খুসকি দূর করার প্রাকৃতিক উপায়

আরো পড়ুনঃ স্বাস্থ্য, চুল ও ত্বকের যত্নে ডিমের উপকারিতা

শীত মৌসুমে অনেকটাই বেড়ে যায় খুসকির প্রকোপ। তাছাড়া এই সময় মাথার ত্বক শুস্ক থাকার ফলে চুলকানিও বেড়ে যায়। কারণ শীত মৌসুমে ঠান্ডা বাতাস, শুস্ক আবহাওয়া এবং ম্যালাসেজিয়া নামক বিশেষ এক ধরণের ছত্রাকের আক্রমণের কারণে, অন্য যে কোন মৌসুমের চেয়ে, শীতকালে অনেকটাই বেড়ে যায় খুসকির উপদ্রপ।

আর অনেকেই খুসকির অসহনীয় উপদ্রপ থেকে রেহাই পেতে বিভিন্ন ধরণের শ্যাম্পু ব্যবহার করেও কোন ফল পান না। তাই তারা দুশ্চিন্তায় ভোগেন। কিন্তু আজকের আর্টিকেলে আমরা আপনাদের সঙ্গে শেয়ার করবো "খুসকি দূর করার প্রাকৃতিক উপায়'' সম্পর্কে অনেক তথ্য। চলুন তাহলে দেখে নেওয়া যাক খুসকি দূর করার উপায়- 

আজকের পাঠ্যক্রম- খুসকি দূর করার প্রাকৃতিক উপায়

  • খুসকি কি?
  • খুসকি হওয়ার কারণ
  • খুসকি মাথার চুলের কি ক্ষতি করে
  • খুসকি দূর করার প্রাকৃতিক উপায়
  • খুসকি দূর করার ১০ উপায়। শেষকথা

খুসকি কি?

মাথার ত্বকের বিশেষ একটি অবস্থাকে খুসকি বলা হয়, যা মূলত আমাদের মাথার খুলিতে দেখা যায় সবচেয়ে বেশি। ফলে মাথার ত্বকের চর্মরেণু উঠে আসে আঁশের মতো করে এবং ঝরে পড়ে। আমাদের সামাজিক আত্মসম্মানের খেত্রেও খুসকি অনেক সমস্যা সৃষ্টি করে। এটি আরো ভয়াবহ অবস্থার সৃষ্টি করে ত্বকের তৈলাক্ত বা সেবোরেইক ডারমাটাইটিস এবং চুলকানির প্রবণতা।

খুসকি হওয়ার কারণ

খুসকি প্রকৃত পক্ষে কোন রোগের লক্ষণ বা রোগ নয়। মাথার লোমের গোড়ায় ছত্রাকের প্রভাবে অথবা ময়লা জমার কারণে খুসকি সাধারণত হয়ে থাকে। তাছাড়া আরো কি কি কারণে আমাদের মাথায় খুসকি হয়, সে সম্পর্কে নিম্নের আলোচনায় আমরা খুসকি হওয়ার বিভিন্ন কারণ সমুহ দেখে নিবো।

ফাঙ্গাসের পরিমাণ বেড়ে গেলে- আমাদের সকলের স্ক্যাল্পেই অল্প পরিমাণে যদি ফাঙ্গাস থাকে, তবে তেমন কোন ক্ষতি হয় না। আর যদি অতিরিক্ত পরিমাণে ফাঙ্গাস বেড়ে যায়, তাহলে সেটি শোষণ করে নেয় মাথার ত্বকের ক্ষরিত তেল। ফলে স্ক্যাল্প উৎপাদন করে অতিরিক্ত ত্বকীয় কোষ। এই সকল অতিরিক্ত ত্বকীয় কোষ মৃত হলে, চুলের তেলের সঙ্গে মিশে সৃষ্টি করে খুসকির।

রোগ প্রতিরোধ খমতা কমে গেলে- যাদের রোগ প্রতিরোধ খমতা কম, বিশেষ করে যারা, হৃদরোগ, পারকিন্সন ডিসিস, স্ট্রোক, ত্বকের সমস্য এবং সেন্সিটিভি ত্বক ইত্যাদি সমস্যা যাদের রয়েছে, তাদের খুসকির প্রবনতা বেশি দেখা যায়। একটি গবেষণার উঠে এসেছে যে, এইচ আই ভি আক্রান্ত রয়েছে ১০.৬% মানুষ, তাদের সবচেয়ে বেশি খুসকির সমস্যা দেখা যায়।

