আরো পড়ুনঃ পালং শাঁকের উপকারিতা ও অপকারিতা
শীতকালীন সবজি টমেটো। শীতকালীন এই সবজিটি বাংলাদেশের প্রায় সকল মানুষের কাছে খুব জনপ্রিয় একটি খাবার। টমেটো খায় না বা পছন্দ করেনা এমন মানুষ পাওয়া অনেকটাই কঠিন। টমেটো কাচা অবস্থায় দেখতে হালকা সবুজ বর্ণের হলেও এটি যখন পাকে, তখন এটি টকটকে লাল রং ধারণ করে এবং দেখতে খুবই চমৎকার লাগে।
টমেটো দেখতে যেমন সন্দর, তেমনি খেতেও অনেক সুস্বাদু। টমেটো বিভিন্ন উপায়ে খাওয়া যায়। অনেকে এটি কাচা খায়, অনেকে তরকারীর স্বাদ বৃদ্ধি করতে খায় তরকারির সঙ্গে রান্না করে আবার অনেকে এটি ভাতের সঙ্গে সালাদ হিসাবে খেতে পছন্দ করেন। আপনি যেভাবেই টমেটো খান না কেন, আপনাকে স্বীকার করতে হবে এর স্বাদের কথা।
কিন্তু টমেটো খাওয়ার উপকারিতা সম্পর্কে না যানা থাকার কারণে বেশিরভাগ মানুষই টমেটো খায় শুধু স্বাদের জন্য। টমেটো শুধু রান্নার স্বাদ বাড়াতে বা মুখরোচক হিসাবে সালাদ নয়, পুস্টিগুণে ভরপুর টমেটোর রয়েছে বিভিন্ন উপকারিতা। আজকের আর্টিকেলে আমরা আপনাদের সঙ্গে শেয়ার করবো "টমেটোর স্বাস্থ্য উপকারিতা এবং অপকারিতা'' সম্পর্কে। চলুন দেখে নেওয়া যাক-
আজকের পাঠ্যক্রম- টমেটোর স্বাস্থ্য উপকারিতা এবং অপকারিতা
- টমেটোতে থাকা বিভিন্ন পুষ্টিগুণ
- টমেটোর স্বাস্থ্য উপকারিতা সমুহ
- টমেটোর বিশেষ কয়েকটি উপকারিতা
- টমেটোর অপকারিতা বা পার্শ্ব প্রতিক্রিয়া
- টমেটোর উপকারিতা এবং অপকারিতা। শেষকথা
টমেটোতে থাকা বিভিন্ন পুষ্টিগুণ
শীতকালীন সবজি টমেটো সমৃদ্ধ থাকে বিভিন্ন পুষ্টিগুণ। নিম্নে প্রতি ১০০ গ্রাম টমেটোতে থাকা পুষ্টিগুণ সম্পর্কে আলোচনা করা হলো-
ক্রঃ
নং
|
পুস্টিগুণের
নাম
|
পুস্টিগুণের
পরিমাণ
|
১
|
খাদ্যশক্তি
|
১৮
কিলো ক্যালোরী।
|
২
|
ভিটামিন
"এ"
|
৮৩৩
আইইউ।
|
৩
|
ভিটামিন
"সি"
|
১৩
মিলিগ্রাম।
|
৪
|
আমিষ
|
০.৯
গ্রাম।
|
৫
|
ফাইবার
|
১.২
গ্রাম।
|
৬
|
শর্করা
|
৩.৯
গ্রাম।
|
৭
|
ক্যালসিয়াম
|
১০
মিলিগ্রাম।
|
৮
|
পটাশিয়াম
|
২৩৭
মিলিগ্রাম।
|
৯
|
সোডিয়াম
|
৫
মিলিগ্রাম।
|
১০
|
ম্যাগনেসিয়াম
|
১১
মিলিগ্রাম।
|
১১
|
কোলেস্টেরল
|
০
মিলিগ্রাম।
|
১২
|
ফসফরাস
|
২৪
মিলিগ্রাম।
|
১৩
|
লাইকোপেন
|
২৫৭৩
মাইক্রোগ্রাম।
|
১৪
|
জিঙ্ক
|
০.১৭
মিলিগ্রাম।
|
১৫
|
লৌহ
|
০.৩
