কাজু বাদামের পুষ্টিগুণ এবং আট উপকারিতা

আরো পড়ুনঃ লাল শাকের পুষ্টিগুণ ও স্বাস্থ্য উপকারিতা

কাজু মাদাম দানাদার খাবারের অন্যতম একটি সুস্বাদু খাবার। কাজু বাদামের আদি জন্মস্থান ব্রাজিলে হলেও বর্তমানে সারা বিশ্বের উষ্ণ আবহাওয়া রয়েছে এমন দেশে কাজু বাদামের চাষ হয়ে থাকে। কাজু বাদাম রান্নাকরে ও কাঁচা চিবিয়ে খাওয়া যায়। কাজু বাদাম বিরানি, সেমাই, পায়েস ইত্যাদিতে খাবারের স্বাদ বাড়ানোর জন্য ব্যবহার করা হয়ে থাকে। 

কিন্তু কাজু বাদামের প্রোটিনের কথা জানলে আপনি অবাক হবেন, কারণ এতে যে পরিমাণ প্রোটিন রয়েছে তা প্রায় রান্না করা মাংসের প্রোটিনের সমান। তাছাড়াও এতে থাকে প্রচুর পরিমাণে ফাইবার এবং শর্করা। আজকের আর্টিকেলে আমরা আপনাদে সঙ্গে শেয়ার করবো "কাজু বাদামের পুষ্টিগুণ এবং আট উপকারিতা" সম্পর্কে সকল তথ্য।

আজকের পাঠ্যক্রম- কাজু বাদামের পুষ্টিগুণ এবং আট উপকারিতা

  • কাজু বাদামে যে সকল পুষ্টিগুণ রয়েছে
  • কাজু বাদামের পুষ্টিগুণ এবং আট উপকারিতা
  • ডায়াবেটিস প্রতিরোধে কাজু বাদাম
  • হার্টের জন্য কাজু বাদাম উপকারি
  • কাজু বাদাম ওজন নিয়ন্ত্রণ করে
  • হাড়ের জন্য কাজু বাদাম উপকারি
  • স্মৃতিশক্তি বাড়াতে কাজু বাদাম উপকারি
  • কাজু বাদাম হৃদযন্ত্রকে সচল রাখে
  • চোখের জ্যোতি বাড়াতে কাজু বাদাম 
  • কাজু বাদাম রক্তরোগ দূর করে
  • কাজু বাদাম খাওয়ার ক্ষেত্রে সতর্কতা
  • কাজু বাদামের রেসিপি তৈরি
  • শেষকথা

কাজু বাদামে যে সকল পুষ্টিগুণ রয়েছে

কাজু বাদামে রয়েছে বিভিন্ন পুষ্টি উপাদান, যেমন- তামা, দস্তা, আয়রন, ম্যাগনেসিয়াম, সেলেনিয়াম, ম্যাঙ্গানিজ, ফসফরাস, থায়ামিনসহ  বিভিন্ন ভিটামিন "কে এবং বি-৬'' এর মতো পুষ্টি পদার্থে ঠাসা থাকে এটি। তাছাড়াও কাজু বাদামে ফাইবার জাতীয় একটি খাবার যা আমাদের কোলেস্টরল কমাতে অনেক সাহায্য করে। নিম্নে এক আউন্স কাজু বাদামে থাকা উপাদান আলোচনা করা হলো-

           উপাদান                    পরিমাণ

  • ক্যালরি                     ১৫৭ গ্রাম।
  • প্রোটিন                     ১২.৪৩ গ্রাম।
  • র্করা                       ৮.৫৬ গ্রাম।
  • ফ্যাট                        ৫.১৪ গ্রাম 
  • প্রাকৃতিক চিনি         ১.৬৮ গ্রাম।
  • ফাইবার                    ০.৯ গ্রাম।

