যে কারণে বাঁধাকপি বেশি করে খাবেন
আরো পড়ুনঃ ইসবগুলের ভুসি যে কারণে নিয়মিতি খাবেন
শুরু হয়েছে শীতের মৌসুম, বাজারে উঠতে শুরু করেছে শীতের বিভিন্ন সবজি। শীতে যতগুলো সবজি রয়েছে তার মধ্যে অন্যতম জনপ্রিয় সবজি হলো বাঁধাকপি। কারণ বাঁধাকপি বাংলাদেশের অন্যতম একটি জনপ্রিয় খাবার। স্বাদে ও পুস্টিগুণে ভরপুর বাঁধাকপি খেতে পছন্দ করে না, এমন মানুষ পাওয়া সত্যিই ভার।
বাঁধাকপি তার স্বাদ এবং পুষ্টিগুণের কারণে প্রায় ৪ হাজার বছর ধরে মানুষের মন জয় করে আসছে। বাঁধাকপিতে রয়েছে ভিটামিন, প্রোটিন, আয়রন, ক্যালসিয়ামসহ প্রায় ২০ ধরণের পুষ্টি উপাদান। আজকের আর্টিকেলে আমরা আপনাদের সঙ্গে শেয়ার করবো বাঁধাকপির পুষ্টিগুণ, উপকারিতা, অপকারিতা এবং এর জনপ্রিয় রেসেপি সম্পর্কে তথ্য। চলুন দেখে নেওয়া যাক-
আজকের পাঠ্যক্রম- যে কারণে বাঁধাকপি বেশি করে খাবেন, বিস্তারিত তথ্য জানুন
- বাঁধাকপিতে থাকা বিভিন্ন পুষ্টিগুণ
- যে পরিমাণ শরীরের ঘাটতি পূরণ করে বাঁধাকপি
- লাল জাতের বাঁধাকপির বিশেষ উপকারিতা
- বাঁধাকপি খাওয়ার বিভিন্ন নিয়ম
- যে কারণে বেশি করে বাঁধাকপি খাবেন
- বাঁধাকপি খাওয়ার উপকারিতা সমুহ
- বাঁধাকপির বিশেষ রেসিপি- ভর্তা তৈরির পদ্ধতি
- বাঁধাকপি খাওয়ার উপকারিতা- শেষকথা
বাঁধাকপিতে থাকা বিভিন্ন পুষ্টিগুণ
পুষ্টিগুণে ভরপুর বাঁধাকপিতে রয়েছে প্রায় ২০ ধরণের পুষ্টি উপাদান। পুষ্টিবিদদের মতে প্রতি ১০০ গ্রাম খাবার উপযোগী বাঁধাকপিতে যে পরিমাণ পুষ্টিগুণ রয়েছে তা নিম্নে আলোচনা করা হলো-
- ভিটামিন বি১ ০.০৬ মিলিগ্রাম।
- ভিটামিন বি২ ০.০৫ মিলিগ্রাম।
- ভিটামিন সি ৬০ মিলিগ্রাম।
- ভিটামিন ই ৬.৪ মিলিগ্রাম।
- খাদ্যশক্তি ২৬ কিলোক্যালরি।
- প্রোটিন ১.৩ গ্রাম।
- শর্করা ৪.৭ গ্রাম।
- লৌহ ০.৮ মিলিগ্রাম।
- চর্বি ০.২ গ্রাম।
- ক্যালসিয়াম ৩১ মিলিগ্রাম।
- খনিজ লবন ০.৫ গ্রাম।
- ক্যারোটিন ৬০০ মাইক্রোগ্রাম।
যে পরিমাণ শরীরের ঘাটতি পূরণ করে বাঁধাকপি
পুষ্টিবিদদের মতে প্রতি ৯০ গ্রাম বা এককাপ বাঁধাকপিতে থাকে খাদ্যশক্তি ২২ ক্যালোরি, ফাইবার ২ গ্রাম, প্রোটিন ১ গ্রাম এবং আমাদের প্রতিদিনের প্রয়োজনীয় চাহিদা মেটায় ৫৪ শতাংশ ভিটামিন "সি", ৮৫ শতাংশ ভিটামিন "কে", ৬ শতাংশ ভিটামিন "বি৬", ৪ শতাংশ ক্যালসিয়াম, ৩ শতাংশ ম্যাগ্নেসিয়াম, ৪ শতাংশ পটাসিয়াম, ১০ শতাংশ ফোলেট এবং ৭ শতাংশ ম্যাঙ্গানিজ।
লাল জাতের বাঁধাকপির বিশেষ উপকারিতা
লাল জাতের বাঁধাকপির শরীরের জন্য বিশেষ উপকারিতা রয়েছে। এই জাতের কপি শরীরের লুটিন, বেটা- কেটাকেরোটিন এবং হৃৎপিণ্ডকে সুস্থ্য সবল রাখার জন্য বিভিন্ন অ্যান্টি অক্সিডেন্টের পরিমাণ বৃদ্ধিতে সাহায্য করে। গবেষণায় জানা যায়, বিশেষ ধরণের ক্যানসার প্রতিরোধ করার ক্ষেত্রে বাঁধাকপি বিশেষ ভূমিকা পালন করে।
