ড্রাগন ফলের উপকারিতা এবং অপকারিতা
আরো পড়ুনঃ লাউয়ের পুষ্টিগুণ উপকারিতা ও পার্শ্ব প্রতিক্রিয়া
বাংলাদেশ তথা সারা পৃথিবীতে নাম না জানা হাজার হাজার উপকারি ফল রয়েছে। তার মধ্যে অন্যতম উপকারি ফল হলো ড্রাগন। এই ফলের নাম করণ করা হয়েছে, এর আকৃতি সম্ভাবত ড্রাগনের মতো হওয়ায় এর নাম হয়েছে ড্রাগন। এছাড়াও এর আরেকটি নাম পিটিয়া। যে নামে অনেকটাই এর পরিচিতি রয়েছে। ড্রাগন ফল সাধারণত লাল, হলুদ, বেগুনী ও গোলাপী রঙের হয়ে থাকে।
ড্রাগন ফলের ভিতরের অংশ লাল বা সাদা ও ভিতরের চারিদিকে ছড়িয়ে থাকে বাদামের বীজ যা চামচ দিয়ে বা সুন্দর করে পিচ পিচ করে কেটে খাওয়া যায়। ড্রাগন ফল মূলত গ্রীস্মমন্ডলীয় এলাকায় যেমন মধ্য এবং দক্ষিণ আমেরিকা, দক্ষিণ মেক্সিকোতে বেশি পরিমাণে পাওয়া গেলেও ফরাসিরা উনিশ শতকের পর থেকে দক্ষিণ- পূর্ব এশিয়াতে এটিকে ছড়িয়ে দেন।
বাদামের বীজের স্বাদযুক্ত হালকা মিষ্টির ড্রাগন বা পিটিয়ায় রয়েছে নানাবিধ পুষ্টিমান। আজকের আর্টিকেলে আমরা আপনাদের সঙ্গে শেয়ার করবো ''ড্রাগন ফলের উপকারিতা এবং অপকারিতা'' সহ সকল তথ্য। আশাকরি আপনারা আমাদের সঙ্গে থাকবেন এবং যেনে নিবেন উপকারি এই ফলের সকল তথ্য। চলুন তাহলে দেখে নেওয়া যাক-
আজকের পাঠ্যক্রম- ড্রাগন ফলের উপকারিতা এবং অপকারিতা
- ড্রাগন ফলের জাত বা প্রকারভেদ
- প্রতি ১০০ গ্রাম ড্রাগনে থাকা পুষ্টিমান
- ড্রাগন ফলে থাকা ভিটামিন ও খনিজ
- ড্রাগন ফলে থাকা অ্যান্টি অক্সিডেন্ট
- ড্রাগন ফলের উপকারিতা সমুহ
- ড্রাগন ফল খাওয়ার অপকারিতা
- শেষকথা
ড্রাগন ফলের জাত বা প্রকারভেদ
ড্রাগন ফল সাধারণত চার প্রকারের হয়ে থাকে এবং ভিন্ন ভিন্ন ড্রাগনের রয়েছে তাদের নিজস্ব আলাদা আলাদা বৈশিষ্ট্য। নিম্নে ভিন্ন ভিন্ন ড্রাগনের বৈশিষ্ট্য সম্পর্কে আলোচনা করা হলো-
লালা ড্রাগন- এটি দেখতে গাড় উজ্জল লাল এবং এর ভেতরের মাংস বা শাস লাল। লাল ড্রাগনে রয়েছে লাইকোপেন নামক উপাদান যা হৃদ যন্ত্রের জন্য খুবই কার্যকরী। এমনকি এটি হৃদ রোগ প্রতিরোধ করতে সাহায্য করে। তাছাড়া এতে থাকা প্রচুর পরিমাণে ভিটামিন 'সি' এবং ফাইবার যা ক্যান্সার প্রতিরোধসহ আমাদের সুস্থ্য রাখতে সাহায্য কর।
বেগুনি ড্রাগন- বেগুনি রঙের ড্রাগন অনেকটাই ঠান্ডা এবং খেতে দারুন স্বাদের হয়ে থাকে। এটিতে রয়েছে প্রচুর পরিমাণে ভিটামিন, ফাইবার এবং অ্যান্টি অক্সিডেন্ট। যা আমাদের শরীরের মধ্যে থাকা খারাপ জিনিসের বিরুদ্ধে লড়াই করে আমাদেরকে সুস্থ্য রাখতে গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা পালন করে।