শুস্ক ত্বকের কারণে- শীত মৌসুমে বাতাসের আর্দ্রতা অনেক কমে যাওয়ার কারণে শরীরের ত্বকের সঙ্গে সঙ্গে মাথার ত্বকও শুস্ক হয়ে যায়। ফলে শুস্কতার জন্য মাথায় খুসিক দেখে দেয়। তাছাড়া শিতকালে বাইরের আবহাওয়া এবং ঘরের ভিতরের আবহাওয়ার মধ্যে তুলনা মূলকভাবে অনেক পার্থক্যর কারণেও খুসকি হওয়ার সম্ভাবনা অনেক বেড়ে যায়।

শ্বেত প্রদাহ অসুখের কারণে- শ্বেত প্রদাহ জাতীয় বা ঈস্ট জাতীয় অসুখ কিংবা জাদের এলারজির মত সমস্যা রয়েছে তাদের ক্ষেত্রে খুসকির প্রবণতা অনেক বেশি দেখা যায়। আর এই সমস্যাটি মহিলাদের ক্ষেত্রে বেশি লক্ষ্য করা যায়। ঈস্ট কাউন্টার এক্ট করে সূর্যের অতি বেগুনী রশ্মি যা বাড়িয়ে তোলে খুসকি হওয়ার প্রবণতাকে

অতিরিক্ত তেল মাথায় ব্যবহারের কারণে- যারা মাথায় অতিরিক্ত এবং ঘন ঘন তেল ব্যবহার করেন, তাদের খুসকি আক্রমণ বেশি করে। কারণ অরিতিক্ত তেল মাথায় ব্যবহার করলে তেলগুলো মাথার চুলের গোড়ায় স্তুপ আকারে জমা হয় এবং পরবর্তী সময়ে সেগুলো ছত্রাকে রূপান্তরিত হয়ে খুসকির প্রবনতা বাড়িয়ে তোলে।

সঠিক খাদ্য গ্রহনের না করার কারণে- সঠিক খাদ্য গ্রহনের না করাও খুসকির অন্যতম কারণ। আমরা প্রতিদিন নিয়মিত যে খাবার গ্রহন করি, সেগুলোতে প্রয়োজনীয় জিঙ্ক এবং ভিটামিন "বি" যদি না থাকে, তবে খুসকি প্রবণতা অনেকটা বেড়ে যায়। তাছাড়া চর্বি জাতীয় খাবার অধিক পরিমাণে গ্রহনের কারণে খুসকির প্রবণতা অনেক বেড়ে যায়।

আরো পড়ুনঃ চুলে মেহেদী পাতা ব্যবহারের নিয়ম উপকারিতা ও অপকারিতা

যথেষ্ট পরিমাণে চুল না আচড়োর কারণে- চুল নিয়মিত এবং প্রতিদিন যথেষ্ট পরিমাণে না আচড়ালেও খুসকির সম্ভাবনা বেড়ে যায়। কারণ চুল যদি কম আচড়ানো হয়, তাহলে মাথার ত্বকের অতিরিক্ত বা অপ্রয়োজনীয় চামড়া মাথা থেকে ঝরে পড়তে পারে না। ফলে উক্ত চামড়াগুলো মাথার ত্বকে খুসকির সৃষ্টি করে।

পানির সমস্যার কারণে- আমাদের মাথার ত্বকে বা গোসলের পানির যদি সমস্যা হয়, সেক্ষেত্রে খুসকির প্রবনাতা অনেকটা বেড়ে যায়। কারণ আমাদের ব্যবহৃত পানিতে যদি ক্লোরিনের পরিমাণ অতিরিক্ত বেশি থাকে, তাহলে আমাদের মাথার ত্বক খুব দ্রুত শুস্ক হয়ে যায়। যার কারণে মাথায় খুসকির হওয়ার প্রবণতা নেড়ে যায়।

অতিরিক্ত মানসিক চাপের কারণে- যদি অরিতিক্ত মানসিক চাপ আমাদের থাকে, তাহলে খুসকির প্রবণতা বেড়ে যায়। কারণ অতিরিক্ত মানাসিক চাপের ফলে মাথার ত্বক শুস্ক হয়ে যায়। তাই মানসিক চাপ খুসকির অন্যতম একটি কারণ। যারা অতিরিক্ত মানসিক চাপের মধ্যে রয়েছে, তাদের খুসকি হওয়ার সম্ভাবনা বেশি।

