নওগাঁর দর্শনীয় স্থান পাহাড়পুর বৌদ্ধ বিহার
নওগাঁ জলা তথ্য রাজশাহী বিভাগে পিকনিক, ভ্রমন কিংবা শিক্ষা সফরের কথা উঠলেই, সবার আগে যে নামটি আসে, তা হলো ঐতিহাসিক পাহাড়পুর বৌদ্ধ বিহার বা সোমপুর বৌদ্ধ বিহার। এই বৌদ্ধ বিহারের সঙ্গে জড়িয়ে আছে এক সময়ের বিখ্যাত পাল বংশের ইতিহাস। তাইতো অবসর সময় কাটাতে বিশেষ করে শিক্ষা সফরের জন্য এই স্থানকে বেচে নেন নওগাঁ জলা তথ্য রাজশাহী বিভাগের বেশিরভাগ মানুষ।
কিন্তু অনেকেই সঠিকভাবে জানেন ঐতিহাসিক পাহাড়পুর সম্পর্কে। তাই তারা গুগলে সার্চ করেন পাহাড়পুর সম্পর্কে জানার জন্য। আর আপনাদের সুবিধার জন্য আজকের আর্টিকেলে আমরা আপনাদের সঙ্গে শেয়ার করবো "নওগাঁর দর্শনীয় স্থান পাহাড়পুর বৌদ্ধ বিহার'' সম্পর্কে। চলুন তাহলে আমরা দেখে নেই ঐতিহাসিক এই স্থান সম্পর্কে-
আজকের পাঠ্যক্রম- নওগাঁর দর্শনীয় স্থান পাহাড়পুর বৌদ্ধ বিহার
- পাহাড়পুর বৌদ্ধ বিহার কোথায় অবস্থিত
- ঐতিহাসিক পাহাড়পুর বৌদ্ধ বিহারের ইতিহাস
- ঐতিহাসিক পাহাড়পুর বৌদ্ধ বিহারের বর্ণনা
- ঐতিহাসিক পাহাড়পুর বৌদ্ধ বিহারে কি কি ছিল
- ঐতিহাসিক পাহাড়পুর বৌদ্ধ বিহারে প্রবেশের সময়সূচী
- কিভাবে যাবেন ঐতিহাসিক পাহাড়পুর বৌদ্ধ বিহার
- কোথায় খাবেন ঐতিহাসিক পাহাড়পুর বৌদ্ধ বিহার
- কোথায় থাকবেন ঐতিহাসিক পাহাড়পুর বৌদ্ধ বিহার
- পাহাড়পুর বৌদ্ধ বিহার ভ্রমন- শেষকথা
পাহাড়পুর বৌদ্ধ বিহার কোথায় অবস্থিত
রাজশাহী বিভাগের নওগাঁ জেলা শহর থেকে প্রয় ৩১ কিলোমিটার ও জয়পুরহাট জেলা শহর থেকে মাত্র ১৫ কিলোমিটা এবং বদলগাছী উপজেলে সদর থেকে মাত্র ১০ কিলোমিটার দূরে ঐতিহাসিক পাহাড়পুর বৌদ্ধ বিহার অবস্থিত। এটি বাংলাদেশের তালিকাভূক্ত প্রত্নতাত্ত্বিক স্থাপনাগুলোর মধ্যে অন্যতম।
ঐতিহাসিক পাহাড়পুর বৌদ্ধ বিহারের ইতিহাস
পাহাড়পুর বা সোমপুর বৌদ্ধ বিহারটি বর্তমানে ধ্বংসের দ্বারপ্রান্তে। এই বৌদ্ধ বিহারটি নির্মাণ করেন ৯ম শতকে এক সময়ের বিখ্যাত পাল বংশের ২য় রাজা শ্রী ধর্মপাল দেব। ১৮৭৯ সালে বিখ্যাতি ঐতিহাসিক স্যার কানিংহাম ঐতিহাসিক এই বৌদ্ধ বিহারটি আবিস্কার করেন। পাহাড়পুর বৌদ্ধ বিহারকে ১৯৮৫ সালে বিশ্ব ঐতিহ্যবাহী স্থান হিসাবে ইউনেস্কো তালিকাভুক্ত করে।
