আরো পড়ুনঃ স্বাস্থ্য রূপ এবং চুলের উপকারে কালো জিরার তেল
গাজর বাংলাদেশের অন্যতম একটি জনপ্রিয় সবজি। আর এটি এমনই একটি সবজি যা ব্যবহার করা যায় সবজির পাশাপাশি সালাদ, আচার, জুস, পুডিং, কেকসহ বিভিন্নভাবে। আবার এটি প্রয়োজনীয় বিভিন্ন পুষ্টিগুণে সমৃদ্ধ যেমন ভিটামিন ''এ, সি,কে'' আয়রন এবং পটাসিয়াম। তাই গাজর শুধু সবজি হিসাবে নিয় এর রয়েছে বিভিন্ন স্বাস্থ্য উপকারিতা।
যদি কেউ গাজরকে সবজি মনেকরে তাহলে সেটা হবে ভুল। কারণ গাজর শুধু সবজিই নয় এর রয়েছে বিভিন্ন পুষ্টিগুণ যা শরীরের পুষ্টির চাহিদা মেটানোর পাশাপাশি রক্ষা করে শরীরকে বিভিন্ন রোগ থেকেও। আজকের আর্টিকেলে আমরা আপনাদের সঙ্গে শেয়ার করবো গাজরের পুষ্টিগুণ ও স্বাস্থ্য উপকারিতা সম্পর্কে। চলুন দেখ নেওয়া যাক-
আজকের পাঠ্যক্রম- গাজরের পুষ্টিগুণ ও উপকারিতা
- গাজরে থাকা বিভিন্ন পুষ্টিগুণ
- প্রতি ১০০ গ্রাম গাজরের পুষ্টিগুণ
- গাজরের বিভিন্ন স্বাস্থ্য উপকারিতা
- গাজরের তৈরী হালুয়ার রেসিপি
- গাজরের হালুয়া তৈরির প্রয়োজনীয় উপকরণ
- গাজরের হালুয়া যেভাবে রান্না করতে হবে
- গাজর খাওয়ার গুরুত্বপূর্ণ টিপস
- গাজর খাওয়ার পার্শ্ব প্রতিক্রিয়া সমুহ
- গাজরের উপকারিত ও অপকারিতার, শেষকথা
গাজরে থাকা বিভিন্ন পুষ্টিগুণ
গাজর শীত মৌসুমের সবজি হলেও বর্তমানে সারা বছর পাওয়া যায়। গাজর ভরপুর থাকে ভিটামিন ও মিনারেলে। তাই এটি শরীরকে সুস্থ্য রাখার পাশাপাশি বৃদ্ধি করে রোগ প্রতিরোধ ক্ষমতা এমনকি রূপ চর্চায় সাহায্য করে গাজর। গাজরে বিটাক্যারোটিন রয়েছে প্রচুর পরিমাণে। ভিতামিন "এ" এর কাজ করে এটি। কারণ ভিটামিন "এ" সরাসরি সবজিতে থাকেনা।
প্রতি ১০০ গ্রাম গাজরের পুষ্টিগুণ
নিম্নে প্রতি ১০০ গ্রাম গাজরে থাকা বিভিন্ন পুষ্টি উপাদানের নাম এবং পরিমাণের তালিকা দেখানো হলো-
পুষ্টির নাম পরিমাণ
- ভিটামিন বি২ ০.০৫ মিলিগ্রাম।
- ভিটামিন সি ২.২ মিলিগ্রাম।
- খাদ্যশক্তি ৫৭ কিলোক্যালোরি।
- প্রোটিন ১২ গ্রাম।
- খনিজ ০.৯ গ্রাম।
- লৌহ ২.২ মিলিগ্রাম।
- ক্যালসিয়াম ২৭ মিলিগ্রাম।
- কার্বোহাইড্রেট ১২৭ গ্রাম।
- স্নেহ ০.২ গ্রাম।
- ক্যারোটিন ১০৫২০ মাইক্রো গ্রাম।
গাজরের বিভিন্ন স্বাস্থ্য উপকারিতা