কাজু বাদামের পুষ্টিগুণ এবং আট উপকারিতা

অপূর্ব স্বাদে ভরা দানাদার জাতীয় খাবার কাজু বাদামে রয়েছে প্রচুর পরিমাণে পুষ্টিগুণ ও প্রোটিন। আর এতে থাকা পুষ্টি উপাদানের কারণে এর স্বাস্থ্য উপকারিতাও অনেক। বর্তমান বিশ্বে যতো স্বাস্থ্যকর খাবার রয়েছে তাঁর মধ্যে কাজু বাদাম অন্যতম একটি খাবার। পরিমিত মাত্রায় কাজু বাদাম নিয়মিতভাবে খেলে স্বাস্থ্যের জন্য নানাবিধ উপকার পাওয়া যায়।

কাজু বাদাম হাড়ের উপকার থেকে শুরুকরে হাট ভালো রাখতে, ওজন কমাতে, ডায়াবেটিস নিয়ন্ত্রণসহ বিভিন্ন ধরণের উপকারি হিসাবে বহুল পরিক্ষিত। তাই আমাদের উচিৎ নিয়মিতিভাবে কাজু বাদাম খাওয়া। নিম্নে কাজু বাদাম নিয়মিত খাওয়ার আট উপকারিতা সম্পর্কে বিস্তারিতভাবে আলোচনা করা হলো-

ডায়াবেটিস প্রতিরোধে কাজু বাদাম

ডায়াবেটিস প্রতিরোধ করার ক্ষেত্রে কাজু বাদাম প্রচুর উপকারি হিসাবে কাজ করে। কারণ কাজু বাদামে রয়েছে ফাইবার যা রক্তের শর্করার স্পাইক রোধ করতে গুরুত্বপূর্ণ ভুমিকা পালন করে। আবার এতে শর্করার পরিমাণ তুলনা মুলকভাবে অনেক কম থাকে। আর একারণেই শর্করার পরিমাণ কমিয়ে সাহায্য করে ডায়াবেটিস নিয়ন্ত্রণে। 

হার্টের জন্য কাজু বাদাম উপকারি

হৃদরোগ এবং স্ট্রোকের ঝুকি কমাতে কাজু বাদাম উপকারি ভুমিকা পালন করে থাকে। একটি গবেষণার মাধ্যমে উঠে এসেছে যে, নিয়মিতভাবে কাজু বাদাম খাওয়ার ফলে ট্রাইগ্লিসারাইড এবং রক্ত চাপের মাত্রাকে কমিয়ে সাহায্য করে হার্টের স্বাস্থ্যকে উন্নত করে স্ট্রোকের ঝুকি কমায়।

কাজু বাদাম ওজন নিয়ন্ত্রণ করে

অন্য যেকোন বাদাম বেশি পরিমাণে খেলে ওজন বৃদ্ধিতে সাহায্য করে। কারণ সেগুলোতে ফ্যাট ও ক্যালোরীর পরিমাণ বেশি থাকে। আর কাজু বাদামে যে পরিমাণ ক্যালরি থাকে তাঁর মধ্যে ৮০ ভাগের বেশি মানুষের শরীর হজম করতে ও শুষে নিতে পারে। তাছাড়া এর মধ্যে থাকা প্রোটিন ও ফাইবার খুদা কমাতে ও পেটভরা রাখতে সাহায্য করে। ফলে ওজন নিয়ন্ত্রণে থাকে।

আরো পড়ুনঃ কালো জিরার তেলের বিশেষ সাত উপকারিতা

হাড়ের জন্য কাজু বাদাম উপকারি

কাজু বাদামে রয়েছে প্রচুর পরমাণে ম্যাগনেসিয়াম ও ম্যাঙ্গানিজ যা হাড়ের জন্য প্রচুর উপকারি হিসাবে কাজ করে। তাছাড়াও কাজু বাদাম মানব দেহের দরকারি কপারের চাহিদা পূরণ করে। কারণ কপারের অভাবে মানব দেহের হাড়ের বিভিন্ন ধরণের সমস্যা হওয়ার ঝুকি বাড়ে। সেই কারণে নিয়মিত কাজু বাদাম খাওয়ার ফলে হাড়ের জন্য অনেক উপকার করে।