মিলিগ্রাম।
|
১৬
|
চর্বি
|
০.২
মিলিগ্রাম।
|
টমেটোর স্বাস্থ্য উপকারিতা সমুহ
পুষ্টিগুণে ভরপুর শীতকালীন সহজলোভ্য সবজি, টমেটোর রয়েছে প্রচুর স্বাস্থ্য উপকারিতা। এই সবজির উপকারিতা সম্পর্কে বলে শেষ করা কঠিন। কারণ এর স্বাস্থ্য উপকারিতা থেকে শুরু করে মাথার চুল এমনকি রূপ চর্চায় টমেটোর বিভিন্ন অবদান রয়েছে। চলুন নিম্নের আলোচনার মাধ্যমে টমেটোর গুরুত্বপূর্ণ উপকারিতা সমুহ যেনে নেই-
** ওজন কমানোর ক্ষেত্রে- আপনারা যারা অতিরিক্ত ওজন নিয়ে দুশ্চিন্তায় আছেন এবং ওজন কমাতে চান, তাদের জন্য টমেটো খুবই উপকারি। কারণ ওজন কমানোর ক্ষেত্রে টমেটো প্রমাণিত একটি সবজি। আপনি খেয়াল করে দেখবেন, যারা ওজন কমানোর জন্য জিম করেন, তাদের নিয়মিতভাবে টমেটো খাওয়া পরামর্শ দেন। কারণ টমেটোতে চর্বির পরিমাণ খুবই কম থাকে।
** ডায়াবেটিস নিয়ন্ত্রণের ক্ষেত্রে- ডায়াবেটিস এখন একটা কমন রোগে পরিণত হয়েছে, একটা বয়স পরে প্রায় বেশিরভাগ মানুষের ডায়াবেটিসের রোগ দেখা দেয়। তাই যারা এখন ডায়াবেটিসের সমস্যায় ভূগছেন, তাদের ন্যাচারাল খাবার হিসাবে ডায়াবেটিস নিয়ন্ত্রণের জন্য, প্রতিদিনের খাবারের তালিকায় টমেটো রাখা যেতে পারে।
** কোষ্ঠকাঠিন্য দূর করার ক্ষেত্রে- অনেকে আছেন যারা কোষ্ঠকাঠিন্যের সমস্যার কারণে, অনেক ধরণের খাবার খেতে ভয় পান। টমেটোতে প্রাকৃতিকভাবে রয়েছে প্রচুর পরিমাণে ফাইবার। যা নিয়মিত মলত্যাগে এবং সাহায্য করে কোষ্ঠকাঠিন্য দূর করতে। তাই সকলের নিয়মিত খাবারের তালিকায় বিশেষ করে যারা, কোষ্ঠকাঠিন্যের সমস্যায় ভুগছেন তাদের টমেটো রাখা উচিত।
** রোগ প্রতিরোধ ক্ষমতা বাড়ানোর ক্ষেত্রে- টমেটোতে রয়েছে অ্যান্টি অক্সিডেন্ট উপাদান। আর এই উপাদানটি মানুষের শরীরের রোগ প্রতিরোধ ক্ষমতা বাড়াতে গুরুত্বপূর্ণ ভুমিকা পালন করার পাশাপাশি তা নিয়ন্ত্রণে রাখে। একটি গবেষণায় উঠেছে টমেটোর রোগ প্রতিরোধ ক্ষমতা অনেক। তাই রোগ প্রতিরোধ ক্ষমতা বাড়ানোর জন্য নিয়মিত টমেটো খাওয়া উচিত।
** ত্বক, চুল এবং চোখ ভালো রাখার ক্ষেত্রে- টমেটোতে রয়েছে প্রচুর পরিমাণে বিভিন্ন পুষ্টিগুণ এবং ভিটামিন "এ এবং সি"। যা আমাদের শরীর সুস্থ্য রাখার পাশাপাশি ভালো রাখতে সাহায্য করে ত্বক, চুল এবং চোখ। তাই আমাদের শরীর সুস্থ্য রাখতে এবং অন্যসকল উপকারিতা পাওয়ার জন্য, নিয়মিত খাবারের তালিকায় টমেটো রাখা প্রয়োজন।