কারণ সালফার সমৃদ্ধ উপাদান গ্লুকোসাইনোলেটস বাঁধাকপি থেকে তৈরি হয়ে থাকে, যা রক্ষা কবচ হিসাবে কাজ করে ক্যানসারের বিরুদ্ধে। তাছাড়া বাঁধাকপি ডায়াবেটিস টাইপ টু হওয়ার ঝুকি অনেক কমায়। বাঁধাকপির সর্বোচ্চ পুষ্টিগুণ পাওয়ার জন্য প্রথমে খুব মিহি করে কাটার পর ১০ মিনিটের মত অপেক্ষা করে সালাদে ব্যবহার করুন।
বাঁধাকপি খাওয়ার বিভিন্ন নিয়ম
বিভিন্ন উপায়ে মানুষ বাঁধাকপি খেয়ে থাকেন। বাঁধাকপি কাঁচা, সিদ্ধ করে, ভাজিকরে, ভাপা করে এমনকি কেক বানিয়েও খাওয়া যায়। তাছাড়া অনেকে এটি কুচি কুচি করে কাটার পর সেগুলো রোদে সুন্দর করে শুকিয়ে কাঁচের বা অন্যকোন বয়ামে রেখে দিয়ে সারা বছর খেয়ে থাকেন। এছাড়াও এর পাতা স্যান্ডউইচ বা টরটিলায় ব্যবহার করা হয় ব্রেডের পরিবর্তে।
বাঁধাকপি খাওয়ার ফলে মিলবে পুষ্টি আর কমবে ক্যালোরি এবং শর্করা। বর্তমানে বাংলাদেশে বাঁধাকপির চাষ প্রচুর পরিমাণে হয়। তাই পুষ্টির চাহিদা মেটাতে এই সবজিটি আমরা বেশি বেশি খেতে পারি। শীতকালে আমরা বাঁধাকপির সালাদ রাখতে পারি আমাদের খাবারের তালিকায়। তাছাড়া বাঁধাকপি বিভিন্নভাবে আমরা রান্না করেও খেতে পারি।
যে কারণে বাঁধাকপি বেশি করে খাবেন
অ্যান্টি অক্সিডেন্টে ভরপুর রয়েছে বাঁধাকপিতে। এতে থাকা ফাইটোনিউট্রিয়েন্টস সজিব করে কোষকে, ফোলা কমায়, দূর করে কোষের প্রদাহ। তাহাড়াও বাঁধাকপি গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা পালন করে ডায়াবেটিস, ক্যানসার, হার্টের অসুখ এবং আলঝেইমার প্রতিরোধে। এতে থাকা ফাইবার সাহায্য করে হজমে পাশাপাশি কমায় মন্দ কোলেস্টেরলের এবং নিয়ন্ত্রণে রাখে রক্তের শর্করার মাত্রা। শক্তিশালি করে পাকস্থলী এবং অন্ত্রের ভেতরের অংশকে এবং নিরাময় করে পাকস্থলীর আলসার।
আরো পড়ুনঃ সূর্যের আলোর উপকারতা ও অপকারিতা
বাঁধাকপি খাওয়ার উপকারিতা সমুহ
শীতকালিন সবজি বাঁধাকপি গ্রাম বাংলার অন্যতম জনপ্রিয় একটি খাবার। বাঁধাকপির কয়েকটি জাত থাকলেও বাংলাদেশে শুধুমাত্র সবুজ জাতের বাঁধাকপি পাওয়া যায়। আর বাঁধাকপির রয়েছে বিভিন্ন পুষ্টিগুণ এবং উপকারিতা। নিম্নের আলোচনার মাধ্যমে দেখে নেই বাঁধাকপির বিভিন্ন উপকারিতা সম্পর্কে বিস্তারিতভাবে-
