প্রত্নতাত্ত্বিক যাদুঘর ঐতিহাসিক পাহাড়পুর নওগাঁ

আরো পড়ুনঃ ধবংসের দ্বারপ্রান্তে ঐতিহাসিক হাজার দুয়ারি জমিদার বাড়ি

বাংলাদেশের বিভিন্ন অঞ্চলে ছড়িয়ে ছিটিয়ে রয়েছে শত শত নিদর্শন। যা এক সময় হয়তো হারিয়ে যাবে কালের আবর্তে। এই সকল পুরাকীর্তিতে বিভিন্ন সময়ে প্রাপ্ত মুল্যবান সম্পদ এবং বিভিন্ন সময়ের কিছু স্মৃতিকে ধরে রাখার জন্য বাংলাদেশে গড়ে উঠেছ বাংলাদেশের প্রত্নতত্ত্ব অধিদপ্তরের আওতাধীন একুশটি যাদুঘর, তাঁর মধ্যে ঐতিহাসিক পাহাড়পুর একটি।

আজকের আর্টিকেলে আমরা আপনাদের সঙ্গে শেয়ার করতে যাচ্ছি বাংলাদেশের অন্যতম নওগাঁ জেলার পাহাড়পুর অবস্থিত পাহাড়পুর প্রত্নতাত্ত্বিক যাদুঘর সম্পর্কে বিস্তারিত সকল তথ্য। আশাকরি আপনারা আজকের এই আর্টিকেলটি পুরোটাই পড়বেন এবং যেনে নিবেন এই ঐতিহাসিক স্থান সম্পর্কে। চলুন তাহলে যেনে নেওয়া যাক-

আজকের পাঠ্যক্রম- প্রত্নতাত্ত্বিক যাদুঘর ঐতিহাসিক পাহাড়পুর নওগাঁ

  • প্রত্নতাত্ত্বিক যাদুঘর পাহাড়পুরের অবস্থান
  • প্রত্নতাত্ত্বিক যাদুঘর পাহাড়পুরের ইতিহাস
  • প্রত্নতাত্ত্বিক যাদুঘর পাহাড়পুরের প্রবেশ মুল্য
  • প্রত্নতাত্ত্বিক যাদুঘর পাহাড়পুর পরিদর্শন সূচী
  • প্রত্নতাত্ত্বিক যাদুঘর পাহাড়পুরে সংরক্ষিত সম্পদ
  • প্রত্নতাত্ত্বিক যাদুঘর পাহাড়পুরে সংরক্ষিত মূর্তি সমূহ
  • কিভাবে যাবেন পাহাড়পুর প্রত্নতাত্ত্বিক যাদুঘর 
  • কোথায় থাকবেন ও খাবেন পাহাড়পুর প্রত্নতাত্ত্বিক যাদুঘর 
  • শেষকথা

প্রত্নতাত্ত্বিক যাদুঘর পাহাড়পুরের অবস্থান

বাংলাদেশের রাজশাহী বিভাগের নওগাঁ জেলায় ঐতিহাসিক পাহাড়পুরে অবস্থিত প্রত্নতাত্ত্বিক এই জাদুঘর। এই জাদুঘরটি ঐতিহাসিক পাহাড়পুর বৌদ্ধ বিহার সংলগ্ন। নওগাঁ জেলা সদর হতে প্রায় ২৫ কিলোমিটার আর মাত্র ১২ কিলোমিটার জয়পুর হাট জেলা সদর হতে।

প্রত্নতাত্ত্বিক যাদুঘর পাহাড়পুরের ইতিহাস

প্রত্নতাত্ত্বিক এই যাদুঘরটি পাকিস্থান শাসন আমলে ষাটের দশকে বাংলাদেশ প্রত্নতাত্ত্ব অধিদপ্তর ঐতিহাসিক পাহাড়পুর বৌদ্ধ বিহারের পাশেই প্রতিষ্ঠা করে। স্বাধীনতার পর ১৯৮৫ সালে বৌদ্ধ বিহারটি অন্তর্ভুক্ত করা হয় বিশ্ব সাংস্কৃতিক ঐতিহ্যের সঙ্গে। 

এর ফলে ১৯৯৪ সালে ইউনেস্কোর সহায়তার মাধ্যমে একটি প্রকল্পের আওতায় পুরাতন ভবন ভেঙ্গে নতুন একটি ভবন নির্মাণ করা হয় চার গ্যালারী বিশিষ্ট করে। এই জাদুঘরটিতে প্রতিদিন শত শত দর্শনার্থীদের পদ চারনায় মুখরিত হয়ে উঠে।  বিশেষ করে সরকারি ছুটির দিন এবং দুই ঈদের ছুটিতে আরো মুখরিত হয়ে উঠে যাদুঘর এবং বৌদ্ধ বিহার এলাকা।