স্মৃতিশক্তি বাড়াতে কাজু বাদাম উপকারি

অ্যান্টি অক্সিডেন্টের পাওয়ার হাউস হিসাবে কাজু বাদামকে বিবেচনা করা হয়ে থাকে। স্মৃতিশক্তি জনিত বিভিন্ন সমস্যাসহ চোখের অন্যরোগ এবং হৃদ রোগের প্রতিরোধকারি হিসাবে অ্যান্টি অক্সিডেন্টের বেশ কার্যকরী ভুমিকা পালন করে থেকে। তাছাড়া চোখের দৃষ্টিশক্তি বৃদ্ধির পাশাপাশি ত্বকের সৌন্দর্য বজায় রাখতে অ্যান্টি অক্সিডেন্টের কার্যকরী।

কাজু বাদাম হৃদযন্ত্রকে সচল রাখে

হৃদযন্ত্রকে সচল রাখতে কাজু বাদামের জুড়ি মেলা ভার। কাজু বাদামে কোন প্রকার কোলেস্টেরল বা ক্ষতিকর উপাদান নেই। কিন্তু কাজু বাদামে রয়েছে হৃদযন্ত্রের উপকারি প্রোটিন, চর্বি, তন্তু এবং আরজিনি নামের এক ধরনের উপাদান থাকে, যা হৃদযন্ত্রকে সচল ও সুস্থ্য সবল রাখে। তাই হৃদযন্ত্রকে সচল রাখতে নিয়মিত কাজু বাদাম খাওয়ার অভ্যাস করুন।

চোখের জ্যোতি বাড়াতে কাজু বাদাম 

কাজু বাদামে অ্যান্টি অক্সিডেন্ট, জিয়াক্সাথিন এবং লুটেন নামক উপাদান থাকে প্রচুর পরিমাণে। যা মানুষের চোখকে ক্ষতিকর আলোক রশ্মির প্রভাব থেকে অনেক রক্ষা করে থাকে। তাছাড়াও কাজু বাদাম নিয়মিত খাওয়ার ফলে রক্ষা পাওয়া যায় চোখের ছানি পড়া রোগের হাত থেক। তাই চোখের জ্যোতি বাড়াতে কাজু বাদাম খান।

কাজু বাদাম রক্তরোগ দূর করে

রক্ত স্বল্পতা দূর পরার জন্য পরিমিত মাত্রায় নিয়মিত কাজু বাদামের বিকল্প মেলাভার। কারণ কাজু বাদামে রয়েছে প্রচুর পরিমাণে তামা বা কপার, যা রোক্তরোগ দূর করতে সাহায্য করে। আর মানুষের রক্তে কপার বা তামার অভাব হলে দেখা দিতে পারে লৌহ স্বল্পতারও এবং সৃষ্টি করে রোক্তশূন্যতা। আর কাজু বাদাম করতে পারে এসকল সমস্যার সমাধান।

কাজু বাদাম খাওয়ার ক্ষেত্রে সতর্কতা

কাজু বাদাম সাধারণত সারা বিশ্বে কাঁচা অবস্থাতেই সবচেয়ে বেশি বিক্রি করা হয়ে থাকে এবং তা কাঁচা অবস্থাতেই খাওয়া হয়। তবে এটি কোন অবস্থাতেই কাঁচা খাওয়া নিরাপদ নয়। কাঁচা অবস্থায় কাজু বাদামে উরুশিওল নামের বিশেষ এক ধরণের বিষাক্ত পদার্থ থাকে এবং এটি বিরূপ প্রতিক্রিয়া সৃষ্টি করে মানুষের ত্বকে। তাই এটি কাঁচা খাওয়া থেকে বিরত থাকাই ভালো।

