জাপান ওয়ার্ক পারমিট ভিসা পাওয়ার উপায়
আরো পড়ুনঃ লন্ডনে ওয়ার্ক পারমিট ভিসা ২০২৪
জাপানের উন্নত জীবন যাত্রার মান, বেশি আয়ের সুযোগ এবং সেই দেশে স্থায়ীভাবে বসবাসের ভিসা পাওয়ার সুযোগ থাকার কারণে, বাংলাদেশসহ বিশ্বের বিভিন্ন দেশের মানুষ সেখানে ওয়ার্ক পারমিট ভিসা পেতে অনেক আগ্রহী।
কারণ, জাপান বিশ্বের অন্যতম বৃহত্তম অর্থনীতি, ব্যবসা বাণিজ্য এবং নিজের ক্যারিয়ার গড়ার চমৎকার একটি স্থান জাপান। যদিও, জাপান অনেক প্রকারের ভিসা দিয়ে থাকে, কিন্তু বেশিরভাগ মানুষ ওয়ার্ক পারমিট ভিসা পেতে চান।
তবে, জাপানে ওয়ার্ক পারমিট ভিসা পাওয়ার ক্ষেত্রে, আপনাকে নির্দিষ্ট কিছু উপায় অনুসরণ করতে হয়। তাই, আজকের আর্টিকেলে আমরা আপনাদের সঙ্গে শেয়ার করবো "জাপান ওয়ার্ক পারমিট ভিসা পাওয়ার উপায়"সহ বিভিন্ন তথ্য। চলুন দেখি-
আজকের পাঠ্যক্রম- জাপান ওয়ার্ক পারমিট ভিসা পাওয়ার উপায়
- জাপান ওয়ার্ক পারমিট ভিসা প্রয়োজন কেন?
- জাপানে কাজের ভিসা কয় প্রকার?
- জাপানে কাজের ভিসার জন্য কি যোগ্যতা লাগে?
- জাপানে কাজের ভিসার জন্য কি কাগজ লাগে?
- জাপান ওয়ার্ক পারমিট ভিসা আবেদন কিভাবে করব?
- জাপানে ওয়ার্ক পারমিট ভিসা পেতে কতদিন লাগে?
- জাপানে কাজের ভিসা আবেদন খরচ কত?
- জাপানে কোন কাজের চাহিদা বর্তমানে বেশি?
- বর্তমানে জাপানে কাজের সর্বনিম্ন বেতন কত?
- জাপানে কোন কাজের বেতন কত টাকা?
- জাপানে ফ্যাক্টরীর কাজ কেমন ধরণের?
- জাপানে যে ৪ কাজের বেতন সবচেয়ে বেশি
- জাপানে কাজের ভিসা- শেষকথা
জাপান ওয়ার্ক পারমিট ভিসা প্রয়োজন কেন?
জাপান ওয়ার্ক পারমিট ভিসার মাধ্যমে গেলা, জাপান আপনাকে সেখানে বৈধভাবে কাজ করার জন্য অনুমতি প্রদান করবে। জাপার তার কর্মীদের আবাসন সুবিধা, সামাজিক বীমা এবং প্রদান করে পরিবহণ ভাতা। এছাড়াও, নিম্নের কারণে জাপানে ওয়ার্ক পারমিট ভিসা প্রয়োজন-
** নতুন চাকুরীর ক্ষেত্রে- আপনার যদি জাপানের ওয়ার্ক পারমিট ভিসা থাকে তবে, আপনি সেখানে সুযোগ পাবেন চাকুরী এবং ব্যবসা করার।
** অতিতিক্ত আয়ের সুযোগ- জাপানে আপনি কাজ করে অনেক টাকা আয় করতে পারবেন। তাছাড়া, জাপান তার কর্মীদের আবাসন সুবিধা, সামাজিক বীমা এবং উচ্চ বেতন প্রদান করে।
** স্থায়ীভাবে বসবাসের সুবিধা- জাপানে ওয়ার্ক পারমিট ভিসার মাধ্যমে আপনি সেখানে স্থায়ীভাবে বসবাস করতে পারবেন। আর এই ভিসা আপনাকে জাপানে ভবিষ্যতে স্থায়ীভাবে থাকতে সাহায্য করবে।
জাপানে কাজের ভিসা কয় প্রকার?