প্রত্নতাত্ত্বিক যাদুঘর পাহাড়পুরের প্রবেশ মুল্য

প্রত্নতাত্ত্বিক এই যাদুঘরে সংরক্ষিত দর্শনীয় এবং মুল্যবান দুর্লভ জিনিস দেখার জন্য জনপ্রতি ৩০ টাকা প্রবেশ মুল্য পরিশোধ করতে হয়। তবে বিশেষ কোন দিনে পর্যটকদের যাদুঘরটি বিনা মুল্যে পরিদর্শনের সুযোগ দেওয়া হয়ে থাকে।

প্রত্নতাত্ত্বিক যাদুঘর পাহাড়পুর পরিদর্শন সূচী

গ্রীস্ম মৌসুমে অর্থাৎ এপ্রিল মাস থেকে সেপ্টেম্বর মাস পর্যন্ত। সোমবার থেকে শনিবার (রবিবার সাপ্তাহিক ছুটি) সকাল ১০.০০টা হতে বৈকাল ০৬.০০টা পর্যন্ত। তবে এর মধ্যে ৩০ মিনিট অর্থাৎ দুপুর ০১.০০টা থেকে দুপুর ০১.৩০টা পর্যন্ত বিরতি থাকে। শুক্রবার জুম্মার নামাজের জন্য দুপুর ১২.৩০টা থেকে ০৩.০০টা পর্যন্ত বন্ধ থাকে।

শীত মৌসুমে অর্থাৎ অক্টোবর মাস থেকে মার্চ মাস পর্যন্ত। সোমবার থেকে শনিবার (রবিবার সাপ্তাহিক ছুটি) সকাল ০৯.০০টা হতে বৈকাল ০৫.০০টা পর্যন্ত । তবে এর মধ্যে ৩০ মিনিট অর্থাৎ দুপুর ০১.০০টা থেকে দুপুর ০১.৩০টা পর্যন্ত বিরতি থাকে। শুক্রবার জুম্মার নামাজের জন্য দুপুর ১২.৩০টা থেকে ০৩.০০টা পর্যন্ত বন্ধ থাকে।

প্রত্নতাত্ত্বিক যাদুঘর পাহাড়পুরে সংরক্ষিত সম্পদ

ঐতিহাসিক পাহাড়পুর প্রত্নতাত্ত্বিক যাদুঘরে সংরক্ষিত মূল্যবান সম্পদ হলো- মাঝারি আকারের ব্রোঞ্চ দ্বারা তৈরিকৃত একটি বৌদ্ধের আবক্ষ অংশ, পাথরের তৈরি মূর্তি, অলংকৃত ইট, পোড়ামাটির ফলক, পোড়ামাটির বিভিন্ন তৈজসপত্র ইত্যাদি। এখানে আরো সংরক্ষিত রয়েছে ধাতব মূর্তি যা বৌদ্ধ বিহার থেকে সংগ্রহীত।

সেগুলোর মধ্যে উল্লেখযোগ্য ব্রোঞ্চ দ্বার তৈরিকৃত বুদ্ধের আবক্ষমূর্তি, নগ্ন জৈন মূর্তি, অলংকৃত হরগৌরী। প্রত্নতাত্ত্বিক যাদুঘরে আরো সংরক্ষিত রয়েছে অষ্টম শতক হতে ১৬০০ শতক পর্যন্ত সময়ের পুরনো রৌপ্য এবং তাম্রের বিভিন্ন মুদ্রা।

আরো পড়ুনঃ ঐতিহাসিক ভাঙ্গা মসজিদ নওগাঁ

এছাড়াও এই ঐতিহাসিক যাদুঘরে আরো রয়েছে পোড়ামাটির নারীমূর্তি, মন্দিরের চূড়ার ভগ্নাংশ, মোচাকৃতির ড্যাগার যার অগ্রভাগ ছাটা রয়েছে, জীবজন্তুর প্রতিকৃতি, চ্যাপ্টা চাকতি, নলাকার গুটিকা এবং সিলমোহর। এখানে আরো রয়েছে অর্ধ প্রস্ফুটিত পদ্ম, পদ্ম পাপড়ি, পিরামিড, আয়তাকার পদক এবং দাবার ছক।

প্রত্নতাত্ত্বিক যাদুঘর পাহাড়পুরে সংরক্ষিত মূর্তি সমূহ

প্রত্নতাত্ত্বিক যাদুঘর ঐতিহাসিক পাহাড়পুরে যে সকল মূল্যবান মূর্তিগুলো সংরক্ষিত রয়েছে তার মধ্যে উল্লেখযোগ্য কয়েকটির নামের তালিকা নিম্নে দেখানো হলো-

