প্রত্নতাত্ত্বিক অধিদপ্তরের তালিকাভূক্ত বলিহার রাজবাড়ি
আরো পড়ুনঃ হারিয়ে যাওয়া মুসলিম নগরির স্মৃতি স্মারক মাহিসন্তোষ মসজিদ
নওগাঁ জেলা বাংলাদেশের একটি প্রাচীনতম জেলা। এই জেলার ইতিহাস অতি প্রাচীনতম। নওগাঁ জেলার বিভিন্ন স্থানে ইতিহাস- ঐতিহ্যের অনেক নিদর্শন অযত্ন আর অবহেলায় ধবংসের দ্বারপ্রান্তে এসে দাঁড়িয়েছে। এই জেলায় রয়েছে বলিহার রাজবাড়ি, কালীর থান, ধাপের ডিবি, যোগীর ঘোপা, জগদ্দল মহাবিহার, আলতাদীঘিসহ বিভিন্ন ঐতিহাসিক নিদর্শন।
আজকের এই আর্টিকেলের মাধ্যমে আমরা আপনাদের সঙ্গে শেয়ার করবো ''প্রত্নতাত্ত্বিক অধিদপ্তরের তালিকাভূক্ত বলিহার রাজবাড়ি'' সম্পর্কে। আশাকরি আপনারা আজকের আর্টিকেলটি মনোযোগের সঙ্গে প্রথম হতে শেষ পর্যন্ত পড়বেন এবং যেনে নিবেন ঐতিহাসিক এই রাজবাড়ি সম্পর্কে। চলুন তাহলে দেখে নেওয়া যাক-
আজকের পাঠ্যক্রম- প্রত্নতাত্ত্বিক অধিদপ্তরের তালিকাভূক্ত বলিহার রাজবাড়ি
- প্রত্নতাত্ত্বিক বলিহার রাজবাড়ি কোথায় অবস্থিত
- নওগাঁ জেলায় পুরাকীর্তি সংরক্ষণের তালিকাভূক্ত নিদর্শন
- প্রত্নতাত্ত্বিক বলিহার রাজবাড়ির ইতিহাস
- জমিদারি প্রথা বিলুপ্ত এবং ভারতে গমন
- বলিহার রাজবাড়ির নির্মাণ শৈলী
- বলিহার রাজবাড়ির বর্তমান অবস্থা
- শেষকথা
প্রত্নতাত্ত্বিক বলিহার রাজবাড়ি কোথায় অবস্থিত
ঐতিহাসিক এই রাজবাড়িটি নওগাঁ জেলা সদর হতে পশ্চিম দিকে, নওগাঁ- রাজশাহী মহাসড়কের পার্শ্বেই কুড়মইল নামক মৌজায় অবস্থিত। নওগাঁ জেলা শহর হতে মাত্র ১৮ কিলোমিটার দূরে ঐতিহাসিক বলিহার রাজবাড়ি অবস্থিত।
নওগাঁ জেলায় পুরাকীর্তি সংরক্ষণের তালিকাভূক্ত নিদর্শন
নওগাঁ জেলায় ইতিহাস- ঐতিহ্যের বিভিন্ন নিদর্শন ছড়িয়ে রয়েছে। এর মধ্যে চারটি পুরাকীর্তি সংরক্ষণের জন্য অন্তর্ভুক্ত হয়েছে। বলিহার রাজবাড়ি, ধাপের ডিবি, কালীর থান, যোগীর ঘোপা এই চারটি বিশেষ উল্লেখজোগ্য। প্রত্নতত্ত্ব অধিদপ্তরের তালিকায় সংরক্ষণের জন্য সম্প্রতি অন্তর্ভুক্ত হয়েছে উল্লেখিত চারটি প্রত্নতাত্ত্বিক নিদর্শনের নাম।
