হারিয়ে যাওয়া মুসলিম নগরির স্মৃতি স্মারক মাহিসন্তোষ মসজিদ

আরো পড়ুনঃ নাটোর শহরের জনপ্রিয় কয়টি আবাসিক হোটেলের নামসহ ঠিকানা

বাংলাদেশের আনাচে কানাচে ছড়িয়ে ছিটিয়ে রয়েছে অনেক প্রাচীন ইতিহাস এবং স্থাপনা। এই সকল স্থাপনাগুলো অযত্নে আর অবহেলায় এখন প্রায় কালের গর্ভে বিলীন হয়ে যেতে বসেছে। এমনি এক প্রাচীন মুসলিম নগরী নওগাঁ জেলার ধামইর হাট উপজেলার ভারতের কোল ঘেসা আত্রাই নদীর তীরে অবস্থিত মাহিসন্তো অঞ্চল। 

মুসলিম শাসন আমলে মাহিসন্তো নির্মিত প্রাচীন মসজিদটি এখন শুধুই ইতিহাস। হ্যাঁ পাঠক- পাঠিকাগণ আজকের আর্টিকেলে আমরা আপনাদের সঙ্গে শেয়ার করবো " হারিয়ে যাওয়া মুসলিম নগরির স্মৃতি স্মারক মাহিসন্তো মসজিদ'' সম্পর্কে অজানা কিছু তথ্য। চলুন তাহলে দেখে নেওয়া যাক-

আজকের পাঠ্যক্রম- হারিয়ে যাওয়া মুসলিম নগরির স্মৃতি স্মারক মাহিসন্তো মসজিদ

  • মাহিসন্তো মসজিদটি কোথায় অবস্থিত
  • প্রাচীন মাহিসন্তো মসজিদ এর ইতিহাস
  • মাহিসন্তোষ মসজিদটির ধবংসাবশেষ
  • ধবংসপ্রাপ্ত মাহিসন্তোষ মসজিদের বর্ণনা
  • মাহিসন্তোষ মসজিদ নির্মাণ স্মারক
  • শেষকথা

মাহিসন্তো মসজিদটি কোথায় অবস্থিত

রাজশাহী বিভাগের নওগাঁ জেলার সীমান্তবর্তী উপজেলা ধামইর হাট সদর হতে মাত্র ১৩ কিলোমিটার দূরে এই প্রাচীন মসজিদটি অবস্থিত। এই মসজিদ থেকে মাত্র ৩/৪ শত মিটার দূরে ভারত সীমান্ত এবং আধা কিলোমিটার দূরে আত্রাই নদী।

প্রাচীন মাহিসন্তোষ মসজিদ এর ইতিহাস

ধারণা করা হয় সুপ্রাচীন কাল থেকেই মাহিসন্তীষ এলাকাটি বৃহত্তর রাজশাহীর একটি সমৃদ্ধ এবং বর্ধিষ্ণু জনপদ ছিল। বিশেষ করে মাহিসন্তো এলাকাটি মুসলিম শাসন ব্যবস্থা চালু হওয়ার শুরু থেকেই অধিকতর বৈশিষ্ট্য মন্ডিত আর সমৃদ্ধশালী হতে থাকে। আর সমৃদ্ধির ধারা অব্যাহত থাকে মোগলদের শাসন আমলের শেষ পর্যন্ত। 

সেই সময় ব্যবসা- বাণিজ্য থেকে শুরু করে সামরিক ও প্রশাসনিক কেন্দ্র হিসাবে ইতিহাসে সর্বাধিক খ্যাতি লাভ করে মাহিসন্তোষ অঞ্চল। বিশেষ করে সুলতান রোকনুদ্দিন বারবাক শাহ্‌ মাহিসন্তোষকে সমৃদ্ধির অনন্য উচ্চতাকে আরো বৃদ্ধি করেন। এমনকি সুলতান রোকনুদ্দিন বারবাক শাহ্‌ টাকশাল প্রতিষ্ঠা করেছিলেন মাহিসন্তোষ অঞ্চলে। 

