ইসবগুলের ভুসি যে কারণে নিয়মিতি খাবেন
আরো পড়ুনঃ সূর্যের আলোর উপকারতা ও অপকারিতা
ইসব গুলের ভূসি আমাদের প্রায় সকলের কাছে একটি বহুল পরিচিত নাম। আর আমাদের শরীরের জন্য এটি অত্যান্ত উপকারি খাবার। অথচ আমরা অনেকেই এই উপকারি খাবারের প্রতি গুরুত্ব কম দিয়ে থাকি। ইসব গুলের ভূসি আমাদের শরীরকে সুস্থ রাখার জন্য খুবই উপকারি। এটি খাওয়ার ফলে ছোট থেকে বড় সকলেরই অসুখের সমাধান মেলে।
কিন্তু এর উপকারিতার কথা আমরা অনেকেই মাথায় রাখিনা। আর যদি আমরা এর কথা মাথায় রাখতাম, তাহলে কখনোই নিয়মিত খাওয়া ছাড়তাম না। আবার অনেকেই এটি খাওয়ার উপকারিতার কথা সঠিক জানিনা। তাই আজকের আর্টিকেলে আমরা আপনাদের সঙ্গে শেয়ার করবো "ইসব গুলের ভুসি যে কারণে নিয়মিতি খাবেন" সে সম্পর্কে। চলুন তাহলে দেখে নেওয়া যাক-
আজকের পাঠ্যক্রম- ইসবগুলের ভুসি যে কারণে নিয়মিতি খাবেন বিস্তারিত জানুন
- ইসব গুলের পুষ্টি উপাদান
- প্রতিদিন যে পরিমাণ ইসবগুলের ভুসি খেতে পারবেন
- ইসবগুলের ভুসি নিয়মিত খাওয়ার উপকারিতা
- ইসবগুলের ভুসি খাওয়ার নিয়ম
- ইসবগুলের ভুসি খাওয়ার সতর্কতা
- ইসবগুলের উপকারিতা ও অপকারিতা- শেষকথা
ইসব গুলের পুষ্টি উপাদান
ইসব গুলের ভুসিতে রয়েছে বিভিন্ন ধরণের পুষ্টি উপাদান। তার মধ্যে যে সকল পুষ্টি উপাদান মানুষের শরীরের জন্য অত্যান্ত উপকারি তা নিম্নে আলোচনা করা হলো।
প্রতি ১ টেবিল চামচ ইসবগুলের ভুসিতে মানুষের শরীরের জন্য উপকারি উপাদান রয়েছে-
- ক্যালোরি প্রায় ৫৩%
- ক্যালসিয়াম ৩০ মিলিগ্রাম।
- সোডিয়াম ১৫ মিলিগ্রাম।
- শর্করা প্রায় ১৫ গ্রাম।
- আয়রন ০.৯ মিলিগ্রাম।
- ফ্যাট ০%।
প্রতিদিন যে পরিমাণ ইসবগুলের ভুসি খেতে পারবেন
বেশিরভাগ ক্ষেত্রেই ইসবগুলের ভুসি খাওয়ার ফলে কোন পার্শ্ব প্রতিক্রিয়া বা সমস্যার দেখা দেয় না। তবে প্রতিদিন নিয়ম করে ১ টেবিল চামচ ইসবগুলের ভুসি পানিতে ভিজিয়ে দিনে ৩ বার খেতে পারবেন। আপনকে মনে রাখতে হবে যে, ইসবগুলের ভুসি অবশ্যই পানিতে ভিজিয়ে খেতে হবে এবং সারাদিন পর্যাপ্ত পরিমাণে পানি পান করত হবে।
ইসবগুলের ভুসি নিয়মিত খাওয়ার উপকারিতা
ইসবগুলের ভুসি নিয়মিত খাওয়ার রয়েছে অনেক উপকারিতা। অনেকে ইসবগুলের ভুসি খেয়ে থাকেন শুধু পেট পরিস্কার করার জন্য। তবে এটি খাওয়ার কারণে শুধু পেট পরিস্কার করেনা, এটি নিয়মিত খাওয়ার ফলে মিলবে অনেক উপকারিতা। আপনি যদি ইসবগুলের ভুসি নিয়মিত খাবারের তালিকায় রাখেন অনেক উপকার পাবেন। নিম্নের আলোচনার মাধ্যমে আমরা দেখে নেই এর উপকারিতা-
গ্যাস্ট্রিকের সমস্যা দূর করে- বর্তমানে প্রায় মানুষের রয়েছে গ্যস্ট্রিকের সমস্যা, যা এখন একটি কমন রোগে পরিনিত হয়েছে। আর এই সমস্যার সবচেয়ে বড় কারণ হলো অনিয়মিত এবং ভুল খাদ্যাভাস। গ্যাস্ট্রিকের সমস্যা ঘরোয়াভাবে দূর করার অন্যতম প্রধান উপায় হলো নিয়মিত ইসবগুলের ভুসি খাওয়া। কারণ ইসবগুলের ভুসি পাকস্থলীতে তৈরি করে প্রতিরক্ষামূলক একটি স্তর।
