ব্রণ দূর করার প্রাকৃতিক উপায়
আরো পড়ুনঃ চুলের যত্নে মুলতানি মাটির হেয়ার প্যাক
ত্বকের উজ্জলতা বা সৌন্দর্যকে নষ্ট করার জন্য সবচেয়ে বেশি যে জিনিসটি দায়ী, তা হলো ''ব্রণ''।আমাদের ত্বকের তৈলগ্রন্থি যখন বিভিন্ন ব্যাকটেরিয়া দ্বারা আক্রান্ত হয়, তখন এর আকৃতি বৃদ্ধি পেয়ে ভিতরে পুজ জমা হয়। যা ধীরে ধীরে আকার ধারণ করে ব্রণের। সাধারনত ব্রণ ও ব্রণের দাগ নিয়ে টিনেজার মেয়েরাই সবচেয়ে বেশি ভোগেন।
আর এই ব্রণ এর সমস্যা থেকে বাচার জন্য আমরা বিভিন্ন উপায় অবলম্বন করে থাকি। এর মধ্যে বাজারের বিভিন্ন নামি দামি কোম্পানির কসমেটিক অন্যতম। কিন্তু এতে বেশিরভাগ সময়, আমরা ব্রণের সমস্যা দূর করতে ব্যর্থ হই। আবার অনেক সময় এই সকল প্রাসাধণী ব্যবহারের কারণে ব্রণের সমস্যা থেকে অন্য সমস্যায় রূপান্তরিত হতে পারে।
তাই আমরা চাইলেই কিন্তু ব্রণের সমস্যা দূর করার জন্য ব্যবহার করতে পারি প্রাকৃতিক উপায়ে ঘরোয়া পদ্ধতি। কারণ ঘরোয়া, অরগানিক এবং প্রাকৃতিক সামগ্রী অনেক নিরাপদ। তাছাড়া এর কোন পার্শ্বপ্রতিক্রিয়া নেই। আজকের আর্টিকেলে আমরা শেয়ার করবো "ব্রণ দূর করার প্রাকৃতিক উপায়'' সম্পর্কে। চলুন তাহলে দেখে নেওয়া যাক-
আজকের পাঠ্যক্রম- ব্রণ ও ব্রণের দাগ দূর করার ঘরোয়া প্রাকৃতিক উপায়
- ব্রণ কি?
- ব্রণ কি জটিল কোন সমস্য
- থুতনির নিচে ব্রণ হওয়ার কারণ
- নাকে ও কপালে ব্রণ হওয়ার কারণ
- গালের এক পাশে ব্রণ হওয়ার কারণ
- মাথার চুলের কাছাকাছি ব্রণ হওয়ার কারণ
- ব্রণ ও ব্রণের দূর করার প্রাকৃতিক উপায়
- ব্রণ ও ব্রণের দাগ থেকে মুক্তি পাওয়ার টিপস
- ব্রণ দূর করার ঘরোয়া উপায়। শেষকথা
ব্রণ কি?
ব্রণ বলতে ত্বকের সাধারণ সমস্যার মধ্যে একটি, যা প্রভাবিত করে বয়সকে। যদিও ব্রণের প্রভাব সবচেয়ে বেশি দেখা যায়, কিশোর কিশোরীদের মধ্যে। ব্রণ সাধারণত হয়ে থাকে, যখন চুলের ফলিকলগুলি তেল এবং ত্বকের মৃত কোষ গুলোর দম বন্ধ হওয়ার ফলে। আর এই বাধার কারণে ত্বকে বিভিন্ন ধরণের দাগ সৃষ্টি হয়, যেমন ব্লাকহেডস, হোয়াইটহেডস ইত্যাদি।
আমাদের ত্বকের সেবাসিয়াম গ্রন্থি থেকে নিঃসৃত হয় সেবাম নামের বিশেষ এক ধরণের তৈলাক্ত পদার্থ। আর সেবাম নিঃসরণে বাধাগ্রস্থ হয়, যদি বন্ধ হয়ে যায় গ্রন্থির নালির মুখ, যা জমে গিয়ে ফুটে উঠে এবং এটি ব্রণ নামে পরিচিত। প্রায় ক্ষেত্রেই ব্রণের চারিদিকে লাল হয়ে যায় এবং প্রদাহ হয়। তাছাড়া যদি জীবাণুর সংক্রমণ হয়, তবে এতে পুঁজ হয়ে থাকে।
ব্রণ কি জটিল কোন সমস্য