পাহাড়পুর বৌদ্ধ বিহারটি বৌদ্ধদের ধর্মচর্চার কেন্দ্র হিসাবে প্রায় ৩০০ বছর ধরে পরিচিত ছিল। তৎকালীন সময়ে বিভিন্ন দেশ, বিশেষ করে মালয়েশিয়া, ইন্দোনেশিয়া, তিব্বত, চীন, মায়ানমার ইত্যাদি দেশ থেকে ছুটে আসতেন ধর্ম এবং জ্ঞান অর্জনের জন্য।
ঐতিহাসিক পাহাড়পুর বৌদ্ধ বিহারের বর্ণনা
ঐতিহাসিক এই বিহারটি উত্তর- দখিণে ৯২২ ফুট এবং ৯১৯ ফুট পূর্ব- পশ্চিমে বিস্তৃত। এখানে বৌদ্ধ ভিক্ষুদের বসবাসের জন্য ১৭৭ টি কক্ষ ছিল। বিহারের ঠিক মাঝখানে ৪০০ ফুট দৈর্ঘ্য ও ৩৫০ ফুট প্রস্থ্য এবং ৭০ ফিট উচ্চতা বিশিষ্ট একটি মন্দির ছিল। যা এই বিহারের শোভা বাড়িয়ে তুলেছিল। মন্দিরের বাইরের দেয়ালে স্থান পেয়েছিল পোড়ামাটির বেশকিছু বৌদ্ধ এবং হিন্দুদের দেবী মূর্তি।
পাহাড়পুর বৌদ্ধ বিহারটির চারিদিকের মূল বেষ্টনী ছিল প্রায় ২০ ফুট চড়া। তবে এই বেষ্টনির ভেতরে পাওয়া যায় আরো একটি বৌদ্ধ মন্দির। প্রায় চোতুস্কোনাকার ঐতিহাসিক এই বিহারের চারিদিকে ঘেরা ছিল একটি চওড়া সীমানা প্রাচীর দিয়ে। ধারণা করা হয়ে থাকে যে, এখানকার সবগুলো কক্ষে বাস করতেন বৌদ্ধ ভিক্ষুরা এবং কিছু কক্ষ ব্যবহার করা হতো ভিক্ষুদের প্রার্থনা কক্ষ হিসাবে।
বিহারটির উত্তর দিকের ঠিক মাঝখানে রয়েছে বিহারে মূল প্রবেশের পথ। ১৯৮৪ সাল পর্যন্ত একটি পুকুর ছিল প্রবেশ পথের সম্মুখে। ১৯৮৪-৮৫ সালের দিকে এই বিহারটি খনন কাজ পরিচালনার সময় পাওয়া যায় খলিফা হারুন আল রশিদের শাসনামলের প্রচুর পরিমাণে রৌপ্য মুদ্রা। যা বর্তমানে রয়েছে সেখানে থাকা জাদুঘরে। এছাড়াও পাওয়া যায় বেশ কিছু মূর্তি, শিলালিপি এবং অন্যান্য মুদ্রা।
ঐতিহাসিক পাহাড়পুর বৌদ্ধ বিহার কি কি ছিল
কেন্দীয় মন্দির- ঐতিহাসিক এই বৌদ্ধ বিহারের ভিতরে মাঝখানে উম্মুক্ত চত্তরে একটি কেন্দ্রীয় মন্দ্রিরের ধ্বংসাবশেষ রয়েছে। মন্দিরের পুরো দেয়াল জুড়ে বিস্ময়কর স্থাপত্য শিল্পের নিদর্শন লক্ষণীয়। এখানে পোড়া মাটির ফলক চিত্র পাওয়া যায় প্রায় ২০০০ টি। ৪০০ ও ৩৫০ ফুট দীর্ঘ ও প্রস্থের আকর্ষণীয় এই মন্দিরটি নির্মাণ করা হয়েছিল ইটের সঙ্গে কাদামাটি মিশিয়ে।