গাজর কাঁচা অবস্থায় খেলে পূরণ হয় শরীরের জলীয় অংশের এবং নিবারণ হয় খুদা। আবার গাজর থেকে পাওয়া যায় প্রচুর কর্মশক্তি। তাই গাজর শুধু সবজি হিসাবে ও সুস্বাদু খাবার নয়, এরমধ্যে রয়েছে পুষ্টির পাওয়ার হাউস এবং তাই প্রদান করে বিভিন্ন স্বাস্থ্য সুবিধা। উন্নত করে দৃষ্টিশক্তির পাশাপাশি শরীরে গড়ে তোলে রোগ প্রতিরোধ ক্ষমতা।
এককথায় বলা যায় গাজর হলো একটি বহুমুখি বিভিন্নগুণ সম্পূর্ণ সুস্বাদু সবজি। আমাদের নিয়মিত খাদ্য তালিকায় গাজর রাখার স্বাস্থ্য উপকারিতা সম্পর্কে নিম্নে আলোচনা করা হলো-
হৃদযন্ত্র ভালোরাখে- গাজর হলো পটাসিয়ামের বড় একটি উৎস, যা হৃদযন্ত্রকে সুস্থ্য সবল রাখতে অনেক সাহায্য করে। এছাড়া গাজরে থাকা অ্যান্টি অক্সিডেন্ট অক্সিডেটিভ স্ট্রেস ও প্রতিরোধ করে প্রদাহ। যার ফলে ঝুকি কমায় হার্টের বিভিন্ন সমস্যের হাত থেকে।
ঝুকি কমায় ক্যান্সারের- গাজর রয়েছে প্রচুর পরিমাণে ক্যারোটিন। তাই নিয়মিত গাজর খাওয়ার ফলে পাকস্থলি প্রোস্টেট এবং কোলনের মতো ক্যানসারের হাত থেকে রক্ষা করে। এই কারণে নিয়মিত খাদ্য তালিকায় আমাদের গাজর রাখা উচিৎ।
শক্তিশালি করে দৃষ্টিশক্তি- গাজরে রয়েছে উচ্চ ক্ষমতা সম্পূর্ণ ভিটামিন "এ"। যা আমাদের দৃষ্টিকে শক্তিশালি করার ক্ষেত্রে অপরিহার্য ভূমিকা পালন করে থাকে। তাই আমাদের চোখ ভালো রাখার জন্য নিয়মিত গাজর খাওয়া অপরিহার্য।
ওজন কমাতে- গাজর অন্য খাবারের তুলনায় কম ক্যালোরিযুক্ত সবজি। গাজরে থাকা ফাইবার আমাদের অনেকক্ষণ পর্যন্ত খুদা লাগা থেকে দূরে রাখে। তাই যারা ওজন নিয়ে সমস্যায় ভূগছেন এবং ওজন কমাতে নিয়মিত গাজর খাওয়া উচিৎ।
রক্তের সমস্যায়- নিয়মিত গাজর খেলে আমাদের শরীরের কোলেস্টেরল কমে। আর হৃদরোগের ঝুকি বাড়ায় অতিরিক্ত কোলেস্টেরল। তাই হৃদ রোগের ঝুকি এড়াতে আমাদের নিয়মিত খাদ্য তালিকায় গাজর রাখা জরুরী।
সুস্থ্য রাখে হাড়- গাজরে রয়েছে প্রচুর পরিমাণে ক্যালসিয়াম। আর এই প্রাকৃতিক উপাদান খনিজ আমাদের দাঁত এবং হাড়কে ভালো রাখতে গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা পালন করে থাকে। তাই আমাদের দাঁত ও হাড় ভালো রাখতে গাজর খাওয়া উচিৎ।
