ঐতিহাসিক ভাঙ্গা মসজিদ নওগাঁ

আরো পড়ুনঃ প্রত্নতাত্ত্বিক অধিদপ্তরের তালিকাভূক্ত বলিহার রাজবাড়ি

গ্রাম প্রধান এই বাংলাদেশের বিভিন্ন গ্রামে অনেক ঐতিহাসিক স্থাপনা রয়েছে যা এখনো লোকচক্ষুর আড়ালে আছে। যেগুলো এখন অযত্ন আর অবহেলায় ধবংসের দ্বার প্রান্তের চরম সীমায় এসে দাঁড়িয়েছে। এই সকল ঐতিহাসিক স্থাপনাগুলোর জরুরি ব্যবস্থা নেওয়া অতিব জরুরী।

আজকের আর্টিকেলে আমরা আপনাদের সঙ্গে শেয়ার করবো নওগাঁ জেলার নিয়ামতপুর উপজেলার আওতাধীন ধর্মপুর গ্রামে প্রায় ৫ (পাচ) শত বছরের পুরাতন ঐতিহাসিক মসজিদ সম্পর্কে। যা স্থানীয়দের কাছে ভাঙ্গা মসজিদ নামে অধিক পরিচিত। তাহলে চলুন দেখে নেওয়া যাক- 

আজকের পাঠ্যক্রম- ঐতিহাসিক ভাঙ্গা মসজিদ নওগাঁ

  • ঐতিহাসিক ভাঙ্গা মসজিদ কোথায় অবস্থিত
  • ঐতিহাসিক ভাঙ্গা মসজিদ নাম করণের কারণ
  • ঐতিহাসিক ভাঙ্গা মসজিদের বর্ণনা
  • ভাঙ্গা মসজিদ সম্পর্কে এলাকাবাসীর মতামত
  • ভাঙ্গা মসজিদ সম্পর্কে উপজেলা নিরবাহী কর্মকর্তা
  • ঐতিহাসিক ভাঙ্গা মসজিদের শেষকথা

ঐতিহাসিক ভাঙ্গা মসজিদ কোথায় অবস্থিত

রাজশাহী বিভাগের নওগাঁ জেলার নিয়ামতপুর উপজেলার ভাবিচা ইউনিয়নের প্রত্যান্ত গ্রাম ধর্মপুর ঐতিহাসিক ভাঙ্গা মসজিদ কোথায় অবস্থিত। এটি নওগাঁ জেলা শহর হতে প্রায় ৫০ কিলোমিটার এবং নিয়ামতপুর উপজেলা সদর হতে মাত্র ১৫ মিলোমিটার দূরে অবস্থিত।

ঐতিহাসিক ভাঙ্গা মসজিদ নাম করণের কারণ

স্থানীয় বেশ কিছু মানুষের সঙ্গে কথা বললে তাঁরা জানান যে, তাঁরা তাঁদের বাপ- দাদাদের কাছ থেকে শুনেছেন ১৯২০ সালের ভুমিকম্পের সময় প্রাচীন এই মসজিদের ৯টি গম্বুজসহ মসজিদের বেশ কিছু অংশ ভেঙ্গে যায়। আর সেই থেকে এই মসজিদটি পরিচিতি লাভ করে ঐতিহাসিক ভাঙ্গা মসজিদ নামে।

ঐতিহাসিক ভাঙ্গা মসজিদের বর্ণনা

প্রাচীন স্থাপত্যশৈলীর এই মসজিদটি নির্মাণ করা হয়েছে চিকন ইট, চুন ও সুরকি দ্বারা। মসজিদটির প্রতিটি যায়গায় ছাপ রয়েছে প্রাচীন ঐতিহ্য এবং প্রত্নতাত্ত্বিক নিদর্শনের। মনোমুগ্ধকর প্রাচীন স্থাপত্যশৈলীতে ভরপুর এই মসজিদটি দাঁড়িয়ে রয়েছে চার কোণায় থাকা চারটি পিলারের উপর নয়টি গম্বুজ নিয়ে। গোটা মসজিদ জুড়ে প্রবেশের জন্য এর দরজা রয়েছে মাত্র একটি।

আরো পড়ুনঃ হারিয়ে যাওয়া মুসলিম নগরির স্মৃতি স্মারক মাহিসন্তোষ মসজিদ

দ্বিতল ভবন বিশিষ্ট এই মসজিদের ভিতরের দেয়ালে অঙ্কিত রয়েছে বিভিন্ন কারুকাজের ফুল এবং ফুলদানি। ইট আর চুন- সুরকিতে নির্মিত এই ভবনের দেয়লের প্রস্থ চার ফুট। সিঁড়িসহ মসজিদটির প্রবেশ পথ, মূলভবন, সমনে খোলা চত্বর এবং তিনটি অংশে বিভক্ত নামাজের ঘর। মসজিদটি কবে নাগাদ নির্মাণ করা হয়েছে তাঁর সঠিক কোন তথ্য জানা যায়নি।

তবে এর নির্মাণশৈলী দেখে অনেকে ধারণা করেন এটি প্রায় ৪/৫ শত বছর আগে নির্মাণ করা হয়েছিল। ঐতিহাসিক এই মসজিদটি আশির দশকের পর থেকে অযত্ন আর অবহেলায় ধ্বংস হতে শুরু করেছে। এর দেয়ালে দেখা দিয়েছে ছোট- বড় ফাটল এবং দেয়ালের উপর গজিয়েছে বিভিন্ন পরজীবী গাছ। বর্তমানে এটি নামাজ পড়ার অনুপযোগী হওয়ায় এর পাশেই স্থানীয়রা একটি নতুন মসজিদ নির্মাণ করে নামাজ আদায় করছেন।

