পায়ের গোড়ালী ফাটার কারণ ও প্রতিকার
আরো পড়ুনঃ চুলের যত্নে অ্যালোভেরার জেল ব্যবহার
শীত এসেছে, আর শুরু হয়ে গেছে ত্বকের বিভিন্ন সমস্যার সঙ্গে সঙ্গে পায়ের গোড়াফাটার হিড়িক। শীতে পায়ের গোড়ালী ফাটেনি এমন মানুষ খুজে পাওয়া কঠিন। আর পায়ের গোড়ালী ফাটলে যে শুধু সৌন্দর্যের হানি ঘটে, তা কিন্তু ভাবা যাবে না। কারণ পায়ের গোড়ালী ফাটার পেছনে লুকিয়ে থাকতে পারে অন্য কোন রোগের লক্ষণ।
তাছাড়াও পায়ের গোড়ালী ফাটার করণে পা ব্যথাসহ অসুবিধায় পড়তে হয় হাটা চলার খেত্রেও। তাই প্রায় সকলেই আমরা সচেতন হতে শুরু করি শীতের বার্তা পেতেই। কারণ বছরের অন্য যে কোন সময়ের চেয়ে আমরা শীতের মৌসুমে নিয়ম করে দুপুরে এবং রাতে ব্যবহার করি বিভিন্ন ধরণের লোশন বা ভ্যাসলিনের মত নানা প্রোডাক্ট।
কিন্তু আমরা বেশিরভাগ ক্ষেত্রেই ব্যর্থ হই। কারণ সমস্যা জানতে না পারলে সমাধানের পথ খুজে পাওয়া কঠিন। তাই আজেকের আর্টিকেলে আমরা আপনাদের সঙ্গে শেয়ার করবো "পায়ের গোড়ালী ফাটার কারণ ও প্রতিকার'' সম্পর্কে বিস্তারিত সকল তথ্য। চলুন তাহলে আমরা দেখে নেই এই সম্পর্কে-
আজকের পাঠ্যক্রম- পায়ের গোড়ালী ফাটার কারণ ও প্রতিকার সম্পর্কে বিস্তারিত জানুন
- পায়ের গোড়ালী ফাটার কারণ
- পায়ের গোড়ালী ফাটার অন্যান্য কারণ
- পায়ের গোড়ালী ফাটা রোধের উপায়
- পায়ের গোড়ালী ফাটা রোধের ঘরোয়া উপায়
- পায়ের গোড়ালী ফাটার প্রতিকার- শেষকথা
পায়ের গোড়ালী ফাটার কারণ
পায়ের গোড়ালী ফাটার সমস্য কিন্তু নতুন নয়। আমাদের পরিবার কিংবা পরিচিতিদের প্রায় সকলের জীবনেই কোন কোন সময় মুখোমুখি হতে হয়েছে এই সমস্যার। এটি একটি কমন সমস্যা, কারণ এই সমস্যা পড়েন ছেলে বা মেয়ে যে কেউ। পা ফাটার কারণে পায়ে ব্যথা, দেখতে খারাপ লাগাসহ জুতা ছাড়া বাইরে বের হয়া অনেক কঠিন হয়ে দাড়ায়।
পা ঢেকে রেখে লজ্জার হাত থেকে রক্ষা পাওয়া যায়, কিন্তু এড়ানো যায় না নিজের সমস্যা। আর এই সমস্যা থেকে বাঁচার জন্য আমাদের জানতে হবে পায়ের গোড়ালী ফাটার কারণগুলি। চলুন আমরা নিম্নের আলোচনার মাধ্যমে দেখে নেই পা ফাটার কারণগুলি-
** নিউট্রিশন- পা ফাটার অন্যতম প্রধান কারণ হতে পারে শরীরে নিউট্রিশনের অভাব। এটা শুনতে অবাক মনে হলেও সত্য যে, আমাদের শরীরের বিভিন্ন ত্বকের জন্য গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা পালন করে ভিটামিন "বি এবং সি"। আর আমাদের শরীরে এই দু'টি ভিটামিনের অভাব ঘটলে ফেটে যেতে পারে পায়ের গোড়ালীর চামড়া।
** ডিহাইড্রেশন- ডিহাইড্রেশনকে পায়ের গোড়ালী ফাটার প্রধান কারণ হিসাবে মনে করা হয়ে থাকে। কারণ আমাদের শরীরে যখন ডিহাইড্রেশন বা পানি শূন্যতা দেখে দেয়, স্বাভাবিকভাবে তখন পা ফাটবে। তাছাড়াও পরিবেশ যখন অতিরিক্ত শুস্ক হয়, তখন পায়ের গোড়ালী ফেটে যেতে পারে।
** ব্যক্তগত অভ্যাস- বেশিক্ষণ সময় ধরে খালি পায়ে থকে কাজ করা পা ফাটার অন্যতম কারণ। খালি পায়ে কাজ করলে বেড়ে যায় ত্বকে ঘর্ষণের পরিমাণ, ফলে ফেটে যায় পায়ের গোড়ালী। তাছাড়া বেশিক্ষণ জুতা ও মুজা না পরার কারণে পায়ের গোড়ালী ফেটে যেতে পারে।
আরো পড়ুনঃ ত্বকের যত্নে কাঁচা হলুদের ফেস প্যাক
** বাইরের পরিবেশ- ঘরের বাইরে বেশিক্ষণ ধুলাবালিতে কাজ বা ক্ষেতে খামারে কাজ করার ফলেও ফেটে যেতে পারে পায়ের গোড়ালী।
পায়ের গোড়ালী ফাটার অন্যান্য কারণ
