কিসমিসের উপকারিতা অপকারিতা ও পুষ্টিগুণ

আরো পড়ুনঃ ডিমের উপকারিতা ও অপকারিতা

"কিসমিস'', খেতে যেমন সুস্বাদু তেমনি এর রয়েছে অনেক উপকারিতা। কিসমিস আমাদের শরীর থেকে ক্ষতিকর কোলেস্টেরল দূর করতে সাহায্য করে। কারণ কিসমিসে রয়েছে বিভিন্ন প্রকারের ভিটামিন এবং মিনারেল। কিসমিস এতোটাই উপকারি যে, সরাসরি কিসমিস না খেয়ে, কিসমিস ধোয়া পানি খেলেও শরীরে প্রবেশ করে ভিটামিন এবং মিনারেল।

কিসমিস হলো ফাইবার, ক্যালসিয়াম, পটাশিয়াম এবং আয়রনের প্রয়োজনীয় সমৃদ্ধ পুষ্টির উৎস। যা শক্তি বৃদ্ধি করার পাশাপাশি রূপচর্চায় ত্বককে করে তোলে উজ্জল এবং চুলের স্বাস্থ্য বৃদ্ধি করার ক্ষেত্রে গুরুত্বপূর্ণ ভুমিকা পালন করে। তবে কিসমিসের অনেক উপকারিতার পাশাপাশি কিছু অপকারিতা বা পার্শ্ব প্রতিক্রিয়াও রয়েছে।

তাই কিসমিস খাওয়ার সময় এর অপকারিতা বা পার্শ্ব প্রতিক্রিয়া সম্পর্কে আমাদের জানা প্রয়োজন। আজকের আর্টিকেলে আমরা আপনাদের সঙ্গে শেয়ার করবো "কিসমিসের উপকারিতা অপকারিতা ও পুষ্টিগুণ" সহ কিসমিসের বিভিন্ন তথ্য সম্পর্কে বিস্তারিতভাবে। তাহলে চলুন দেখে নেওয়া যাক কিসমিসের অজানা অনেক তথ্য-

আজকের পাঠ্যক্রম- কিসমিসের উপকারিতা অপকারিতা ও পুষ্টিগুণ

  • প্রতি ১০০ গ্রাম কিসমিসে থাকা পুস্টিগুণ
  • কিসমিস খাওয়ার উপকারিতা
  • খালি পেটে কিসমিস খাওয়ার উপকারিতা
  • ভেজানো কিসমিস খাওয়ার উপকারিতা
  • কিসমিস কিভাবে খাবেন
  • কতগুলো কিসমিস প্রতিদিন খাওয়া যায়
  • কিসমিস দীর্ঘদিন সংরক্ষণের উপায়
  • কিসমিস খাওয়ার পার্শ্ব প্রতিক্রিয়া বা অপকারিতা
  • কিসমিসের উপকারিতা অপকারিতা। শেষকথা

প্রতি ১০০ গ্রাম কিসমিসে থাকা পুস্টিগুণ

পুস্টিগুণে ভরপুর প্রতি ১০০ গ্রাম কিসমিসে থাকা বিভিন্ন পুষ্টি উপাদান সম্পর্কে নিম্নে আলোচনা করা হলো- 

কিসমিস খাওয়ার উপকারিতা

অনেক মজাদার খাদ্য কিসমিসের স্বাস্থ্য উপকারিতার কথা বলে শেষ করা মুশকিল। নিম্নের আলোচনায় বিশেষ কয়েকটি উপকারিতার বিষয়ে আলোচনা করা হলো। চলুন তাহলে যেনে নেওয়া যাক-

রোগ প্রতিরোধ ক্ষমতা বৃদ্ধি করে- রোগ প্রতিরোধ ক্ষমতা বৃদ্ধি করার ক্ষেত্রে কিসমিস এবং কিসমিস ধোয়া পানির রয়েছে অনেক উপকারিতা। কারণ কিসমিসে রয়েছে শক্তিশালী অ্যান্টি অক্সিডেন্ট, যা রোগের সঙ্গে লড়াই করে এবং রোগকে দূরে সরে রাখে। নিয়মিত ভাবে কিসমিস খেলে, আমাদের ফুসফুস এবং লিভারের অনেক জটিল রোগের হাত থেকে রক্ষা পাওয়া যায়।

