আরো পড়ুনঃ ড্রাগন ফলের উপকারিতা এবং অপকারিতা
চলছে নভেম্বর মাস, আর শীত আসার প্রস্তুতি নিচ্ছে। বাজারে উঠতে শুরু করেছে শীতের আগাম সবজি। কারণ শীত আসলেই শুরু হয়, নানান ধরণের শাঁক- সবজির হুড়োহুড়ি, কোনটি ছেড়ে কোনটি খাওয়া যায় বুঝা মুশকিল। শীত কালীন সবজির মধ্যে অন্যতম উপকারি সবজি হলো পালং শাঁক। কারণ পালং শাকের রয়েছে স্বাস্থ্য, ত্বক ও চুলের উপকারিতায় প্রচুর পুষ্টি উপাদান।
শীতকালীন সবজি পালং শাঁক, যাতে রয়েছে মানুষের শরীরকে সুস্থ্য রাখার জন্য প্রয়োজনীয় প্রচুর পরিমাণে পুষ্টি উপাদান। আমাদের বিভিন্ন ধরণের রোগকে দূরে রাখতে এই শাকের জুড়ি মেলাভার। এই শাঁক খেতে যেমন মজাদা্র, তেমনি এর কার্যকারিতা অনেক। তাছাড়া আমাদের প্রতিদিনের খাদ্য তালিকায় শাঁক সবজি থাকা আবাশ্যক।
কারন শাঁক সবজি পূরণ করে সুষম খাবারের অনেক শর্ত। তাই আমাদের সকলের উচিত প্রতিদিন শাঁক সবজি খাওয়া। আর সুষম খাবার হিসাবে প্রতিদিনের খাদ্য তালিকায় আদর্শ সবজি হিসাবে পালং শাঁক রাখা যেতে পারে। কারণ পালং শাঁকের রয়েছে অনেক উপকারিতা। আজকের আর্টিকেলে আমরা আপনাদের সঙ্গে শেয়ার করব পালং শাঁকের উপকারিতা সম্পর্কে। চলুন দেখা নেওয়া যাক-
আজকের পাঠ্যক্রম- পালং শাঁকের উপকারিতা ও অপকারিতা
- পালং শাঁকে থাকা পুষ্টিগুণ
- পালং শাঁকের ১০ স্বাস্থ্য উপকারিতা
- পালং শাঁকের অপকারিতা সমূহ
- পালং শাঁক খেলে যে সকল সমস্যা হয়
- পালং শাঁকের উপকারিতা ও অপকারিতা। শেষকথা
পালং শাঁকে থাকা পুষ্টিগুণ
পালং শাঁকে রয়েছে প্রচুর পরিমাণে ভিটামিনসহ বিভিন্ন প্রাকৃতিক উপাদান। নিম্নে প্রতি ১০০ গ্রাম পালং শাঁকে থাকা পুষ্টিগুণসহ বিভিন্ন উপাদান সম্পর্কে আলোচনা করা হলো-
উপাদানের নাম পরিমাণ
- ভিটামিন "সি'' ২৭ মিলিগ্রাম।
- ভিটামিন "এ" ৯৩০০ আইইউ।
- খাদ্য আঁশ ০.৭ গ্রাম।
- প্রোটিন ২.০ গ্রাম।
- কার্বোহাইড্রেট ২.৮ গ্রাম।
- আয়রন ১১.২ মিলিগ্রাম।
- ক্যালসিয়াম ৭৩ মিলিগ্রাম।
- পটাশিয়াম ২০৮ মিলিগ্রাম।
- ফসফরাস ২০.৩ মিলিগ্রাম।
- অক্সলিক এসিড ৬৫২ মিলিগ্রাম।
- রিবোফ্লোবিন ০.০৮ মিলিগ্রাম।
- নিকোটিনিক এসিড ০.৫ মিলিগ্রাম।
- থায়ামিন ০.০৩ মিলিগ্রাম।
পালং শাঁকের ১০ স্বাস্থ্য উপকারিতা
পালং শাঁকের রয়েছে প্রচুর পরিমাণে পুষ্টি উপাদান। তাই এই শাঁক নিয়মিত খাওয়ার ফলে আমরা রক্ষা পেয়ে থাকি বিভিন্ন ধরণের রোগের হাত থেকে। চলুন আমরা নিম্নের আলোচনার মাধ্যমে পালং শাঁকের ১০ স্বাস্থ্য উপকারিতার সম্পর্কে যেনে নেই-
