি নাটোর। আজকের আর্টিকেলে আমরা আপনাদের সঙ্গে শেয়ার করবো বাংলার প্রাচীন ইতিহাসের সাক্ষী এই রাজবাড়ি সম্পর্কে বিস্তারিত তথ্য। চলুন তাহলে আমরা দেখে নেই রাজবাড়ি সম্পর্ক-
আজকের পাঠ্যক্রম- ইতিহাসের সাক্ষী রাণী ভবানীর রাজবাড়ি
- রানী ভবানীর রাজবাড়ির কোথায় অবস্থিত
- রানী ভবানীর রাজবাড়ির ইতিহাস
- কত সালে রাণী ভবানীর রাজা হিসাবে অধিষ্ঠিত হন?
- রাণী ভবানী রাজবাড়ি নির্মাণ
- রাণী ভবানীর রাজবাড়ি একদিনের ছুটিতে ঘুরে আসুন
- রাণী ভিবানী রাজবাড়ির বর্ণনা
- রাণী ভবানী রাজবাড়ি যুবপার্ক
- রাণী ভবানী রাজবাড়ি ভ্রমনের সময়সূচী
- কিভাবে যাবেন রাণী ভবানী রাজবাড়ি
- রাণী ভবানী রাজবাড়ি কোথায় থাকবেন
- রাণী ভবানী রাজবাড়ি কোথায় খাবেন
- নাটোরের রাজবাড়ি- শেষকথা
রানী ভবানীর রাজবাড়ির কোথায় অবস্থিত
বাংলাদেশের রাজশাহী বিভাগের সবচেয়ে কাছের জেলা নাটোর জেলা সদরে অবস্থিত, ইতিহাসের সাক্ষী রাণী ভবানীর রাজবাড়ি। এই রাজবাড়িটি নাটোরের ইতিহ্যবাহী রাজবংশের শেষ একটি স্মৃতিচিহ্ন।
রানী ভবানীর রাজবাড়ির ইতিহাস
নাটোরের এই ঐতিহাসিক রাজ বংশের গোড়া পত্তন হয় অষ্টদশ শতাব্দীর দিকে। জমিদার ভবানী চরণ চৌধুরী এবং জমিদার গণেশ রায় ১৭০৬ সালে পরগণা বানগাছির রাজস্ব প্রদানে ব্যর্থ হলে তাঁরা চাকুরিচ্যুতি হলে, দেওয়ান রঘুনন্দন সেই জমিদারিটি বন্দোবস্ত নেন তার ভাইয়ের নামে। আর এভাবেই গোড়া পত্তন শুরু হয় নাটোরের ঐতিহাসিক এই রাজ বংশের।
এই রাজ বংশের প্রথম রাজা হিসাবে রাজা রাম জীবন ১৭০৬ বা ১৭১০ সালে প্রতিষ্ঠা লাভ করেন। ১৭৩০ সালে রাজা জীবনের দত্তক পুত্র রামকান্তের সঙ্গে রাণী ভবানীর বিয়ে হয়। রাজা রাম জীবন ১৭৩৪ সালে মৃত্যু বরণ করলে, তার দত্তক পুত্র রামকান্ত রাজা হিসাবে অধিষ্ঠিত হন।
কত সালে রাণী ভবানীর রাজা হিসাবে অধিষ্ঠিত হন?
