ত্বকের যত্নে কাঁচা হলুদের ফেস প্যাক
আরো পড়ুনঃ ব্রণ দূর করার প্রাকৃতিক উপায়
প্রাকৃতিক উপায়ে ঘরোয়াভাবে ত্বকের যত্ন বা রূপচর্চার কথা ভাবলেই সবার আগে যে নামটি আসে তাহলো "কাঁচা হলুদ"। রান্নার স্বাদ বাড়াতে বহুল ব্যবহৃত অন্যতম প্রধান মসল্লা হলো হলুদ। কিন্তু রান্নার শ্বাদ বৃদ্ধির পাশাপাশি ত্বকের যত্নে বা রূপচর্চায় হলুদের জুড়ি মেলা ভার। তাই তো অতি প্রাচীন কাল থেকেই সৌন্দর্য চর্চায় এই প্রাকৃতিক উপাদানটি বহুল ব্যবহৃত হচ্ছে।
কারণ এর মধ্যে রয়েছে, ত্বকের সৌন্দর্য বৃদ্ধি করার ক্ষেত্রে বিশেষ কিছু প্রাকৃতিক উপাদান, যা ব্যবহারের ফলে ত্বক হয়ে উঠে নিখুত এবং নজর কড়া। তবে এই প্রাকৃতিক উপাদানটি ঘরোয়াভাবে ব্যবহার করার জন্য কিছু নিয়ম অবলম্বন করা প্রয়োজন। আর আজকের আর্টিকেলে আমরা আপনাদের সঙ্গে শেয়ার করবো "ত্বকের যত্নে কাঁচা হলুদের ফেস প্যাক" সম্পর্কে। চলুন তাহলে দেখে নেওয়া যাক-
আজকের পাঠ্যক্রম- ত্বকের যত্নে কাঁচা হলুদের ফেস প্যাক
- কাঁচা হলুদে থাকা উপাদান
- কাঁচা হলুদের গুরুত্বপূর্ণ কিছু উপাদান
- ত্বকের যত্নে কাঁচা হলুদের তৈরি ঘরোয়া ফেস প্যাক
- ত্বকের যত্নে হলুদ, দুধ ও মধুর ফেস প্যাক
- ত্বকের যত্নে হলুদ, মধু ও লেবুর রসের ফেস প্যাক
- ত্বকের যত্নে হলুদ ও অ্যাভোকাডোর ফেস প্যাক
- ত্বকের যত্নে হলুদ, দই ও টকেটোর ফেস প্যাক
- ত্বকের যত্নে হলুদ ও জলপাইয়ের তেলের ফেস প্যাক
- ত্বকের যত্নে হলুদ, বেসন ও গোলাপ জলের ফেস প্যাক
- ত্বকের যত্নে হলুদ, ময়দা ও টক দইয়ের ফেস প্যাক
- ত্বকের যত্নে হলুদ ও নারিকেল তেলের ফেস প্যাক
- ত্বকে যত্নে হলুদ ব্যবহারের পার্শ্বপ্রতিক্রিয়া
- রূপচর্চায় কাঁচা হলুদের ব্যবহার। শেষকথা
কাঁচা হলুদে থাকা উপাদান
বহু গুনে গুণান্বিত অসুধি গুণ সম্পূর্ণ মসল্লায় রয়েছে বিভিন্ন ভিটামিন, অ্যান্টি অক্সিডেন্ট এবং খনিজ উপাদানসহ বিভিন্ন প্রাকৃতিক উপাদান। চলুন নিম্নের আলোচনা থেকে জেনে নেওয়া যাক যে, প্রতি ১০০ গ্রাম কাঁচা হলুদে থাকা বিভিন্ন প্রাকৃতিক উপাদান সম্পর্কে-
উপাদানের নাম পরিমান
- ভিটামিন "সি" ৫৩ মিলিগ্রাম।
- ভিটামিন "বি ৬" ০.৫৮ মিলিগ্রাম।