ভালো ঘুমের ক্ষেত্রে- ঘুম ভালো না হলে, শারীরিক এবং মানসিক সমস্যা দেখা দিতে পারে। ঘুম মানুষের শরীরের জন্য একটি গুরুত্বপূর্ণ ওসুধ। আর ভালো ঘুমের জন্য কিসমিসের রয়েছে জাদুকরি ভূমিকা। কারণ কিসমিসে থাকা আয়রন ঘুমের জন্য সাহায্য করে। আর আয়রন এমন একটি গুরুত্বপূর্ণ খনিজ যা, শরীরের হিমোগ্লোবিনের উৎপাদন বৃদ্ধি এবং উন্নত করে বিপাক ক্রিয়া।

হজমশক্তি বৃদ্ধি করে- ভালো হজমশক্তি সুস্থ্য থাকার ক্ষেত্রে জরুরি। আর হজমশক্তি বৃদ্ধির করতে কিসমিস গুরুত্বপূর্ণ ভুমিকা পালন করে। এরজন্য প্রতিদিন রাতে কয়েকটি কিসমিস পানিতে ভিজিয়ে রেখে পরের দিন সকালে খান। এইভাবে ১৫/২০ দিন খাওয়ার পরে আপনি নিজেই বুঝতে পারবেন, কিসমিসের জাদুকরি ক্ষমতা।

আরো পড়ুনঃ ডায়াবেটিস নিয়ন্ত্রণের প্রাকৃতিক উপায়

কোষ্ঠকাঠিন্য দূর করে- কোষ্ঠকাঠিন্য একটি জটিল সমস্যা। আর আপনি যদি নিয়মিত কিসমিস খান, তবে অনেক কমে যায় কোষ্ঠকাঠিন্যর সমস্যা। তাই যারা কোষ্ঠকাঠিন্যর সমস্যায় ভুগছেন, তারা প্রতিদিন রাতে ভিজিয়ে রাখা কিসমিস সকালে খালিপেটে খেলে, এই সমস্যার হাত থেকে রক্ষা পাওয়া যায়। তাই দ্রুত সুফল পাওয়ার জন্য ওষুধের পরিবর্তে কিসমিস খেতে পারেন।

রক্ত শূন্যতা দূর করে- রক্ত শূন্যতা বা সল্পতা দূর করে ক্ষেত্রে কিসমিস গুরুত্বপূর্ণ ভুমিকা পালন করে। কারণ নিয়মিত কিসমিস খাওয়ার ফলে, কিসমিসে থাকা আয়রন রক্তের হিমোগ্লোবিনের মাত্রা বাড়িয়ে তোলা। তাছাড়াও কিসমিসের মধ্যে রয়েছে তামা, যার কারণে রক্তের লাল রক্তকণিকা তৈরিতে বিভিন্নভাবে সাহায্য করে।

শরীরকে বিষমুক্ত রাখে- শরীরকে বিষমুক্ত বা দূষণমুক্ত করার ক্ষেত্রে কিসমিসের জুড়িমেলা ভার। চারিদিকের বিভিন্ন দূষণের কারণে আপনার শরীর যখন নাজেহাল, তখন রাতে ভেজানো কিসমিস সকালে খালি পেটে প্রতিদিন খেলে আপনার শরীর দ্রুত দূষণমুক্ত হবে। ভেজানো কিসমিস ছাড়াও, কিসমিস ভেজানো পানি খেতে পারেন।

উচ্চ রক্তচাপ দূর করে- উচ্চরক্তচাপ বা ব্লাড প্রেসার নিয়ন্ত্রণের যতগুলো প্রাকৃতিক পদ্ধতি রয়েছে, তার মধ্যে অন্যতম প্রধান পদ্ধতি হলো নিয়মিত কিসমিস খাওয়া। কারণ কিসমিসে রয়েছে প্রচুর পরিমাণে পটাসয়াম, যা হাই ব্লাডপ্রেসার বা উচ্চ রক্তচাপকে বশে রাখার ক্ষেত্রে গুরুত্বপূর্ণ। তাই উচ্চরক্তচাপ বা ব্লাড প্রেসার নিয়ন্ত্রণের জন্য নিয়মিত কিসমিস খান।