রাজা রামকান্ত ১৭৪৮ সালে মৃত্যু বরণ করলে নবাব আলীবর্দি খাঁ, জমিদারি পরিচালনার দায়িত্ব রানী ভবানীর উপর অর্পণ করেন। রাণী ভবানী তার রাজত্বকালে জমিদারি এলাকা বৃদ্ধি করেন, বর্তমান রাজশাহী, বগুড়া, পাবনা, রংপুর, কুস্টিয়া, যশোর, পশ্চিমবঙ্গের মুর্শিদাবাদ, মালদহ এবং বীরভূম জেলা পর্যন্ত।
রাণী ভবানী রাজবাড়ি নির্মাণ
বিশাল জমিদারির রাজধানী তাঁর নিজের জন্মভূমিতে স্থাপন করার জন্য ততকালীন সময়ে ভাতঝাড়ার বিলকে রাম জীবন, রঘুনাথ এবং পন্ডিতগণ নির্বাচন করেন। আর পুঠিয়ার রাজা দর্পনারায়ণের সম্পত্তি ছিল ভাতঝাড়ার বিল। এই জন্য রাম জীবন এবং রঘু নন্দন রাজা দর্পণের নিকট বায়তী স্বত্বে বিলটি পত্তনীর জন্য আবেদন করেন।
রাজা রামজীবন বিলে চৌকি, পুকুর এবং দীঘি খনন করার মাধ্যমে সমতল করেন এবং স্থাপন করেন রাজবাড়ি। তখন এলাকাটির নতুন নাম করণ করা হয় নাট্যপুর। এভাবেই রাণী ভবানীর রাজবাটি ১৭০৬- ১৭১০ সালে নির্মাণ করা হয়েছিল। রঘুনন্দন থাকতেন মুর্শিদাবাদের বড় নগরে।
রাণী ভবানীর রাজবাড়ি একদিনের ছুটিতে ঘুরে আসুন
আপনার ভ্রমন যদি হয় একদিনের, তবে আপনার ভ্রমণের জন্য উপযুক্ত স্থান হতে পারে রাণী ভবানীর রাজবাড়ি। এই রাজবাড়িটি নাটোর জেলা অবস্থিত অপূর্ব সুন্দর একটি স্থাপত্য শৈলী। যা দেখলে যে কারো মন ভরে যায়। তাইতো এটি সকল পর্যটকদের আকর্ষণের মূল কেন্দ্রবিন্দু।
রানী ভবানী রাজবাড়িটি বর্তমানে স্থানীয় কার্যালয় এবং ব্যবহৃত হচ্ছে বাসভবন হিসাবে। তাই এই রাজবাড়ি পরিদর্শন করতে চাইলে, আপনাকে জেলা প্রশাসনের অনুমতি নিতে হবে। এই রাজবাড়ির চার তলা ভবনের প্রবেশ দ্বারে রয়েছে, বিখ্যাত কোক এবং টেলভি কোম্পানীর একটি ঘড়ি।
আরো পড়ুনঃ প্রত্নতাত্ত্বিক স্থাপনা মহস্থানগড় বগুড়া । বগুড়ার জনপ্রিয় দর্শনীয় স্থান
প্রাসাদের ভেতরে দেখতে পাওয়া যায়, রাজার সিংহাসন এবং ঢাল তলোয়ার। মনোরম গাছগাছালি দিয়ে রাজপ্রাসাদের বাইরের দিক সুসজ্জিত রয়েছে। তাছাড়া রাজপ্রাসাদের পুরো এলাকাজুড়ে দেখতে পাবেন, রাজা প্রসন্ননাথের আবক্ষ মূর্তি, দয়ারামের মূর্তি, কুমার ভবন, অতিথিশালা এবং কামান।
আপনি সারাদিন রাজবাড়ি ঘুরে দেখার পাশাপাশি আরো দর্শনীয় স্থান দেখতে এবং খেয়ে দেখতে পাবেন নাটোরের বিখ্যাত খাবার। তাছাড়াও, নাটোরের বিখ্যাত কাঁচাগোল্লা এবং চলন বিলের টাটকা মাছ, যা খাওয়ার পাশাপাশি সঙ্গে নিতে পারবেন। সব মিলিয়ে ছুটির একদিন কাটবে চমৎকার।
রাণী ভিবানী রাজবাড়ির বর্ণনা
রাণী ভিবানীর রাজবাড়ি্টি নির্মাণ করা হয়েছে ১২০ একর জমির উপর। রাজবাড়িতে ছোট বড় সব মিলিয়ে ভবন রয়েছে ৮টি। সেখানে রয়েছে ৫টি ছোট পুকুর এবং ২টি দীঘি বা বড় পুকুর। দুই স্তরের বেড়াচৌকির বেষ্টনী দ্বারা রয়েছে রাজবাড়িটি ঘেরাও।
রাণী ভবানী রাজবাড়ির পুরো এলাকাকে ছোট এবং বড় তরফ নামে দুইটি ভাগে বিভিক্ত করা হয়েছে। রাজবাড়িতে রয়েছে বেশ কয়েকটি মন্দির। তার মধ্যে উল্লেখযোগ্য মন্দির হলো- আনন্দময়ী কালিবাড়ি মন্দির, শ্যামসুন্দর মন্দির, তারকেশ্বর শিব মন্দির ইত্যাদি।
রাণী ভবানী রাজবাড়ি যুবপার্ক