** ধুমপানের সমস্যা পূরণে- টমেটোতে রয়েছে ক্লোরোজেনিক অ্যাসিড এবং কিউমেরিক অ্যাসিড। যা ধুমপান করার জন্য মানুষের যে খতি হয় তা পূরণে ক্লোরোজেনিক অ্যাসিড এবং কিউমেরিক অ্যাসিড অনেক সাহায্য করে। তাই ধুমপান জনিত সমস্যা সমাধানের জন্য প্রতিদিন খাবারের তালিকা শীতকালীন এই সবজিটি রাখা উচিত।
** উচ্চ রক্তচাপ কমানোর ক্ষেত্রে- ডায়াবেটিসের মতো উচ্চ রক্তচাপের রোগটি এখন প্রায় সকলেরই হচ্ছে। টমেটোতে রয়েছে বিভিন্ন ধরণের পুষ্টি উপাদান। যা মানুষের শরীরের উচ্চ রক্তচাপ কমাতে অনেকটাই সাহায্য করে থাকে। তাই সকলের উচিত এই উচ্চ রক্তচাপ কমানোর জন্য প্রতিনের খাদ্য তালিকায় টমেটো রাখা।
** গর্ভাবস্থায় টমেটো- টমেটোতে থাকা অনেক পুষ্টিগুণের সঙ্গে রয়েছে, যার মধ্যে গর্ভবর্তি মা- বোনদের জন্য গুরুত্বপূর্ণ দু'টি উপাদান হলো আয়রন এবং ভিটামিন। উক্ত উপাদান দু'টি গর্ভাবস্থায় মা- বোনদের জন্য অনেক গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা পালন করে থাকে। তাই গর্ভাবস্থায় প্রতিদিনের অন্যান্য নিয়মিত খাবারের পাশাপাশি টমেটো রাখা উচিত।
** দাঁত এবং হাড়ের ক্ষেত্রে- মানুষের হাড় এবং দাতের উপকারে সাহায্য করে এমন বেশ কয়েকটি পুষ্টি উপাদান টমেটোতে রয়েছে। তাছাড়া বয়েসের কারণে অনেক সময় হাড় এবং আমাদের অনেক ধরণের সমস্য হয়ে থাকে। তাই সকলেরই উচিত বিশেষ করে, যাদের হাড় এবং দাঁতের সমস্যা রয়েছে তাদের নিয়মিত টমেটো খাওয়া।
** বিভিন্ন জয়েন্টের ব্যাথার ক্ষেত্রে- অনেকের বিভিন্ন কারণে বিশেষ করে বয়সের কারণে শরীরের অনেক জয়েন্টে ব্যাথা হয়ে থাকে। আর টমেটোতে রয়েছে বিভিন্ন প্রকারের ক্যালসিয়াম। যা জয়েন্টের ব্যাথা নিরাময়ে অনেক গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা পালন করে থাকে। তাই জয়েন্টের ব্যাথা নিরাময়ের জন্য নিয়মিত খাবারের তালিকায় টমেটো রাখা উচিত।
টমেটোর বিশেষ কয়েকটি উপকারিতা
টমেটোর উপরের আলোচিত উপকারের পাশাপাশি আরো বিশেষ কিছু উপকারিতা রয়েছে। নিম্নে সে সম্পর্কে সংক্ষেপে আলোচনা করা হলো-
- বয়সের ছাপ এবং ত্বকের যত্নে টমেটো গুরুত্বপূর্ণ ভুমিকা পালন করে।