গোলাপী ড্রাগন- গোলাপী ড্রাগন খেতে অনেক মিষ্টি। এটি খাওয়ার ফলে আমাদের চামড়া ভালো রাখতে এবং হজম শক্তি বাড়াতে কার্যকরী। কারণ এতে রয়েছে প্রচুর পরিমাণে ভিটামিন 'সি' এবং ফাইবার। এতে থাকা অ্যান্টি অক্সিডেন্ট আমাদেরকে ভালো রাখতে সহায়তা করে।
হলুদ ড্রাগন- হলুদ ড্রাগন খেতে অনেকটাই মিষ্টি এবং সুস্বাদু। এটি ভিটামিন 'সি' সমৃদ্ধ হওয়ার ফলে ত্বক সুন্দর রাখাসহ আমাদের শরীরের বিভিন্ন রোগ প্রতিরোধ ক্ষমতা বাড়ায়। তাছাড়াও এটিতে প্রচুর পরিমাণে ফাইবার থাকায় বেশিক্ষণ পেট পূর্ণ থাকে এবং কাজের প্রতি মনোযোগ বাড়ায়।
প্রতি ১০০ গ্রাম ড্রাগনে থাকা পুষ্টিমান
ড্রাগন ফল এর উপরের চামড়া বিভিন্ন কালারের পাশাপাশি এর ভিতরের মাংস বা শাস দুই ধরণের হয়ে থাকে। যেমন লাল মাংস বা শাঁসযুক্ত এবং সাদা মাংস বা শাঁসযুক্ত। নিম্নে এগুলোতে থাকা পুষ্টিগুণ সম্পর্কে আলোচনা করা হলো-
লাল মাংস বা শাঁসযুক্ত- প্রতি ১০০ গ্রাম লাল ড্রাগনের মাংস বা শাঁসযুক্ত ড্রাগনে থাকে ক্যালরি ৫০-৬০ গ্রাম, প্রোটিন ১-২ গ্রাম, কার্বোহাইড্রেট ১০-১৪ গ্রাম, চিনি ৮-১২ গ্রাম, ডায়েটারি ১-২ গ্রাম এবং চর্বি ১ গ্রামের নিচে।
আরো পড়ুনঃ গাজরের পুষ্টিগুণ ও উপকারিতা
সাদা মাংস বা শাঁসযুক্ত- প্রতি ১০০ গ্রাম সাদা ড্রাগনের মাংস বা শাঁসযুক্ত ড্রাগনে থাকে ক্যালরি প্রায় ৬০ গ্রাম, প্রোটিন ১-২ গ্রাম, কার্বোহাইড্রেট ১০-১৪ গ্রাম, চিনি ৮-১২ গ্রাম, ডায়েটারি ১-২ গ্রাম এবং চর্বি ১ গ্রামের নিচে।
ড্রাগন ফলে থাকা ভিটামিন ও খনিজ
ড্রাগন ফলে রয়েছে ভিটামিন বি১ (থায়ামিন) ভিটামিন বি২ (বিরোফ্লাভিন) ভিটামিন 'সি' আয়রনসহ আরো অনেক ভিটামিন এবং বিভিন্ন খনিজের উৎস। এছাড়াও ড্রাগন বা পিটিয়ায় রয়েছে ভিটামিন বি৩ (সিয়ামিন) ফসফারাস এবং ক্যালসিয়ামের মতো গুরুত্বপূর্ণ ভিটামিন এবং খনিজ উপাদান যা আমাদের মানব শরীরের জন্য অনেক উপকারি।
ড্রাগন ফলে থাকা অ্যান্টি অক্সিডেন্ট
ড্রাগন ফলে রয়েছে বিভিন্ন প্রকারের অ্যান্টি অক্সিডেন্ট, যা আমাদের শরীরের বিভিন্ন কাজ করে। ড্রাগনে থাকা অ্যান্টি অক্সিডেন্ট সম্পর্কে নিম্নে আলোচনা করা হলো-