বর্তমানে ইতিহাসের সাক্ষী রাণী ভবানীর রাজবাড়ির পুরো এলাকাটি ১৯৮৬ সালে রাণী ভবানী কেন্দ্রীয় উদ্যান বা রাণী ভবানী রাজবাড়ি যুবপার্ক হিসাবে ঘোষণা করা হয় এবং এখন পরিচালিত হচ্ছে নাটোর জেলা প্রশাসনের নিয়ন্ত্রণে।
রাণী ভবানী রাজবাড়ি ভ্রমনের সময়সূচী
রাণী ভবানী রাজবাড়িটি দর্শনার্থীদের জন্য খোলা থাকে প্রতিদিন সকাল ৯ টা থেকে বৈকাল ৬ টা পর্যন্ত এবং রবিবার সপ্তাহীক ছুটি প্রতি রবিবার এবং সরকারী ছুটির দিন বন্ধ থাকে। এই রাজবাড়ি প্রবেশের জন্য জনপ্রতি ১০ টাকা প্রবেশ মূল্য পরিশোধ করে প্রবেশ করতে হয়।
কিভাবে যাবেন রাণী ভবানী রাজবাড়ি
দেশের যে কোন স্থান থেকে সড়ক পথে, ট্রেনযোগে এবং আপনি চাইলে বিমানযোগেও খুব সহজে নাটোর যেতে পারবেন। বাসযোগে ঢাকা থেকে রাজশাহীগামী বা নাটোরগামী শ্যামলী পরিবহণ, হানিফ এন্টারপ্রাইজ, দেশ ট্রাভেলস, ন্যাশনাল ট্রাভেলস ইত্যাদি অনেক বাস নিয়মিত চলাচল করে।
আর ঢাকা থেকে এই সকল বাসের ভাড়া জনপ্রতি বাসের প্রকার ভেদে নন এসি ৬০০ টাকা থেকে ৮০০ টাকা এবং এসি বাস প্রকারভেদে ৯০০ টাকা থেকে ১২০০ টাকা লাগবে।
রাণী ভবানী রাজবাড়ি কোথায় থাকবেন
রাণী ভবানী রাজবাড়ি ঢাকা থেকে ভ্রমনে এসে আপনি চাইলে সকালে এসে রাতে ফিরে যেতে পারবেন। কারণ নাটোর থেকে ঢাকা যাওয়ার জন্য রাত ১১ টা পর্যন্ত বাস পাওয়া যায়। আর আপনি নাটোরে রাত্রি যাপন করতে চাইলে, সেখানে অনেক ধরণের আবাসিক হোটেল রয়েছে, সেখানে জনপ্রতি ৩০০ টাকা থেকে ২০০০ টাকা ভাড়া লাগবে।
রাণী ভবানী রাজবাড়ি কোথায় খাবেন
রাণী ভবানী রাজবাড়ি ঢাকা অন্য কোথাও থেকে ভ্রমনে এসে, আপনি নাটোর জেলা শহরে অনেক ভালো মানের খাবারের হোটেল রয়েছে সেখানে খেতে পারবেন। সেখানে আপনি চলন বিলের টাটকা মাছ সহ বিভিন্ন ধরণের তরকারী দিয়ে খাওয়ার কাজ সেরে নিতে পারবেন।
তবে নাটোর ভ্রমনে আসলে নাটোরের কাচাগোল্ল নিজে খাবেন এবং পরিবারের জন্য নিয়ে যেতে কখনো ভুলবেন না কিন্তু।
নাটোরের রাজবাড়ি- শেষকথা
বাংলাদেশের আনাচে কানাচে নাটোরের রাজবাড়ির মতো, হাজার হাজার প্রাচীন দর্শনিয় স্থান রয়েছে। যার বেশির ভাগ অযত্ন আর অবহেলায় ধবংসের দারপ্রান্তে আবার কিছু কিছু ধ্বংস হয়ে শুধু ইতিহাসের সাক্ষী হয়ে আছে। তাই আমাদের সকলের উচিত এই স্থাপনার প্রতি সংশ্লিষ্ট কর্তৃপক্ষের পাশাপাশি আমাদেরকেও যত্ন নেওয়া।
প্রিয় পাঠক পাঠিকাগন আমরা আশাকরি আপনারা যদি আজকের এই আর্টিকেলটি শুরু থেকে শেষ পর্যন্ত মনোযোগের সঙ্গে পড়ে থাকেন, তাহলে নিশ্চয়ই জেনে গেছেন "ইতিহাসের সাক্ষী রাণী ভবানীর রাজবাড়ি'' সম্পর্কে অনেক তথ্য।
আরো পড়ুনঃ নওগাঁর দর্শনীয় স্থান পাহাড়পুর বৌদ্ধ বিহার
যা আপনাদের অনেক উপকারে আসবে বলে আমরা আশাবাদী। আর্টিকেলটি যদি আপনাদের ভালো লাগে ও উপকারি বলে মনে হয়, তাহলে অবশ্যই অন্যের সঙ্গে শেয়ার করবেন। আরো নতুন নতুন তথ্য জানার জন্য আমাদের পরবর্তী আর্টিকেলটি পড়ুন এবং আমাদের সঙ্গে থাকুন। ধন্যবাদ।
এই ওয়েবসাইটের নীতিমালা মেনে কমেন্ট করুন। প্রতিটি কমেন্ট রিভিউ করা হয়।
comment url