ত্বকের যত্নে শসার ফেইস প্যাক

আরো পড়ুনঃ চুল পড়া রোধে ঘরোয়া ১৫ টি উপায়

শসা একটি পুষ্টিকর সবজি এবং বাংলাদেশে এটি খুবই সহজলোভ্য। কারণ শসা বাংলাদেশের প্রায় সব জায়গায়তেই, এই সবজির চাষ হয়ে থাকে। এই সবজিতে পানির পরিমাণ থাকে শতকরা ৯৫ ভাগ। শসা মানুষের শরীরের জন্য যেমন উপকারি, তেমনি এর জুড়ি মেলাভা্‌র, ত্বকের যত্নের ক্ষেত্রেও। এই সবজিতে রয়েছে অ্যান্টি অক্সিডেন্ট এবং ভিটামিন "সি" প্রচুর পরিমাণে।

আর এই উপাদানগুলো মানুষের ত্বকের জন্য গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা পালন করে থাকে। শসা ত্বকের বিভিন্ন সমস্যা যেমন ব্রণ, মেছতা, বলিরেখা ইত্যাদি সমস্যার সমাধাণের পাশাপাশি এই সবজিটি ত্বকের উজ্জলতা ধরে রাখতে সাহায্য করে তারুণ্যকে। তাই সবজিটি বহুকাল ধরেই ব্যবহার হয়ে আসছে রূপ চর্চার অন্যতম প্রধান ঘরোয়া প্রসাধনী হিসাবে।

তাছাড়া শসা নিয়মিতভাবে ত্বকে ব্যবহার করার ফলে আপনার ত্বক হয়ে উঠবে আরো স্বাস্থ্য উজ্জল। আর আমরা আজকের আর্টিকেলের মাধ্যমে আপনাদের সঙ্গে শেয়ার করবো "ত্বকের যত্নে শসার ফেইস প্যাক'' সম্পর্কে বিস্তারিত তথ্য। তাহলে আর দেরি কেন, চলুন দেখে নেওয়া যাক-

আজকের পাঠ্যক্রম- ত্বকের যত্নে শসার ফেইস প্যাক

  • ত্বকের আর্দ্রতায় শসা ও গোলাপ জলের কার্যকারিতা
  • শসার রসে ত্বকের যে সমস্য দূর করে
  • গোলাপ জল ত্বকের যে সমস্য দূর করে
  • কোন ধরণের ত্বকে শসার রস ও গোলাপ জল
  • ত্বকের যত্নে শসার ফেইস প্যাক
  • শসা ও মুলতানি মাটির ফেইস প্যাক
  • শসা এবং দুধের ফেইস প্যাক
  • শসা এবং টক দইয়ের ফেইস প্যাক
  • শসা এবং অ্যালোভেরার ফেইস প্যাক
  • শসা এবং মধুর ফেইস প্যাক
  • ত্বকের যত্নে শসার ৫ ফেইস প্যাক। শেষকথা

ত্বকের আর্দ্রতায় শসা ও গোলাপ জলের কার্যকারিতা

আপনার ত্বকের পিএইচ এর সমতা বা আর্দ্রতা ধরে রাখার ক্ষেত্রে শসা ও গোলাপ জলের কার্যকারিতা প্রায় একই ধরণের হলেও, ত্বকের সমস্য ও ধরণ  সম্পর্কে জানা থাকলে অনেক সুবিধা হয়। তবে শসা ও গোলাপ জল দু'টোই টোনার হিসাবে অনেক ভালো। ত্বকের জ্বালাপোড়া ভাব দূর করার ক্ষেত্রে ফ্রিজে রাখা গোলাপ জল সবসময় ত্বকের যত্নে অব্যর্থ ভূমিকা পালন করে।

আবার যদি আপনার ত্বকে ওপেন পোর্স থাকে সেক্ষেত্রে অনেকেই শসার রসের নিদান দিয়ে থাকেন। তাছাড়া আমাদের জানা দরকার শসার রস ও গোলাপ জল সব ধরণের ত্বকে ব্যবহার করা যাবে কি না? নিম্নের আলোচনা থেকে আমরা যেনে নেই শসার রস কোন ধরণের সমস্যার জন্য ব্যবহার করবেন এবং গোলাপ জল কোন ধরণের সমস্যার জন্য ব্যবহার করবেন।