জাপানে বিভিন্ন প্রকারের কাজের ভিসা রয়েছে। আর সকল ভিসা নির্দিষ্ট কোন পেশা বা কাজের জন্য নির্ধারিত হয়ে থাকে। তবে, ওই সকল ভিসার মধ্যে নিম্নের কয়েকটি জনপ্রিয় ভিসা সম্পর্কে আলোচনা করা হলো-
- দক্ষ শ্রমিক ভিসা- এই ভিসাটি শুধু শ্রমিকদের জন্য।
- সাংবাদিক পেশা ভিসা- এই ভিসাটি শুধু সাংবাদিকদের জন্য নির্ধারিত।
- শিল্পি ভিসা- এই ভিসাটি শুধু মাত্র শিল্পি এবং সৃষ্টিশীল পেশাদারদের জন্য নির্ধারিত।
- প্রশিক্ষক ভিসা- এই ভিসাটি শুধু ইংরেজি শিক্ষকসহ বিভিন্ন প্রকার প্রশিক্ষকদের জন্য নির্ধারিত।
- পেশাগত ভিসা- এই ভিসাটি আইটি পেশা, প্রকৌশলী, অখকদে, ব্যাংকার, সাংবাদিকসহ অন্যান্য পেশার জন্য নির্ধারিত।
- নির্দিষ্ট দক্ষ কর্মী ভিসা-
জাপানে কাজের ভিসার জন্য কি যোগ্যতা লাগে?
জাপান বা বিশ্বের যে কোন দেশে কাজের ভিসা পাওয়ার জন্য আপনার কয়েকটি প্রয়োজনীয় যোগ্যতার প্রমাণ জমা দিতে হয়। নিম্নে সেই সম্পর্কে আলোচনা করা হলো-
- ভাষা দক্ষতা- জাপানি ভাষা জানার প্রমাণ দিতে হবে।
- বয়স- আবেদনকারীর বয়স হতে হবে ১৮ থেকে ৩০ বছরের মধ্যে।
- পুলিশের ক্লিয়ারেন্স- পুলিশের নিরাপত্তা ক্লিয়ারেন্সের রিপোর্ট জমা দিতে হবে।
- স্বাস্থ্য- জাপানে কাজের ভিসা পাওয়ার জন্য শারীরিক পরীক্ষার অবশ্যই রিপোর্ট জমা দতে হবে।
- শিক্ষাগত যোগ্যতা- জাপানে কাজের ভিসা পাওয়ার জন্য আপনার এসএসসি পাশের সনদ পত্র জমা দিতে হবে।
জাপানে কাজের ভিসার জন্য কি কাগজ লাগে?
- যোগ্যতার প্রমাণ পত্র বা COE - আপনার পেশাগত এবং শিক্ষাগত যোগ্যতার প্রমাণ পত্র।
- অফার পত্র- জাপানের কোন কোম্পানি আপনাকে নিয়োগ দিয়েছে তার প্রমাণ পত্র।
- ভিসা আবেদন ফরম- আপনি যে জাপানে ভিসা আবেদন করেছেন তার প্রমাণ।
- ডিগ্রী সারটিফিকেট ও সিভি- মূল সার্টিফিকেটের অনুলিপি এবং বায়াডাটা।
- পাসপোর্ট- কমপক্ষে ৬ মাস মেয়াদ আছে এমন পাসপোর্টের কপি।
- ছবি- সম্প্রতিক তোলা পাস পোর্ট সাইজের ছবি জমা দিতে হবে।
- ফিরতি খাম- স্ট্যাম্প সহ একটি JPY 392 ফিরতি খাম।
জাপান ওয়ার্ক পারমিট ভিসা আবেদন কিভাবে করব?
সকল প্রকার প্রয়োজনীয় ডকুমেন্ট জমা দিন এবং আপনার ইন্টারভিউ ভালোকরে দেওয়ার চেস্টা করুন। যদি সকল কিছু আপনি ভালোকরে সম্পুন্ন করতে পারেন তবে, আপনি জাপানের ওয়ার্ক পারমিট ভিসা পাবেন বলে আমরা আশাবাদী।
জাপানে ওয়ার্ক পারমিট ভিসা পেতে কতদিন লাগে?