কাজু বাদামের রেসিপি তৈরি

কাজু বাদামের রেসিপি তৈরি করার জন্য আপনাকে নিতে হবে ২০০ গ্রাম কাজু বাদামের জন্য ক্রিম বা নারিকেলের দুধ ২ কাপ, আদাকুচি ১ টেবিল চামচ, পেঁয়াজ কুচি ১ টেবিল চামচ, রসুন কুচি ১ টেবিল চামচ, মেথি ১ চামচের তিন ভাগের একভাগ, গরম মসল্লা ১ চামচের চার ভাগের একভাগ, তেজ পাতা ২/৩ টি এবং টমেটো ৩/৪ টা।

এবার পাত্রে করে পরিমান মতো তেল গরম মরে নিন। অর্ধেক পরিমাণ কাজু বাদাম এবং নারিকেলের দুধ বা ক্রিম ছাড়া সকল উপদানগুলি ভালোকরে ভেজে তা ঠাণ্ডা করার জন্য অপেক্ষা করুন। ঠাণ্ডা হয়ে গেলে ব্লেন্ডারে ভালোকরে ব্লেন্ড করুন এবং পেস্ট বানিয়ে নিন। এবার বাকি উপাদানগুলো গরম তেলে ফুটা পর্যন্ত অপেক্ষা করুন।

এবার মিশ্রণ করুন আগে বানানো পেস্টগুলো। তবে এখানে আপনি চাইলে হালকা পরিমাণে মরিচের গুড়া ব্যবহার করতে পারেন। মিশ্রণটি নাড়তে থাকুন ঘন না হওয়া পর্যন্ত। ঘন হয়ে গেলে পরিমাণ মতো আধা ভাঙ্গা কাজু বাদাম মিশিয়ে নিতে পারেন। দেখবেন খাবারের সময় আপনি মুখে কাজু বাদামের স্বাদ পাবেন। খাবারের সময় আরো কাজু বাদাম ব্যবহার করতে পারেন।

শেষকথা

আশাকরি আজকের আর্টিকেলের মাধ্যমে আমরা আপনাদের সঙ্গে "কাজু বাদামের পুষ্টিগুণ এবং আট উপকারিতা'' সহ কাজু বাদামের রেসিপি সম্পর্কে সকল তথ্য শেয়ার করতে পেরেছি। যা আপনাদের অনেক উপকারে আসবে বলে আমরা আসাবাদি। বিশেষ করে যারা নিয়মিত কাজু বাদাম খেতে চান তাঁদের ক্ষেত্রে এটি অনেক উপকারে আসবে।

আরো পড়ুনঃ কৃমি কি, কেন হয়, প্রতিকার ও চিকিৎসা

আর্টিকেলটি যদি ভালোলাগে ও উপকারি বলে মনে হয়, তাহলে এটি অবশ্যই আপনার পরিচিতদের সঙ্গে শেয়ার করতে ভুলবেন না। আরো নতুন নতুন তথ্য জানার জন্য আমাদের পরবর্তী আর্টিকেলটি পড়ুন এবং আমাদের সঙ্গে থাকুন। 

এই পোস্টটি পরিচিতদের সাথে শেয়ার করুন

পূর্বের পোস্ট দেখুন পরবর্তী পোস্ট দেখুন
এই পোস্টে এখনো কেউ মন্তব্য করে নি
মন্তব্য করতে এখানে ক্লিক করুন

এই ওয়েবসাইটের নীতিমালা মেনে কমেন্ট করুন। প্রতিটি কমেন্ট রিভিউ করা হয়।

comment url

এইটা একটি বিজ্ঞাপন এরিয়া। সিরিয়ালঃ ১

এইটা একটি বিজ্ঞাপন এরিয়া। সিরিয়ালঃ ২

এইটা একটি বিজ্ঞাপন এরিয়া। সিরিয়ালঃ ৩

এইটা একটি বিজ্ঞাপন এরিয়া। সিরিয়ালঃ ৪

এইটা একটি বিজ্ঞাপন এরিয়া। সিরিয়ালঃ ৫

এইটা একটি বিজ্ঞাপন এরিয়া। সিরিয়ালঃ ৬

এইটা একটি বিজ্ঞাপন এরিয়া। সিরিয়ালঃ ৭