ডেঙ্গু জ্বরের লক্ষণ কারণ এবং প্রতিকার
আরো পড়ুনঃ রাত্রি যাপনের জন্য রংপুর শহরের জনপ্রিয় ১৮ আবাসিক হোটেলের তথ্য
ডেঙ্গু জ্বর এখন বাংলাদেশসহ বিশ্বের উপক্রান্তিয় ও ক্রান্তিয় এলাকার গ্রীস্ম প্রধান দেশগুলোতে ছড়িয়ে পড়েছে। বিশ্বে প্রতিবছর লক্ষ লক্ষ মানুষ এই রোগে আক্রান্ত হয়ে থাকে। ডেঙ্গুকে একটি সাধারণ ভাইরাস জনিত রোগ বা মৌসুমি জ্বর ভেবে অবহেলে করা ঠিক হবেনা। এটি একটি মারাত্মক জ্বর/ রোগ। কারণ এই রোগে মৃত্যু পর্যন্ত হতে পারে।
আজকের আর্টিকেলে আমরা আপনাদের সঙ্গে শেয়ার করবো ''ডেঙ্গু জ্বরের লক্ষণ, কারণ এবং প্রতিকার'' সম্পর্কে। আশাকরি আপনারা আমাদের সঙ্গে থেকে আজকের এই গুরুত্বপূর্ণ আর্টিকেলটি মনোযোগের সঙ্গে পুরোটাই পড়বেন। চলুন তাহলে দেখে নেওয়া যাক-
আজকের পাঠ্যক্রম- ডেঙ্গু জ্বরের লক্ষণ কারণ এবং প্রতিকার
- ডেঙ্গু জ্বরের লক্ষণ কারণ এবং প্রতিকার
- ডেঙ্গু জ্বরের লক্ষণ সমুহ
- ডেঙ্গু জ্বরের কারণ সমুহ
- ডেঙ্গু রোগ নির্ণয় এবং চিকিৎসা
- ডেঙ্গু জ্বর প্রতিরোধ করণীয়
- ডেঙ্গু জ্বরের শেষকথা
ডেঙ্গু জ্বরের লক্ষণ কারণ এবং প্রতিকার
ডেঙ্গু জ্বর, যাকে আমরা সচারাচর ডেঙ্গু বলে থাকি। এটি একটি ভাইরাল সংক্রমণ, যা মশা বাহিত এবং সারা বিশ্বের বিভিন্ন দেশে বিশেষ করে উপ ক্রান্তিয় এবং গ্রীস্ম মন্ডলীয় এলাকা সমূহে স্বাস্থ্যের জন্য বেশ হুমকির কারণ হয়ে দাঁড়িয়েছে। ডেঙ্গু ভাইরাসে প্রতিবছর সারা বিশ্বে প্রায় ৪০০ (চারশত) মিলিয়ান মানুষ আক্রান্ত হয়ে থাকে।
ডেঙ্গু রোগ বা ডেঙ্গু জ্বরের হাত থেকে আমাদের রক্ষা পাওয়ার জন্য এই রোগের বা জ্বরের ব্যাপারে আমাদের সতর্ক থাকা খুবই জরুরী। তাই আমাদের প্রথমে জানতে হবে এই রোগের লক্ষণ, কারণ এবং প্রতিকার সম্পর্কে। নিম্নে আলোচনায় ডেঙ্গু জ্বরের লক্ষণ, কারণ এবং প্রতিকারের জন্য চিকিৎসা সম্পর্কে আলোচনা করা হলো-
ডেঙ্গু জ্বরের লক্ষণ সমুহ
ডেঙ্গু জ্বর সাধারণত হালকা থেকে হতে পারে গুরুতর। এই লক্ষণগুলো সাধারণত সংক্রামিত মশা কামড়ানোর পর দেখা যায় ৪ থেকে ১০ দিনের মধ্যে। নিম্নে সাধারণ লক্ষণ এবং গুরুতর লক্ষণগুলো আলোচনা করা হলো-
সাধারণ লক্ষণ