- জয়েন্টের ব্যাথায় টমেটোর রয়েছে অনেক গুরুত্বপূর্ণ ভুমিকা।
- শরীরের মেদ কমানোর ক্ষেত্রে টমেটোর রয়েছে অবদান।
- খুধা কমানোর জন্য টমেটোর বেশ কার্যকরী সবজি।
- শিশুদের বৃদ্ধিতে অনেকটাই কার্যকর টমেটো।
- সর্দি- কাশি নিরাময়ের জন্য টমেটো উপকারি।
- ক্যান্সারের ঝুকি কমাতে অনেক কার্যকরী।
- চর্ম রোগ নিরাময়ের ক্ষেত্রে টমেটো।
- আর্থ্রাইটিস রোগের ক্ষেত্রে টমেটো।
- হাড়ের জন্য উপকারি টমেটো।
- রক্ত জমাটে বাধাদেয় টমেটো।
- হ্রিদপিন্ড ভালো রাখে টমেটো।
- রক্তে শর্করা নিয়ন্ত্রণে টমেটো।
- হার্ট ভালো রাখতে টমেটো।
- হজমে সহায়ক টমেটো।
টমেটোর অপকারিতা বা পার্শ্ব প্রতিক্রিয়া
সকল কিছুর উপকারিতার পাশাপাশি অপকারিতা বা পার্শ্বপ্রতিক্রিয়ার বিদ্যমান থাকে। সেক্ষেত্রে টমেটোও ব্যতিক্রম নয়। তাছাড়া কোন কিছুই অতিরিক্ত পরিমাণে খাওয়া উচিত নয়। তাই যাদের নিম্নের সমস্যাগুলো রয়েছে তাদের ক্ষেত্রে টমেটোর ব্যাপারে সতর্কতা মেনে চলা উচিত। জদিও টমেটোর তেমন অপকারিতা নেই। নিম্নে দেখে নেই যাদের সতর্কতা অবলম্বন করা জরুরী-
- অনেক মানুষ আছেন যারা হৃদরোগের অসুধ সেবন করছেন, তারা অবশ্যই ডাক্তারের পরামর্শ অনুযায়ী টমেটো খাবেন।
- অনেকে আছেন যারা কিডনির সমস্যায় ভূগছেন, তাদের ক্ষেত্রে ডাক্তারের পরামর্শ ক্রমে টমেটো খাওয়া উচিত।
- যদিও টমেটো খাওয়ার ক্ষেত্রে অ্যালার্জি বিরল, তবে অনেকের পরাগ একধরণের শ্বাস প্রসাসের অ্যালার্জি হতে পারে।
টমেটোর উপকারিতা এবং অপকারিতা। শেষকথা
আমরা আশাকরি আপনারা যদি আজকের গুরুত্বপূর্ণ আর্টিকেলটি শুরু থকে শেষ পর্যন্ত মনোযোগের সঙ্গে পড়ে থাকেন, তাহলে অবশ্যই যেনে গেছেন "টমেটোর স্বাস্থ্য উপকারিতা এবং অপকারিতা" সহ এর পুষ্টিগুণ সম্পর্কে সকল প্রকার তথ্য বিস্তারিতভাবে। যা আপনাদের অনেক উপকারে আসবে বলে আমরা আশাবাদী।
বিশেষ করে যারা টমেটো সম্পর্কে জানতে আগ্রহী, তাদের ক্ষেত্রে এটি অনেক উপকারি। আর্টিকেলটি যদি আপনাদের ভালোলাগে এবং উপকারি বলে মনে হয়, তবে এটি অন্যের সঙ্গে শেয়ার করতে ভূলবেন না। আরো নতুন নতুন তথ্য জানার জন্য আমাদের পরবর্তী আর্টিকেলটি পড়ুন এবং আমাদের সঙ্গে থাকুন। সবাইকে ধন্যবাদ।
এই ওয়েবসাইটের নীতিমালা মেনে কমেন্ট করুন। প্রতিটি কমেন্ট রিভিউ করা হয়।
comment url