মুখের কোন অংশে বা কোথায় ব্রণ হলে শারীরিক কোন সমস্যাকে নির্দেশ করে, এই বিষয়টি নিয়ে ভ্রান্ত অনেক ধারণা প্রচলিত রয়েছে। অনেক ক্ষেত্রে ত্বকের নির্দিষ্ট কোন অংশে ব্রণ হলে কিডনি বা লিভারের সংযোগ রয়েছে বলে মনে করা হয়। এই ধারণা কি ঠিক? ত্বকের কোন অংশে কি কারণে ব্রণ হয়, তার বৈজ্ঞানিক কারণ ও প্রতিকার নিম্নের আলোচনার মাধ্যমে জেনে নেওয়া যাক-
থুতনির নিচে ব্রণ হওয়ার কারণ
হরমণের বিভিন্ন সমস্যার কারণে বার বার থুতনির নিচে ব্রণ হয়ে থাকে। মেয়েদের মাসিক শুরুর আগে প্রাকৃতিকভাবে হরমোনের পরিবর্তন অথবা জন্ম নিয়ন্ত্রণ পদ্ধতি হরমোন নির্ভর হলে ব্রণ হতে পারে। তাছাড়া খাবারের জন্যও ব্রণ হতে পারে। তাই পরিশোধিত বা রিফাইন্ড খাবার এড়িয়ে চলুন। যেমন হরমোন যোগ থাকে দুগ্ধজাতীয় খাবারে।
নাকে ও কপালে ব্রণ হওয়ার কারণ
তৈলাক্ত ত্বকের কারণে মুখের টি জোন বা নাকে ও কপালে ব্রণ হয়। আর এই অংশের ব্রণ এড়াতে ত্বকের উপযোগী প্রসাধনী, ফ্রেশওয়াশ বা পরিস্কার করার সামগ্রী বেচে নেওয়া প্রয়োজন। আবার মানসিক চিন্তার কারণেও, অনেক সময় এই সকল স্থানে ব্রণ হতে পারে। তাছাড়া আপনাকে খেয়াল করতে হবে, ত্বকের ওই সকল স্থানে আপনার হাত বারবার স্পর্শ করার অভ্যাস আছে নাকি।
তাই বার বার হাতের স্পর্শ করার অভ্যাস ত্যাগ করার পাশাপাশি সকলের উচিত মানসিক চাপ সামলানোর চেষ্টা করা। আর এইজন্য সময়মত ঘুমানো, প্রতিদিন একটু হলেও শরীরচর্চা করা, নিয়মিত বই পড়া, পছন্দ করেন এমন অডিও শোনা অথবা মানসিক চাপ মোকাবেলার করার জন্য ধ্যান করার অভ্যাস গড়ে তুলতে পারেন।
গালের এক পাশে ব্রণ হওয়ার কারণ
গালের যে কোন এক পাশে বিভিন্ন কারণে ব্রণ হয়ে থাকে। যেমন বালিশের কভার অপরিস্কার থাকা, মুঠোফোন ব্যবহারের সময় নিজের হাতে থাকা ময়লার কারণে। তাই প্রতি সপ্তাহে কমপক্ষে একবার বালিশের কভার পরিস্কার করা উচিত। তাছাড়া মুঠোফোন প্রতিবার ব্যবহারের আগে ভালো করে পরিস্কার বা মুছে নেওয়া উচিত।
এছাড়াও মুঠোফোন কখনো বাথরুমে নিয়ে যাওয়া যাবে না, ময়লা বা অপরিস্কার হাতে মুঠোফোন স্পর্শ করা থেকে বিরত থাকা ভালো। যদি কোন কারণে প্রায় সময় মুঠোফোন ব্যবহার করার প্রয়োজন পড়ে, তবে ব্যবহার করুন ব্লুটুথ হেডফোন। সবসময় অপরিস্কার হাতে মুখের ত্বক স্পর্শ করা থেকে বিরত থাকার অভ্যাস করুন।
মাথার চুলের কাছাকাছি ব্রণ হওয়ার কারণ
হেয়ার লাইন বা মুখমন্ডলের ত্বক এবং মাথার ত্বকের মাঝামাঝি স্থানে যে অংশ রয়েছে, সেখানে যদি প্রায় ব্রণ হয়, তাহলে এর জন্য দায়ী হতে পারে, চুলে ব্যবহৃত প্রসাধনী। কারণ চুলে ব্যবহার করা প্রসাধনী ত্বকের ওই স্থানে বন্ধ করে দিতে পারে স্বাভাবিক ছিদ্রকে। মিনারেল অয়েল বা পেট্রোলিয়াম জেলি জাতীয় ভারি বা পুরু প্রসাধনী ব্যবহারে এই জাতীয় সমস্যা বেশি পরিলক্ষিত হয়।