শৌচাগার ও স্নানাগার- এই বৌদ্ধ বিহারের দক্ষিণ পার্শ্বে দেয়াল থেকে প্রায় ২৭ মিটার বাইরে বড় একটি মঞ্চের উপর নির্মাণ করা হয়েছিল বেশ কিছু শৌচাগার ও স্নানাগার। যা বিহারের ১০২ নম্বার কক্ষের সঙ্গে উচু একটি বাধানো পথের সঙ্গে সংযুক্ত ছিল।
সন্ধ্যাবতীর ঘাট- ঐতিহাসিক এই বিহারের দক্ষিণ- পূর্ব কোণে দেয়ালের বাইরে দেখতে পাওয়া যায় শান বাধানো একটি ঘাট। যা সন্ধাবতী ঘাট নামে পরিচিত। লোককথা আছে রাজার কণ্যা সন্ধ্যাবতী স্নান করতেন এই ঘাটে।
গন্ধেশ্বরী মন্দির- সন্ধ্যাবতী স্নান ঘাট থেকে পশ্চিমে মাত্র ১২ মিটার দূরে আরো একটি মন্দির ছিল। মন্দিরটিকে স্থানীয়ভাবে ডাকা হয় গন্ধ্যেশরীর মন্দির নামে। এই মন্দিরটির দৈর্ঘ্য এবং প্রস্থ্য ৬.৭ ও ৩.৫ মিটার। মন্দিরের সামনের দেয়ালে পদ্মফুলের নকশা এবং দক্ষিণ দেয়ালে স্থাপিত হয়েছে বৌদ্ধদেবী পদ্মমুনির মূর্তি।
সত্যপীরের ভিটা- পাহাড়পুর বৌদ্ধ বিহার থেকে মাত্র ৩৬৫ মিটার দূরে অবস্থিত সত্যপীরের ভিটা। সত্যপীরের ভিটায় দেখা মিলে ১৩২টি বিনোদন স্তূপের ধ্বংসাবশেষ এবং একটি তারা মন্দির। মন্দিরে পাওয়া যায় পোড়ামাটির ফলক ৫০টি, অষ্টহস্ত দেবীমূর্তি এবং বৌদ্ধ ধর্মের মতাদর্শে লিখিত লিপি, পোড়া মাটির সীলগুলি। ১৩২টি বিনোদন স্তূপ রয়েছে মন্দির এলাকায়।
উম্মুক্ত অঙ্গন- ঐতিহাসিক এই বৌদ্ধ বিহারের মাঝখানের উম্মুক্ত এলাকায় ধ্বংসপ্রাপ্ত অনেকগুলি ইমারতে চিহ্ন দেখতে পাওয়া যায়। এখানে দেখা যায় প্রশাসনিক ভবন, রান্নাঘর, ভোজনশালা, কুয়া, বিনোদন স্তূপ ইত্যাদি।
ঐতিহাসিক পাহাড়পুর বৌদ্ধ বিহারে প্রবেশের সময়সূচী
প্রতি রবিবার ঐতিহাসিক পাহাড়পুর বৌদ্ধ বিহার সারাদিন এবং সোমবার অর্ধ দিবসসহ সরকারি ছুটির দিন বন্ধ থাকে। এপ্রিল মাস থেকে সেপ্টেম্বর মাস পর্যন্ত সকাল ১০ টা থেকে বিকাল ০৬টা পর্যন্ত এবং সোমবার দুপুর ২.৩০ টা বিকাল ৬ টা পর্যন্ত খোলা থাকে এবং অক্টোবর মাস থেকে মার্চ মাস পর্যন্ত সকাল ০৯ টা থেকে বিকাল ০৫টা পর্যন্ত এবং সোমবার দুপুর ১.৩০ টা বিকাল ৫ টা পর্যন্ত খোলা থাকে।
কিভাবে যাবেন ঐতিহাসিক পাহাড়পুর বৌদ্ধ বিহার