*** ত্বকের ফুসকুড়ি- প্রায়শই বা মাঝে মাঝে বা জ্বর শুরু হওয়ার কয়েক দিন পর থেকে ফুসকুড়ি বা চুলকানি দেখা দিতে পারে। এই ফুসকুড়ি শুরু হয় হাতের বাহু, পায়ে এবং পরে ছড়িয়ে পড়তে পারে শরীরের বাকি সব অংশে।
**** জয়েন্ট এবং পেশীতে ব্যাথা- জয়েন্ট এবং পেশিতে প্রচন্ড ব্যাথার কারণে কখনো কখনো ডেঙ্গুকে বলা হয় 'ব্রেকবন ফিভার'।
*** অতিরিক্ত জ্বর- হঠাত করে অতিরিক্ত জ্বর ডেঙ্গুর একটি অন্যতম বিশিষ্ট। আর এটি প্রচুর মাথাব্যাথার মাধ্যমে অনুসঙ্গীত হয়।
রক্ত ক্ষরণ- অনেক ডেঙ্গু রোগীর ক্ষেত্রে হালকা রক্ত ক্ষরণ দেখা দিতে পারে। যেমন ঘা থেকে, দাঁতের মাড়ি থেকে এমনকি নাক থেকেও রক্তপাত হতে পারে।
*** চোখের পিছনে দিকে ব্যাথা- চোখের সাইটে ব্যথা, যা প্রায়শই এটিকে বর্ণনা করা হয় গভীর ব্যাথা হিসাবে। এটি ডেঙ্গুর অন্যতম সাধারণ একটি লক্ষণ।
*** ক্লান্তি অনুভব- চরম ক্লান্তি অনুভব হয় এবং জ্বর কমার পর দুর্বলতা কয়েক সপ্তাহ ধরে অনুভূত হয়।
*** বমি এবং বমি ভাব- বমি ও বমি বমি ভাব এই রোগের অন্যতম সাধারণ লক্ষণ।
আরো পড়ুনঃ সিলেটে আবাসিক হোটেলের নাম ও মোবাইল নম্বারসহ ঠিকানা
গুরুতর লক্ষণ
ডেঙ্গু রোগটি পরিণত হতে পারে ডেঙ্গু শক সিড্রোমে কিংবা ডেঙ্গু হেমোরেজিক ফিভারে। যা হুমকি হতে পারে জীবনের জন্য, তাই দ্রুত প্রয়োজন চিকিৎসার। আর ডেঙ্গু রোগের গুরুতর লক্ষণ গুলোর মধ্যে অন্যতম হলো দ্রুত শ্বাস- প্রশ্বাস, অবিরাম বমি, প্রচুর পেট ব্যাথা, দাঁতের মাড়িসহ বিভিন্ন অঙ্গ থেকে রক্ত ঝরা, অস্থিরতা এবং ক্লান্তি অনুভব।
ডেঙ্গু জ্বরের কারণ সমুহ
ডেঙ্গু জ্বর সৃষ্টি হয় ডেঙ্গু ভাইরাস দ্বারা, প্রাথিমিকভাবে স্ত্রী এডিস মশা দ্বারা সংক্রামিত হয়। বিশেষ করে মানুষের মধ্যে ছড়ায় এডিস ইজিপ্টাই কামড়ে। এডিস মশা সাধারণত ছোট বা বড় শহর এলাকায় বেশি পাওয়া যায়। এই মশা বংশবিস্তার করে ফুলের টব, পুরনো টায়ার, জমে থাকা বিভিন্ন পাত্র বা বৃষ্টি হয়ে জমে থাকা স্থির জলাশয় থেকে।
ডেঙ্গু ভাইরাসের রয়েছে স্বতন্ত্র চারটি সেরোটাইপ, যেমন- DEN- 1 থেকে DEN- 4 পর্যন্ত। সেরোটাইপের একটি সংক্রমণ সেই নিদিষ্ট সেরোটাইপ প্রদান করে আজীবণের অনাক্রম্যতা। কিন্ত পরবর্তীতে এগুলো অন্য সেরোটাইপের ফলে সংক্রমণের কারণে হতে পারে মারাত্মক ডেঙ্গু। যা ডেঙ্গু শক বা হেমোরেজিক ফিভার নামে বেশ পরিচিত।
ডেঙ্গু রোগ নির্ণয় এবং চিকিৎসা
ডেঙ্গু জ্বর সাধারণত নির্ণয় করা হয় ক্লিনিকাল মূল্যায়নের মাধ্যমে এবং জড়িত থাকে পরীক্ষাগারে পরীক্ষার সমন্বয়ে রক্ত পরীক্ষা, যেমন ডেঙ্গু এন,এস,ওয়ান পিসিআর বা অ্যান্টিজেন পরীক্ষা (পলিমারেজ চেইন প্রতিক্রিয়া) যা নিশ্চিত করে ভাইরাসের উপস্থিতি। এই রোগের জন্য নিদিষ্ট কোন অ্যান্টিভাইরাল ওষুধ নেই। তবে নিম্নলিখিত পদক্ষেপগুলি প্রায় নেওয়া হয়।