পর্যাপ্ত পরিমাণে শ্যাম্পু না করার কারণে- যদি মাথায় পর্যাপ্ত পরিমাণে শ্যাম্পু ব্যবহার করা না হয়, তাহলে মাথার ত্বক অপরিস্কার থাকে এবং খুসকির প্রবনতা বেড়ে যায়। তাছাড়া ত্বকের সঙ্গে মানান সই শ্যাম্পু ববহার না করলেও, সমস্যা দেখা দিতে পারে খুসকির। তাই খুসকি থেকে রেহাই পাওয়ার জন্য নিয়মিত এবং সঠিক শ্যাম্পু ব্যবহার করতে হবে। 

খুসকি মাথার চুলের কি ক্ষতি করে

খুসকি যদিও কোন রোগ নয়, কিন্তু চুলের জন্য অত্যান্ত ক্ষতিকর। মাথার ত্বকে চুলকানি, চুল পড়া এমনকি অতিরিক্ত চুলকানোর কারণে নোখের আচড়ে মাথার ত্বকে সৃষ্টি হতে পারে সংক্রমণের সমসার। অনেক সময় চুলকানোর কারণে মাথার ত্বকে ব্রুণের মতো হয়। সংক্রমণ বা ব্রুন এই সকল সমস্যার শেষ পরিণিতি দাঁড়ায় চুল ঝরে পড়া এবং চুল পাতলা হয়ে যাওয়া।

খুসকি দূর করার প্রাকৃতিক উপায়

মাথার চুলের খুসকি দূর করার জন্য অ্যান্টি ডানন্ড্রাফ শ্যাম্পু ব্যবহার করেও কাজ হচ্ছে না, কারণ বারবার ফিরে আসছে খুসকি। তাহলে আপনি এবার চেষ্টা করে দেখুন, খুসকি দূর করার প্রাকৃতিক উপায়। কারণ এতে যেমন আপনার চুলের স্বাস্থ্য থাকবে ভালো, তেমনিভাবে কোন ধরণের পার্শ্ব প্রতিক্রিয়া ছাড়াই খুসকি দূর হবে। চলুন নিম্নে দেখে নেওয়া যাক- 

** মুলতানি মাটি একটি খনিজ এবং পুষ্টি সমৃদ্ধ উৎস, যা সকল প্রকার ব্যাকটেরিয়া রোধ এবং খুসকির জন্য খুবই উপকারি। পাশাপাশি মুলতানি মাটি শক্তিশালি করে তোলে চুলের ফলিকলকেও। আর এর জন্য পরিমাণ মত মুলতানি মাটির সঙ্গে কয়েক ফোটা লেবুর রস মশিয়ে তৈরি করুন পেস্ট। এবার চুলের গোড়ায় ম্যাসেজ করে ১৫ মিনিট পর হালকা গরম পানি দিয়ে ধুয়ে ফেলুন।

** নারিকেলের তেল ৮/১০ ফোটা ও পরিমাণ মত টি ট্রি অয়েল ভালোকরে মিশিয়ে ম্যাসেজ করুন মাথার ত্বকে। ২৫/৩০ মিনিট অপেক্ষা করে শ্যাম্পু করে পরিস্কার করুন। আবার আপনি চাইলে শ্যাম্পুর সঙ্গে ৫/৬ ফোটা টি ট্রি অয়েল মিশিয়েও অনেক উপকার পাওয়া যায়।

** আপেল সিডার ভিনেগার এবং সমপরিমাণে পানি মিশিয়ে মাথার ত্বকে লাগিয়ে রাখুন ১৫/২০ মিনিট অপেক্ষা করুন। অপেক্ষা করার পর ভালো করে আপনার মাথার ত্বক পরিস্কার করে নিন।

** টক দই ৩ টবিল চামচ এবং আদা বাটা ৪ টেবিল চামচ একসঙ্গে মিশিয়ে বানিয়ে নিন হেয়ার প্যাক। হেয়ার প্যাকটি মাথার ত্বকে এবং চুলে লাগিয়ে রাখুন। ২ ঘণ্টার মতো অপেক্ষা করে শ্যাম্পু করে ধুয়ে ফেলুন।

** নারিকেলের তেলের সমপরিমাণ লেবুর রস একসঙ্গে মিশিয়ে মাথার ত্বকে বা চুলের গোড়ায় ভালো করে ম্যাসেজ করে, অপেক্ষা করুন ১৫/২০ মিনিটের মত। এবার পরিস্কার করে ফেলুন মাথার ত্বক ও চুল।