- ম্যাগনেসিয়াম ২৪ মিলিগ্রাম।
- পটাসিয়াম ৪২২ মিলিগ্রাম।
- লোহা ০.৫৮ মিলিগ্রাম।
- মাঙ্গানিজ ২.৮৬ মিলিগ্রাম।
- ফাইবার ৩.১ গ্রাম।
কাঁচা হলুদের গুরুত্বপূর্ণ কিছু উপাদান
উপরে উল্লেখিত উপাদান ছাড়াও কাঁচা হলুদে রয়েছে গুরুত্বপূর্ণ কয়েকটি প্রাকৃতিক উপাদান। যা নিম্নে আলোচনা করা হলো-
- ফোলেট- এটি গর্ভবর্তি মা বোনদের জন্য খুবই গুরুত্বপূর্ণ প্রাকৃতিক উপাদান।
- থায়ামিন- এই উপাদানটি মানুষের শরীরের শক্তি বৃদ্ধি করতে অনেক সাহায্য করে।
- নিয়াসিন- এই প্রাকৃতিক উপদানটি মানুষের শক্তি উৎপাদনের ক্ষেত্রে অনেক গুরুত্বপূর্ণ।
- রিভোফ্লাভিন- এটি অত্যান্ত কার্যকর মানুষের চোখ, ত্বক এবং চুলের স্বাস্থ্য ভালো রাখার ক্ষেত্রে।
- কার্কিউমিন- এটি হলুদের মধ্যে থাকা সবচেয়ে সক্রিয় একটি উপাদান যা প্রতিরোধ করতে পারে অ্যান্টি অক্সিডেন্ট, অ্যান্টি ইনফ্লেমেটরি এবং ক্যান্সার।
- টারমেরিক- এই প্রাকৃতিক উপাদানটি হলুদের অপর একটি সক্রিয় উপাদান, অ্যান্টি অক্সিডেন্ট এবং অ্যান্টি ইনফ্লেমেটরি গুণসম্পন্ন।
ত্বকের যত্নে কাঁচা হলুদের তৈরি ঘরোয়া ফেস প্যাক
ত্বকের যত্নে হলুদ, দুধ ও মধুর ফেস প্যাক
- হলুদের গুড়ো ১/৪ টেবিল চামচ।
- কাঁচা দুধ ১ টেবিল চামচ।
- মধু ১ টেবিল চামচ।
ত্বকের যত্নে হলুদ, মধু ও লেবুর রসের ফেস প্যাক
- হলুদের গুড়ো ১ টেবিল চামচ।
- লেবুর রস ১/২ টবিল চামচ।
- মধু ১ টেবিল চামচ।
ত্বকের যত্নে হলুদ ও অ্যাভোকাডোর ফেস প্যাক
- অ্যাভোকাডার পেস্ট ১ টেবিল চামচ।
- হলুদের গুড়ো ১/৪ টেবিল চামচ।
- টক দই ১ টেবিল চামচ।
ত্বকের যত্নে হলুদ, দই ও টকেটোর ফেস প্যাক
- হলুদের গুড়ো ১/৪ টেবিল চামচ।
- টমেটোর পিউরি ১ টেবিল চামচ।
- টক দই ১ টেবিল চামচ।
ত্বকের যত্নে হলুদ ও জলপাইয়ের তেলের ফেস প্যাক
- হলুদের গুড়ো ১ টেবিল চামচ।
- জলপাইয়ের তেল ১ টেবিল চামচ।
জলপাইয়ের তেল ও হলুদের গুড়ো এই দুইটি উপদান একসঙ্গে সুন্দর করে মিশিয়ে একটি মিশ্রণ তৈরি করে নিন। এবার আপনার তৈরি করা মিশ্রণটি আলতো করে আপনার ত্বকে লাগিয়ে অপেক্ষা করুন শুকানো পর্যন্ত। শুকিয়ে গেলে স্বাভাবিক পানি দিয়ে পরিস্কার করুন। উজ্জল ত্বক পেতে এই মিশ্রণটি প্রতিদিন ব্যবহার করতে পারেন।