ভাঙ্গা মসজিদ সম্পর্কে এলাকাবাসীর মতামত

ধর্মপুর গ্রামসহ এলাকার স্থানীয় প্রবীণ লোকদের সঙ্গে কথা বলে জানা যায় এক সময় মুসলিম ঘন বসতি ছিল প্রাচীন এই মসজিদের আশেপাশে। কিন্তু কেন তাঁরা এই মসজিদের আশেপাশের এলাকা ছেড়ে অন্যত্র চলে গেলেন, তার সঠিক কোন তথ্য কেউ দিতে পারিনি। ধর্মপুর গ্রামের প্রবীণ এক ব্যাক্তি বলেন এইতো গত ২৫/৩০ বছর আগেও এই মসজিদটি অনেক সুন্দর ছিল।

সেই সময় প্রাচীন এই মসজিদটি দেখার জন্য অনেক দূর- দূরান্ত হতে অনেক মানুষ আসতো। তিনি বলেন সর্বশেষ আমরা এই মসজিদে ২০০০ সালে ঈদের নামাজ পড়েছি। তিনি আরো বলেন আমরা বাব- দাদাদের কাছে শুনেছি মসজিদের দরজায় মুল্যবান কষ্টি পাথরে আরবি ভাসায় কোরয়ানের সূরা খোদাই করে লেখা ছিল। মুল্যবান সেই কষ্টি পাথরটি ৩০/৩৫ বছর আগে চুরি হয়ে যায়।

স্থানীয় অপর এক ব্যাক্তি জানান প্রত্নতত্ত্ব অধিদপ্তরের কর্মকর্তা ৪/৫ বছর আগে এখানে আসেন এবং স্থানীয় গ্রামবাসীদের সঙ্গে নিয়ে পরিস্কার পরিচ্ছন্ন করেন মসজিদটি। কিন্তু এখন পর্যন্ত তাঁদের আর কোন খোজ খবর পাওয়া জায়নি। তিনি আক্ষেপ করে বলেন আমি এই মসজিদে নামাজ পড়েছি। মসজিদের প্রতি নজর দিলে আমরা আমাদের পুরাতন ঐতিহ্যকে ফিরে পাবো।

ভাঙ্গা মসজিদ সম্পর্কে উপজেলা নিরবাহী কর্মকর্তা

নিয়ামতপুর উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা মারিয়া জয়া পেরেরা বলেন, এত উচ্চ পিলারের মসজিদ বাংলাদেশের আর কোথাও নেই। প্রাচীন এই মসজিদটি সংস্কার করার মাধ্যমে রক্ষণা- বেক্ষনের জন্য গ্রাম বাসির স্বাক্ষরিত চিঠিটি প্রত্নতত্ত্ব অধিদপ্তরে পাঠিয়েছি। আশাকরি খুব দ্রুত সময়ের মধ্যে প্রাচীন এই মসজিদটি প্রত্নতত্ত্ব অধিদপ্তর সংরক্ষণ এবং রক্ষণা- বেক্ষনের আওতায় আসবে।

আরো পড়ুনঃ নাটোর শহরের জনপ্রিয় কয়টি আবাসিক হোটেলের নামসহ ঠিকানা

ঐতিহাসিক ভাঙ্গা মসজিদের শেষকথা

আশাকরি আজকের এই আর্টিকেলের মাধ্যমে আপনাদের সঙ্গে "ঐতিহাসিক ভাঙ্গা মসজিদের'' সকল তথ্য শেয়ার করতে পেরেছি। শুধু এই প্রাচীন মসজিদ নয়, বাংলাদেশের আনাচে কানাচে এরূপ শত শত প্রাচীন ও ঐতিহাসিক স্থাপনা রয়েছে, যেগুলো অবহেলা আর অযত্নে বিলীন হতে বসেছে। তাই আমাদের সকলের উচিৎ, এগুলোর প্রতি যত্ন নেওয়া।

আমাদের আজকের এই আর্টিকেলটি যদি আপনাদের ভালো লাগে ও উপকারি বলে মনে হয়, তবে এটি অন্যের সঙ্গে শেয়ার করবেন। আরো নতুন নতুন তথ্য জানার জন্য আমাদের পরবর্তী আর্টিকেল পড়ুন এবং আমাদের সঙ্গে থাকুন। ধন্যবাদ।

এই পোস্টটি পরিচিতদের সাথে শেয়ার করুন

পূর্বের পোস্ট দেখুন পরবর্তী পোস্ট দেখুন
এই পোস্টে এখনো কেউ মন্তব্য করে নি
মন্তব্য করতে এখানে ক্লিক করুন

এই ওয়েবসাইটের নীতিমালা মেনে কমেন্ট করুন। প্রতিটি কমেন্ট রিভিউ করা হয়।

comment url

এইটা একটি বিজ্ঞাপন এরিয়া। সিরিয়ালঃ ১

এইটা একটি বিজ্ঞাপন এরিয়া। সিরিয়ালঃ ২

এইটা একটি বিজ্ঞাপন এরিয়া। সিরিয়ালঃ ৩

এইটা একটি বিজ্ঞাপন এরিয়া। সিরিয়ালঃ ৪

এইটা একটি বিজ্ঞাপন এরিয়া। সিরিয়ালঃ ৫

এইটা একটি বিজ্ঞাপন এরিয়া। সিরিয়ালঃ ৬

এইটা একটি বিজ্ঞাপন এরিয়া। সিরিয়ালঃ ৭