** হাড়ের স্বাস্থ্য ভালো রাখতে বাঁধাকপি সহায়তা করে। কারণ বাঁধাকপিতে রয়েছে যথেষ্ট পরিমাণে ক্যালসিয়াম, সোডিয়াম এবং ফসফরাস, যা দূর করে হাডের বিভিন্ন সমস্যা। এছাড়া বাঁধাকপিতে থাকা বিভিন্ন ভিটামিন সাহায্য করে হাড়কে মজবুত করতে। তাই যারা নিয়মিতভাবে বাঁধাকপি খান, তাদের বয়সের কারণে হাড়ের সমস্যার সম্ভাবনা অনেক হ্রাস পায়।
** বাঁধাকপিতে থাকা গ্লুটামিন গাঁটের ব্যাথা, চর্মরোগসহ রক্ষাকরে অনেক রোগ থেকে। কারণ বাঁধাকপিতে সালফোরাফাইনের মত বিশেষ কয়েকটি অ্যান্টি ক্যানসারাস উপাদান রয়েছে, যা এনজাইম বা উৎকোচের কার্যকরীতাকে বাড়িয়ে তোলার মাধ্যমে প্রতিরোধ করে টিউমারের বৃদ্ধিকে।
** বাঁধাকপিতে রয়েছে ভিটামিন "কে" এবং অ্যান্থোসায়ামিন, যা মানসিক ক্রিয়াকলাপসহ সাহায্য করে একাগ্রতা বাজায় রাখতে। এই দুই অপাদান একসঙ্গে রক্ষা করে স্নায়ুতন্ত্রের ক্ষয়ক্ষতি থেকে। তবে, লাল বাঁধাকপিতে এই উপাদানগুলো অনেক বেশি পাওয়া যায়।
** বাঁধাকপিতে থাকা মিনারেলস এবং ভিটামিন "সি" সাহায্য করে রোগ প্রতিরোধ ক্ষমাতা বাড়াতে। অল্প কিছুদিন আগের এক গবেষণায় উঠে এসেছে যে, যারা নিয়মিতভাবে বাঁধাকপি খান, তাদের রোগ প্রতিরোধ ক্ষমতা অন্যের তুলনায় অনেক বেশি।
** বাঁধাকপিতে থাকা ভিটামিন "সি" দূর করে ত্বকের বিভিন্ন সমস্যা। তাই যারা নিয়মিতভাবে বাঁধাকপি খান, তাদের ত্বকে খুব সহজে বয়সের ছাপ পড়েনা। তাছাড়াও শরীরের ক্ষতিকর ইউরিক অ্যাসিড দূর করতে ভিটামিন "সি" সাহায্য করে।
** পুষ্টিগুণে ভরপুর থাকে শীতকালীন সবজি বাঁধাকপি। এতে রয়েছে বিভিন্ন ধরণের প্রচুর পরিমাণে ভিটামিন। এর মধ্যে অন্যতম হলো, ভিটামিন "বি১, বি২, সি৬, ই, এবং কে", থায়ামিন, রাইবোফ্লোভিন এবং প্যান্টোথেনিক অন্যতম।
** ওজন কমাতে সাহায্য করে বাঁধাকপি। কারণ বাঁধাকপিতে চর্বি এবং কোলেস্টেরল এর পরিমাণ থাকে অনেক কম। তাই যারা নিজের ওজন কমাতে চান, তারা বাঁধাকপি রাখতে পারেন প্রতিদিনের খাদ্য তালিকায়।
** কোষ্ঠকাঠিণ্যর সমস্যা সমাধানে বাঁধাকপি অত্যান্ত কার্যকর। কারণ বাঁধাকপিতে মজুদ রয়েছে প্রচুর পরিমাণে ডায়াটরি অ্যাসিড। বিশেষ করে এর সালাদ কোষ্ঠকাঠিণ্য ও আলসার নিরাময়ে উপকারি।
** বাঁধাকপিতে থাকা অ্যান্টি অক্সিডেন্ট গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা পালন করে ক্যানসারকে দূরে রাখার ক্ষেত্রে। তাছাড়া বাঁধাকপি বিশেষ সাহায্য করে পেপটিক ও পাকস্থলীর আলসার প্রতিরোধে।
** বাঁধাকপিতে থাকা বিটা ক্যারোটিন ভালো রাখে চোখ এবং সম্ভাবনা কমায় ছানি পড়ার। তাছাড়া গ্লুটামিন পাওয়া যায় বাঁধাকপিতে, যা অত্যান্ত কার্যকর প্রদাহ কমাতে।
বাঁধাকপির বিশেষ রেসিপি ভর্তা তৈরির পদ্ধতি
