ধবংসের দ্বারপ্রান্তে ৪০০ বছরের পুরানো মসজিদ এবং মঠ

আরো পড়ুনঃ ভারত সীমান্তের আলতাদীঘি শালবন নওগাঁ

প্রাচীন ইতিহাস ঐতিহ্য আর প্রাকৃতিক সৌন্দর্যের অপরূপ লীলাভূমি বাংলাদেশের উত্তরের জেলা নওগাঁ। এই জেলার বিভিন্ন প্রান্তে ছড়িয়ে রয়েছে প্রাচীন কালের অনেক স্মৃতি এবং ঐতিহাসিক নিদর্শন। যা এখন ধবংসের দ্বার প্রান্তে দাঁড়িয়ে জানান দিচ্ছে প্রাচীন সেই স্মৃতির কথা। এমনই এক প্রাচীন স্থাপনা নওগাঁ জেলার ইসলামগাথী গ্রামে তিন গম্বুজ মসজিদ এবং বিশাল একটি মঠ।

প্রায় ৪০০ বছর আগে মুঘল শাসন আমলে নির্মিত দেশের অন্যতম প্রাচীন মসজিদ এবং সঙ্গে থাকা একটি মঠ এখনো কালের সাক্ষী হয়ে কোন রকমে মাথা উঁচু করে দাঁড়িয়ে রয়েছে। হ্যাঁ পাঠক পাঠিকাগণ আজকের আর্টিকেলের মাধ্যমে আমরা আপনাদের সঙ্গে শেয়ার করবো "ধবংসের দ্বারপ্রান্তে ৪০০ বছরের পুরানো মসজিদ এবং মঠ'' সম্পর্কে। চলুন দেখে নেওয়া যাক-

আজকের পাঠ্যক্রম- ধবংসের দ্বারপ্রান্তে ৪০০ বছরের পুরানো মসজিদ এবং মঠ

  • কোথায় অবস্থিত ৪০০ বছরের পুরানো মসজিদ এবং মঠ
  • ৪০০ বছরের পুরানো মসজিদ এবং মঠ এর ইতিহাস
  • ৪০০ বছরের পুরানো মসজিদ এবং মঠের নির্মাণশৈলী
  • ৪০০ বছরের পুরানো মসজিদ এবং মঠের বর্তমান অবস্থা
  • কিভাবে যাবেন ৪০০ বছরের পুরানো মসজিদ এবং মঠ
  • কোথায় থাকবেন ৪০০ বছরের পুরানো মসজিদ এবং মঠ
  • শেষকথা

কোথায় অবস্থিত ৪০০ বছরের পুরানো মসজিদ এবং মঠ

রাজশাহী বিভাগের নওগাঁ জেলার অন্তর্গত আত্রাই উপজেলার ইসলামগাথী গ্রামে এটি অবস্থিত। এই মসজিদ এবং মঠটি নওগাঁ জেলা সদর থেকে প্রায় ৫০ কিলোমিটার এবং আত্রাই উপজেলা সদর থাকে মাত্র ৮ কিলোমিটার পূর্ব দিকে ঐতিহাসিক স্থানটি গুড় নদীর তীরে অবস্থিত। 

৪০০ বছরের পুরানো মসজিদ এবং মঠ এর ইতিহাস

ঐতিহাসিক এই মসজিদ এবং মঠটি কত সালে নির্মাণ করা হয়েছিল তাঁর সঠিক কোন তথ্য কেউই বলতে পারেন না। ওই গ্রাম এবং এলাকার একাধিক প্রবীণ ব্যক্তিদের সঙ্গে কথা বললে তাঁরা জানান আমরাতো দূরের কথা আমাদের দাদারাও এর নির্মাণ সাল বলতে পারেননি। তাঁরা শুধু বলেন এটি শত শত বছর আগে নির্মাণ বা স্থাপন করা হয়েছে।
তবে ইতিহাস পর্যালোচনায় এবং স্থানীয় প্রবীণ ব্যক্তিদের সঙ্গে কথা বলে ধারনা করা হয় যে, মোঘল শাসনামলে ১৫৭৬ খ্রিষ্টাব্দের দিকে এলাকার শাসনকার্যে নিয়োজিত ছিলেন ইসলাম খাঁ নামের কোন এক ব্যক্তি। তাঁর নামানুসারে এই এলাকার বেশ কয়েকটি এলাকার নাম করণ করা হয়েছে। ধারণা করা হয় ইসলাম খাঁর আমলে ঐতিহাসিক এই মসজিদ এবং মঠটি স্থাপন করা হয়েছিল।