  • কৃষ্ণ পাথরের দণ্ডায়মান গণেশ।
  • কৃষ্ণ পাথরের বিষ্ণুর খণ্ডাংশ।
  • কৃষ্ণ পাথরের উমা মূর্তি।
  • কৃষ্ণ পাথরের লক্ষ্মী নারায়ণের ভগ্ন মূর্তি।
  • কৃষ্ণ পাথরের বিষ্ণু মূর্তি।
  • কৃষ্ণ পাথরের শিবলিঙ্গ।
  • বেলে পাথরের চামুণ্ডার মূর্তি।
  • বেলে পাথরের বিষ্ণু মূর্তি।
  • বেলে পাথরের গৌরী মূর্তি।
  • বেলে পাথরের কীর্তি মূর্তি।
  • বেলে পাথরের মনসা মূর্তি।
  • নন্দী মূর্তি।
  • সূর্য মূর্তি।
  • লাল পাথরের দণ্ডায়মান শীতলা মূর্তি।
  • হরগৌরীর ক্ষতিগ্রস্ত মূর্তি। 
  • এবং দুবলহাটির মহারাণীর তৈলচিত্র।

কিভাবে যাবেন পাহাড়পুর প্রত্নতাত্ত্বিক যাদুঘর 

পাহাড়পুর প্রত্নতাত্ত্বিক যাদুঘর যাওয়ার জন্য আপনাকে নওগাঁ জেলা সদর থেকে বাসযোগে বদলগাছি নেমে সেখান থেকে সিএনজি বা অটোরিক্সায় যেতে হবে। আবার জয়পুর হাট জেলা সদর হতে সরাসরি সিএনজি বা অটোরিক্সায় খুব সহজে যেতে পারবেন।

কোথায় থাকবেন ও খাবেন পাহাড়পুর প্রত্নতাত্ত্বিক যাদুঘর

থাকা- খাওয়ার তেমন ব্যবস্থা সেখানে ভালো নেই। কারণ এখানে সকলেই সকালে এসে সন্ধ্যার মধ্যে নওগাঁ বা জয়পুর হাট জেলা সদরে ফিরে যায়। সেখানে অনেক ধরনের আবাসিক ও খাবারের হোটেল রয়েছে। এগুলোতে থাকার জন্য ২০০ টাকা হতে মানভেদে উপরে ভাড়া লাগবে এবং খাওয়ার জন্য ১০০- ২০০ টাকার মধ্যে পেটপুরে ভাত খেতে পারবেন। 

শেষকথা

আশাকরি আজকের আর্টিকেলের মাধ্যমে আমরা আপনাদের "প্রত্নতাত্ত্বিক যাদুঘর ঐতিহাসিক পাহাড়পুর নওগাঁ" সম্পর্কে অনেক গুরুত্বপূর্ণ তথ্য শেয়ার করতে পেরেছি। যা আপনাদের অনেক উপকারে আসবে বলে আমরা আসাবাদি। বিশেষ করে যারা এই যাদুঘর পরিদর্শনে যেতে ইচ্ছুক, তাঁদের ক্ষেত্রে এটি অনেক উপকারে আসবে।

আরো পড়ুনঃ প্রত্নতাত্ত্বিক অধিদপ্তরের তালিকাভূক্ত বলিহার রাজবাড়ি

আর্টিকেলটি ভালো লাগলে ও উপকারি মনে হলে এটি অন্যের সঙ্গে অবশ্যই শেয়ার করবেন। আরো নতুন নতুন তথ্য জানার জন্য আমাদের পরবর্তী আর্টিকেল দেখুন এবং আমাদের সঙ্গে থাকুন। সবাইকে ধন্যবাদ আমাদের সঙ্গে থাকার জন্য।

এই পোস্টটি পরিচিতদের সাথে শেয়ার করুন

পূর্বের পোস্ট দেখুন পরবর্তী পোস্ট দেখুন
এই পোস্টে এখনো কেউ মন্তব্য করে নি
মন্তব্য করতে এখানে ক্লিক করুন

এই ওয়েবসাইটের নীতিমালা মেনে কমেন্ট করুন। প্রতিটি কমেন্ট রিভিউ করা হয়।

comment url

এইটা একটি বিজ্ঞাপন এরিয়া। সিরিয়ালঃ ১

এইটা একটি বিজ্ঞাপন এরিয়া। সিরিয়ালঃ ২

এইটা একটি বিজ্ঞাপন এরিয়া। সিরিয়ালঃ ৩

এইটা একটি বিজ্ঞাপন এরিয়া। সিরিয়ালঃ ৪

এইটা একটি বিজ্ঞাপন এরিয়া। সিরিয়ালঃ ৫

এইটা একটি বিজ্ঞাপন এরিয়া। সিরিয়ালঃ ৬

এইটা একটি বিজ্ঞাপন এরিয়া। সিরিয়ালঃ ৭