জাপান ওয়ার্ক পারমিট ভিসা প্রসেসিং হতে সাধারণত ৭ থেকে ১৫ দিনের মত সময় লাগে। তবে, দূতাবাসে কাজের চাপ বা ভিসা আবেদনের সংখ্যা বেশি হলে বা আবেদনের ত্রুটি থাকলে সেক্ষেত্রে সময় কিছুটা বেশি লাগতে পারে।
জাপানে কাজের ভিসা আবেদন খরচ কত?
জাপানে কাজের ভিসার খরচ, আপনার কাজের ধরণ এবং নির্ভর করে আপনার জাতীয়তার উপর। তবে, সাধারণত, একক এন্ট্রি ভিসার জন্য JPY 3000, একাধিক হলে সে ক্ষেত্রে খরচ হবে প্রায় JPY 6000। যা বাংলাদেশী টাকায় প্রায় ২৫০০ টাকা থেকে ৫০০০ টাকার মতো।
জাপানে কোন কাজের চাহিদা বর্তমানে বেশি?
বর্তমান সময়ে জাপান কাজের জনসংখ্যা তুলনাবূলক অনেক কম, তাছাড়া সেখানে যুবকের তুলনায় বয়স্ক মানুষের সংখ্যাই বেশি। তাই সারা বছর কাজের মানুষের সমস্যা লেগেই থাকে, সে কারণে জাপান বিভিন্ন কাজের জন্য বাংলাদেশ বা অন্য কোন দেশ থেকে লোক নিয়ে থাকেন।
তবে, বাংলাদেশ থেকে কয়েকটি ক্যাটাগরির উপর জাপান ভিসা প্রদান করে থাকে। তাছাড়া জাপানে বাংলাদেশে যে সকল কাজের জন্য বেশি যায় বা যে সকল কাজের চাহিদা বর্তমানে জাপানে বেশি, তা নিম্নে আলোচনা করা হলো-
- কৃষিকাজ।
- কনস্ট্রাকশন।
- হোটেলের কাজ।
- অটোমোবাইল কাজ।
- বিভিন্ন ফ্যাক্টরিতে কাজ।
বর্তমানে জাপানে কাজের সর্বনিম্ন বেতন কত?
জাপানে কোন কাজের বেতন কত টাকা?
বর্তমানে জাপানে মেকানিক্যাল, ইলেকট্রনিক, নার্স কম্পিউটার অপারেটর এবং কনস্ট্রাকশন কাজের বেতন জাপানি ২৬০০০০ ইয়েন থেকে ৩২০০০০ ইয়েন, যা বর্তমানে বাংলাদেশী টাকায় ২০০০০০ থেকে প্রায় ২৫০০০০ টাকা পর্যন্ত হয়ে থাকে।
আর সেলসম্যান, ক্লিনাএ, ডেলিভ্যারি ম্যান, কৃষি এবং ফ্যাক্টরির কাজের বেতন জাপানি ১০০০০০ ইয়েন থেকে ২০০০০০ ইয়েন। যা বাংলাদেশী টাকায় প্রায় ৭৮০০০ টাকা থেকে ১৫০০০০ পর্যন্ত। উল্লেখ্য যে, জাপানের ২০১০ সালের শ্রম অনুযায়ী প্রতিঘন্টা সর্বনিম্ন বেতন ৯০৫ টাকা।
যা বাংলাদেশী ৬৭০.৯০ টাকা। আর একজন শ্রমিক যেহেতু প্রতিদিন ৮ ঘন্টা কাজ করবে এবং এর চেয়ে বেশি কাজ করলে তা ওভার টাইম হিসাবে বিবেচিত হবে। সেই হিসাবে একজন শ্রমিকের বেতন হবে প্রতিদিন ৫৩৬৭ টাকা হিসাবে প্রায় ১৬১০০০ টাকা।
জাপানে ফ্যাক্টরীর কাজ কেমন ধরণের?