** চোখ ভালো রাখে- সকল প্রকার সবুজ শাঁক সবজিতে থাকে প্রচুর পরিমাণে গুরুত্বপূর্ণ ফাইটো কেমিক্যাল, যার প্রভাবে আমাদের দৃষ্টির ক্ষতির হাত থেকে বাধা প্রদান করে। আর পালং শাঁকে রয়েছে অধিক তাপমাত্রাযুক্ত বিটা ক্যারোটিন। যা আমাদের চোখের ছানি পড়ার ঝুকির হাত থেকে রক্ষা করতে অনেক সাহায্য করে।
** কোষ্ঠ কাঠিন্যের সমস্য দূর- যে সকল মানুষ কোষ্ঠ কাঠিন্যের সমস্যায় ভূগছেন, তাদের ক্ষেত্রে স্বাভাবিক জীবন যাপন করা অনেক কঠিন ব্যাপার। কারণ তারা অনেকেই কোষ্ঠ কাঠিন্যের সমস্যার ভয়ে অনেক ধরণের খাবার খেতে ভয় পান। আর পালং শাঁকে রয়েছে খাদ্য আঁশ, তাই কোষ্ঠকাঠিন্য দূর করতে, খেতে পারেন শীতকালীন এই সবজিটি।
** ক্লানিভাব দূর করে- অধিক মাত্রার আয়রণ রয়েছে পালং শাঁকে, যা ভূমিকা পালন করে শরীরের অক্সিজেন উৎপাদনে। তাছাড়া পালং শাঁকে থাকা অ্যান্টি অক্সিডেন্ট, ভিটামিন "সি এবং ই'' কে তরান্বিত করার মাধ্যমে আমাদের ক্লানিভাব দূর করতে সাহায্য করে। আবার এই সবজি আমাদের শরীরের রক্তের চিনির মাত্রা নিয়ন্ত্রণে গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা রাখে।
** ত্বক ভালো রাখে- ত্বকের আর্দ্রতা সঠিক রাখার ক্ষেত্রে ভিটামিন "এ" পালন করে গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা। আর পালং শাঁকে রয়েছে প্রচুর পরিমাণে ভিটামিন "এ"। তাই পালং শাঁক নিয়মিত খাওয়ার ফলে ত্বকের বিভিন্ন সমস্য, যেমন ব্রণ, মেছতা ইত্যাদি দূর করে। তাছাড়া পালং শাঁক বয়সের ছাপ পড়ার গতিকে অনেকটা কমিয়ে ত্বক করে নরম ও কোমল।
** প্রদাহ জনিত দূর করে- পালং শাঁকে প্রাকৃতিকভাবে থাকে নিওজেন্থিন নামক বিশেষ এক ধরনের উপাদান, যা আমাদের প্রদাহ জনিত রোগ নিরাময়ে অনেক গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা পালন করে থাকে। তাই যাদের বিভিন্ন জয়েন্টে ব্যাথার সমস্যা রয়েছে, তাদের ক্ষেত্রে প্রতিদিনের খাদ্য তালিকায় অবশ্যই পালং শাঁক নিয়মিত রাখা উচিত।
** কাজ করে ক্যান্সারের বিরুদ্ধ- পালং শাঁক বিভিন্ন ধরণের জটিল ও ভয়ানক রোগের বিরুদ্ধে কাজ করে। কারণ পালং শাঁকে রয়েছে ভিন্ন ধরণের দশটির অধিক ফ্লাভোনয়েড। আর এই উপাদানগুলো নিরপেক্ষ করে মানব দেহের ফ্রি রেডিকেলকে। ফলে আমাদের দেহ অনেক ঝুকিমুক্ত থাকে ক্যান্সার আক্রমণের হাত থেকে।
** দেহের ওজন কমে- আপনি যদি আপনার অতিরিক্ত ওজন নিয়ে চিন্তায় থাকেন এবং ওজন কমানোর জন্য কম ক্যালোরিযুক্ত খাবার খেতে চান, তাহলে কোন চিন্তা নাকরে বেচে নিতে পারেন পালং শাঁক। কারণ পালং শাঁকে ক্যালোরির পরিমাণ তুলানামূলক ভাবে অনেকটাই কম। তাই শরীরের ওজন কমানোর ক্ষেত্রে পালং শাঁক অনেক সাহায্য করে।
** সুস্থ্য রাখে হৃদযন্ত্রকে- পালং শাঁকে রয়েছে প্রচুর পরিমাণে ফলিক এসিনেজা। যা খুবই জরুরী কার্ডিওভাসকুলার সুস্থ্য রাখার ক্ষেত্রে। তাই আমাদের সকলের উচিত হৃদযন্ত্রকে সুস্থ্য রাখার জন্য শীত কালিন সুস্বাদু সহজলোভ্য এবং দামে সাশ্রয়ী সবজিটি প্রতিদিনের খাবার তালিকায় রাখা।
** বৃদ্ধিকরে রোগ প্রতিরোধ ক্ষমতা- শীতকালিল সবজি পালং শাঁকে রয়েছে প্রচুর পরিমাণে ভিটামিন "এ" সহ রোগ প্রতিরোধকারী বিভিন্ন উপাদান। যার কারণে আমাদের রক্তের শ্বেত কণিকার মাত্রা সঠিক রাখে পালং শাঁক। ফলে বিভিন্ন রোগ এবং সংক্রামণের হাত থেকে রক্ষা পাওয়া যায়। তাই নিয়মিত খাদ্য তালিকায় রাখুন পালং শাঁক।
