চিনা বাদামের উপকারিতা ও অপকারিতা

আরো পড়ুনঃ ডায়াবেটিস নিয়ন্ত্রণে ডুমুরের উপকারিতা

খাবারের পুষ্টিমান বিবেচিনা করলে বাদামের বিকল্প পাওয়া কঠিন। বাদামে পাওয়া যায় ভিটামিন, প্রোটিন, খনিজ এবং অ্যান্টি অক্সিডেন্ট। আর এই সকল উপাদানগুলো স্বাস্থ্য ও ত্বকের জন্য গুরুত্বপূর্ণ ভুমিকা পালন করে। তাছাড়া বাদাম খেতে প্রায় সকলেই পছন্দ করে থাকেন। আর বাদাম খেলে যে, বিভিন্ন রোগ নির্মূল করা সম্ভাব একথাও সকলের জানা।

কিন্তু বাদাম খেলে যেমন অনেক উপকারিতা রয়েছে, তেমনি এর কিছু পার্শ্বপতিক্রিয়া বিদ্যমান। আর আজকের আর্টিকেলে আমরা আপনাদের সঙ্গে শেয়ার করবো "চিনা বাদামের উপকারিতা ও অপকারিতা'' সহ এর বিভিন্ন তথ্য সম্পর্কে বিস্তারিত। চলুন তাহলে আমরা দেখে নেই-

আজকের পাঠ্যক্রম- চিনা বাদামের উপকারিতা ও অপকারিতা

  • প্রতি ১০০ গ্রাম বাদামের পুষ্টিমান
  • চিনা বাদামের ৭ উপকারিতা
  • চিনা বাদাম খোয়ার নিয়ম
  • বাদাম খাওয়ার অপকারিতা
  • চিনা বাদামের উপকারিতা ও অপকারিতা- শেষকথা

প্রতি ১০০ গ্রাম বাদামের পুষ্টিমান

বাদামে বিভিন্ন প্রকার ভিটামিন, প্রোটিন, এসিড, শর্করাসহ ২০টির অধিক পরমাণে পুষ্টিমান রয়েছে। নিম্নের আমরা দেখে নেই বাদামে থাকা পুষ্টিমানের তালিকা।

        পুষ্টিমানের নাম                                  পরিমাণ

  • শক্তি                                         ২৩৮৫ কিজু।
  • খাদ্য আঁশ                                ৯ গ্রাম।
  • প্রোটিন                                     ২৫ গ্রাম।
  • শর্করা                                       ২১ গ্রাম।
  • স্নেহ পদার্থ                                ৪৮ গ্রাম।
  • চিনি                                          ০.০ গ্রাম।
  • এককঅসুসিক্ত                        ২৪ গ্অস্সুটিমানে
  • বহুঅসুসিক্ত                            ১৬ গ্রাম।
  • সুসিক্ত স্নেহ পদার্থ                     ৭ গ্রাম।    
  • থায়ামিন (বি১)                          ০.৬ মিগ্রা।
  • রিবোফ্লাভিন (বি২)                   ০.৩ মিগ্রা।
  • নায়াসিন (বি৩)                         ১২.৯ মিগ্রা।
  • ভিটামিন সি                              ০.০ মিগ্রা।
  • ভিটামিন ই                                ৬.৬ মিগ্রা।
  • অ্যাসিড (বি৫)                          ০.৩ মিগ্রা।
  • ভিটামিন বি৬                           ০.৩ মিগ্রা।
  • ফোলেট (বি৯)                           ২৪৬ ইউজি।
  • ক্যালসিয়াম                                ৬২ মিগ্রা।
  • ম্যাগনেসিয়াম                            ১৮৪ মিগ্রা।
  • পটাসিয়াম                                 ৩৩২ মিগ্রা।
  • জিঙ্ক                                          ৩.৩ মিগ্রা।
  • ফসফরাস                                  ৩৩৬ মিগ্রা।
  • লৌহ                                            ২ মিগ্রা।

চিনা বাদামের ৭ উপকারিতা

চিনা বাদামে রয়েছে প্রচুর পরিমাণে ভিটামিন, প্রোটিন, অ্যান্টি অক্সিডেন্ট এবং কার্বো হাইড্রেট। আপনি যদি প্রতিদিন নিয়মিতভাবে একমুষ্টি বা ১০/১২ টি বাদাম খান, তাহলে আপনার শরীর রক্ষা পাবে বিভিন্ন রোগ বালাইয়ের হাত থেকে। চলুন আমরা নিম্নের আলোচনা থেকে দেখে নেই চিনা বাদামের ৭ উপকারিতা সম্পর্কে- 

** রক্তচাপ নিয়ন্ত্রণে রাখে- বাদামে পটাসিয়ামের পরিমাণ রয়েছে উচ্চ মাত্রার। অপরদিকে সোডিয়ামের পরমাণ রয়েছে কম মাত্রার। সোডিয়ামের মাত্রা যখন শরীরে বেড়ে যায়, তখন রক্ত বৃদ্ধি পায় এবং বেড়ে যায় রক্তচাপ। আর বাদামে সোডিয়ামের মাত্রা কম থাকায় নিয়মিত বাদাম খাওয়া অনেক উপকারি।