ফলে অ্যাসিডিটির বার্ন থেকে রক্ষা কর পাকস্থলীকে। এটি হজম প্রক্রিয়া ঠিক রাখার জন্য সাহায্য করে পাকস্থলীর বিভিন্ন এসিড নিঃসরণে। আর এই গ্যাস্ট্রিকের সমস্যা থেকে রক্ষা পাওয়ার জন্য নিয়মত একগ্লাস দুধের সঙ্গে ২ টেবিল চামচ ইসবগুলের ভুসি মিশিয়ে খাবেন। এতে আপনি খুব সহজেই মুক্তি পাবেন গ্যস্ট্রিকের সমস্যা থেকে।
কোষ্টকাঠিণ্যের সনস্যা দূর করে- কোষ্টকাঠিণ্য রোগকে যদিও আমরা মনেকরি থাকি, কিন্তু এটা একটি অনেক বড় রোগ। কারণ আপনার যদি কোষ্টকাঠিণ্যের সমস্যা শরীরে দেখা দেয়, তাহলে শরীরের ভিতরে স্বাভাবিক থাকা বিভিন্ন ক্রিয়াকে বাঁধাগ্রস্ত করে। ফলে আপনার শরীরে বিভিন্ন ধরণের বিরূপ প্রতিক্রিয়া দেখা দেয়।
আর আপনি যদি ঘরোয়াভাবে এই সমস্যার সমাধান করতে চান, তবে নিয়মিত ইসবগুলের ভুসি খান। কারণ এটি পাকস্থলি যাওয়ার পর ফুলে যায় এবং পাকস্থলির ভিতরে থাকা দুষিত বর্জ্য বের করতে সাহায্য করে। এই সমস্যা থেকে মুক্ত পেতে প্রতিদিন রাতে ঘুমানোর আগে হালকা গরম দুধের সঙ্গে ২ টেবিল চামচ ইসবগুলের ভুসি খেলে কোষ্টকাঠিণ্য দূর হবে।
ভালো রাখে হার্ট- আপনি যদি হার্টের সমস্যা থেকে রক্ষা পেতে চান, তবে নিয়মিত খাবারের তালিকায় ইসবগুলের ভুসি খাওয়ার অভ্যাস গড়ে তুলুন। কারণ ইসবগুলের ভুসিতে থাকা খাদ্যআঁশ আপনার শরীরে কোলেস্টেরলের মাত্রাকে কমিয়ে রাখে এবং হৃদ রোগকে দূরে রাখে। ইসবগুলের ভুসি পাকস্থ্যলির ভিতরের দেয়ালে পাতলা আবরণ সৃষ্টি করে।
আরো পড়ুনঃ চিনা বাদামের উপকারিতা ও অপকারিতা
যা খাদ্যতে থাকা কোলেস্টেরল শোষণ করতে বাঁধা দেয়, ফলে কোলেস্টেরলের মাত্রা কমায় রক্তের সিরাম। এছাড়াও এটি রক্তের মধ্যে থাকা অতিরিক্ত কোলেস্টেরল সরিয়ে ফেলতে সাহায্য করে। ফলে আপনার ভয় কমে যায় ধমনীতে ব্লক সৃষ্টিতে।
প্রতিরোধ করে পাইলস- প্রাকৃতিকভাবে ইসবগুলের ভুসি, ভরপুর রয়েছে দ্রবনীয় এবং অদ্রবনীয় খাদ্যআঁশ। অনেকে আছেন যারা বায়ুপথের ফাটল এবং বেদনাদায়ক পাইলসের মত সমস্যায় ভুগছেন, তাদের জন্য ইসবগুলের ভুসি অত্যান্ত কার্যকরী খাবার।
তাই ইসবগুলের ভুসি শুধু আমাদের পেটকে পরিস্কার করতে সাহায্য করে না, সঙ্গে সঙ্গে সহায়তা করে থাকে অন্ত্রের পানিকে শোষণ করতে এবং ব্যাথামুক্ত অবস্থায় আমাদের শরীর থেকে বের করতে সাহায্য করে। এছাড়াও সাহায্য করে প্রদাহের খত সারতে। এরজন্য প্রতিদিন রাতে ঘুমানোর আগে হালকা গরম দুধের এবসঙ্গে ২ টেবিল চামচ ইসবগুলের ভুসি খান।
ডায়রিয়া প্রতিরোধে সাহায্য করে- ডায়রিয়া প্রতিরোধে ইসবগুলের ভুসি গুরুত্বপূর্ণ ভুমিকা রাখে। ডায়রিয়া থেকে রক্ষা পাওয়ার জন্য দইয়ের সঙ্গে ইসবগুলের ভুসি মিশিয়ে খেলে মুক্তি পাওয়া যায়। কারণ দইয়ে রয়েছে প্রোবায়োটিক, যেটি আমাদের পাকস্থলীর ইনফেকশন সারতে সাহায্য করে।