হজম শক্তি বাড়াতে- গাজরে রয়েছে ফাইবার যা আমাদের হজমশক্তি বাড়াতে গুরুত্বপূর্ণ ভুমিকা পালন করে থাকে। তাই হজমশক্তি বৃদ্ধি করতে গাজরের সালাদ, সুপ এবং সবজি হিসাবে আমাদের প্রতিদিনের খাবারের জন্য রাখা উচিৎ।
ত্বকের উজ্জলতা বাড়াতে- গাজরে রয়েছে ভিটামিন "এ এবং ই'' এবং অ্যান্টি অক্সিডেন্ট যা সর্বদাই লড়াই করে ত্বকে থাকা বিভিন্ন দাগ, গর্ভকালীন দাগ এবং বলিরেখার বিরুদ্ধে। তাই নিয়মিত গাজর খাওয়ার ফলে ত্বক হয়ে উঠে উজ্জ্বল ও টানটান।
গাজরের তৈরী হালুয়ার রেসিপি
গাজরকে শুধু সবজি এবং সালাদ হিসাবে একতরফাভাবে কাজ করে সেটা দেখলে হবে না। হালকা কমলা রঙের বিভিন্নগুণে গুণান্বিত গাজর দিয়ে তৈরি করা যায় লোভনীয় এবং আভিজাত্য খাবার গাজরের হালুয়া। গাজরের হালুয়া যে কেউ অতিসহজেই তৈরি করতে পারেন। নিম্নে গাজরের হালুয়া তৈরির বিষয়ে বিস্তারিতভাবে আলোচনা করা হলো-
গাজরের হালুয়া তৈরির প্রয়োজনীয় উপকরণ
১ কেজি গাজর।
৬ টেবিল চামচ গুড়োদুধ।
৪ টেবিল চামচ সবুজ এলাচ।
৫ টেবিল চামচ চিনি।
১/২ টেবিল চামচ কিসমিস।
১/২ টেবিল চামচ কাজুবাদাম।
১/২ টেবিল চামচ কাঠ বাদাম।
৪ টেবিল চামচ ঘি।
৩টি দারুচিনি, ৪ টি তেজপাতা এবং ২ টি লং।
গাজরের হালুয়া যেভাবে রান্না করতে হবে
গাজরগুলো ভালো করে পরিস্কার পানি দিয়ে ধুয়ে পিচ পিচ করে পরিমাণ মতো পানি দিয়ে সেদ্ধ করুন। খেয়াল রাখতে হবে হালুয়াতে সেদ্ধ করতে দেওয়া পানি যেন সেদ্ধ করার সময় শুকিয়ে যায়। তবে পুড়তে দেওয়া যাবে না। সেদ্ধ গাজর হালকা করে মিহি করে নিন। কারণ পুরো পুরিভাবে কোন অবস্থাতেই মিহি করা যাবেনা। থেতো হয়ে গেলে অন্য পাত্রে রেখে দিন।
এখন ঘি ঢেলে দিন সসপ্যানে। এবার চুলার আঁচ হালকা করে রান্না করুন। দেখুন ঘি গরম হয়ে গেলে এলাচ, দারুচিনি, লং এবং তেজপাতা পাত্রে ঢেলে দিন। অপেক্ষা করুন যতক্ষণ পর্যন্ত সুগন্ধ বের না হয়। সেদ্ধ হয়ে গেলে ঢেলে দিন থেতোকরা গাজর। ৫ মিনিটের মতো নেড়ে এবার দিন দুধ একটু অপেক্ষা করে চিনি দিয়ে ৫/৭ মিনিট অপেক্ষা করুন।