৪০০ বছরের পুরানো মসজিদ এবং মঠের নির্মাণশৈলী

পুরোনো এই ঐতিহাসিক মসজিদটির নির্মাণশৈলীতে মোঘল আমলের সুস্পষ্ট ছাপ লক্ষ করা যায়। প্রকৃতির খেলাই হলো সৃষ্টি এবং ধ্বংস। কারো মাধ্যমে করান সৃষ্টি আবার কারো দ্বারা করান ধ্বংস। তাইতো অনেক কিছুই অবহেলা আর অযত্নে কালের গহ্বরে হারিয়ে যাচ্ছে। আর অবশিষ্ট থাকছে শুধু ইতিহাসের পাতায় স্মৃতি হয়ে।
জানা যায় কোন এক সময় ইসলামগাথী গ্রামে নিভৃত পল্লীর জনবসতি ছিল। যোগাযোগ ব্যবস্থা নির্ভর করতো একমাত্র নৌকার উপর। সে সময় এখন থেকে প্রায় ৪০০ বছর পূর্বে নির্মাণ করা হয়েছিল তিন গম্বুজ বিশিষ্ট ঐতিহাসিক এই মসজিদ এবং এর পার্শ্বেই নির্মাণ করা হয়েছিল ৪০ ফুট উচ্চতা বিশিষ্ট বিশাল আকৃতির একটি মঠ।
মঠটিতে বিভিন্ন প্রাণীর ছবি খদাই করে অঙ্কন করা হয়। এক সময় মনে করা হতো বিশ্বকর্মার পক্ষ থেকে এলাকাবাসীর কল্যাণের জন্য এটি নির্মাণ করা হয়েছে মনে করে এখানে বিভিন্ন মান্নত করা হতো। প্রতি বছর আশুরার দিন বা মহরম মাসের ১০ তারিখে কাশিদরা এখানে এসে আর্চনা করতো। বর্তমানে এ সকল কু- প্রথা বিলুপ্ত হয়ে গেছে। এখন নেই মান্নত বা কাশিদ।

৪০০ বছরের পুরানো মসজিদ এবং মঠের বর্তমান অবস্থা

ঐতিহাসিক এই মসজিদ এবং মঠটি ছয় শতক জমির উপর কোন রকমে দাঁড়িয়ে রয়েছে। প্রয়োজনীয় সংস্কারের অভাবে হারিয়ে যেতে বসেছে মঠটির সৌন্দর্য। ইতিমধ্যেই মুছে ফেলা হয়েছে মঠের খোদাই করা অনেক প্রাণীর ছবি। তাছাড়াও মসজিদটি সম্প্রসারণ করার লক্ষে অনেকে মসজিদটিকে ভেঙ্গে ফেলার পক্ষে মতামত দিচ্ছেন। অনেকে এই নিদর্শন দুটি না ভেঙ্গে দর্শনীয় হিসাবে রাখতে চান।
তবে যাই হোক ঐতিহাসিক স্থাপনাগুলো না ভেঙ্গে সংরক্ষণের জন্য প্রয়োজনীয় ব্যবস্থা গ্রহন করা হলে অনেক দর্শনার্থী এখানে আসবেন বলে স্থানীয় অনেকে মনে করেন। তাছাড়াও ইসলাম ধর্মে মসজিদ স্থানান্তরের বিধান রয়েছে। তাই এই স্থাপনাগুলো অক্ষত রেখে কর্তৃপক্ষের সহযোগিতায় এগুলো সংস্কার এবং অন্যত্র নতুন মসজিদ নির্মাণের জন্য দৃষ্টি আকর্ষণ করছেন এলাকার সচেতন মহল।

কিভাবে যাবেন ৪০০ বছরের পুরানো মসজিদ এবং মঠ

ঐতিহাসিক মসজিদ ও মঠ দেখার জন্য সড়ক ও রেল পথে ঢাকাসহ দেশের সকল স্থান থেকে খুব সহজেই আসা যায়।

