আরো পড়ুনঃ কালো জিরার তেলের বিশেষ সাত উপকারিতা
লাল শাক বাংলাদেশের অনুতম জনপ্রিয় এবং সুপরিচিত একটি শাক। লাল শাক চেনেনা এমন মানুষ আমাদের দেশে খুজে পাওয়া ভার। এই শাকটি পূর্বে শুধুমাত্র শীতের মৌসুমে পাওয়া গেলেও বর্তমানে এই জনপ্রিয় শাকটি সারা বছর পাওয়া যাচ্ছে। এই শাক কাঁচা অবস্থায় যেমন দেখতে সন্দর ও তেমনি রান্না করলেও দেখতে বেশ সুন্দর লাগে।
লাল শাক যে শুধু দেখতে সুন্দর এবং খেতে সুস্বাদু তা কিন্তু নয়! এই শাকের রয়েছে পুষ্টিগুণের পাশাপাশি নানান স্বাস্থ্য উপকারিতা। আজকের আর্টিকেলে আমরা আপনাদের সঙ্গে শেয়ার করবো "লাল শাকের পুষ্টিগুণ ও স্বাস্থ্য উপকারিতা'' সম্পর্কে বিস্তারিতভাবে সকল তথ্য। চলুন তাহলে আমরা দেখে নেই এর সকল তথ্য-
আজকের পাঠ্যক্রম- লাল শাকের পুষ্টিগুণ ও স্বাস্থ্য উপকারিতা
- লাল শাকের পুষ্টিগুণ ও স্বাস্থ্য উপকারিতা
- প্রতি ১০০ গ্রাম লাল শাকের পুষ্টিগুণ
- ক্যালসিয়ামের খুব ভালো উৎস লাল শাক
- ক্যানসারকে দূরে রাখতে লাল শাক
- কিডনির বিভিন্ন সমস্যাকে দূরে রাখে লাল শাক
- দৃষ্টি শক্তিকে বাড়াতে লাল শাক
- রক্ত শূন্যতা দূর করে লাল শাক
- হজম শক্তি বৃদ্ধিতে লাল শাক
- মাথার চুল পড়া কমায় লাল শাক
- লাল শাকের অপকারিতা সমুহ
- শেষকথা
লাল শাকের পুষ্টিগুণ ও স্বাস্থ্য উপকারিতা
লাল শাক ভিটামিন, আয়রন, ক্যালসিয়াম, প্রোটিনসহ বিভিন্ন প্রকার উপাদানে ভরপুর থাকে। আর এই উপদানগুলো আমাদের শরীর গঠন থেকে শুরু করে বিভিন্ন রোগ প্রতিরোধ করতে সহায়তা করে। বিশেষ করে মরণ ব্যাধি ক্যানসারকে দূরে রাখা থেকে শুরু করে আরো নানানবিধ সমস্যার হাত থেকে আমাদেরকে রক্ষ্যা করে। নিম্নে এই সম্পর্কে আলোচনা করা হলো-
প্রতি ১০০ গ্রাম লাল শাকের পুষ্টিগুণ
শীত মৌসুমে তথা বর্তমানে সারা বছর উৎপাদিত হওয়া লাল শাকে (প্রতি ১০০ গ্রামে) থাকা বিভিন্ন পুষ্টিগুণ সম্পর্কে নিম্নে বিস্তারিতভবে আলোচনা করা হলো-
- ভিটামিন- 'এ' ১.৯ মিলিগ্রাম।
- ভিটামিন- 'সি' ৮০ মিলিগ্রাম।
- প্রোটিন ৪.৬ গ্রাম।
- ডায়াটইর ফাইবার ১ গ্রাম।
- সোডিয়াম ৪২ মিলিগ্রাম।
- কার্বোহাইড্রেট ১০ গ্রাম।
- পটাশিয়াম ৩৪০ মিলিগ্রাম।
- আয়রন ২ মিলিগ্রাম।
- ফসফরাস ১১ মিলিগ্রাম।
- ক্যালসিয়াম ৩৬৮ মিলিগ্রাম।
ক্যালসিয়ামের খুব ভালো উৎস লাল শাক
অন্য যে কোন শাকের তুলনায় অনেক বেশি ক্যালসিয়াম থাকে লাল শাকে। আর ক্যালসিয়াম আমাদের দেহের জন্য একটি গুরুত্বপূর্ণ উপাদান, বিশেষ করে হাড়ের গঠন এবং দাঁতের জন্য দরকারি। তাই হাড়ের গঠন, দাঁতের সুস্থতা ও গর্ভবতী এবং প্রসূতি মা- বোনদের লাল শাক বিশেষ উপকারি ভূমিকা পালন করে দৈনিক ক্যালসিয়ামের চাহিদা মেটাতে।
ক্যানসারকে দূরে রাখতে লাল শাক
লাল শাকে রয়েছে এন্টি অক্সিডেন্ট, যা প্রতিরোধ করে ক্যানসারকে। এছাড়াও লাল শাকে থাকা ভিটামিন 'ই এবং সি', ফসফরাস, আয়রন, ম্যাগনেসিয়াম এবং অ্যামাইনো অ্যাসিড শরীরে থাকা অধিক টক্সিন উপাদানকে দূর করে। পাশাপাশি শরীরে যাতে জন্ম না নিতে পারে ক্যানসারের কোষ খেয়াল রাখে সেদিকে।
কিডনির বিভিন্ন সমস্যাকে দূরে রাখে লাল শাক