হাসপাতালে ভর্তি- ডেঙ্গুতে গুরুতর আক্রান্ত রোগীদের রক্তপাত, পেট ব্যথা এবং বমির মতো সমস্যার লক্ষণ এর মাধ্যমে চিহ্নিত করা হয়। তাঁদের রাখা হয় নিবিড় পর্যবেক্ষণে, তাছাড়া তরল গ্রহনের জন্য প্রয়োজন হাসপাতালে ভর্তি।
জ্বর বা ব্যথা ব্যবস্থাপনা- ব্যথা উপশমকারি ওষুধ যেমন প্যারাসিটামল বা অ্যাসিটামিনোফেন ব্যথা বা জ্বর নিরাময়ে ব্যবহার করা হয়। নন স্টেরয়েডাল অ্যান্টি ইনফ্ল্যামেটরি ড্রাগ এড়িয়ে চলুন, কারণ তাঁরা ঝুকি বাড়াতে পারে রক্তপাতের।
তরল খাবার ব্যবস্থা- হাইড্রেশন বজায় রাখার জন্য পর্যাপ্ত তরল খাবার অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ। তাই ডিহাইড্রেশন প্রতিরোধ করতে ওরাল রিহাইড্রেশন সলিউশন এবং পানি বা পরিস্কার তরল পানে উৎসাহিত করতে হবে।
ডেঙ্গু জ্বর প্রতিরোধ করণীয়
যেসব শহর বা এলাকায় প্রকোপ দেখা গেছে সেখানে মুখ্য হলো সাবধানতা। তাই ডেঙ্গু পতিরোধে নিম্নের সাবধাণতা অবলম্বন করা উচিৎ-
প্রতিরক্ষা মূলক পোশাক পরিধান- লম্বা হাতযুক্ত শার্ট এবং প্যান্টসহ বাসার বাইরে অবস্থান করার সময় ব্যবহার করুন মশা তাড়ানোর ওষুধ। বিশেষ করে সকাল বা শেষ বিকালে।
মশা নিধন- বাড়ির আশেপাশের স্থানগুলো যেখানে মশার প্রজনন স্থান পরিস্কার রাখা এবং যেখানে জল স্থির থাকে সেই পাত্রগুলো খালি করে রাখা।
সম্প্রদায়ের প্রচেষ্টা- হ্রাস করতে হবে মশার প্রজনন স্থান এবং ডেঙ্গু রোধ করতে সচেতনতা বাড়ানোর জন্য একসাথে কাজ করতে হবে সকল সম্প্রদায়কে।
টিকা করণ- অনেক এলাকায় পাওয়া যায় ডেঙ্গুর একটি ভ্যাকসিন এবং ডেঙ্গু ভ্যাকসিনের জন্য সুপারিশ করা যেতে পারে নিদিষ্ট জনগোষ্ঠীর মাঝে।
মশারির ব্যবহার- মশারির ব্যবহার করতে হবে মশার কামড় রোধ করার জন্য।
আরো পড়ুনঃ ধবংপ্রাপ্ত ঐতিহাসিক সীতাকোট বৌদ্ধ বিহার দিনাজপুর
ডেঙ্গু জ্বরের শেষকথা
আশাকরি আমরা আপনারা "ডেঙ্গু জ্বরের লক্ষণ কারণ এবং প্রতিকার" সম্পর্কে অনেক তথ্য জানতে পেরেছেন। যা আপনাদের অনেক উপকারে আসবে বলে আমা্রা আসাবাদি। আজকের আর্টিকেলটি যদি ভালোলাগে ও উপকারি বলে মনে হয় তবে এটি অবশ্যই অন্যের সঙ্গে শেয়ার করতে ভুলবেন না। আরো নতুন নতুন তথ্য জানার জন্য আমাদের পরবর্তী আর্টিকেল পড়ুন এবং সঙ্গে থাকুন।
এই ওয়েবসাইটের নীতিমালা মেনে কমেন্ট করুন। প্রতিটি কমেন্ট রিভিউ করা হয়।
comment url