আরো পড়ুনঃ রাজশাহী হতে ছেড়ে যাওয়া বিভিন্ন ট্রেনের সময়সূচী ২০২৪

এক সময় বারবাকাবাদ নামে (সুলতানি রোকনুদ্দিন বারবাক শাহ্‌র নাম অনুসারে) মাহিসন্তোষ অঞ্চলটি বেশ পরিচিতি লাভ করে। মুসলিম শাসন আমলে গড়ে উঠা সাধারণ ভবন, প্রশাসনিক ভবন, মসজিদ, মাদ্রাসা এবং খানকা সব কিছুই সময়ের আবর্তে হারিয়ে গেলেও কালের সাক্ষী হিসাবে এখনো মাথা উঁচু করে দাঁড়িয়ে আছে মাহিসন্তোষ এর বারোদুয়ারী মসজিদটি।

মাহিসন্তোষ মসজিদটির ধবংসাবশেষ

প্রাচীন এই মসজিদটির ধবংসাবশেষ স্থানটি ১৯১৬ সালে বরেন্দ্র রিসার্চ সোসায়িটি উৎখনন করে। তখন উম্মেচিত হয়েছিল মসজিদের সামান্য কিছু অংশ। পরবর্তীতে এলাকায় বসবাসকারী স্থানীয় মুসলিমগণ মসজিদের ধবংসাবশেষ এবং জঙ্গল পরিস্কার করে, পুরাতন মসজিদের স্থানেই নামাজ পড়ার জন্য টিনের চৌচালা ছাদ দিয়ে একটি নতুন মসজিদ নির্মাণ করেন।

ধবংসপ্রাপ্ত মাহিসন্তোষ মসজিদের বর্ণনা 

তাবে বর্তমানে যে সকল বৈশিষ্ট্য টিকে রয়েছে তা থেকে ধারণা করা সম্ভব মসজিদটি নির্মাণের আদি পরিকল্পনা সম্পর্কে। ধারণা করা হয় আয়তাকার মসজিদটির দেয়াল ২.২৫ পুরু এবং এর চার কোনায় চারটি অর্ধ অষ্টভুজাকার পার্শ্ববুরুজ ছিল। ইট দিয়ে নির্মিত মসজিদটির অভ্যান্তরভাগ এবং পাথরের ফলক দ্বারা আবৃত ছিল বাইরের সাম্মুখের দেয়াল। 

মসজিদে প্রবেশের জন্য স্মমুখভাগে ৫টি এবং উত্তর ও দক্ষিণদিকে ৩টি করে প্রবেশ পথ ছিল। পাশের অংশ অপেক্ষা বড় ছিল মসজিদে কেন্দ্রীয় ''নেভ'' ও তিনটি আয়তকার প্রকোষ্ঠ দ্বারা বিভক্ত ছিল। সম্ভবত এইগুলোর ছাদ আচ্ছাদিত ছিল বাংলা চৌচালা রীতির খিলানে এবং এর দুই পাশের দুটি অংশ সম্ভবত আচ্ছাদিত ছিল অর্ধগোলাকার মোট ১২টি গম্বুজে।

সম্মুখের প্রবেশ পথের সমান্তরালের ঠিক পশ্চিম পার্শ্বের দেয়ালে মিহরাব ছিল ৫টি। অন্য মিহরাবের তুলোনায় সামান্য বড় ছিলি কেন্দ্রীয় মিহরাবটি। বর্তমানে মিহিরাবটি সংরক্ষিত রয়েছে বরেন্দ্র গবেষণা জাদুঘরে। পাথর দ্বারা নির্মিত এই মিহরাবটি সুন্দর অলংকরণে সজ্জিত ছিল। এটিতে প্রধান মোটিফ শিকল ও ঘন্টা, তালপত্র এবং পদ্ম নকশা হিসাবে ব্যবহৃত হয়েছে। 

ঘন্টা ও শিকলের নকশায় অলংকৃত মিহরাবটি কুলুঙ্গির কেন্দ্রীয় অংশ ছিল। প্রস্ফুটিত পদ্মের নকশার অংশ ঝুলন্ত ছিল শিকলের নকশার নিম্নাংশে। বর্তমানে মসজিদের চারি দিকে যেসকল পাথর খন্ড ছড়িয়ে ছিটিয়ে রয়েছে সেগুলোর গায়ে বিভিন্ন ধরণের অলংকরণের চিহ্ন পাওয়া যায়। এ থেকে প্রমাণ হয় যে, পাথরে খোদাই করা বিভিন্ন অলংকরণ ছিল মসজিদের বাইরের দেয়ালেও।