কিডিনিকে পরিস্কার এবং এর ফাংশনকে ভালো রাখার ক্ষেত্রে লাল শাক গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা পালন করে। এক গবেষণায় উঠে এসেছে প্রতিদিন লাল শাক খাওয়ার ফলে একদিকে যেমন কর্মক্ষমতা বৃদ্ধি করে অন্যদিকে তেমনি শরীরের রক্তে থাকা একাধিম ক্ষতিকর উপাদানগুলো শরীর থেকে বের করে দিতে সহায়তা করে। ফলে দূর হয় কিডনির বিভিন্ন সমস্যা।
দৃষ্টি শক্তিকে বাড়াতে লাল শাক
লাল শাকে রয়েছে প্রচুর পরিমাণে ভিটামিন- 'এ'। তাই লাল শাক নিয়মিত খাওয়ার ফলে বৃদ্ধি পায় চোখের দৃষ্টি শক্তি। কারন লাল শাকে থাকা ভিটামিন 'এ' যা চোখের রেটিনার ক্ষমতাকে অনেকগুণ বাড়িয়ে দৃষ্টিশক্তির উন্নতি করার জন্য পালন করে বিশেষ ভূমিকা। তাই চোখের দৃষ্টি শক্তি বাড়ানোর জন্য আমাদের প্রতিদিনে খাবারের তালিকায় লাল শাক রাখা উচিৎ।
রক্ত শূন্যতা দূর করে লাল শাক
লাল শকে রয়েছে প্রচুর পরিমাণে আয়রন। আর আয়রন রক্ত শূন্যতা দূর করতে খুবই কার্যকরী ভূমিকা পালন করে। লাল শাক মানুষের শরীরের রক্তের লোহিত কণিকার মাত্রা বাড়াতে অনেক গুরুত্বপূর্ণ। তাই অ্যানিমিয়া রোগিদের জন্য খুবই উপকারি নিয়মিত লাল শাক খাওয়া।
হজম শক্তি বৃদ্ধিতে লাল শাক
হজম শক্তি বাড়াতে সাহায্য করে ফাইবার বা আঁশ। আর প্রচুর পরিমাণে আঁশ বা ফাইবার রয়েছে লাল শাকে। তাই এটি খাওয়ার ফলে স্বাভাবিকভাবে বেড়ে যায় হজম শক্তি এবং পাশাপাশি কমে যায় বদ হজমের আসঙ্কা। এর সঙ্গে লাল শাক বাওয়েল মুভমেন্ট সঠিক রাখে।
মাথার চুল পড়া কমায় লাল শাক
লাল শাক নিয়মিত খাওয়ার ফলে চুলের গোড়াকে করে তোলে মজবুত এবং আপনার চুলে যোগায় পুষ্টি এবং মিনারেল। তাই চুলের স্বাস্থ্যকে ভালো রাখতে প্রতিদিনের খাবারার তালিকায় লাল শাক রাখা উচিৎ। এছাড়াও লাল শাক স্বাভাবিক রাখতে সাহায্য করে রক্তে কোলেস্ট্রলের মাত্রা। যার ফলে ঝুকি কমে হৃদ রোগের। তাছাড়া হৃদপিণ্ড ও মস্তিস্ককে শক্তিশালি রাখে লাল শাক।
লাল শাকের অপকারিতা সমুহ
*** লাল শাকে প্রচুর পরিমাণে আয়রন রয়েছে। আর বেশি আয়রন থাকার কারণে লাল শাক রাতে খেলে ঘুমের সমস্যা হতে পারে।
*** গর্ভবতী মা- বোনদের জন্য লাল শাক খুবই উপকারি। কিন্তু উপকারি হলেও এটি খাবারের পরে সহজে হজম করা যায় না। তাই তাঁদের ক্ষেত্রে লাল শাক কম খাওয়াই ভালো।
*** লাল শাকে প্রচুর পরিমাণে ফাইবার রয়েছে। আর ফাইবার আমাদের শরীরের জন্য খুবই প্রয়োজন। কিন্তু রাতে লাল শাক না খাওয়াই ভালো। কারণ খাবার হজমকারি জরুরী নালি ব্যর্থ হয় রাতে কাজ করতে।
যাদের হার্ট ও লিভারের সমস্যা রয়েছে, তাঁদের ক্ষেত্রে লাল শাক গ্রহণ না করাই ভালো। কারণ তাঁদের শরীরে সাধারণত আয়রণের পরিমাণ বেশি থাকে।
শেষকথা
আশাকরি আজকের আর্টিকেলের মাধ্যমে আমরা আপনাদের সঙ্গে "লাল শাকের পুষ্টিগুণ ও স্বাস্থ্য উপকারিতা'' এবং অপকারিতা সম্পর্কে অনেক তথ্য শেয়ার করতে পেরেছি। যা আপনাদের অনেক উপকারে আসবে বলে আমরা আসাবাদি। বিশেষ করে যারা উপরের সমস্যায় ভূগছেন তাঁদের ক্ষেত্রে এই আর্টিকেলটি অনেক উপকারে আসবে।
আজকের আর্টিকেলটি যদি ভালো লাগে ও উপকারি বলে আপনাদের মনে হয়, তবে এটি অন্যের সঙ্গে অবশ্যই শেয়ার করবেন। আরো নতুন নতুন তথ্য জানার জন্য আমাদের পরবর্তী আর্টিকেল দেখুন এবং আমাদের সঙ্গে থাকুন। ধন্যবাদ।
এই ওয়েবসাইটের নীতিমালা মেনে কমেন্ট করুন। প্রতিটি কমেন্ট রিভিউ করা হয়।
comment url