এছাড়াও যে সকল স্থান পর্যায়ক্রমে তালিকাভূক্তির প্রক্রিয়ায় রয়েছে, সেগুলো হলো পাহাড়পুর বা সোমপুর বৌদ্ধ বিহার, জগদ্দল মহাবিহার, অগ্রপুরি বিহার বা আগ্রাদিগুন ডিপি, হলুদ বিহার, কুসুম্বা মসজিদ, পতিসর কাছাবাড়ি, দিবর দীঘি, ভিমের পান্টিসহ ১৪টি বিশ্ব ঐতিহাসিক পুরাকীর্তি গুলো প্রত্নতত্ত্ব অধিদপ্তরে অন্তর্ভুক্ত করে সংরক্ষণের আওতায় রয়েছে।
আরো পড়ুনঃ নাটোর শহরের জনপ্রিয় কয়টি আবাসিক হোটেলের নামসহ ঠিকানা
আর নওগাঁ জেলা প্রসাসন অধিদপ্তরকে এই উদ্যোগের জন্য সাধুবাদ জানিয়েছেন নওগাঁ জেলার ইতিহাস ও ঐতিহ্যপ্রেমীরা। নওগাঁ সদর উপজেলায় অবস্থিত বলিহার জমিদার বাড়ি/ রাজবাড়ি অতি প্রাচীনতম এবং বাংলাদেশের অন্যতম প্রত্নতাত্ত্বিক স্থাপনা।
প্রত্নতাত্ত্বিক বলিহার রাজবাড়ির ইতিহাস
রাজশাহী বিভাগের নওগাঁ সদর উপজেলার বলিহার রাজবাড়ির জমিদার ছিলেন অন্যতম বিখ্যাত জমিদার। মুঘল সম্রাট আওরঙ্গজেবের অধিনে থাকা বলিহার অঞ্চল জায়গির লাভ করেছিলেন এক জমিদার। জমিদার রাজেন্দ্রনাত এখানে নির্মাণ করেছিলেন একটি রাজ- রাজেশ্বরী দেবীর মন্দির। তিনি এই মন্দিরে স্থাপন করে ছিলেন পিতলের তৈরি একটি রাজেশ্বরী দেবীর মূর্তি এবং এটি বলিহারসহ এই এলাকায় বেশ প্রসিদ্ধ ছিল।
নৃসিংহ চক্রবর্তী প্রতিষ্ঠা করেছিলেন বলিহারের জমিদার পরিবার। তিনি সম্রাট আওরঙ্গজেবের মাধ্যমে জায়গির লাভ করেন এবং বলিহারের জমিদারেরা স্থাপনা গড়ে তোলেন এই এলাকায়, যার মধ্যে অন্যতম বলিহার রাজবাড়ি। এই রাজবাড়ির অনেক রাজা ছিলেন উচ্চ শিক্ষিত। তাঁর মধ্যে বিখ্যাত লেখক ছিলেন রাজা কৃষ্ণন্দ্রনাথ বাহাদুর। তাঁর লেখা গ্রন্থগুলোর মধ্যে অন্যতম কৃষ্ণেন্দ্র গ্রন্থবলী ১ম ও ২য় খন্ড।
জমিদারি প্রথা বিলুপ্ত এবং ভারতে গমন
দেশ ভাগের সময় বিমেলেন্দু রায় বলিহারের রাজা ছিলেন। দেশ বিভাগের পর বিলুপ্ত হয়ে যায় জমিদারি প্রথা এবং রাজা বিমেলেন্দু রায় ভারতে চলে যান। পরবর্তীতে রাজ পরিবারের অন্য কর্মচারিরা বলিহার রাজবাড়িটি দেখভাল করেন। বাংলাদেশের স্বাধীনতা যুদ্ধ চলাকালীন এবং স্বাধীনতার পর রাজবাড়ির আসবাবপত্র সহ সকল মালামাল লুট হয়ে যায়।
এলাকায় লোকশ্রুতি রয়েছে মুঘল সম্রাট আকবরের সেনাপতি রাজা মানসিংহ সৈন্য সামান্ত নিয়ে বার ভুঁইয়াদের দমন করতে বলিহার অঞ্চলে পৌঁছেন। দীর্ঘ পথ অতিক্রম করায় সৈন্যবাহিনীরা ক্লান্ত হয়ে পড়েছিল। তাদের বিশ্রামের জন্য এবং গুপ্তচরের মাধ্যমে সেনাপতি মানসিংহ বার ভুঁইয়াদের খবর জানার জন্য যাত্রা বিরতি করেন বলিহার রাজবাড়ি এলাকায়।