জাপানে বিভিন্ন ধরণের ফ্যাক্টরীর কাজ হয়ে থাকে। তবে, সচারাচর যে সকল কাজ হয়ে থাকে তার মধ্যে কয়েকটি জনপ্রিয় কাজ সম্পর্কে নিম্নে আলোচনা করা হলো-
- স্টোরেজ ও লজিস্টিকস- পরিবহনের জন্য প্রস্তুত এবং পণ্য সর্বক্ষণ করা।
- প্যাকেজিং- উৎপাদিত পণ্যগুলো প্যাকেজিং করা এবং পাঠানোর জন্য প্রস্তুত করা।
- মেশিন অপারেশন- বিভিন্ন ধরণের মেশিন পরিচালনা, যেমন গঠন বা মোল্ডিং বা আটা মেশিন।
- মেইনটেনেন্স- মেশিনের সরঞ্জাম সরংক্ষণ করা ও যদি কোন সমস্যা থাকে তা সমাধান করা ইত্যাদি।
- কোয়ালিটি কন্ট্রোল- উৎপাদিত পণ্যের গুনাগুণ পরীক্ষা করা এবং যদি ত্রুটি থাকে সেগুলো সনাক্ত করা।
- অ্যাসেম্বলি লাইন- অটোমোবাইলসহ বিভিন্ন ইলেকট্রিক ডিভাইজের যন্ত্র জোড়া লাগানো এবং যন্ত্রাংশ একত্রিত করা।
আর এই সকল কাজের জন্য আপনার সর্বনিম্ন বেতন হবে জাপানের বেতন কাঠামো অনুযায়ী শহর ভেদে ২০০০০০ ইয়েন বা বাংলাদেশী টাকায় প্রায় ১ লক্ষ ৫০ হাজার টাকা।
জাপানে যে ৪ কাজের বেতন সবচেয়ে বেশি
জাপানে প্রায় সকল কাজের বেতন তুলনা মূলকভাবে অনেক বেশি। তবুও সেখানে সাধারণত নিম্নের ৪টি কাজের বেতন বেশি হয়ে থাকে। যেমন-
- প্রগ্রামিং কাজ- এই কাজের বেতন বাংলাদেশী টাকায় প্রতিমাসে ৫ লক্ষ থেকে ৮ লক্ষ টাকা।
- ম্যাকানিক্যাল- এই কাজের বেতন বাংলাদেশী টাকায় প্রতিমাসে ৩ লক্ষ থেকে ৪ লক্ষ টাকা।
- ফ্রেমওয়ার্ক বা কাতাওয়াকু- এই কাজের বেতন বাংলাদেশী টাকায় প্রতিমাসে ২ লক্ষ থেকে ৩ লক্ষ টাকা।
- স্কাফোল্ডিং বা তবি- এই কাজের বেতন বাংলাদেশী টাকায় প্রতিমাসে ২ লক্ষ থেকে ৩ লক্ষ টাকা।
জাপানে কাজের ভিসা- শেষকথা
জাপানে কাজের ভিসা পাওয়া আপনার জন্য অনেক কঠিন হতে পারে। কিন্তু আপনি যদি নির্দেশনা অনুযায়ী সঠিক প্রস্তুতি অনুসরন করেন, তবে সম্ভাব। আর আপনি যদি কাজের ভিসা পেয়ে জান, তাহলে আপনি উপভোগ করতে পারবেন উন্নত জীবন এবং ক্যারিয়া গড়ে নিতে পারবেন।
প্রিয় পাঠক পাঠিকাগণ, আশাকরি আপনারা যদি আর্টিকেলটি শুরু থেকে শেষ পর্যন্ত পড়ে থাকেন তবে, অবশ্যই জেনে গেছেন "জাপান ওয়ার্ক পারমিট ভিসা পাওয়ার উপায়'' সম্পর্কে। যা আমরা আর্টিকেলে পূর্বেই আলোচনা করেছি।
আরো পড়ুনঃ সরকারিভাবে কানাডা যাওয়ার উপায় ২০২৪
আশাকরি আর্টিকেলটি আপনাদের অনেক উপকারে আসবে। আর যদি আর্টিকেলটি ভালোলাগে ও উপকারি বলে মনে হয়, তাহলে এটি অন্যের সঙ্গে শেয়ার করতে ভূলবেন না। আরো নতুন নতুন তথ্য জানার জন্য আমাদের পরবর্তী আর্টিকেলটি পড়ুন এবং আমাদের সঙ্গে থাকুন। ধন্যবাদ।
এই ওয়েবসাইটের নীতিমালা মেনে কমেন্ট করুন। প্রতিটি কমেন্ট রিভিউ করা হয়।
comment url