বাসযোগে- ঢাকা বা দেশের যে কোন স্থান থেকে আপনাকে প্রথমে জেতে হবে নওগাঁ জেলে শহর কিংবা জয়পুরহাট জেলা শহরে। নওগাঁর বালুডাঙ্গা বাস টার্মিনাল বা জয়পুরহাটের রেলগেট থেকে সিএনজি বা অটোরিক্সায় করে অথবা নওগাঁর বালুডাঙ্গা টার্মিনাল থেকে বদলগাছি পর্যন্ত বাসে চড়ে এবং সেখান থেকে সিএনজি বা অটোরিক্সায় বা রিক্সায় করে খুব সহজে ঐতিহাসিক পাহাড়পুর বৌদ্ধ বিহার যেতে পারবেন।
ট্রেনযোগে- আর যদি ট্রেনযোগে যেতে চান, সেক্ষেত্রে ট্রেন থেকে নামতে হবে জয়পুরহাট জেলার জামালগঞ্জ রেলওয়ে স্টেশনে। এখান থেকে ঐতিহাসিক পাহাড়পুর বৌদ্ধ বিহারের দূরত্ব মাত্র ৫ কিলোমিটার। তাই জামালগঞ্জ রেলওয়ে স্টেশনে অটো রিক্সা বা যে কোন যান- বাহনে কম সময়ে খুব সহজে যাওয়া যায়।
কোথায় খাবেন ঐতিহাসিক পাহাড়পুর বৌদ্ধ বিহার
খাওয়ার জন্য আপনি ঐতিহাসিক পাহাড়পুর বৌদ্ধ বিহা্রের গেটের সামনে বা পাহাড়পুর বাজারে বেশ কয়েকটি মাধ্যম মানের ভাত বা অন্য সকল প্রকারের হোটেল রয়েছে সেখানে খেতে পারেন বা আপনি চাইলে নওগাঁ জেলা শহরে বা জয়পুরহাট জেলা শহরে উন্নতসহ সকল ধরণের খাবারের হোটেল রয়েছে সেখানে খাওয়ার কাজ সেরে নিতে পারেন।
কোথায় থাকবেন ঐতিহাসিক পাহাড়পুর বৌদ্ধ বিহার
থাকার জন্য ঐতিহাসিক পাহাড়পুর বৌদ্ধ বিহারের আশেপাশে ব্যবস্থা না থাকায় আপনাকে যেতে হবে নওগাঁ বা জয়পুরহাট জেলা শহরে। সেখানে বিভিন্ন মানের আবাসিক হোটেল রয়েছে, সেখানে আপনারা নিরাপদে থাকতে পারবেন। আর এইজন্য জনপ্রতি ২৫০ টাকা থেকে মানভেদে আরো অধিক টাকা ভাড়া দিতে হবে।
পাহাড়পুর বৌদ্ধ বিহার ভ্রমন- শেষকথা
প্রিয় পাঠাক পাঠিকাগণ আমরা আশাকরি আপনারা যদি আজকের এই গুরুত্বপূর্ণ আর্টিকেলটি শুরু থেকে শেষ পর্যন্ত মনোযোগের সঙ্গে পুরোটাই পডে থাকেন, তাহলে নিশ্চয়ই জেনে গেছেন "নওগাঁর দর্শনীয় স্থান পাহাড়পুর বৌদ্ধ বিহার'' সম্পর্কে সকল তথ্য। যা আমরা আর্টিকেলের মধ্যে ইতিপূর্বেই আলোচনা করেছি।
আশাকরি এটি আপনাদের অনেক উপকারে আসবে, বিশেষ করে যারা ঐতিহাসিক পাহাড়পুর বৌদ্ধ বিহার ভ্রমন করতে ইচ্ছুক, তাদের ক্ষেত্রে। আর্টিকেলটি যদি আপনাদের ভালোলাগে এবং উপকারি বলে মনে হয়, তাহলে এটি অন্যের সঙ্গে শেয়ার করতে ভুলবেন না। আরো নতুন নতুন তথ্য জানার জন্য আমাদের পরবর্তী আর্টিকেল পড়ুন এবং আমাদের সঙ্গে থাকুন। ধন্যবাদ।
এই ওয়েবসাইটের নীতিমালা মেনে কমেন্ট করুন। প্রতিটি কমেন্ট রিভিউ করা হয়।
comment url