** কোলেস্টেরলের মাত্রা কমায়- বাদাম নিয়মিত প্রতিদিন খাওয়ার ফলে নিয়ন্ত্রণে রাখা যায় কোলেস্টেরল এর মাত্রা। কারণ উচ্চ প্রোটিন সামগ্রী বাদাম হওয়ার ফলে দ্রুত বাড়ায় হজমের শক্তি। তাই যারা কোলেস্টেরল এর সমস্যায় ভুগছেন, তারা প্রতিদিন নিয়মিতভাবে বাদাম খেলে অনেক উপকার পাবেন।
** বাদাম মেজাজ ভালো রাখে- যদি কোন ব্যাক্তি প্রতিদিন নিয়মিতভাবে কমপক্ষে একবার বাদাম খান, তবে তাকে ক্যালোরির জন্য অন্যকোন খাবার খাওয়ার প্রয়োজন হয় না। খাদ্য মেজাজ হিসাবে বাদাম অনেটা পরিচিত। তাই মনের বিষণ্ণতা দূর করে রিফ্রেশ মন পাওয়ার জন্য প্রতিদিন নিয়মিত বাদাম খাওয়া উচিৎ।

** মেমরিকে করে শক্তশালি- বাদামে রয়েছে বিশেষ এক ধরণের তেল, যা থাকে ভিটামিন 'বি' তে সমৃদ্ধ। আর এই কারণে বাদাম একটি অন্যতম শক্তিশালী খাবার হিসাবে পরিচিত। কারণ বাদামে থাকা ভিটামিন 'বি' মেমরিকে শক্তিশালী করতে গুরুত্বপূর্ণ ভুমিকা পালন করে। তাই মেমরিকে শক্তিশালী করতে নিয়মিত বাদাম খান।

** হার্টকে করে তোলে স্বাস্থ্যকর- বাদামে রয়েছে বিশেষ এক ধরণের অ্যাসিড। যা হার্টের স্বাস্থ্য ভালো রাখার ক্ষেত্রে গুরুত্বপূর্ণ ভুমিকা পালন করে। এছাড়াও বাদামের রয়েছে তামা, দস্তা, লোহা এবং ম্যাগনেসিয়ামের মতো গুরুত্বপূর্ণ প্রাকৃতিক উপাদান। যা রক্তের সঞ্চালনকে স্বাভাবিক রাখার মাধ্যমে ঝুকি কমায় হৃদরোগের।

** রোগ প্রতিরোধ ক্ষমতা বাড়ায়- শরীরে যদি সঠিক পরিমাণ পুস্টি না থাকে, তাহলে  কমে যায় শরীরের রোগ প্রতিরোধ ক্ষমতা। আর চিনা বাদামে রয়েছে অ্যান্টি অক্সিডেন্ট, যা শরীরে জটিল কোন রোগকে বাসা বাধতে বাধা প্রদান করে। তাই শরীরের রোগ প্রতিরোধ ক্ষমতা বাড়ানোর জন্য প্রতিদিন বাদাম খাওয়া উচিৎ।

** ক্লান্তি দূর করে- বাদাম শক্তির ভালো একটি উৎস। কারণ বাদামে রয়েছে বিভিন্ন প্রকারের প্রাকৃতিক পুষ্টিমান। তাই বাদাম খাওয়ার ফলে শরীরে এবং দেহে বৃদ্ধি পায় এনার্জি। ফলে দূর হয় শরীরের ক্লান্তি। আর এই কারণে আমাদের শরীরের পুষ্টি, শক্তি, এনার্জি ইত্যাদি বৃদ্ধি করতে প্রতিদিন নিয়মিত বাদাম খওয়া প্রয়োজন।

চিনা বাদাম খোয়ার নিয়ম

** চিনা বাদামে রয়েছে মনো-স্যাচুরেটেড এবং পলি-আনস্যাচুরেটেড ফ্যাট। যা আপনার শরীরকে করে তোলে শক্তিশালি। চিনা বাদামে থাকা পুষ্টিমান ঝুকি কমায় হৃদরোগের। এগুলি ভাইরাস, অ্যানজাইমার রোগ এবং ছত্রাক সংক্রমণের বিরুদ্ধে সাহায্য করে লড়াই করতে। তাছাড়া চিনা বাদামের তৈল অনেক উপকারি খাবার।

** আপনি যদি ডায়াটিং করেন, তাহলে অতিরিক্ত চিনা বাদাম খেলে আপনার ওজন কমার পরিবর্তে ওজন বেড়ে যেতে পারে। ডায়াটিং করার ক্ষেত্রে দিনে একমুঠ বা ১০/১২ টি চিনা বাদাম যথেষ্ট। আর এর থেকে আপনি পেয়ে যাবেন প্রায় ১৭০ ক্যালোরির মত। এতে করে আপনি দীর্ঘ সময় পূর্ণ থাকতে পারবেন। এছাড়া একবারে বেশি বাদাম খেলে অস্বস্তিবোধ হতে পারে পেটে।