** নিয়ন্ত্রণ করে উচ্চ রক্তচাপ- সহজলোভ্য এবং সাশ্রয়ী শীতকালীন সবজি পালং শাঁকে রয়েছে অধিক শক্তিযুক্ত ম্যাগনেসিয়াম। আর ম্যাগনেসিয়াম প্রচুর পরিমাণে সাহায্য করে উচ্চ রক্তচাপ নিয়ন্ত্রণ করতে। তাই উচ্চ রক্তচাপ নিয়ন্ত্রণ করার জন্য আমাদের প্রতিদিনে্র খাবারের তালিকায় অন্য সবজির পাশাপাশি পালং শাঁক রাখা উচিত।
পালং শাঁকের অপকারিতা সমূহ
পালং শাঁক যে স্বাস্থ্য উপকারিতায় অনেক গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা পালন করে, একথা বলার অপেক্ষা রাখেন। কিন্তু অতিরিক্ত পরিমাণে কোন কিছুই খাওয়া উচিত নয়। তাই পালং শাঁকও অতিরিক্ত পরিমাণে খাওয়ার ফলে আপনার হতে পারে স্বাস্থ্যের জন্য অনেক খতির কারণ। নিম্নে অতিরিক্ত পালং শাঁক খেলে যে সকল স্বাস্থ্য সমস্যা হতে পারে তা আলোচনা করা হলো-
- অক্সালিক অ্যাসিড- পালং শাঁকে অক্সালিক অ্যাসিড রয়েছে প্রচুর পরিমাণে। তাই অতিরিক্ত পরিমাণে পালং শাঁক খাওয়ার ফলে অক্সালিক অ্যাসিড আমাদের শরীরে থাকা ক্যালসিয়াম, ম্যাগনেসিয়াম এবং জিঙ্কের সঙ্গে মিশে গিয়ে তৈরি করতে পারে কিডনিতে পাথর।
- ভিটামিন কে- শীতকালীন সবজি পালং শাঁকে পাওয়া যায় প্রচুর পরিমাণে ভিটামিন "কে"। তাই যারা রক্ত পাতলা করার অসুধ সেবন করেন, তাদের জন্য ভিটামিন "কে" এর মাত্রা বেশি হলে ক্ষতি হতে পারে।
- পিউরিন- পালং শাঁকে রয়েছে পিউরিন নামক বিশেষ এক প্রকারের যৌগ। আর এই পিউরিন নামক যৌগটি অনেক খতির কারণ হতে পারে গাউট রোগীদের ক্ষেত্রে।
- অ্যালার্জি- অনেক মানুষের পালং শাঁক খাওয়ার ফলে অ্যালার্জির সমস্যা দেখা দেয়। তাদের ক্ষেত্রে শীতকালীন এই সবজিটি খাওয়া থেকে বিরত থাকা উচিত।
পালং শাঁক খেলে যে সকল সমস্যা হয়
অতিরিক্ত পরিমাণে শীতকালীন সহজলোভ্য সবজি পালং শাঁক খাওয়ার ফলে নিম্নের সমস্যাগুলো দেখা দিতে পারে-
- কোষ্ঠকাঠিন্য, গ্যাস ও পেট ফোলা।
- শরীরে অন্য খনিজের ঘাটতি।
- গাউট রোগ বাড়তে পারে।
- রক্ত পাতলা হতে পারে।
- কিডনিতে পাথর ইত্যাদি।
পালং শাঁকের উপকারিতা ও অপকারিতা। শেষকথা
আশাকরি আপনারা যদি আপনারা আজকের এই গুরুত্বপূর্ণ আর্টিকেলটি শুরু থেকে শেষ পর্যন্ত মনোগোগের সঙ্গে পড়ে থাকেন, তাহলে অবশ্যই যেনে গেছেন ''পালং শাঁকের উপকারিতা ও অপকারিতা'' সহ পালং শাঁকের অনেক গুরুত্বপূর্ণ তথ্য। যা আপনাদের অনেক উপকারে আসবে বলে আমরা আশাবাদি।
বিশেষ করে যারা পালং শাঁক সম্পর্কে জানতে ইচ্ছুক, তাদের ক্ষেত্রে এটি অনেক উপকারে আসবে। আর্টিকেলটি যদি আপনাদের ভালো লাগে এবং উপকারি বলে মনে হয়, তাহলে এটি অবশ্যই অন্যের সঙ্গে শেয়ার করতে ভুলবেন না। আরো নতুন নতুন তথ্য জানার জন্য আমাদের পরবর্তী আর্টিকেলটি পড়ুন এবং আমাদের সঙ্গে থাকুন। ধন্যবাদ।
এই ওয়েবসাইটের নীতিমালা মেনে কমেন্ট করুন। প্রতিটি কমেন্ট রিভিউ করা হয়।
comment url