শসার রসে ত্বকের যে সমস্য দূর করে

  • প্রাকৃতিকভাবে শসাতে রয়েছে প্রচুর পরিমাণে পানি। তাই এই তরল পদার্থটি আদ্রতা বজায় রাখতে সাহায্য করে ত্বকের গভীর থেকে। তাছাড়া ত্বকে শসা ব্যবহারের ফলে বজায় থাকে ত্বকের পেলবতাও।
  • প্রাকৃতিকভাবে শসা একটি ঠান্ডা সবজি। তাই ত্বকের যে কোন ধরণের অস্বস্তি অতি দ্রুত নিরাময় করতে এবং চোখের চারপাশ বা সমস্ত ত্বকের ফোলাভাব দূর করতে ব্যবহার করা যায় শসার রস।
  • ত্বকের প্রদাহ নিরাময়কারি উপদান রয়েছে শসার রসে। তাই ত্বকের স্পর্শকাতর স্থানের সমস্যা সমাধানে শসার রস অনেক কার্যকর।

গোলাপ জল ত্বকের যে সমস্য দূর করে

  • ত্বকের জ্বালাপোড়া এবং ত্বকের লালচেভাব নিরাময়ের ক্ষেত্রে গোলাপ জল অনেক কার্যকরী। তাছাড়া অ্যান্টি ইনফ্লেমেটরি উপাদান গোলাপ জলে থাকার ফলে ত্বকের প্রদাহ জনিত সমস্যার জন্য গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা পালন করে এটি।
  • ত্বকের আর্দ্রতা বজায় রাখার ক্ষেত্রে গোলাপ জল বেশ কার্যকরী। রাসায়নিকমুক্ত এই তরল পদার্থটি বজায় রাখতে সাহায্য করে ত্বকের পিএইচ এর সমতা।
  • গোলাপ জল অ্যান্টি অক্সিডেন্ট সমৃদ্ধ হওয়ার ফলে ত্বকের তারুণ্য বজায় রাখার ক্ষেত্রে সাহায্য করে। তাই ত্বক অকালে বুড়িয়ে যাওয়ার সম্ভাবনা থাকে না।

কোন ধরণের ত্বকে শসার রস ও গোলাপ জল

*** তৈলাক্ত ও স্পর্শকাতর ত্বকের জন্য- আপনার যদি ত্বক তৈলাক্ত ও স্পর্শকাতর হয়, তাহলে আপনি ব্যবহার করতে পারেন শসার রস। এই তরল পদার্থটি আপনার চোখ- মুখের যে কোন ধরণের ফোলাভাব দূর করবে এবং পাশাপাশি আপনাকে সাহায্য করবে ত্বকের প্রদাহজনিত সমস্যার। তাছাড়াও শসার রস ব্যবহার করা যায় ওপেস পোর্সের সমস্যার কারণে।

আরো পড়ুনঃ ত্বকের উজ্জলতা দ্রুত বাড়াতে ১০ ফেস প্যাক 

*** শুস্ক ও খসখসে ত্বকের জন্য- গোলাপ জল শুস্ক ও খসখসে ত্বকের জন্য অনেক কার্যকরী। প্রাকৃতিকভাবে গোলাপ জল ময়েশ্চারাইজার সমৃদ্ধ, তাই এটি আপনার পেলবতা নিয়ন্ত্রণে রাখতে সাহায্য করে। তাছাড়া আপনার তারুণ্যকে ধরে রাখে গোলাপ জল। আপনার ত্বকে কোন সমস্যা না থাকেলেও ব্যবহার করতে পারবেন গোলাপ জল।

ত্বকের যত্নে শসার ফেইস প্যাক

আমাদের বিভিন্ন কারণে ত্বকের বিভিন্ন ধরণে সমস্যা দেখা দেয়। যেমন- চুলকানি, ত্বক জ্বালাপোড়া, লালচে ভাব, ব্রণ, ট্যান, র‍্যাশ ইত্যদি। আর এই সকল সমস্যা সমাধানে ব্যবহার করতে পারেন শসার বিভিন্ন ফেইস প্যাক। কারণ প্রাকৃতিকভাবে শসায় থাকে ৯৫ ভাগ পানি, যা ত্বকের জন্য খুবই উপকারি। আবার ত্বকের আর্দ্রতা বজায় রাখে শসা। 

শসা এমন একটি বারোমাসি সবজি যা খেতে যেমন সুন্দর, তেমনিভাবে ত্বকের যত্নে এর উপকারিতা সবার উপরে। আপনি যদি সবজিটি আপনার ত্বকের ধরণ এবং সমস্যা অনুযায়ী এর বিভিন্ন ফেইস প্যাক তৈরি করে ব্যবহার করেন তবে, আপনার ত্বক হবে স্বাস্থ্য উজ্জল, দাগহীন, কোমল। চলুন তাহলে দেখে নেওয়া যাক ফেইস প্যাকগুলো-