এই ফেস প্যাকটি ব্যবহারের ফলে আপনার ত্বক হবে হাস্য উজ্জল। হলুদ আর জলপাইয়ের প্যাকটি প্রতিদিন ব্যবহারের ফলে ত্বকের উজ্জলতা বৃদ্ধি পাওয়ার পাশাপাশি ত্বক হবে দাগহীন, কোমল এবং সতেজ।
ত্বকের যত্নে হলুদ, বেসন ও গোলাপ জলের ফেস প্যাক
ব্রণ হওয়ার প্রবনতাকে হ্রাস করাতে ত্বকের যত্নে হলুদ, বেসন ও গোলাপ জলের ফেস প্যাকটি ব্যবহার করুন। আর এই প্যাকটি তৈরি এবং ব্যবহার করার জন্য আপনাকে যা যা করতে হবে, তা দেখে নিন-
- হলুদের গুড়ো ১ টেবিল চামচ।
- গোলাপ জল ২ টেবিল চামচ।
- বেসন ১ টেবিল চামচ।
উপরের উপাদানগুলো একসঙ্গে মিশিয়ে তৈরী করুন পেস্ট/ ফেস প্যাক। এবার আপনার তৈরি করা ফেস প্যাক বা মিশ্রণটি ত্বকে ভালো করে আপনার ত্বকে লাগিয়ে অপেক্ষা করুন ১০/১৫ মিনিটের মত সময় শুকানোর জন্য। শুকিয়ে গেলে স্বাভাবিক পানি দিয়ে পরিস্কার করুন।
এই ফেস প্যাকটি নিয়মিত ব্যবহারের ফলে, ব্রণ হওয়ার প্রবনতা অনেকটাই হ্রাস করে। কারণ বেসন ত্বকের অতিরিক্ত তেলকে শোষণ করার ফলে ত্বক থাকে ব্যাকটেরিয়ামুক্ত এবং হ্রাস পায় ব্রণ হওয়ার প্রবনতা। তাছাড়া বেসন কাজ করে প্রাক্রিতিক এক্সফলিয়েট হিসাবে।
ত্বকের যত্নে হলুদ, ময়দা ও টক দইয়ের ফেস প্যাক
ত্বকের উজ্জলতা বাড়াতে হলুদ, ময়দা ও টক দইয়ের ফেস প্যাকটি কার্যকর। আর এই প্যাকটি তৈরি এবং ব্যবহার করার জন্য আপনাকে যা যা করতে হবে, তা দেখে নিন-
- হলুদের গুড়ো ১ টেবিল চামচ।
- টক দই ১ টেবিল চামচ।
- ময়দা.১ টেবিল চামচ।
ত্বকের যত্নে হলুদ ও নারিকেল তেলের ফেস প্যাক
পরিমাণমত নারিকেল তেল এবং হলুদের গুড়ো একসঙ্গে মিশিয়ে তৈরি করা ফেস প্যাকটি মুখে লাগিয়ে শুকানোর জন্য অপেক্ষা করুন। শুকিয়ে গেলে স্বাভাবিক পানি দিয়ে পরিস্কার করুন। এই ফেস প্যাকটি নিয়মিত ব্যবহারের ফলে ত্বকের সংক্রামণ, শুস্কতা এবং লালচেভাব কমাতে সাহায্য করে।
ত্বকে যত্নে হলুদ ব্যবহারের পার্শ্বপ্রতিক্রিয়া
মানুষ রূপচর্চার জন্য হলুদের উপর ভরসা বহুকাল থেকেই করে আসছেন। বিশেষ করে কাঁচা হলুদের উপর, কারণ এর উপকারিতা অনেক। তবে হলুদের অনেক উপকারিতার পাশাপাশি, এটি ব্যবহারের ক্ষেত্রে কিছু সতর্কতা অবলম্বন করা উচিত। কারণ সকল পদার্থের উপকারের পাশাপাশি পার্শ্বপ্রতিক্রিয়া বিদ্যমান থাকে। সে ক্ষেত্রে হলুদেরও রয়েছে। চলুন দেখি হলুদের পার্শ্বপ্রতিক্রিয়া-