** চিনা বাদাম রাতে ভিজিয়ে রেখে, ভেজানো বাদাম সকালে খাওয়া ভালো। তাছাড়া আপনি চাইলে চিনাবাদামের তৈল রান্নায় ব্যবহার করতে পারন। আবার আপনি নুন ছাড়া চিনাবাদাম সেদ্ধ করে স্বাস্থ্যকর স্নাক্সে খেতে পারেন এবং প্লেন রোস্টেড হিসাবে চিনা বাদাম খেতে পারেন।

বাদাম খাওয়ার অপকারিতা

বাদাম খাওয়ার উপকারিতা আমরা আগেই জেনেছি, কিন্তু এর অনেক উপকারিতার পাশাপাশি কিছু উপকারিতা বা পার্শ্বপ্রতিক্রিয়া রয়েছে। নিম্নে আমরা দেখে নেই বাদাম খাওয়ার অপকারিতা পার্শ্বপ্রতিক্রিয়া সমূহ-

** ওজন বৃদ্ধি- বাদামে রয়েছে উচ্চ মাপের প্রোটিন ও ফ্যাট। তাই অতিরিক্ত পরিমাণে বাদাম খেলে আপনি মোটা হয়ে জেতে পারেন এবং এর সঙ্গে সঙ্গে ওজনও বেড়ে যাবে। তাই আপনি যদি নিয়মিত খাবারের তালিকায় বাদাম রাখেন, তাহলে প্রতিদিন একমুঠো বা ১০/১২ টি বাদাম খন। অন্যথায় ওজন বৃদ্ধি পাওয়ার সম্ভাবনা রয়েছে।

** এলার্জির সমস্যা হতে পারে- যদিও বাদামে প্রচুর পরিমাণে উপকারিতা রয়েছে, তবে সঠিক নিয়ম মেনে বাদাম না খেলে এর কিছু পার্শ্বপ্রতিক্রিয়া দেখা দিতে পারে। তার মধ্যে অন্যতম হল এলার্জির সমস্যা। কারণ এলার্জির প্রবনতা বাদামে অনেক বেশি। তাই যাদের এলার্জির সমস্যা রয়েছে, তারা বাদাম খাওয়ার আগে সচেতন হোন।

** গ্যাস্টিকের সমস্যা দেখা দিতে পারে- আপনি বাদাম খেতে পছন্দ করেন, আর এই কারণে প্রতিদিন আপনি অধিক পরিমাণে বাদাম খান। এতে আপনার গ্যাসটিকের সমস্যা দেখা দিতে পারে। এটি বাদামের এক ধরণের পার্শ্বপ্রতিক্রিয়া। তাই পরমাণ মত বাদাম খাওয়া প্রয়োজন।

চিনা বাদামের উপকারিতা ও অপকারিতা- শেষকথা

পাঠক পাঠিকাগণ আমরা আশাকরি, আপনারা যদি আজকের এই গুরুত্বপূর্ণ আর্টিকেলটি শুরু থেকে শেষ পর্যন্ত মনোযোগের সঙ্গে পুরোটাই পড়ে থাকেন, তাহলে নিশ্চয়ই জেনে গেছেন "চিনা বাদামের উপকারিতা ও অপকারিতা'' সহ বাদামের পুষ্টিমান সম্পর্কে অনেক তথ্য। যা আমরা আর্টিকেলে এতিমধ্যেই বিস্তারিতভাবে শেয়ার করেছি।
আমরা অনেক আশাবাদী যে, আর্টিকেলটি আপনাদের অনেক উপকারে আসবে। আর্টিকেলটি যদি আপনাদের ভালোলাগে এবং উপকারি বলে মনে হয়, তাহলে এটি অবশ্যই অন্যের সঙ্গে শেয়ার করতে ভুলবেন না। আরো নতুন নতুন তথ্য জানার জন্য আমাদের পরবর্তী আর্টিকেলটি পড়ুন এবং আমাদের সঙ্গে থাকুন ধন্যবাদ।

এই পোস্টটি পরিচিতদের সাথে শেয়ার করুন

পূর্বের পোস্ট দেখুন পরবর্তী পোস্ট দেখুন
এই পোস্টে এখনো কেউ মন্তব্য করে নি
মন্তব্য করতে এখানে ক্লিক করুন

এই ওয়েবসাইটের নীতিমালা মেনে কমেন্ট করুন। প্রতিটি কমেন্ট রিভিউ করা হয়।

comment url

এইটা একটি বিজ্ঞাপন এরিয়া। সিরিয়ালঃ ১

এইটা একটি বিজ্ঞাপন এরিয়া। সিরিয়ালঃ ২

এইটা একটি বিজ্ঞাপন এরিয়া। সিরিয়ালঃ ৩

এইটা একটি বিজ্ঞাপন এরিয়া। সিরিয়ালঃ ৪

এইটা একটি বিজ্ঞাপন এরিয়া। সিরিয়ালঃ ৫

এইটা একটি বিজ্ঞাপন এরিয়া। সিরিয়ালঃ ৬

এইটা একটি বিজ্ঞাপন এরিয়া। সিরিয়ালঃ ৭