তাছাড়া ইসবগুলের ভুসি আমাদের তরল মলকে শক্ত করতে সাহায্য করে এবং দ্রুতই সেরে জায় ডায়রিয়া। ড্যরিয়া থেকে মুক্তি পেতে দিনে ২ টেবিল চামচ ইসবগুলের ভুসি এবং ৩ টেবিল চামচ দই মিশিয়ে ভরা পেটে দিনে ২ বার খাবেন। তাছাড়া ইসবগুলের ভুসি আমাশয় দূর করতে অনেক কার্যকর।
প্রসাবের সমস্যা দূর করে- প্রাসাবের জ্বালাপোড়ার মত জটিল সমস্যার হাত থেকে রহাই পেতে ইসবগুলের ভুসি গুরুত্বপূর্ণ ভুমিকা পালন করে। প্রাসাবের জ্বালাপোড়ার সমস্যা নিরসনে এটি নিয়মিত খান। এর জন্য পরিমাণত আখের গুড়ের সঙ্গে ইসবগুলের ভুসি মিশিয়ে নিয়মিত সকাল ও বিকালে খেলে উপকার পাওয়া যায়। এইভাবে এক সপ্তাহ খেলে অনেক উপকার পাবেন।
অন্ত্রের দেয়াল পিচ্ছিল করে- বিশেষ একধরণের ডায়াটরি ফাইবার রয়েছে ইসবগুলের ভুসিতে। যার থেকে দ্ররীভূত হয় কিছু পানি এবং কিছু দ্ররীভূত হয় না। আর অন্ত্রের ভিতরে থাকা অবস্থায় ইসবগুলের ভুসি শোষণ করে প্রচুর পরিমাণে পানি। ফলে কোন কিছুর সঙ্গে বিষ ক্রিয়া তৈরি করেনা এবং অন্ত্রের দেয়ালকে করে তোলে পিচ্ছিল।
ইসবগুলের ভুসি খাওয়ার নিয়ম
- প্রতিদিন নিয়মিত বড় একগ্লাস বা ২৪০ মিলিলিটার পানির মধ্যে খুব ভালো করে ভিজিয়ে খেতে হবে।
- বিশেষজ্ঞ ডাক্তারদের মতে প্রতিদিন নিয়মিতভাবে এক বা দুই টেবিল চামচ ইসবগুলের ভুসি খাওয়া যেতে পারে।
- যেহেতু ইসবগুল পানি শোষণ করে অন্ত্র থেকে, তাই দুই টেবিল চামচ ইসবগুলের ভুসির সঙ্গে পানি বা দুধ মিশিয়ে খেলে ভালো ফলাফল পাওয়া যায়।
- বেশীক্ষণ ইসবগুলের ভুসি ভিজিয়ে রাখলে, এটি বাইরে থেকে পানি শোষণ কর নেয় এবং এর কার্যকরীতা কমে যায়। তাই বেশিক্ষণ ভিজিয়া না রেখে এটি খাওয়াই ভালো।
- ওজন কমানোর জন্য বড় একগ্লাস বা ২৪০ মিলিলিটার পানির মধ্যে খুব ভালো করে ইসবগুল ভিজিয়ে খালি পেটে খেতে হবে। এতে আপনার পেট অনেক সময় পর্যন্ত পূর্ণ থাকবে। তাছাড়া পেট পরিস্কার ও চর্বি কমায় এটি।
ইসবগুলের ভুসি খাওয়ার সতর্কতা
- অতিরিক্ত ইসবগুলের ভুসি খাওয়ার ফলে খুদামান্দ্যসহ ডাইরিয়া হওয়ার সম্ভাবনা রয়েছে।
- ইসবগুলের ভুসি প্রভাব ফেলে বিভিন্ন ওসুধের কার্যকারিতায়, তাই যারা ওসুধ সেবন করেন, তাঁরা ওসুধ সেবনের দুই ঘণ্টা আগে অথবা দুই ঘন্টা পরে এটি খাবেন।
- ইসবগুলের ভুসি কখনোই খোলা কিনবেন না। কারণ সেগুলো ভেজাল কিংবা নষ্ট থাকতে পারে। ফলে এগুলো খেলে উপকারের পরিবর্তে ক্ষতি হতে পারে।
- বর্তমানে বাজারে বিভিন্ন প্রকার কৃত্রিম স্বাদের ইসবগুলের ভুসি পাওয়া যায়। তবে ভালো ফলাফল পাওয়ার জন্য এই সমস্ত কৃত্রিম স্বাদের ইসবগুল কিনা ও খাওয়া থেকে বিরত থাকুন।
- কৃত্রিম স্বাদ ও রঙের ইসবগুল অনেক সময় স্বাস্থ্যের ক্ষতি করে থাকে। তাই সাধারণ ইসবগুল খাওয়াই উত্তম।
এই ওয়েবসাইটের নীতিমালা মেনে কমেন্ট করুন। প্রতিটি কমেন্ট রিভিউ করা হয়।
comment url