আমাদের দেশের শীতকালীন সবজি বাঁধাকপি অনেকটাই সহজলোভ্য। এই সবজি খেতে প্রায় সকলেই পছন্দ করে থাকেন। এই কপি যেমন বিভিন্নভাবে রান্না করে খাওয়া যায়, তেমনিভাবে এর উপকারিতাও অনেক। তবে উপকারি সহজলোভ্য এই সবজির একটি জনপ্রিয় খাবার হলো ভর্তা।
আর বিভিন্ন ধরণের ভর্তা খেতে পছন্দ করেন না, এমন মানুষ আমাদের দেশে পাওয়া খুবই কঠিন। অনেক ধরণের ভর্তার মতো বাঁধাকপির ভর্তাও কিন্তু অনেক মজাদার খাবার। তাই চাইলে আপনিও খেতে পারেন মজাদার বাঁধাকপির ভর্তা। আর এই ভর্তা খাওয়ার জন্য নিম্নের উপকরণগুলো এর সঙ্গে যুক্ত করতে হবে-
- বাঁধাকপির।
- লবন।
- টমেটো।
- রসুন কুচি।
- পেয়াজ কুচি।
- সরিষার তেল।
- ধনে পাতার কুচি।
উপরের উপকরণগুলো পরিমাণ মত নেওয়ার পর, বাঁধাকপি সুন্দর করে কুচি করে নিন। এবার এর সঙ্গে সামান্য পরিমাণ লবন মশিয়ে কোন প্রকার পানি ছাড়াই সেদ্ধ করে নিন। সেদ্ধ করার সময় চুলার তাপ কমিয়ে ঢেকে দিলে, বাঁধাকপি থেকে যে পানি বের হবে এবং ওই পানিতেই সেদ্ধ হয়ে যাবে। পুরোপুরি পানি শুকিয়ে গেলে নামিয়ে নিন চুলা থেকে।
এবার চুলার উপর একটি প্যান বা পাত্র বসিয়ে তাতে সামান্য পরমাণ সরিষার তেল দিয়ে টমেটো ভেজে নিন। এর সঙ্গে সামান্য পরিমাণ লবন মশিয়ে, চুলার আঁচ কমিয়ে ঢেকে দিন। একটু পরে টমেটো সেদ্ধ হয়ে নরম হয়ে যাবে। চুলায় থাকা অবস্থায় টমেটো হালকা করে নাড়তে থাকুন। খেয়াল করবেন টমেটোর পানি শুকিয়ে ভর্তা ভর্তাভাব হয়ে গেলে চুলা থেকে টমেটোর প্যান নামিয়ে নিন।
টমেটো ঠান্ডা হয়ে গেলে চালতির উপর রেখে ভালো করে চটকিয়ে টমেটোর খোসা ছাড়িয়ে নিন। পুনরাই চুলায় প্যান বসিয়ে সামান্য তেলে রসুন কুচি ও পেয়াজের কুচি এবং লাল মরিচ ভেজে নিন। এবার ধনে পাতার কুচিসহ সকল উপকরণ একসঙ্গে মিশিয়ে সুন্দর করে তৈরি করুন আপনার পছন্দের সেই বাঁধাকপির ভর্তা।
বাঁধাকপির খাওয়ার উপকারিতা- শেষকথা
প্রিয় পাঠক পাঠিকাগণ আমরা আশাকরি, আপনারা যদি আর্টিকেলটি শুরু থেকে শেষ পর্যন্ত পুরোটাই মনোযোগের পড়ে থাকেন, তাহলে নিশ্চয়ই যেনে গেছেন, বাঁধাকপির পুষ্টিগুণ, খাওয়ার উপকারিতা, খাওয়ার নিয়মসহ বিভিন্ন তথ্য। যা আমরা আর্টিকেলে ইতিপূর্বেই আপনাদের সঙ্গে বিস্তারিতভাবে শেয়ার করেছি।
আরো পড়ুনঃ চিনা বাদামের উপকারিতা ও অপকারিতা
আশাকরি আর্টিকেলটি আপনাদের অনেক উপকারে আসবে, বিশেষ করে যারা বাঁধাকপি সম্পর্কে জানতে ইচ্ছুক, তাদের ক্ষেত্রে। আর্টিকেলটি যদি ভালোলাগে ও উপকারি বলে মনে হয়, তবে এটি অন্যের সঙ্গে শেয়ার করবেন। আরো নতুন নতুন তথ্য জানার জন্য আমাদের পরবর্তী আর্টিকেল পড়ুন এবং আমাদের সঙ্গে থাকুন। ধন্যবাদ।
এই ওয়েবসাইটের নীতিমালা মেনে কমেন্ট করুন। প্রতিটি কমেন্ট রিভিউ করা হয়।
comment url