উপরের কারণ ছাড়াও যে সকল রোগের কারণে পায়ের গোড়ালী ফাটতে পারে, নিম্নে তা আলোচনা করা হলো-
** পামোপ্লান্টার কেরাটোডার্মা- এটি একটি সম্পূর্ণ জিনবাহিত রোগ। এই রোগের কারণে রোগীর পায়ের চামড়া পুরু ও শক্ত হয় এবং খুব সহজেই ফেটে যায় শক্ত ও পুরো পায়ের চামড়া। আর ফাটা স্থান থেকে বের হয় রক্ত। তাছাড়া পা ফাটার কারণে প্রধা্ন যে সমস্যা দেখা যায়, তা হলো ফাটা স্থান দিয়ে শরীরে ঢুকে যায় বিভিন্ন জীবাণু। ফলে দেখা দেয় অনেক ধরণের ইনফেকশন এবং কঠিন প্রদাহ।
** সোরিয়াসিস- এটি এক ধরণের ইমিউন জাতীয় রোগ, এই রোগের ফলে শরীরের ত্বকের উপরে হয়ে যায় চাকা চাকা, যেখানে শুরু হয় চুলকানি এবং উঠে যায় চামড়া। বিশেষ করে সোরিয়াসিসের কারণে হাত ও পায়ের চামড়া উঠে যায় এবং মাংসপেশিতে ভেতরে দেখা দেয় লালচেভাব।
** পিটিরিয়াসিস রুব্রা পিলারিস- জীনঘটিত সোরিয়াসিসের মত পিটিরিয়াসিস রোগেও হাত ও পায়ে চুলকানি এবং চমড়া উঠে যায়।
উপরে উল্লেখিত রোগ ছাড়াও আরো বেশ কিছু রোগের কারণে আমাদের পায়ের গোড়ালী ফেটে যেতে পারে। এই সকল অপরিচিত রোগের কারণেও আমাদের সমস্যা হতে পারে। কিন্তু আমাদের সাবধান থাকতে হবে পা ফাটার রোগের থেকে। কারণ এর থেকে হতে পারে বড় ধরণের কোন রোগের সূচনা।
পায়ের গোড়ালী ফাটা রোধের উপায়
পায়ের গোড়ালী ফাটা প্রতিরোধ করার প্রধান উপায় বা কাজ হলো আমাদের পা পরিস্কার এবং মসৃণ রাখা। আর এটা যদি আপনি নিশ্চিত করতে পারেন, তবে অনাকাঙ্খিত পায়ের গোড়ালী ফাটা রোধ করা সম্ভাব। নিম্নে পায়ের গোড়ালী ফাটা প্রতিকারের উপায় সম্পর্কে আলোচিনা করা হলো-
- খালি পায়ে চলাফেরা বন্ধ করা।
- আরাম দায়ক জুতা পরিধান করা।
- বেশি পরিমাণে পা ফেটে গেলা রাতে ভ্যাসলিন দিয়ে পায়ে মুজা পরে ঘুমান।
- পাকে ধুলাবালি এবং শুস্ক আবহাওয়া থেকে রক্ষা করার জন্য শীতের শুরু থেকেই মোজা ব্যবহার শুরু করা।
- প্রতিদিন পানি পান করুন পর্যাপ্ত পরিমাণে। তবে যারা এসি রুম ব্যবহার করেন, তাদের জন্য এই নিয়মটি বেশী পালনীয়।
- গোসল শেষে পায়ের গোড়ালীকে ময়েশ্চারাইজ করার জন্য পায়ে লোশন ব্যবহার করা। আবার নারকেল তেল বা অলিভ অয়েল ব্যবহার করা যায়। কারণ এতে রক্ত সঞ্চালন বাড়বে।
- পিউমিস স্টোন বা ঝামা পাথর দিয়ে পায়ের গোড়ালী পরিস্কার করা, যাতে পায়ের মধ্যে থাকা মৃত কোষ দূর হয়। পা ধোয়ার পর পায়ে নারকেল তেল বা অলিভ অয়েল ব্যবহার করা। কারণ এতে রক্ত সঞ্চালন বাড়বে।
পায়ের গোড়ালী ফাটা রোধের ঘরোয়া উপায়
আমরা খুব সহজেই নিম্নের ঘরোয়া উপায়গুলো ব্যবহার করার মাধ্যমে দ্রুত পা সুন্দর, মসৃণ এবং পায়ের গোড়ালী ফাটা রোধ করতে পারি। চলুন দেখে নেই উপায় সমুহ-
- একটি বালটিতে পরিমাণ মত হালকা গরম পানি নিন। আপনাকে খেয়াল রাখতে হবে পানির তাপমাত্রা যেন অবশ্যই সহনীয় হয়। এরপর উক্ত পানির মধ্যে কয়েক ফোটা লবণ মিশিয়ে ২৫/৩০ মিনিট পা পানিতে ভিজিয়ে রাখুন। এতে করে পায়ের চামড়া হবে নরম এবং সঙ্গে সঙ্গে পা থাকবে হাইড্রেটেড।
- একটি বাটিতে সমপরিমাণে গোলাপজল এবং গ্লিসারিন মিশিয়ে নিন। উপরের উপাদান দু'টি একসঙ্গে মিশিয়ে পায়ে লাগিয়ে সারারাত রেখে দিন এবং সকাল বেলে পানি দিয়ে পরিস্কার করুন। কারণ গ্লিসারিন মসৃণ করে ত্বককে এবং গোলাপজলে রয়েছে অ্যান্টি অক্সিডেন্ট, যা পুষ্টি যোগায় ত্বকে।
এই ওয়েবসাইটের নীতিমালা মেনে কমেন্ট করুন। প্রতিটি কমেন্ট রিভিউ করা হয়।
comment url