সেই সময় বলিহার অঞ্চল বরেন্দ্র হওয়ায় শুস্ক মৌসুম চলছিল। তাছাড়া সৈন্যরা কাজ নাকরে বেশিদিন বসে থাকলে অলস হয়ে যেতে পারে এই জন্য সেনাপতি মানসিংহ তাঁর বিশাল সৈন্য বাহিনী দিয়ে এই এলাকায় খনন করেন ৩৩০টি দীঘি এবং পুকুর।
বলিহার রাজবাড়ির নির্মাণ শৈলী
প্রকাণ্ড তোরণ নির্মাণ করা হয়েছিল এই রাজবাড়ির সামনে। রাজবাড়ির কম্পাউণ্ডে রাজ- রাজেশ্বরী দেবীর মন্দির, জোড়া শিব মন্দির, নাট মন্দিরসহ তিনতলা বিশিষ্ট জমিদার বাড়ি। মন্দিরগুলোর দেয়ালে বিভিন্ন মূল্যবান রিলিফের কারুকাজ ছিল, যা এখন অস্পষ্ট এবং প্রায় ভেঙ্গে গেছে। এই কারুকাজগুলো মন্দিরের শোভা বর্ধনের জন্য করা হয়েছিল।
বলিহার জমিদারী এলাকায় যে ৩৩০টি পুকুর ও দীঘি খনন করা হয়েছিল তাঁর মধ্যে উল্লেখযোগ্য হলো, বলিহার, সীতাহার, আন্তাহার, মালাহার ইত্যাদি। প্রাসাদের সমনে ছিল ছোট একটি চিড়িয়াখানা। এই চিড়িয়াখানায় থাকতো বাঘ, ভাল্লুক, হরিণ, বানরসহ বিভিন্ন প্রজাতির পশু এবং পাখি। রাজবাড়িতে মন্দ্রিরের মধ্যে সবচেয়ে উল্লেখযোগ্য ছিল রাজ- রাজেশ্বরী দেবীর মন্দির।
বলিহার রাজবাড়ির বর্তমান অবস্থা
কিছুদিন পূর্বে এই রাজবাড়িটির ভবন স্থানীয় একটি বিদ্যালয়ের শ্রেণী কক্ষ হিসাবে ব্যবহার করা হতো। কিন্তু বিদ্যালয়টির নতুন ভবন নির্মাণ করা হলে সেখানে ক্লাস শুরু হয় এবং রাজবাড়ির ভবনটি এখন পরিত্যক্ত। তবে প্রাসাদের ভিতরে থাকা দেবালয় পূজার কাজে এখন ব্যবহার হয় এবং প্রাসাদের পেছনে পাশাপাশি রয়েছে বিশাল আকারের ২টি শিবলিঙ্গ।
আরো পড়ুনঃ রাজশাহী হতে ছেড়ে যাওয়া বিভিন্ন ট্রেনের সময়সূচী ২০২৪
শেষকথা
আশাকরি আজকের আর্টিকেলের মাধ্যমে আমরা আপনাদের সঙ্গে "প্রত্নতাত্ত্বিক অধিদপ্তরের তালিকাভূক্ত বলিহার রাজবাড়ি'' সম্পর্কে অনেক তথ্য শেয়ার করতে পেরেছি। যা আপনাদের অনেক উপকারে আসবে বলে আমরা আসাবাদি। আর্টিকেলটি ভালো লাগলে এটি অন্যের সঙ্গে শেয়ার করবেন। আরো নতুন নতুন তথ্য জানার জন্য আমাদের সঙ্গে থাকুন। ধন্যবাদ।
এই ওয়েবসাইটের নীতিমালা মেনে কমেন্ট করুন। প্রতিটি কমেন্ট রিভিউ করা হয়।
comment url