আরো পড়ুনঃ খুসকি দূর করার প্রাকৃতিক উপায়
এই সকল স্থানের ব্রণ এড়ানোর ক্ষেত্রে, এড়িয়ে চলার চেষ্টা করুন পেট্রোলিয়াম জেলি জাতীয় প্রসাধনী। কোকোয়া সমৃদ্ধ অথবা চুলের রঙ হিসাবে ব্যবহার করা বিভিন্ন প্রসাধনীর কারণে ব্রণ হতে পারে। এই সকল প্রসাধনী ব্যবহারে সতর্কতা অবলম্বন করুন। আর যদি ব্যবহার করতেই হয়, তবে ভালোভাবে মুখের ত্বক পরিস্কার ব্যবহারের করুন সঙ্গে সঙ্গে।
ব্রণ ও ব্রণের দূর করার প্রাকৃতিক উপায়
ব্রণ ও ব্রণের দূর করার জন্য রূপচর্চা বা সৌন্দর্য পিপাসু রমণীরা বর্তমানে ব্যবহার করছেন বিভিন্ন নামি দামি কোম্পানির প্রসাধনী, এমনকি বিদেশি অনেক দামি প্রসাধনী। এতে যেমন ব্যায় বেশি হচ্ছে তেমনিভাবে অনেক সময় বিফল হওয়ার পাশাপাশি এর পার্শ্বপ্রতিক্রিয়া দেখা দেয়। কিন্তু প্রাকৃতিক উপায়ে নিম্নের ফেস প্যাক ব্যবহার করা যেমন সহজ তেমনি পার্শ্বপ্রতিক্রিয়া মুক্ত। চলুন তাহলে দেখে নেওয়া যাক-
আপেল ও মধু- আপেল ও মধুর ফেস প্যাক সবচেয়ে জনপ্রিয় ঘরোয়া পদ্ধতি ব্রণ ও ব্রণের দাগ দূর করার ক্ষেত্রে। এরজন্য আপনাকে প্রথমে একটি আপেল থেতো করে পেস্ট বানিয়ে ৫/৬ ফোটা মধু মিশিয়ে নিন। এবার পেস্ট বা মিশ্রণটি সুন্দর করে ত্বকে লাগিয়ে অপেক্ষা করুন ১৫/২০ মিনিট। অপেক্ষার পর ঠান্ডা পানির মাধ্যমে ত্বক পরিস্কার করুন।
এটি ব্যবহারের ফলে বজায় থাকবে ত্বকের টান টানভাব এবং হালকা হবে ত্বকের রঙ। এই ফেস প্যাকটি প্রতি সপ্তাহে ৪ থেকে ৫ বার ব্যবহার করতে পারেন। কয়েক বার ব্যবহার করার পর আপনি নিজেই পার্থক্য বুঝতে পারবেন।
ব্রণ ও ব্রণের দাগ থেকে মুক্তি পাওয়ার টিপস
- আমাদের মধ্যে অনেকের নখ দিয়ে ব্রণ খোটলানোর বদ অভ্যাস রয়েছে। এর ফলে ব্রণের অবস্থা আরো খারাপ হয়। অনেক সময় লাল হয় এবং তা ফেটে দাগের সৃষ্টি হয়। এই অভ্যাস ত্যাগ করতে হবে। কারণ এটা কোন সমাধান নয়।
- বাইরে থেকে বাসায় এসে সবসময় ফেস ওয়াস দিয়ে ত্বক পরিস্কার করুন। এছাড়া হালকা গরম পানি দিয়ে স্টীম করতে পারেন। এতে ত্বকে জমে থাকা ধুলো ময়লা পরিস্কার হবে।
- রাতে খাবারের পর মৌসুমি ফল খান। এতে আপনার ত্বক সতেজ থাকবে। ফাস্টফুট এবং তেল জাতীয় খাবার যতটা সম্ভাব পরিহার করুন।
- দিনে কমপক্ষে ২ বার মুখ ধুতে হবে, তেল মুক্ত ক্লিনজার দিয়ে।
- মেকাপ ব্যবহার বন্ধ করুন, ব্রন ভালো না হওয়া পর্যন্ত ।
- প্রতিদিন পানি পান করুন কমপক্ষে ১০ গ্লাস।
এই ওয়েবসাইটের নীতিমালা মেনে কমেন্ট করুন। প্রতিটি কমেন্ট রিভিউ করা হয়।
comment url