গ্ল্যাভোনয়েডস- ড্রাগন ফলে রয়েছে ফ্ল্যাভোনয়েড, যা বেশিরভাগ ফল এমনকি অনেক সবজিতেও সচারাচর পাওয়া যায় না। আর এই সকল অ্যান্টি অক্সিডেন্টগুলি মস্তিস্কের কার্যকারিতা বাড়ানোসহ সাস্থ্য ভালো রাখার সঙ্গে অনেকটাই সম্পর্কিত। সেই সঙ্গে বিভিন্ন ঝুকি রোধ করতে সহায়তা করে কার্ডিও ভাসকুলারের।
হাইড্রোক্সি সিনামেটস- ড্রাগন ফলে থাকা এই সকল অ্যান্টি অক্সিডেন্টগুলির গ্রুপটি সবসময় ক্যান্সার বিরোধীর সঙ্গে যুক্ত থাকে। একটি ল্যাব ও প্রাণীর কোষগুলির অধ্যায়নের উপর পরামর্শ প্রদান করা হয় যে, এইগুলি ক্যান্সার বৃদ্ধি রোধ করতে সাহায্য করতে পারে।
বেটালাইনস- ড্রাগন ফলের মাংস বা শাঁসে থাকা লাল রঙ্গকগুলি শরীরের মধ্যে থাকা খারাপ পদার্থ থেকে রক্ষা করতে সাহায্য করে কোলেস্টেরল এর জারণ ও রোধ করে বিভিন্ন ক্ষতি।
ড্রাগন ফলের উপকারিতা সমুহ
ড্রাগন ফলের রয়েছে অনেক স্বাস্থ্য উপকারিতা। তারমধ্যে গুরুত্বপূর্ণ দশটি স্বাস্থ্য উপকারিতা সম্পর্কে নিম্নে আলোচনা করা হলো-
- ড্রাগন ফলে পাওয়া যায় বেশ কয়েক প্রকারের প্রয়োজনীয় অ্যান্টি অক্সিডেন্ট। যা আমাদের সুস্থ্যতার জন্য অনেক গুরুত্বপূর্ণ ভুমিকা পালন করে।
- ড্রাগন ফল যেহেতু ফ্যাট ফ্রি এবং ফাইবার সমৃদ্ধ, তাই নিশ্চিন্তে ড্রাগন ফলকে রাখা যায় ডায়েট নিয়ন্ত্রণের তালিকায়।
- ড্রাগন ফল হল আয়রণের চমৎকার অন্যতম একটি উৎস। তাই রক্ত সমস্যার সমাধানের জন্য প্রতিদিনের খাবার তালিকায় ড্রাগন ফল রাখা যায়।
- ওমেগা থ্রি এবং নাইন ফ্যাটি অ্যাসিড পাওয়া যায় ড্রাগন ফলের ছোট ছোট কালো বীজে। আর এইগুলো হার্টের কার্যকারীতা বাড়াতে অনেক উপকারি।
- ড্রাগন ফল হল ভিটামিন 'সি' এর অন্যতম প্রধান উৎস। তাই নিয়মিত ড্রাগন ফল খেলে শরীরের রোগ প্রতিরোধ ক্ষমতা অনেকটাই বেড়ে যায়।
- ড্রাগন ফল আমাদের শরীরের জন্য ক্ষতিকর উপাদান এবং উপকারি উপাদান সঠিকভাবে নিয়ন্ত্রণ করতে গুরুত্বপূর্ণ ভুমিকা পালন করে।
- ড্রাগন ফল আমাদের রক্তের শর্করা নিয়ন্ত্রনে গুরুত্বপূর্ণ ভুমিকা পালন করে। তাই এই ফল ডায়াবেটিস এর ঝুকি কমায়।
- ড্রাগন ফলে সমৃদ্ধ থাকে বিটা- ক্যারোটিনে। তাই ড্রাগন ফল নিয়মিত খাওয়ার ফলে ভালো থাকে চোখের দৃষ্টিশক্তি এবং ঝুকি কমে ছানি পড়ার।
- ড্রাগন ফল রক্তচাপ নিয়ন্ত্রনের ক্ষেত্রে গুরুত্বপূর্ণ ভূমকা পালন করে।
- ড্রাগন ফলে রয়েছে ক্যান্সারের জীবাণু ধ্বংসকারী উপাদান। তাই নিয়মিত ড্রাগন ফল খেলে অনেকটাই কমে আসে মরণব্যাধী ক্যান্সারের ঝুঁকি।
এই ওয়েবসাইটের নীতিমালা মেনে কমেন্ট করুন। প্রতিটি কমেন্ট রিভিউ করা হয়।
comment url