শসা ও মুলতানি মাটির ফেইস প্যাক

শসা ও মুলতানি মাটির ফেইস প্যাক আপনার ত্বকের রোদে পোড়া দাগ, ত্বকের বলিরেখা দূর করার মাধ্যমে ত্বকের উজ্জলতা বাড়াতে খুবই কার্যকরী। আর এই ফেইস প্যাক তৈরী এবং ব্যবহারের নিয়ম সম্পর্কে নিম্নে দেখে নিন।

  • শসার রস ২ টেবিল চামচ।
  • মুকতানি মাটি ১ টেবিল চামচ।
  • গোলাপ জল ১ টেবিল চামচ।
উপরের উপাদান তিনটি একসঙ্গে মিশিয়ে তৈরি করে নিন ফেইস প্যাক/ পেস্ট। এবার পেস্টটি আপনার মুখ, ঘাড় এবং গলাতে ব্যবহার করে শুকানোর জন্য অপেক্ষা করুন ২৫/৩০ মিনিট। শুকিয়ে গেলে কুসুম গরম পানি দিয়ে পরিস্কার করুন আপনার লাগানো পেস্টগুলো।

শসা এবং দুধের ফেইস প্যাক

শসা এবং দুধের ফেইস প্যাকটি শীত মৌসুমের জন্য অনেক কার্যকরী। কারণ এই ফেইস প্যাকটি শীত মৌসুমে আপনার ত্বকের হারিয়ে যাওয়া আর্দ্রতা ফিরিয়ে আনে। তাছাড়া এটি যে কোন ত্বকের জন্য ব্যবহার করা যায়। আর এই ফেইস প্যাক তৈরী এবং ব্যবহারের নিয়ম সম্পর্কে নিম্নে দেখে নিন।

  • কচি শসা থেতো করুন আধা কাপ।
  • কাচা দুধ ১ টেবিল চামচ।
  • হলুদ সামান্য পরিমাণ।
উপরের উপাদান তিনটি একসঙ্গে মিশিয়ে তৈরি করে নিন ফেইস প্যাক/ পেস্ট। এবার পেস্টটি আপনার মুখ, ঘাড় এবং গলাতে ব্যবহার করে শুকানোর জন্য অপেক্ষা করুন ২৫/৩০ মিনিট। শুকিয়ে গেলে কুসুম গরম পানি দিয়ে পরিস্কার করুন আপনার লাগানো পেস্টগুলো। দেখতে পাবেন  আপনার ত্বক অনেটা আর্দ্রতা ফিরিয়ে পেয়েছে।

শসা এবং টক দইয়ের ফেইস প্যাক

শসা এবং টক দই দিয়ে তৈরি ফেইস প্যাক আপনার ত্বকের রোদে পোড়া দাগ দূর করার মাধ্যমে ত্বককে করে নরম এবং কোমল মসৃণ। তাছাড়া ব্রণ ও তেলাক্ত ত্বকের ক্ষেত্রে এই ফেইস প্যাকটি খুবই কার্যকরী। কারণ এটি ত্বকের অতিরিক্ত তেল অপসারণ করে বজায় রাখে ত্বকের আর্দ্রতা। আর এই ফেইস প্যাক তৈরী এবং ব্যবহারের নিয়ম সম্পর্কে নিম্নে দেখে নিন।

  • কচি শসা পরিমাণ মতো থেতো করুন।
  • টক দই ২ টেবিল চামচ।
উপরের উপাদান দু'ইটি একসঙ্গে মিশিয়ে তৈরি করে নিন ফেইস প্যাক/ পেস্ট। এবার পেস্টটি আপনার মুখ, ঘাড় এবং গলাতে ব্যবহার করে শুকানোর জন্য অপেক্ষা করুন ২০/২৫ মিনিট। শুকিয়ে গেলে ঠান্ডা পানি দিয়ে পরিস্কার করুন আপনার লাগানো পেস্টগুলো। দেখতে পাবেন  আপনার ত্বক অনেটা আর্দ্রতা ফিরিয়ে পেয়েছে।