** হলুদ প্রাকৃতিকভাবে একটি শক্তিশালি উপাদান। তাই এটির সঙ্গে অন্য কোন উপাদান মিশিয়ে ব্যবহারের ক্ষেত্রে সতর্ক থাকতে হবে। কারণ অনেক উপাদানের সঙ্গে মিশিয়ে ব্যবহারে অনেক সময় পার্শ্বপ্রতিক্রিয়া দেখা দিতে পারে।
** ত্বকে হলুদের ফেস প্যাক ব্যবহারের পর বেশিক্ষণ ত্বকে রাখা ঠিক নয়। বেশিক্ষণ রাখলে ত্বকে দেখা দিতে পারে পার্শ্বপ্রতিক্রিয়া। তাই হলুদের ফেস প্যাক ব্যবহারের পর ২০ মিনিটের মধ্যে ধুয়ে ফেলুন। অন্যথায় ত্বক কালো হয়ে যেতে পারে।
** হলুদের ফেস প্যাক ব্যবহারে সময় শুধু মুখে না লাগিয়ে গলা ও কাধেও লাগান। অন্যথায় দুটোর রঙ আলাদা দেখাবে। তাই মুখে, কাধে এবং গলায় সমানভাবে ব্যবহার করুন।
** অনেকে আছেন যারা হলুদের প্যাক ব্যবহারের পর ফেসওয়াশ ব্যবহার করেন না। এটি কখনই সঠিক নিয়ম নয়। এতে হলুদের ফেস প্যাকের কার্যকরীতা নস্ট হয়ে যায়।
** অনেকেই হলুদের ফেস প্যাক ব্যবহারের পর মুখ পরিস্কার করেন না। এতে ত্বকের সমস্য হতে পারে। তাই এটি ব্যবহারের পর ঠান্ডা পানি দিয়ে মুখ পরিস্কার করুন।
রূপচর্চায় কাঁচা হলুদের ব্যবহার। শেষকথা
পাঠক পাঠিকাগণ আশাকরি আপনারা যদি, আজকের এই গুরুত্বপূর্ণ আর্টিকেলটি শুরু থেকে শেষ পর্যন্ত মনোযোগের সঙ্গে পড়ে থাকেন, তাহলে নিশ্চয়ই জেনে গেছেন "ত্বকের যত্নে কাঁচা হলুদের ফেস প্যাক'' সহ কাঁচা হলুদের ব্যবহার সম্পর্কে অনেক তথ্য। যা আপনাদের অনেক উপকারে আসবে বলে আমরা আশাবাদী।
আরো পড়ুনঃ খুসকি দূর করার প্রাকৃতিক উপায়
বিশেষ করে যারা রূপচর্চায় কাঁচা হলুদ ব্যবহার করতে ইচ্ছুক, তাদের ক্ষেত্রে এটি অনেক উপকারে আসবে। আর্টিকেলটি যদি আপনাদের কাছে ভালোলাগে এবং উপকারি বলে মনে হয়, তাহলে এটি পরিচিতদের সঙ্গে শেয়ার করতে ভুলবেন না। আরো নতুন নতুন তথ্য জানার জন্য আমাদের পরবর্তী আর্টিকেল পড়ুন এবং আমাদের সঙ্গে থাকুন। ধন্যবাদ।
এই ওয়েবসাইটের নীতিমালা মেনে কমেন্ট করুন। প্রতিটি কমেন্ট রিভিউ করা হয়।
comment url