রেলপথে- ঢাকাসহ দেশের উত্তর, দক্ষিণ এবং পশ্চিম এলাকা থেকে আত্রাই রেল স্টেশনে এসে নামার পর এখান থেকে রিক্সা, অটো বা সিএনজি নিয়ে ২০/৩০ টাকা ভাড়ায় ঐতিহাসিক ইসলামগাথী গ্রামে যাওয়া যায়।

বাসযোগে- দেশের যে কোন স্থান থেকে প্রথমে আপনাকে নওগাঁ জেলা সদর কিংবা নাটোর জেলা সদরে আসতে হবে। এখান থেকে সিএনজি যোগে ৭০/৮০ টাকা ভাড়ায় আত্রাই গিয়ে সেখান থেকে যেতে হবে ২০/৩০ টাকা ভাড়ায় ঐতিহাসিক ইসলামগাথী গ্রামে।

কোথায় থাকবেন ৪০০ বছরের পুরানো মসজিদ এবং মঠ

এখানে থাকা বা খাওয়ার ব্যবস্থা না থাকায় আপনাকে যেতে হবে নওগাঁ কিংবা নাটোর জেলা সদরে। সেখানে বিভিন্ন মানের আবাসিক এবং খাবারের হোটেল রয়েছে। থাকার জন্য জনপ্রতি ভাড়া লাগবে ৩০০ টাকা থেকে মানভেদে আরো বেশী। তবে খাওয়ার জন্য আপনি চাইলে আত্রাই উপজেলা সদরে খেতে পারবেন।

শেষকথা

আশাকরি আজকের আর্টিকেলের মাধ্যমে আমরা আপনাদের সঙ্গে শেয়ার করতে পেরেছি "ধবংসের দ্বারপ্রান্তে ৪০০ বছরের পুরানো মসজিদ এবং মঠ" সম্পর্কে অনেক তথ্য। ইসলামগাথীর তিন গম্বুজ মসজিদের মতো হাজার হাজার প্রাচীন স্থাপনা বাংলাদেশের বিভিন্ন প্রান্তে অযত্ন আর অবহেলায় ধবংসের দ্বার প্রান্তে এসে দাঁড়িয়েছে।

আরো পড়ুনঃ ধ্বংস প্রাপ্ত ঐতিহাসিক লকমা জমিদার বাড়ি

তাই কর্তৃপক্ষের পাশাপাশি স্থানীয়ভাবে আমাদের সকলের উচিৎ প্রাচীন এবং ঐতিহাসিক স্থাপনাগুলো সংরক্ষণের ব্যবস্থা করা। আর্টিকেলটি যদি আপনাদের ভালোলাগে এবং উপকারী বলে মনে হয়, তাহলে এটি অন্যের সঙ্গে শেয়ার করতে ভূলবেন না। আরো নতুন নতুন তথ্য জানার জন্য আমাদের পরবর্তী আর্টিকেলটি পড়ুন এবং সঙ্গে থাকুন। ধন্যবাদ।

এই পোস্টটি পরিচিতদের সাথে শেয়ার করুন

পূর্বের পোস্ট দেখুন পরবর্তী পোস্ট দেখুন
এই পোস্টে এখনো কেউ মন্তব্য করে নি
মন্তব্য করতে এখানে ক্লিক করুন

এই ওয়েবসাইটের নীতিমালা মেনে কমেন্ট করুন। প্রতিটি কমেন্ট রিভিউ করা হয়।

comment url

এইটা একটি বিজ্ঞাপন এরিয়া। সিরিয়ালঃ ১

এইটা একটি বিজ্ঞাপন এরিয়া। সিরিয়ালঃ ২

এইটা একটি বিজ্ঞাপন এরিয়া। সিরিয়ালঃ ৩

এইটা একটি বিজ্ঞাপন এরিয়া। সিরিয়ালঃ ৪

এইটা একটি বিজ্ঞাপন এরিয়া। সিরিয়ালঃ ৫

এইটা একটি বিজ্ঞাপন এরিয়া। সিরিয়ালঃ ৬

এইটা একটি বিজ্ঞাপন এরিয়া। সিরিয়ালঃ ৭