আপনি খেয়াল করে দেখবেন এক সময় হালুয়াগুলো সসপ্যান থেকে আলগা হয়ে যাবে এবং যখন এটি আঠালোভাব হয়ে গেলে নামিয়ে রাখুন চুলা থেকে। এবার হালুয়া পরিবেশনের আগে হালুয়ার উপর ছিটিয়ে দিন কাজুবাদাম, কাঠবাদাম এবং কিসমিস। দেখুন আপনি মাত্র ২০ মিনিটের রান্না করে ফেলেছেন লোভনীয় এবং আভিজাত্য গাজরের হালুয়া।
গাজর খাওয়ার গুরুত্বপূর্ণ টিপস
- গাজরের তৈরি যে কোন খাবার ঠাণ্ডা হওয়ার পর খাবেন।
- গাজর কাঁচা অবস্থায় খেলে খোসা ছাড়িজে খাবেন।
- গাজর রান্না বেশিক্ষণ ধরে করা উচিৎ নয়।
- গাজর ভালোকরে ধুয়ে খাবেন।
গাজর খাওয়ার পার্শ্ব প্রতিক্রিয়া সমুহ
প্রতিটি জিনিসের উপকারিতার পাশাপাশি রয়েছে কিছু অপকারিতা বা পার্শ্ব প্রতিক্রিয়া। সে ক্ষেত্রে গাজর খাওয়ার খেত্রেও কিছু সাবধনতা রয়েছে। নিম্নে গাজরের পার্শ্ব প্রতিক্রিয়া সম্পর্কে আলোচনা করা হলো-
- গাজরে রয়েছে পর্যাপ্ত পরিমাণে ফাইবার। যা বেশি পরিমাণে খাওয়ার কারণে শরীরে বেড়ে যায় ফাইবারের পরিমাণ এবং হতে পারে পেট ব্যাথার মতো সমস্যা।
- গাজরের হলুদ অংশ অতিরিক্ত পরিমাণে খাওয়ার ফলে আমাদের হতে পারে বিভিন্ন স্বাস্থ্য সমস্যা। এটি পেট জ্বলার মতো সমস্যার সৃষ্টি করতে পারে।
- গাজরে রয়েছে প্রচুর পরিমাণে ভিটামিন "এ" যা অতিরিক্ত পরিমাণে খেলে শরীরে বেড়ে যেতে পারে ভিটামিন "এ" পরিমাণ।
- গাজর খাওয়ার পর সূর্যের আলোতে গেলে আপনার ত্বক হয়ে যেতে পারে হলুদ। তবে এটি সাময়িক।
- গাজর প্রচুর পরিমাণে খাওয়ার ফলে আপনার হতে পারে ঘুমের সমস্যা।
গাজরের উপকারিত ও অপকারিতার, শেষকথা
আশাকরি আপনারা যদি আজকের আর্টিকেলটি শুরু থেকে শেষ পর্যন্ত পুরোটাই পড়ে থাকেন, তাহলে নিশ্চয় যেনে গেছেন "গাজরের পুষ্টিগুণ ও স্বাস্থ্য উপকারিতা'' সহ গাজরের রেসিপি এবং এর অপকারিতা সম্পর্কে সকল তথ্য। যা আমরা ইতিপূরবেই আপনাদের সঙ্গে শেয়ার করেছি। আমরা আশাকরি এটি আপনাদের অনেক উপকারে আসবে।
বিশেষ করে যারা গাজরের মাধ্যমে বিভিন্ন উপকারিতা পেতে চান তাঁদের ক্ষেত্রে। আর্টিকেলটি যদি আপনাদের ভালোলাগে ও উপকারী বলে মনে হয়, তাহলে এটি অবশ্যই আপনার পরিচিতিদের সঙ্গে শেয়ার করতে ভুলবেন না। আরো নতুন নতুন তথ্য জানার জন্য আমাদের পরবর্তী আর্টিকেল পড়ুন এবং আমাদের সঙ্গে থাকুন।
এই ওয়েবসাইটের নীতিমালা মেনে কমেন্ট করুন। প্রতিটি কমেন্ট রিভিউ করা হয়।
comment url