খালি পেটে কিসমিস খাওয়ার উপকারিতা

খালি পেটে সকাল বেলা কিসমিস খাওয়ার ফলে, শরীরের শক্তি বৃদ্ধি পায়। কারণ প্রচুর পরিমাণে পুষ্টি উপাদান রয়েছে কিসমিসে, যা শরীরের শক্তি বৃদ্ধিতে সাহায্য করে। তাছাড়া উচ্চ পরিমাণে ফাইবার রয়েছে কিসমিসে, ফলে হার্টের জন্য কিসমিস অনেক উপকারি। কারণ কিসমিসের মধ্যে থাকা কম্পাউন্ড শরীরের কোলেস্টেরেল কমায় এবং হার্টের ঝুকি কমায়।

ভেজানো কিসমিস খাওয়ার উপকারিতা

শুকনো কিসমিস খাওয়ার চেয়ে সারারাত পানিতে ভিজিয়ে রেখে পরের দিন সকালে খালি পেটে খান। কারণ পানিতে ভেজানো কিসমিসে থাকে প্রচুর পরিমাণে ক্যালসিয়াম, আয়রন, ফাইবার, পটাসিয়াম এবং ম্যানেসিয়াম। যা আপনার হাই ব্লাড প্রেসার থাকলেও ভেজানো কিসমিস হাই ব্লাড প্রেসারকে নিয়ন্ত্রণে রাখতে সাহায্য করে। তাই শুকনো কিসমিস না খেয়ে ভেজানো মিসমিস খান।

কিসমিস কিভাবে খাবেন

আপনি চাইলে শুকনো অথবা পানিতে ভিজিয়ে সকালে খালি পেটে বা যেকোন উপায়ে কিসমিস খেতে পারেন। নিচের নিয়ম মেনে কিসমিস খেলে অনেক উপকার পাওয়া যায়- 

  • কিসমিসের গুনাগুণ অনেক। কিসমিস কাঁচা শুকনো অবস্থায় খাওয়া যায়। তবে কাঁচা বা শুলনো কিসমিস খাওয়ার ক্ষেত্রে অবশ্যই পানিতে ধুয়ে পরিস্কার করে খাবেন। 
  • কিসমিস খাওয়ার সবচেয়ে ভালো উপায় হলো, রাতে পানিতে ভিজিয়ে রেখে সকালে খালি পেটে খাওয়া। এতে অনেক পুষ্টি পাবেন এবং শরীর হবে চাঙ্গা। 
  • কিসমিস তৈরি করা হয়, আঙ্গুর ফলকে শুকিয়ে। তাই কিসমিস সেমাই, কোরমা কিংবা পায়েসসহ বিভিন্নভাবে রান্না করে খাওয়া যায়। 

কতগুলো কিসমিস প্রতিদিন খাওয়া যায়

পুষ্টিবিদ গণের মতে, একজন সুস্থ্য এবং প্রাপ্ত বয়স্ক মানুষ প্রতিদিন ৪০ গ্রাম থেকে ৫০ গ্রাম কিসমিস নিয়মিতভাবে প্রতিদিন খেতে পারবে। 

কিসমিস দীর্ঘদিন সংরক্ষণের উপায়

কিসমিস দীর্ঘদিন সংরক্ষণের জন্য এটিকে আদ্র রাখা প্রয়োজন। তাই এটি দীর্ঘদিন স্টোরেজ করে রাখার জন্য মোটা এবং বায়ু প্রতিরোধকারি পাত্রে এবং ফ্রিজে রাখুন। এতে কিসমিস দীর্ঘদিন তাজা এবং সতেজ থাকবে। আর আপনি যদি ফ্রিজে রাখতে না চান, সেক্ষেত্রে আপনি কিসমিস সংরক্ষণ করার জন্য অন্ধকার এবং শীতল জায়গায় রাখুন।