মাহিসন্তোষ মসজিদ নির্মাণ স্মারক

বরেন্দ্র রিসার্চ সোসায়িটি এই প্রত্নস্থলটি খনন করতে গিয়ে আবিষ্কৃত একটি শিলা লিপি থেকে বুঝা যায় যে, আলা উদ্দীন হোসেন শাহ্‌র আমলে ৯১২ হিজরিতে (১৫০৬ খ্রিস্টাব্দে) মসজিদটি নির্মিত হয়েছিল। পরবর্তী সময়ে মসজিদের জঙ্গল ও ধ্বংসাবশেষ সরানোর সময় অপর একটি শিলালিপি আবিষ্কৃত হয়। আর এই শিলালিপিতে দুই সারিতে সুন্দরভাবে কালো কষ্টিপাথরে খদাই করা ছিল।

জনৈক উলুগ খান হাসান কর্তৃক মসজিদটি সুলতান রোকনুদ্দিন বারবাক শাহ্‌র শাসন আমলে ৮৬৭ হিজরিতে (১৪৬৩ খ্রিস্টাব্দে) একটি নির্মাণ স্মারক। এগুলো থেকে ধারণা করা হয় সুলতান রোকনুদ্দিন বারবাক শাহ্‌র শাসন আমলে ৮৬৭ হিজরিতে (১৪৬৩ খ্রিস্টাব্দে) নির্মিত এবং আলা উদ্দীন হোসেন শাহ্‌র আমলে ৯১২ হিজেরিতে (১৫০৬ খ্রিস্টাব্দে) মসজিদটি পুননির্মিত হয়েছিল।

শেষকথা

আশাকরি আজকের আর্টিকেলের মাধ্যমে আমরা আপনাদের "হারিয়ে যাওয়া মুসলিম নগরির স্মৃতি স্মারক মাহিসন্তোষ মসজিদ'' সম্পর্কে অনেক গুরুত্বপূর্ণ তথ্য শেয়ার করতে পেরেছি। এই সকল ঐতিহাসিক স্থাপনাগুলো সংস্কারের অভাবে প্রায় ধবংসের পথে। কর্তৃপক্ষসহ আমাদের সকলেরই উচিৎ এগুলোর রক্ষণা- বেক্ষন করা।

আরো পড়ুনঃ গাজিপুর জেলার ১২ আবাসিক হোটেলের নাম ও ঠিকানা

আমাদের আজকের আর্টিকেলটি যদি আপনাদের ভালোলাগে ও উপকারি বলে মনে হয় তবে এটি অবশ্যই আপনাদের পরিচিতিদের সঙ্গে শেয়ার করবেন। আরো নতুন নতুন তথ্য জানার জন্য আমাদের পরবর্তী আর্টিকেলটি দেখুন এবং সঙ্গে থাকান। 

এই পোস্টটি পরিচিতদের সাথে শেয়ার করুন

পূর্বের পোস্ট দেখুন পরবর্তী পোস্ট দেখুন
এই পোস্টে এখনো কেউ মন্তব্য করে নি
মন্তব্য করতে এখানে ক্লিক করুন

এই ওয়েবসাইটের নীতিমালা মেনে কমেন্ট করুন। প্রতিটি কমেন্ট রিভিউ করা হয়।

comment url

এইটা একটি বিজ্ঞাপন এরিয়া। সিরিয়ালঃ ১

এইটা একটি বিজ্ঞাপন এরিয়া। সিরিয়ালঃ ২

এইটা একটি বিজ্ঞাপন এরিয়া। সিরিয়ালঃ ৩

এইটা একটি বিজ্ঞাপন এরিয়া। সিরিয়ালঃ ৪

এইটা একটি বিজ্ঞাপন এরিয়া। সিরিয়ালঃ ৫

এইটা একটি বিজ্ঞাপন এরিয়া। সিরিয়ালঃ ৬

এইটা একটি বিজ্ঞাপন এরিয়া। সিরিয়ালঃ ৭