শসা এবং অ্যালোভেরার ফেইস প্যাক

শসা এবং অ্যালোভেরার তৈরি ফেইস প্যাক/ পেস্ট। উপাদান দু'ইটিতেই তুলনা মূলকভাবে পানি বেশি থাকার কারণে এটি ব্যবহারের ফলে ত্বক হয় নরম ও কোমল। আবার এই ফেইস প্যাক ব্যবহারের ফলে দূর হয়, ত্বকের বলি রেখা এবং ফিরিয়ে আনে ত্বকের লাবণ্যতা। একটি কচি শসা নিন সঙ্গে ফ্রেশ একটি অ্যালোভেরা থেকে সুন্দর করে চামাচের মাধ্যমে জেল বের করুন। 
এবার উপকরণ দু'ইটি মিশিয়ে তৈরি করুন পেস্ট/ ফেইস প্যাক। আপনার তৈরি করা পেস্টটি মুখের ত্বক, গলা এবং ঘাড়ে ব্যবহার করে শুকানোর জন্য অপেক্ষা করুন ২০ মিনিটের জন্য। শুকিয়ে গেলে ঠাণ্ডা পানি দিয়ে পরিস্কার করে লাগিয়ে দিন ময়েশ্চারাইজার।

শসা এবং মধুর ফেইস প্যাক

শসা এবং মধুর ফেইস প্যাক আপনার ত্বকে ব্যবহার করার ফলে আপনার ত্বককে করে তুলে হাইড্রেট। তাছাড়া এটি ব্যবহারের ফলে খুব দ্রুত আপনার হারিয়ে যাওয়া উজ্জলতা পুনোরাই ফিরিয়ে আনতে সাহায্য করে। আর এই ফেইস প্যাক তৈরী এবং ব্যবহারের নিয়ম সম্পর্কে নিম্নে দেখে নিন। 

  • থেতো করা কচি শসা পরিমাণ মতো।
  • গোলাপ জল ১ টেবিল চামাচ।
  • মধু ১ টেবিল চামচ।
উপরের উপাদান তিনটি একসঙ্গে মিশিয়ে তৈরি করে নিন ফেইস প্যাক/ পেস্ট। এবার পেস্টটি আপনার মুখ, ঘাড় এবং গলাতে ব্যবহার করে শুকানোর জন্য অপেক্ষা করুন ২০/২৫ মিনিট। শুকিয়ে গেলে হালকা গরম পানি দিয়ে পরিস্কার করুন আপনার লাগানো পেস্টগুলো।

ত্বকের যত্নে শসার ৫ ফেইস প্যাক। শেষকথা

আশাকরি আপনারা যদি আজকের এই গুরুত্বপূর্ণ আর্টিকেলটি শুরু থেকে শেষ পর্যন্ত মনোযোগের সঙ্গে পড়ে থাকেন, তাহলে অবশ্যই যেনে গেছেন "ত্বকের যত্নে শসার ফেইস প্যাক" সহ শসার বিভিন্ন ব্যবহার সম্পর্কে। যা আমরা ইতিপূর্বেই আলোচনা করেছি। আপনারা জানলেন তো শসার বভিন্ন গুণাগুণ সম্পর্কে।
তাই আর দেরি না করে ব্যবহার করুন ত্বকের বিভিন্ন ফেইস প্যাক এবং হয়ে উঠুন আরো স্বাস্থ্য উজ্জল ত্বকের অধিকারি। আর্টিকেলটি যদি আপনার কাছে ভালোলাগে এবং উপকারি বলে মনে হয়, তবে এটি অন্যের সঙ্গে শেয়ার করতে ভূলবে না। আরো নতুন নতুন তথ্য জানার জন্য আমাদের পরবর্তী আর্টিকেলটি পড়ুন এবং আমাদের সঙ্গে থাকুন। ধন্যবাদ।

এই পোস্টটি পরিচিতদের সাথে শেয়ার করুন

পূর্বের পোস্ট দেখুন পরবর্তী পোস্ট দেখুন
এই পোস্টে এখনো কেউ মন্তব্য করে নি
মন্তব্য করতে এখানে ক্লিক করুন

এই ওয়েবসাইটের নীতিমালা মেনে কমেন্ট করুন। প্রতিটি কমেন্ট রিভিউ করা হয়।

comment url

এইটা একটি বিজ্ঞাপন এরিয়া। সিরিয়ালঃ ১

এইটা একটি বিজ্ঞাপন এরিয়া। সিরিয়ালঃ ২

এইটা একটি বিজ্ঞাপন এরিয়া। সিরিয়ালঃ ৩

এইটা একটি বিজ্ঞাপন এরিয়া। সিরিয়ালঃ ৪

এইটা একটি বিজ্ঞাপন এরিয়া। সিরিয়ালঃ ৫

এইটা একটি বিজ্ঞাপন এরিয়া। সিরিয়ালঃ ৬

এইটা একটি বিজ্ঞাপন এরিয়া। সিরিয়ালঃ ৭