কিসমিস খাওয়ার পার্শ্ব প্রতিক্রিয়া বা অপকারিতা

পৃথিবীতে যত জিনিস রয়েছে, তার ভালো এবং খারাপ উভয় দিক রয়েছে। কিসমিসের খেত্রেও এর কোন ব্যাতিক্রম নয়। তবে কিসমিসের অনেক উপকারিতার পাশাপাশি, বেশ কয়েকটি পার্শ্ব প্রতিক্রিয়া বা অপকারিতা রয়েছে। নিম্নে দেখে নেওয়া যাক পার্শ্ব প্রতিক্রিয়া বা অপকারিতা গুলো- 
  • ডায়াবেটিস রোগে আক্রান্তদের অধিক পরিমাণে কিসমিস খাওয়া যাবে না। কারণ অতিরিক্ত কিসমিস খেলে ডায়াবেটিসের পরিমাণ বেড়ে যেতে পারে।
  • যারা শরীরের ওজন কমাতে চান, তাদের অতিরিক্ত কিসমিস খাওয়া যাবে না। কারণ কিসমিস শরীরের ওজন বাড়াতে সাহায্য করে।
  • অনেকের কিসমিস খেলে এলার্জি বাড়ে। তাই যাদের এলার্জির সমস্যা হয়, তারা কিসমিস খাওয়া থেকে বিরত থাকুন।
  • অতিরিক্ত কিসমিস খেলে হজমের বিঘ্ন ঘটতে পারে। তাই অতিরিক্ত কিসমিস খাওয়া থেকে বিরত থাকুন।

কিসমিসের উপকারিতা অপকারিতা। শেষকথা

আমরা অনেক আশাবাদী, আপনারা যদি আজকের এই গুরুত্বপূর্ণ আর্টিকেলটি শুরু থেকে শেষ পর্যন্ত মনোযোগের সঙ্গে পুরোটাই পড়ে থাকেন, তাহলে নিশ্চয় জেনে গেছেন "কিসমিসের উপকারিতা অপকারিতা ও পুষ্টিগুণ'' সহ কিসমিস সম্পর্কে বিস্তারিতভাবে অনেক তথ্য। যা আপনাদের অনেক উপকারে আসবে বলে আমরা আশাবাদী।
বিশেষ করে যারা কিসমিস সম্পর্কে জানার জন্য, গুগলে সার্চ করে জানতে চান, তাদের ক্ষেত্রে এটি অনেক উপকারি। আর্টিকেলটি যদি আপনাদের ভালো লাগে এবং উপকারি বলে মনে হয়, তাহলে এটি অবশ্যই আপনাদের পরিচিতদের সঙ্গে শেয়ার করতে ভুলবেন না। আরো নতুন নতুন তথ্য জানার জন্য আমাদের পরবর্তী আর্টিকেল পড়ুন এবং আমাদের সঙ্গে থাকুন। ধন্যবাদ।

এই পোস্টটি পরিচিতদের সাথে শেয়ার করুন

পূর্বের পোস্ট দেখুন পরবর্তী পোস্ট দেখুন
এই পোস্টে এখনো কেউ মন্তব্য করে নি
মন্তব্য করতে এখানে ক্লিক করুন

এই ওয়েবসাইটের নীতিমালা মেনে কমেন্ট করুন। প্রতিটি কমেন্ট রিভিউ করা হয়।

comment url

এইটা একটি বিজ্ঞাপন এরিয়া। সিরিয়ালঃ ১

এইটা একটি বিজ্ঞাপন এরিয়া। সিরিয়ালঃ ২

এইটা একটি বিজ্ঞাপন এরিয়া। সিরিয়ালঃ ৩

এইটা একটি বিজ্ঞাপন এরিয়া। সিরিয়ালঃ ৪

এইটা একটি বিজ্ঞাপন এরিয়া। সিরিয়ালঃ ৫

এইটা একটি বিজ্ঞাপন এরিয়া। সিরিয়ালঃ ৬

এইটা একটি বিজ্ঞাপন এরিয়া। সিরিয়ালঃ ৭