** আপনার চুলে শ্যাম্প করার ২৫/৩০ মিনিট আগে মাথার ত্বকে বা চুলের গোড়ায় অ্যালোভেরার জেল ভালো করে ম্যাসেজ করুন। এইভাবে কয়েকবার নিয়মিত ব্যবহার করলে, খুসকির প্রকোপ থেকে ধীরে ধীরে রক্ষা পাওয়া যায়।

** মেথি সারারাত পানিতে ভিজিয়ে রেখে, সকাল বেলা সুন্দর করে বেটে পেস্ট বানিয়ে নিন। মেথির পেস্টের সঙ্গে পরিমাণ মত টক দই মিশিয়ে মাথার ত্বকে লাগান। ২৫/৩০ মনিটের মত অপেক্ষা করার পর শ্যাম্পু দিয়ে পরিস্কার করুন।

** হাতের তালুতে শ্যাম্পু নিয়ে, এর সঙ্গে সামান্য লবন মশিয়ে নিন। এবার লবন মিশ্রিত শ্যাম্পু সুন্দর করে মাথার ত্বকে ম্যাসেজ করার পর, চুল পরিস্কার করে কন্ডিশনার ব্যবহার করুন।

** পরিমাণ মত অ্যালোভেরার জেল এবং লবন এক সঙ্গে মিশিয়ে চুলের গোড়া বা মাথার ত্বকে ব্যবহার করুন। এতে অনেকটাই খুসকির অত্যাচার থেকে রক্ষা পাওয়া যায়।

** চুল পানিতে ভেজানোর পর, মাথার ত্বকে ব্যবহার করুন বেকিং সোডা। ৪/৫ মিনিট পর ভালো করে পরিস্কার করে ফেলুন।

খুসকি দূর করার ১০ উপায়। শেষকথা

আশাকরি আপনারা যদি আজকের এই গুরুত্বপূর্ণ আর্টিকেলটি শুরু থেকে শেষ পর্যন্ত মনোযোগের সঙ্গে পড়ে থাকেন, তাহলে নিশ্চয় জেনে গেছেন "খুসকি দূর করার প্রাকৃতিক উপায়'' সহ খুসকি সম্পর্কে বিভিন্ন তথ্য। যা আমরা আর্টিকেলের মধ্যে ইতিপূর্বে আলোচনা করেছি। যা আপনাদের অনেক উপকারে আসবে বলে আমরা আশাবাদী।

আরো পড়ুনঃ চোখের নিচের কালোদাগ দূর করার উপায়

খুসকি দূর করার জন্য বিভিন্ন উপকরণের পাশাপাশি উপরের প্রাকৃতিক উপায়গুলো অবলম্বন করুন। কারণ এতে কোন পার্শ্ব প্রতিক্রিয়া নেই। আর্টিকেলটি যদি আপনাদের ভালোলাগে এবং উপকারি বলে মনে হয়, তবে এটি অবশ্যই অন্যের সঙ্গে শেয়ার করবেন। আরো নতুন নতুন তথ্য জানার জন্য আমাদের পরবর্তী আর্টিকেলটি পড়ুন এবং আমাদের সঙ্গে থকুন। ধন্যবাদ।

এই পোস্টটি পরিচিতদের সাথে শেয়ার করুন

পূর্বের পোস্ট দেখুন পরবর্তী পোস্ট দেখুন
এই পোস্টে এখনো কেউ মন্তব্য করে নি
মন্তব্য করতে এখানে ক্লিক করুন

এই ওয়েবসাইটের নীতিমালা মেনে কমেন্ট করুন। প্রতিটি কমেন্ট রিভিউ করা হয়।

comment url

এইটা একটি বিজ্ঞাপন এরিয়া। সিরিয়ালঃ ১

এইটা একটি বিজ্ঞাপন এরিয়া। সিরিয়ালঃ ২

এইটা একটি বিজ্ঞাপন এরিয়া। সিরিয়ালঃ ৩

এইটা একটি বিজ্ঞাপন এরিয়া। সিরিয়ালঃ ৪

এইটা একটি বিজ্ঞাপন এরিয়া। সিরিয়ালঃ ৫

এইটা একটি বিজ্ঞাপন এরিয়া। সিরিয়ালঃ ৬

এইটা একটি বিজ্ঞাপন এরিয়া। সিরিয়ালঃ ৭